Tuesday, 1 July 2025

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৫৭

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৫৭

ভোর হলো। দোর খুলে বাইরে বেরিয়ে পড়ার আগে ভাগেই দেবাশ্রিতাকে ফোন করলাম। সে বেচারি আগের দিনের খ্যাটনের গুরুপাক সামলাতে তখন‌ই শয্যা ত্যাগ করবে না ; রয়ে সয়ে পরে যোগ দেবে জানান দিল। আমি স্নানের পাট মিটিয়ে ভোরের হাওয়া খেতে নদীর পাড়ে হানা দিলাম। ভোরের একটা টাটকা সতেজ ভাব দেখেছি সর্ব খানেই এক রকম। সে ইঁট কাঠের জঙ্গল হোক , কি নদী , পাহাড় , সমুদ্র হোক !!! সোনার বাংলা রিসর্টের নদীর পাড়ের সাজানো বাগানে তখন একজন morning walker ছাড়াও রয়েছে শুধু মাত্র অনিন্দ্য। আমি হাজির হয়ে এটা ওটা গল্প শুরু করেই জানতে পারলাম ... একটু আগেই অনিন্দ্য, ওদের রুম সংলগ্ন বারান্দায় বন্দী হয়ে পড়েছিল। যদিও এক তলা তাই‌ ঘরবাসীরা নিদ্রা থেকে জাগরিত না হলে একটু শারীরিক কসরতের দরকার পড়তে পারত ; যা অনিন্দ্য র বন্দী দশা ঘুচিয়ে দিতো নিশ্চিত। এখানে তেমন কাজ কারবারের দরকার পড়ল না । শ্যামের ডাকেই নিদ্রা ত্যাগ করে রাধা দোর খুলে ফের নিদ্রা গেছেন। 

ভোরে শিশির লেগে থাকা ঘাসের পরে পদচারণা করা খুবই ভাল বলে জানি ; তবে এ ঘাস হলো গিয়ে চৈনিক ঘাস। উপকারিতা আদেও আছে কিনা তাতে চৈনিক সন্দেহ দেখা দিলেও ঘোঁট পাকিয়ে ওঠার উপায় নেই। কারণ ; ওই যে বললাম ভোরের হাওয়ার গুণ । তাতে সন্দেহ , বেশি সাড়া ফেলতে , নাড়া দিতে পারল না। খানিক পরে যে যার ঘরে গিয়ে চা বানিয়ে খেয়ে সব গুছু করতে লেগে পড়লাম। কারণ এরপরেই জলখাবার পেটে পুরে আমরা সমুদ্রমুখী হবো সকাল সকাল। ঘরের দুই মক্কেলকে জাগন্ত করে র‌ওনা করার পালে হাওয়া দিতে থাকলাম , ব্যাপার টা চালু না রাখলে ঝিমিয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। তাগাদা র গুণে একে একে সকলে কমপ্লিমেন্টারি জলখাবারের অকুল পাথারে ভেবলে যেতে যেতে খাবার বেছে খেতে শুরু করলাম। নিজে বেছে নেওয়ার আতিসহ্যে পেট বেশ ভর ভরন্ত করে এবার আমরা বেরিয়ে পড়লাম মন্দারমণির দিকে। সময় তখন সকাল দশটা।

আমাদের বাহন চালক অভিজিৎ এর বন্ধু কাম দাদা রিঙ্কু পরবর্তী পর্বে দেবাশ্রিতাদের গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাবে ‌... . এ কথা মতন রিঙ্কু পথ ভুল করে ; আবার তা শুধরে নিয়ে যথা সময়ে কোলাঘাটের হাজির হতেই একরকম অর্ডারে আমরা সবাই যার যার পছন্দমত সঙ্গী সাথিসহ গাড়ি র দখল নিলাম। শুনলাম ; কলকাতা থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে ই যেহেতু আছি , আগে ভাগেই ঘন্টা আড়াই পর সমুদ্র সৈকত দাপাতে সক্ষম হবো। মনে খানিক সন্দেহের দোলা নিয়েও কর্তা মশাই এর কথাতে আস্বস্ত হলাম। হবেও বা ‌.... জলদি জলদি । কিন্তু , পরন্তু .... পথ চলা শুরু র সাথেই গল্প জমে উঠল ; খানিক পরে গল্প থেমে গাড়ির দখল গেল গানে আর ঘুমে। গান বাছাবাছি আর শোনার মাঝে প্রশস্ত পথে সাথে প্রকৃতির নানান বিষয় আশয় যেমন নদী , সেতু‌, সবুজের সমারোহ, গ্রাম , শহরতলী , বাজার , বাড়ি , ঘর , ক্ষেত খামার ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমরা এগিয়ে চলেছিলাম। 

