Wednesday, 16 July 2025

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৫৯

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৫৯

হতাশ অবসন্ন শরীর মন নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম সকলে। শরীর তখন হা ক্লান্ত। অবসন্ন শরীরে হাল্কা ঘুম দখল নিতে শুরু করল ; কারণ আমরা দীঘা ত্যাগী হয়ে ফেরার সেই সাগর পার দিয়ে পাড়ি জমানোর পথ ধরব ধরব করছি। আলো আঁধারের বুক চিরে নোনা হাওয়ার ঝাপটায় ঘুম আরো চোখের পাতায় আঠা মাখাচ্ছে। হেনকালে ঘুম জাগরণের মাঝে কানে এল চা পান বিরতির কথা ; এবং অত‌এব এক চায়ের ছাউনি র সামনে নেমে পড়লাম একে একে। আমরা দেবা-দেবী ক্ষতিকর দুধ চা , বাকি সব কলরব করে আগা পাশতলা লালা চায়ের গুণ কীর্তন করতে করতে নানান দল নানান চা পান done করলাম। বিয়ের পর খেয়ালে করে দেখেছি ; যে , খাদ্য তালিকায় আমার অপছন্দের খাবার নেহাৎ ই নগন্য । বৈবাহিক জীবন তখন নবীন ; খাবারের ভাগযোগ জনিত ‌হৃদয় বিদারক কথা কারে ক‌ই প্রাণসখা ছাড়া ? কি নিষ্ঠুর !!!! খান কতক দিন দুখের কথা নিবেদনের পর বলে কিনা ... " কোন খাবার টা ভালবাসো না বলো দেখি ? কোনটা কিঞ্চিৎকর হলেও মনে দুঃখের বাণ ডাকবে না ? " তো এখন আমি এত বছরে একদম লিস্টি করে ফেলেছি ‌.... কি কি খেতে মোটেও ভালবাসি না । এখন চোখ বুজে বলে দিতে পারি ‌... দিন শুরুর হোক বা পরের হোক চা যদি লাল চা হয় ; আমি মোটেও তা খেতে থুড়ি পান করতে ভালবাসি না। তখন out of syllabus এ উত্তর দে‌ওয়ার অভ্যাস একদমই ছিল না। এখনো যে অভ্যাস পোক্ত হয়েছে তার নয় , তবে তাও কিছু টা তো বটেই। আর‌ও কিছু যোগ হয়েছে NSS এর দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে। জায়গাটা শঙ্করপুর। চা পান করে এদিক ওদিক ঘুরে আমরা সকলে একটু সমুদ্র সৈকত পানে নজর ঘোরালাম। 

পাহাড় সমুদ্র দুয়ের বাছ বিচারে আমি পাহাড়কে ভোট দিলেও; পাহাড়ে যাওয়ার বায়নাক্কা অনেক ; তাই হাতের পাঁচ সমুদ্র বিলাসী হয়ে থাকি। তবে এ কথাও ঠিক আমার দু নম্বর পছন্দে সমুদ্র কে রেখেছি । এদিকে র জন পাহাড় কে এক নম্বর দিলেও জঙ্গল তেনার ভারি পছন্দের। জঙ্গল আমার ভারি ছমছমে রহস্যময় লাগে। সর্বোপরি জন মানুষ্যি নেই। নেই কেনা রাম হ‌ওয়ার সুযোগ। আর ওই খানেই তেনার কাছে জঙ্গল প্রিয়তা র বাড় বৃদ্ধি । 

আমরা শঙ্করপুর সৈকতে খানিক বসলাম চুপটি করে। এই চুপ শব্দে ভরপুর। বিশাল ঢেউ এর পাড়ে অবিরাম আছড়ে পড়া দেখতে দেখতে বিজলী বাতির অনুপস্থিতি কে কল্পনা করতে লাগলাম। জানি যদিও অন্ধকারে কাব্য করার মতন পরিবেশ কোনদিন ছিল না ; এখনো আরও নেই। ভয়ের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি তো নেই !!! অন্ধকার চোখে সয়ে এলে যে তার‌ও এক মায়াবী রুপ আছে তা আমরা ভুলে যাচ্ছি ক্রমশঃ ।

খানিক পরে ফিরতি পথে আমরা রাত ৯টার কাছাকাছি মন্দারমণি ফিরে এলাম। ভয়ানক ক্লান্তি তখন শরীর জুড়ে তার প্রভাব বিস্তার করছে। আমরা চট জলদি খাবার পর্ব মিটিয়ে ঘরে ফিরে ঘুমের দেশে যেতে তৈরি হলাম। সেদিন রাতে দুই বন্ধুর একসাথে নিদ্রা যাওয়ার কথা। আপত্তি করি নাই। আমাদের এই হোটেলে র ঘরখানা গড়ের মাঠে র সদৃশ আর তা ভরাট করাতে দুখান জোড়া খাট পাতা হয়েছে। দুপুরে ঘরে ঢুকেই দুই সখী প্ল্যান করে ফেলেছিল। এমন ক্ষেত্রে এক ঘরে বাবা - মা না থাকা খুবই বাঞ্ছনীয় ব্যাপার যদিও ; কিন্তু কথায় বলে নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল । তবে মা কে নিয়ে no চাপ !!! মায়ের খেয়াল টা বরাবর কমতি র দিকে ; পুপেকেই অনেক খেয়াল রাখতে হচ্ছে বিস্তর । চিন্তা র বিষয় অবশ্যই পিতাশ্রী। তবে কোড language হ্যায় না ??

