বেড়াতে গিয়ে মজারু (৯)
বেড়ানোর সময়ের খুঁটি নাটি , দরকারি অদরকারী জিনিসপত্র গোছানোর গল্প আগেই বলেছি। তো সেই তালিকার শীর্ষে অবশ্যই আমার গল্পের বই থাকবেই। প্রথম প্রথম , যখন সদ্য বেড়ানোর হাতেখড়ি চলছে... শুনলাম যে , আমার কর্তার জন্যও separate গল্পের বই নিতে হবে। খুব আনন্দ হলো .... ভাবলাম ... বাহ্ ওদিকেও তাহলে বই এর নেশা আছে। ভুল ভাঙলো ট্রেনের যাত্রা পথেই। ফেলুদা সিরিজের প্রথম /দ্বিতীয় ভাগ সাথে নিয়েছিলাম সেবার । তখন ফেলুদার সব কটি গল্পের পাঁচটি আলাদা আলাদা খণ্ডের জামানা।যেমন- পাহাড়ে ফেলুদা, কলকাতায় ফেলুদা, ফেলুদা পাঞ্চ, ফেলুদা একাদশ আর ফেলুদার সপ্তকাণ্ড।এখনকার মতো নয়। যখনই পড়বে কিনা জানতে চাই, উত্তর মেলে পড়বো !! পড়বো !! Wait....। ওই waiting এর মধ্যেই গন্তব্য এসে গেল। যা বোঝার বুঝলাম । পরে আরো দু বার একই রকম অপেক্ষা করে , শেষ পর্যন্ত ক্ষান্ত দিয়েছি ... ওই একটা বই আর বইনা। কেউ দেখে শেখে , কেউ বা ঠেকে। আমার দুরকমেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে এক্ষেত্রে।
তবে খবরের কাগজ পড়ার সু অভ্যাস আবার আমার একদমই নেই , যা আমার কর্তার আছে ভরপুর। সে ট্রেনই হোক আর বাড়িই হোক। আমার মায়েরও খবরের কাগজ পড়ার নেশা ছিল, আর বই পড়ারও। আমি আবার বইটাকেই চেপে ধরেছি। খবর কাগজ থেকে দূরে দূরে ই থাকি। তাতে বিস্তর ঝামেলাও হয়.... । কিন্তু.... ।
এবার আসি ভাষা বিভ্রাটের কথায় । বাঙালি ভিন রাজ্যে বেড়াতে গিয়ে ভয়ানক হিন্দি বলবে না তো কোথায় বলবে বলো দেখি ? হালের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র প্রাক্তনে আমরা খ্যাতনামা অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের হিন্দি উচ্চারণে হেসে গড়াগড়ি দিলেও ওমন নজীর আমাদের ঘরে ঘরেই রয়েছে.... যেটা বেড়াতে গিয়ে জানা যায়। নতুন নয় বিষয়টা , কিন্তু প্রতিটি ভাষা সংক্রান্ত ঘটনাই অভিনবত্বের দাবি করতেই পারে।
একবার আমার JU এর বন্ধু অনুরূপার কাছে , কাকিমার মানে ওর মায়ের বেনারস বেড়ানোর সময়কার হিন্দি শুনে , আমাদের off period এর আড্ডা ঝলমলিয়ে উঠেছিল। কাকিমা বেনারসে পৌঁছে/ ঘোরাফেরার সময় টাঙ্গাতে উঠবেন না, এদিকে বাকিরা টাঙ্গায় উঠে পড়েছে... রাগত কাকিমা নিজের দুই কন্যাকে ভয়ানক হিন্দিতে বলেছিলেন .... নেব্ যাও, নেহি তো গুলটি কর্ দেগি । বোঝা গেল কিছু ?? উনি বলতে চেয়েছিলেন যে তোমরা টাঙ্গা থেকে নেমে এসো , নাহলে বমি ( যেটা উল্টি থেকে shift করে গুলটি তে দাঁড়িয়েছে)করে দেবে । কিন্তু কে বমি করবে ? ওরা না ঘোড়া না ঘোড়ার মালিক ... সেটা ওদের কারোর কাছেই স্পষ্ট হয়নি। তখনো না , পরেও না। কারণ আর কিছুই নয়... বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। তাই না ??? আমার মায়ের হিন্দি বলার তেমন ঘটনা নেই বটে ... তবে তখনকার এক popular হিন্দি গান পাড়ার মাইকে শুনে ... চোখ গোল করে মা বলেছিলেন ... চাঁদে ফুচকা .... এ আবার কেমন গান !!! বোঝো কথা !!! ভাবলাম এমন তো শুনিনি , হিন্দি গানে ফুচকা নামক বিষয় থাকতেই পারে ( গানের কথা নিয়ে কথা না বলাই ভালো) কিন্তু ফুচকা নেহাৎ ই বাংলা শব্দ। গোলগাপ্পা বা পানিপুরি হলে তাও বুঝতাম।একটু লালমোহন বাবুর মতো cultivate করতে শুরু করেই চোখ একদম ছানাবড়া। মাধুরী দীক্ষিতের লিপে সেই বিখ্যাত গান .... "চাঁদ নে কুছ্ কাঁহা, রাত নে কুছ্ শুনা.... " কপাল আমার !!! কোথায় রোমান্টিকতা মাখামাখি চাঁদ নে কুছ্ কাঁহা আর কোথায় চাঁদে ফুচকা ????
এ তো গেল আমাদের মা , কাকিমার গল্প। আমাদের গল্পেও twist হ্যায় না !!! দেরাদুন হয়ে গাড়িতে চলেছি মুসৌরির পথে। যথারীতি আমার কর্তা ড্রাইভার দাদার সাথে গল্পে মশগুল। আমি পিছনে .... সব কানে নিচ্ছি না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কানে গেলই ..... । আসলে কি হয়েছে জানো !!! ড্রাইভার দাদার বাড়ি দেরাদুনেই , আমার এক মামা শ্বশুর বাড়িও দেরাদুনেই। যেখানে আমার যাওয়া না হলেও, ওরা সপরিবারে ( আমাদের বিয়ের আগে ) গিয়েছে কয়েকবার। সেই স্মৃতি ঝাঁপ দিয়ে এলো যাত্রা পথে। ভালোই চলছিল ভাঙ্গা ভাঙ্গা .... কাজ চালানো হিন্দি। কিন্তু হঠাৎ কানে লাগলো বেশ জোর্ কা ধাক্কা..... হামারা এক মামাজি দেরাদুন মে থাকতা থা ( মামা এখন আর নেই, অন্যরা ও সবাই এদিক ওদিক, মামীমা এখনো ওখানে থাকেন )। কেমন কেমন জানো ব্যপারটা হোলো....একদম থুক দিয়া type। আমরা হেসে অস্থির.... আর আমাদের হিন্দিভাষী ড্রাইভার , সেও দ্বিধা কাটিয়ে হাসতে শুরু করলো।
মোটও ভেবো না , আমি ভারি সুন্দর হিন্দি বলি !!! পার্থক্য এই ওর থেকে ভালো বলি আর যত্রতত্র খাপ খুলি না ..... মাথা খারাপ নাকি ? বলি আর manage না হলে সবাই হেসেই খুন হোক্ আর কি !!!!
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
No comments:
Post a Comment