পৌঁছে যাওয়ার তখন বাকি আরো ঘন্টাখানেক , হেনকালে সিগনালে স্থির হয়ে দাঁড়ানোর সময় এক ড্রাম‌ওয়ালা তার গাড়ি নিয়ে ধাক্কা সটান ; আমাদের গাড়িতে । আমি তো পাশের গাড়িতে বসে সবটুকু অবলোকন করলাম। আমাদের বাহন চালক অভিজিৎ এর দোষের মধ্যে সে সবেতেই দাঁত কাপাটি মেলে হেসে ফেলে। গাড়ি যখন ধমাস !!! তখন‌ও পাশের গাড়িতে বসে অভিজিৎ এর হাসি মুখ খান স্পষ্ট দেখেছি। কিন্তু একি !!! সিগনাল পেরোতে পেরোতে ই দেখি এ গাড়ির কর্তা মশাই অনিন্দ্য বেজায় চটিতং। রিঙ্কু কে গাড়ি সাইড করে আমাদের ঘোর গরমে ফেলে রেখে রাগ প্রকাশ করতে হামলে পড়লেন। গাড়ি র মধ্যে এতক্ষণ সুরের ধারার সাথে সাথে বাতানুকূলযন্ত্রের কল্যাণে এক স্বপ্নের বাতাবরণ বিরাজমান ছিল। হঠাৎ ভয়াবহ বাতাবরণ পরিবর্তনে দেবাশ্রিতা স্বপ্নোত্থিতের মতন উঠে জিগাইলো ‌...." কি ঝগড়াটে মাগো !!! এই প্রেসার কুকারে আমাদের ফেলে রেখে ঝগড়া করতে গেলো ???" আমি কিছু দেখার চেষ্টা করলাম ঘাঁড় ঘুরিয়ে .... একটা জটলা ছাড়া কিছুই গোচরে এল না ; সব থেকে বড় কথা সেই ড্রাম‌ওয়ালার টাক টিকি কিছুই দেখতে পেলুম না। সে ড্রাম বাজিয়ে হাওয়া !!! জড়ো হ‌ওয়া পরিচিতদের ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখা গেল একজনের ফোন আমাদের সামনের সীটে বাজনা বাজাচ্ছে তারস্বরে‌ , বাকিরা কেউ উত্তর প্রত্যুত্তরে রাজি নয়। অগত্যা গণগণে গরমে বেগুন পোড়া হতে হতে ঠাণ্ডা কালের স্বপ্ন দেখার বৃথা চেষ্টা সহ যোগাযোগের লাগাতার চেষ্টা চালাতে লাগলাম ... মা বলতেন , একবার না পারিলে দেখো শতবার ; মায়ের কথা নয় ; মা এই প্রবাদটি খুব ব্যবহার করতেন। শতবার করতে লাগেনি , তিনি ফোনে র ওপারে হাজির হলেন , আর একটু অপেক্ষার নির্দেশ দিয়ে ফোন কাটলেন। অপেক্ষার শেষে আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। শুনলাম লোক জড়ো হ‌ওয়ার পর পর এদের নিজেদের নাকি মনে একটা কাঁপনের সূত্রপাত হচ্ছিল। যদিও তখন ফেরার পথটা ঘাঁটা অনেকটা !!! হরি হরি !!! 

এবারে .... গাড়ির খুদে সদস্য জোরে জোরে আর আমরা মনে মনে ভারি অধৈর্য হতে হতে অবশেষে তাজপুরের দিকের নতুন ( তা ও চালু হয়েছে বেশ কিছু সময় ) পথ ঘুরে মন্দারমণি পৌঁছে গেলাম। তখন প্রায় দুপুর ২ টো ছুঁই ছুঁই !!! ঘরে খানিক টেম্পোরারি সংসার গুছিয়ে দল চলল সমুদ্রে ঝাঁপাতে !!! সময় তখন ৩টে ছুঁই ছুঁই !!! এমন দেরি করে কখনও সাগর দা র কাছে যাই নাই । একটা নোনা গন্ধ ঠেলে জলের দিকে এগিয়ে চললাম সকলে । সাগর সকালে এগিয়ে আসে যদিও , বেলা বাড়ার সাথে সাথে দূরে চলে যায়। আবার আসে , আবার যায়। জীবনের মতন তার ওঠা পড়া ; যাওয়া আসা । থামে না । অবিরাম। 

@শুচিস্মিতা ভদ্র 

No comments:

Post a Comment