বেড়াতে গিয়ে মজারু
(১২)
আমার এ যাবৎকালের ঘোরাফেরার মজার ঘটনা তোমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিলাম বিগত কয়েকটা post এ। কতোটা মজা পেলে তোমরা , সেটা তোমরাই বলতে পারবে.... । তবে অনেকেই যে মন দিয়ে পড়েছ ,আর তাদের যে ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি তাও জেনেছি, ভালোই লেগেছে তাই। এবার একটা মজার ঘটনার কথা বলব ভাবছি... যার প্রত্যক্ষদর্শী আমি নই। কিন্তু .....
সে প্রায় একযুগ আগের গল্প .... আমার তখন সদ্য বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। একটু আধটু দেখা সাক্ষাৎ চলছে .... কোর্টশিপ । যা নিয়ে বাড়িতে মায়ের মেজাজের পারদ ওঠানামা করছে । কারণ , আর কিছুই না ... সেই চিরন্তন মায়েদের ভাবনা ... যদি কোন কারণে চারহাত এক না হয় , তাহলে ???? আর আমি বকুনি খেয়েও , আবার অভিসারে যাচ্ছি মাকে জানিয়েই😕। কারণ এ সময়ে মনে একটা ঘোর চলতে থাকে,যার background এ একটা গান ঘোরাফেরা করে .... যখন ডাকলো বাঁশি, তখন রাধা যাবেই যমুনায়... টাইপ। আর মাকে লুকিয়ে কেন যাবো ??
এখন সেই বাঁশি , I mean ফোন নিয়েছে এক কোণ.... তবে একদিন গিয়েছিলাম .... মাকে লুকিয়ে ... আর সেদিনই মামাতো দিদির মেয়ের সাথে দেখা .... যেখানে বাঘের ভয়.... সেখানেই সন্ধ্যা হয়।
যাক্ গে ... তো এমন এক দিনে থুড়ি বিকেলে শুনলাম , আমার উনি নাকি পাত্রী দেখতে যাচ্ছেন শিলিগুড়ি তে .... । ওমা !! সেকি কথা ?? না চিন্তার কিছু নেই , ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছেন। আরো এক বিবাহিত অভিজ্ঞ বন্ধুকে নিয়ে মোট তিনজন কলেজ friend চলেছে অভিযানে। পাত্রী যেহেতু উত্তরবঙ্গের এক চা-বাগানের মালিকের কন্যা ,অতএব গন্তব্যস্থল ছিল শিলিগুড়ি । আর সেই সুযোগে উক্ত তিনমূর্ত্তি একটু দার্জিলিং ঘুরে , তারপর পাত্রী দেখে ফিরবে। এবার সবটা ঠিক মনে নেই আমার , কারণ পুরোটাই শোনা ।
এবার পাত্রী দেখতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া, প্রশ্ন উত্তর পর্ব, interactive session সবই কম বেশি ছিল। সে সব নতুন কিছু নয়, ওসবের মধ্যে দিয়ে আমাকেও যেতে হয়েছে.... একাল সেকাল অনেক অদলবদল হলেও মূল বিষয়টা অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে।
দার্জিলিং থেকে আমার আপাত রোমান্টিকতা মুক্ত হবু কর্তা মশাই দূরাভাষে যোগাযোগও করেছিল , যখন আমি কলেজের একরাশ পরীক্ষার খাতার মাঝে বিরক্তি নিয়ে বসে ছিলাম .... ফোন পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্তি একনিমেষে যে উধাও হ্য়েছিল .... সে কথা বলাই বাহুল্য। পরে ( মধুচন্দ্রিমা) ওখানে গিয়ে কোথায় থাকা হবে.... সে সবও ওই সময়ে নাকি ঠিক করে ফেলেছিল। পাকেচক্রে ওখানে যাওয়া উক্ত সময়ের অনেক পরে হয়েছিল...সে অন্য গল্প।
ফেরার পথে শিলিগুড়ি থেকে NJP যাওয়া নিয়েই ঘটনার ঘনঘটা । দার্জিলিং মেল ধরার জন্য দুটো রিক্সায় তিন বন্ধু উঠে রওনা দিয়েছিল ট্রেন ধরার জন্য। প্রথম রিক্সায় আমার হবু কর্তা সবার আগে লাগেজ ও সকলের ফিরতি টিকিট সহ রওনা দিয়েছিল। যথাসময়ে স্টেশনে পৌঁছে গিয়েও কারোর দেখা না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যায় .... আর এমন সময়ে ঘড়ি হয়ে যায় ঘোড়া....জিন লাগিয়ে সে ছুট দেয়।
ট্রেন ছাড়তে যখন ৫ মিনিট বাকি .... তখন literally হাঁ হয়ে গিয়ে অপেক্ষারত বন্ধু কি দেখতে পেয়েছিলো জানো ? কোনো অনুমান ..... !!!! ভাবতেই পারবে না .... সে দেখলো ... দুই বন্ধুর মধ্যে একজন মাথায় গামছার ফেট্টি বেঁধে ভয়ানকভাবে রিক্সা চালিয়ে আসছে ... তিনিই so called হবু পাত্র আর অন্য বন্ধু কাঁচুমাচু মুখে বেসামাল রিক্সাওয়ালাকে সামলে ধরে রিক্সায় বসে আছে। কি অবস্থা বলো দেখি !!
আসলে রিক্সায় ওঠার পর যখন বোঝা গেল যে রিক্সাওয়ালা ক পাত্তর চড়িয়ে নিয়েছে, তখন হাতে সময় খুবই অল্প। তাই ... অন্য রিকশায় না উঠে এমন শর্টকাট ব্যাবস্থা। আর গামছা ফেট্টির কারণ.... কিছুটা হলেও নিজেকে আড়াল করা কারণ কদিন বাদেই তো সে ওখানকার এক পরিবারের জামাই হতে চলেছে । আর রিক্সাওয়ালা তার আসনচ্যুত হয়ে যারপরনাই চটিতং। তার তখন একই বাক্য মুখে ..... ছেড়ে দে, ছেড়ে দে বলছি !!!! হুঁশ তখন একদমই নেই। এমন অবস্থায় কোনোদিন সে কি পড়েছে ? নিজের রিক্সায় নিজে সাওয়ারী হয়েছে ? বোধহয় না। এরপর !!! ওরা রিক্সা থেকে লাফিয়ে নেমে , গামছা সহ রিক্সা ভাড়া রিক্সাওয়ালার জামার পকেটে গুঁজে দিয়ে.... এবার একসাথে তিনজন দে ছুট। সময়ও শেষ মুহূর্তে.... লাফিয়ে ট্রেনে ওঠার সাথে সাথেই ট্রেন ছেড়ে দিল । কি মজার না ঘটনাটা ??
@শুচিস্মিতা ভদ্র
No comments:
Post a Comment