হিল্লোল তো দুই দিদির মাঝে মূর্তিমান বিপদ। যাক তাকে বুঝিয়ে দেবাশ্রিতা ওদের ঘরে নিয়ে গেল। আমি সেদিন এতোই হা ক্লান্ত যে শুতে না শুতেই নট নড়নচড়ন। ভোরে আবার মন্দির দর্শন এর মহা যজ্ঞ আছে যে !!! 

ভোরে ঘুম থেকে ওঠা নতুন নয়। উঠে ৫টা তে স্নানের পালা চুকিয়ে আরো খানিকটা পরে বেরিয়ে পড়লাম। ভোর বরাবর ভারি স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে রাখে । কর্তা মশাই 

র‌ইলেন ছানাদের নিয়ে ঘুমের দেশে। একবার বলেছিলাম ... " তোমার দেখা হলো না তো !!! " সেই গাছে তোলা উক্তি পরিবেশিত হল মুচকি হাসি হেসে ... " তোমার দেখা হলেই আমার দেখা । " আগে ডগোমগো হলেও এখন মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়লাম। হিল্লোল কে ও তার ডাক্তার জেঠুর জিম্মা করে আমরা বাকিরা দুয়ের বদলে একখান গাড়ি করে চললাম । দেবাশ্রিতাদের গাড়ির চালক রিঙ্কুও সাথে চলল।

সকাল সকাল ফাঁকা পথে হুস করে যেন দীঘা পৌঁছে গেলাম। এখনো জন মানুষ্যি নেই এমন নয়কো মোটেই। তবে আগের সন্ধ্যার নিরিখে সে কিছুই নয়। তবে বেশ ফ্যাচাংযুক্ত এখনো ; কারণ সবটা এখনো গোছানো হয়নি। জুতোর পাহাড় অরক্ষিত, ক্যামেরা সাথে রাখার অনুমতি নেই ; কিন্তু তা জমা রাখার সুবিধা নেই কোন , পদতলে বালির কিরকিরে অনুভূতি । যাক সে সব বাদে এক সুন্দর শৈল্পিক স্থাপত্য দেখে মন ভরে গেল। মন্দির বাহির দর্শন করে গেলাম মন্দিরের অন্দরে। দেখাশোনা শেষে গুটি গুটি বেরিয়ে এলাম। 

ফিরতি পথে দুই বাহন চালকের উৎসাহে আমরা ভেসে গেলাম দীঘা মোহনাতে। মোহনা তে সাগর এসে নদীতে মিশে যায়। দেখলাম মেলাই লোকের ভিড়, দোকান পাটের ভয়ানক ভিড় । নদী কৈ , নদী কৈ করে একসময় দেখা মিলল । তবে ততক্ষণে তোমরা কৈ তুমি কৈ করে ওদিক থেকে কল হাজির। দীঘার মোহনা শুনেই চিড়বিড় করে উঠল খানিকটা সংযত ভঙ্গিতে। শুনলাম , ওদিকের ঘর এখন ঘুম পুরি। 

এবার ফেরত আসার পথ ধরলাম। মন্দারমণিতে আগের বারে আমরা মোহনা তে গিয়েছিলাম । যা বুঝলাম নদী যেখানে সাগরের সাথে কোলাকুলি করেছে তার একপাশে দীঘা আর অপর পাশে মন্দারমণি। ভোরে আর শেষ দুপুরে জল সরে গেলে সমুদ্র সৈকত বরাবর এগিয়ে এলে মোহনা দর্শন দেন। আমরা আগের বার ভোরে টোটো করে মোহনা দেখতে গিয়েছিলাম। টোটো চালক বলেছিল যে জল বাড়লে টোটো চালিয়ে মোহনা পৌঁছানো সম্ভব হবে না । ভারি সুন্দর লেগেছিল, একে ভোর তায় শুধু দুজনায়। ফেরার পথের ভোরের জলছবি ক্যামেরা বন্দি করেছিলাম। এখানে তেমন টার দেখা মিলল না । আমরা এগিয়ে পড়লাম আপাত আবাসের দিকে ; ওদিক থেকে শ্যামের বাঁশি বাজতে শুরু করেছিল ‌‌.... তোমরা কতদূর ? দীঘা মোহনা শুনেই গার্জেনের গর্জনের আভাস পেলাম। চটজলদি হুঁস করে ফিরেও এলাম। সেদিন একটু পরেই ঘরের মানুষ ঘরে ফিরে যাব। ফিরে জলখাবার খেয়ে সব গোছগাছে লেগে পড়লাম। দেবাশ্রিতা আবার জলে চলি চলো বলে ধরে নিতে এসেছিল ... শরীর জোড়া তখন ক্লান্তি !!! সাথে পুরো ফ্রাই হ‌ওয়ার মতন রোদ !!! মাপ চেয়ে ঘরেই র‌ইলাম । ওরা জল ছপাছপ করে জলদি ফিরে এল কারণ আমাদের ফেরার সময় তখন আগত। এরপর সব লটবহর নিয়ে আমরা এগিয়ে পড়লাম; কিন্তু এ ক্ষণেও ওরা আমায় গাড়িতে নিল না ; কিন্তু হিল্লোল আনন্দে র সাথে গাড়িতে সাথে নিল। বেড়ানোর শেষে নতুন পুঁচকে বন্ধু কে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। নতুন প্রাপ্তি কি বলো ??? 

@শুচিস্মিতাভদ্র

No comments:

Post a Comment