Monday, 30 June 2025

আক্কেল সেলামি

 " দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম ...." এই সব প্রবচন শুনতে শুনতে জীবনের পথ কে না চলেছে ? কিন্তু সব প্রবচন মরমে পশে তখন‌ ই যখন যাতনা অঙ্গ জুড়ে হাজিরা দেয়। মা বলতেন , তোর কবে আক্কেল হবে ? হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে সব আক্কেল প্রকাশিত হল। প্রথম দেখা দিয়েছিল নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হ‌ওয়া র বছর চারেক কি পাঁচেক পরে। কন্যার আগমন তখন‌ ও ঢের দূরে। 

বিয়ের পর কার না আক্কেল হয়েছে ? ওই বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠান আক্কেল দানকারী হিসেবে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত। আমার‌ ও হল। Maxillofacial surgeon যখন আক্কেল মুক্ত করলেন , চাপ তেমন বোধ করি নি। শিশু মঙ্গলের আউটডোরে দন্ত বিশারদ চিকিৎসকের সামনে চক্ষু মুদে হাঁ করলাম ‌...  মুখখানা শুধু অবশ হল , আক্কেল গেল । বাকি আক্কেল তখন গুপ্ত স্থানে আসীন। আমিও সখার হাত ধরে আইসক্রিম খেয়ে ও সাথে বার আইসক্রিম নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম। No চাপ at all !!! 

বছর গড়িয়ে চললো , আবার নানান দাঁতে দন্তশূল । চিকিৎসা চলা কালীন বছর ৩/৪ আগে আক্কেল গুড়ুম। আক্কেল যে একের অধিক তাই তো ছাই জানতাম না। নিশ্চিন্ত ছিলাম যে সে তো তুলে ফেলে দিয়েছি !!! পর পর ধাক্কা। জানলাম হাতে থুড়ি মুখে আরও তিন উঁকি দিয়েছে। কি সব্বোনাস !!! একে রামে রক্ষে নেই তায় তার তিন দোসর 🥹 । 

একখানা র অবস্থান এমন তাকে মাড়ি কেটে বের করতে হতে পারে , জানিয়ে আপাত সমস্যা মুক্তি র আনন্দ দান করলেন দন্ত বিশারদ। এমন আনন্দ বিগত বছর গুলিতে পেয়ে পেয়ে শেষমেষ গত কয়েক মাস মুখ জুড়ে নিরানন্দ। আমার Dentist পাঠালেন আরেক‌ maxillofacial surgeon এর দরবারে। তিনি একাধারে তিন এর উৎপাটনের বার্তা দিলেন। কি কান্ড? ছিল এক , দিনের সাথে সাথে একখান করে বেড়ে এ কি হতে চলেছে। এমনি হতে থাকলে তো সপ্তাহান্তে সব ফর্সা হয়ে যাবে। ভরসা পুরো শেষ প্রান্তে !!! 

বিশেষজ্ঞ বোঝাই হয়ে বোঝালেন যে আক্কেল বেআক্কেলের মতন চাপ দিয়ে ৭ নম্বর দন্তকে দুরমুশ করে দিয়েছে আর উপরে আরেক আক্কেল মাথা চাড়া দিয়ে কাকে দুরমুশ করবে তার হিসাব কষছে। কাজেই আমি যদি থাকি রাজি ; উঁকি মারা আক্কেলকে ও উৎপাটন করা হবে এক সাথে। রাজি হলাম !!! 

সেই মতন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অজ্ঞান হতে প্রস্তুত হলাম। ঘরের ডাক্তারের তো হাল বেহাল। যদিও সে ওমন ভাব গুপ্ত রাখে।  

অজ্ঞান হ‌ওয়ার আগে চ্যানেল করে ড্রিপ দেওয়া দস্তুর। ওজনের বহরে চর্বি ভেদ করতে সিস্টার দিদি আকুল আর খোঁচা খুঁচির রক্তপাত দেখে আমাদের ঘরের ডাক্তার ব্যাকুল।

অজ্ঞান হয়ে থাকার জন্য নাকি top-up dose দেওয়া হয় , তা দেওয়া হয় কখনো নাকে টিউব পরিয়ে , কখনো মুখে টিউব ঢুকিয়ে। আক্কেল রা যেহেতু মুখে অত‌এব নাকে টিউব পরানোর চেষ্টা করা হল ; কিন্তু  .... তা ব্যর্থ হয় ; তখন অপারেশন থিয়েটারে সবার আক্কেল গুড়ুম।বাইরে থেকে সোজা হলেও ভিতরে যে ব্যাঁকা হতেই পারে , ফের প্রমাণিত। ফলে রক্তারক্তি কারবারে ডাক্তার বাবু নাকি অজ্ঞান হব হব ভাবছিলেন। কিন্তু .... ওই যে মনের ভাবকে সুপ্ত রাখার জেদ !!! হেনকালে অ্যানাসথেসিয়া দানকারী চিকিৎসকের তৎপরতায় টিউবের স্থানান্তরে রক্তপাত বন্ধ হয় আর এদিকের লোকাল গার্জেন নিজের মধ্যে ফেরত আসেন। ৩ খান দাঁত কৌটো বন্দী হয় সময় মতো। অপারেশনের পর জ্ঞান প্রাপ্ত হলাম মুখে তুলো গোঁজা ব্যান্ডেজ বাঁধা হয়ে । আমার আক্কেল তুলে কে যেন তখন এক বেয়াক্কেলে প্রশ্ন করল ‌.... "কেমন লাগছে ? " জ্ঞান টা তখন‌ও জায়গা মতন সেট হয়নি কো । তাই ঠিক ঠাওর করতে পারিনি । এমন প্রশ্নকারী কে ছিলেন !!! 

আরো নিয়মের পালা মিটিয়ে ঘরে ফিরে এখন খুব সাবধানী জীবনে সাবধানে ঘুরছি। 

ঘরে ফিরিয়েই তিনি স্বমহিমায় কাজের কাজি হয়ে কাজের মাঝে ঢুকে পড়েছেন। আমিও ঢুকব ঢুকব করছি।

এমনিতেই ওজনদার; তাই দুঃখের বিষয় গালের ফোলা ধরা মুশকিল বড়ো। ফোকলা হয়ে শিগগিরই ফিরছি জীবন পথের পথিক হয়ে । একখানা আক্কেল হাতে রয়েছে। বাকি দের তুলে ফের বেআক্কেলে !!!

@শুচিস্মিতাভদ্র

No comments:

Post a Comment