বেড়াতে গিয়ে মজারু ৫৮
সাগর দা র আয় আয় ডাকে তো হাঁটা দিয়ে অনেক খানি পাড়ি দিয়ে তবেই তাকে ছুঁতে পারলাম। কিন্তু তিনি বেশ উত্তপ্ত। কখনো এত দেরি করে সাগরের কাছে আসিনি। উষ্ণতা বাড়িয়ে আমাদের সাদরে গ্রহণ করলেন । এর আগে গরমাগরম রোদের মাঝেও জলে নেমে ভারি আরাম পেয়েছি , এবার মনে হল যেন গা সইয়ে নেওয়া কোন উষ্ণ প্রস্রবণে নেমেছি। এমনিতে পায়ের পাতা ডোবানো জলে যদিও আমি স্বচ্ছন্দ ; বাকি দের উৎপাতে প্রতিবার জলকে চল যেমন হয় , তেমন হয় দূরকে চল । এবারও একই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও পিছনে বিকেলে দীঘার মন্দির দর্শন নামক হুড়ো চালু ছিল তাই রক্ষে !!!!
বয়সের সাথে সাথে খানিক খানিক সাহস অর্জন করেছি ; কোলাঘাটের পুলে তার প্রমাণের ছবি জ্বল জ্বল করছে ; কাজেই সখাকে চেপে ধরে খাবি খেতে খেতে নোনা জল খেতে লাগলাম ভরপুর। তবে গরম জলে আরাম নেইকো। জলে জলীয় প্রাণীর বেশির ভাগ তখন হোটেলের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরাতে মধ্যাহ্ন ভোজনের পরবর্তী ভাতঘুমের আবেশে আবিষ্ট। খানিক নোনতা গরম পানি তে নাকের জলে চোখের জলে হয়ে বুঝলাম সাগরের ঢেউ জোড়া কাব্য তখন ভয়ানক গরম গদ্যের আকার প্রাপ্ত হয়েছে। আমি গুটি গুটি সাগর পাড়েও না , আবার জলেও না এমন অবস্থানে দেবাশ্রিতাকে নিয়ে জলীয় বালুকা বেলায় থাবা গেঁড়ে বসে পড়লাম। ঢেউ যেখানে আকার প্রাপ্ত হয়ে এগিয়ে ভাঙে তার খানিক দূরে যেখানে ঢেউ এর শক্তি নেহাৎ ই জোলো। এই বিশাল বপুকে নাড়াতে অক্ষম কিন্তু ভেজাতে দস্তুর মতন সক্ষম। তবে জামা কাপড় জুড়ে বস্তা বস্তা বালি জড়ো হল । সে সব নিয়ে হাজির হলাম হোটেলের অন্দরে। সাফ সুতরো হয়ে এবারের গল্প জোড়া পৈটিক সংবাদ। বাঙালি বেড়াতে গেলে যাই খাবার খাক ; সারা দেশেই বাঙালি ঘরের খাবার খুঁজে মরে , আর ঘরের মানুষ হয়ে পরের খাবার নিয়ে রসনা তৃপ্ত করে। পরের খাবারে চীনা , মোঘলাই, দাক্ষিণাত্য, ইংলিশ সহ হরেক রকমের option এর ছড়াছড়ি । "রেখেছ বাঙালি করে " প্রবচণ বলে কি বা করার আছে । আমরাও ভয়ানক চিরন্তনী , পুরাতনী বাঙালি খাবার দিয়ে মন ও পেট ভরিয়ে ঘরমুখী হলাম। কর্তা মশাই মহা সাবধানী !!! ঘুমিয়ে পড়লে মন্দির দর্শন বিশ বাঁও জলে !!! তাই দেবাশ্রিতা সহ কর্তা মশাই ফতোয়া জারি করে ঘরে এলেন .... No ঘুম !!! খাওয়া আর ঘুমের জন্য কি বেড়াতে এসেছি ? একদমই না । তবে ; কিন্তু; পরন্তু সব ঝোলায় তুলে একটু গড়িয়ে বেরনোর জন্য প্রস্তুত হয়ে ৫.৩০ আমরা সবাই আণ্ডা বাচ্চা সহ বেরিয়ে পড়লাম। আসলে হৈচৈ পার্টি হলেও বয়স ব্যাটা যে বেড়েই চলেছে তাই মাঝে মাঝে সে কল কব্জা মারফত খবর দেয় বৈকি। তবে বেড়াতে গেলে মনটা এতো টা ই হাল্কা হয়ে যায় , ক্লান্তি টা ঝপ করে কাটিয়ে দিতে চাপ হয় না। বেরিয়ে আমরা তাজপুরের মেরিন ড্রাইভের পথ ধরতেই ক্লান্তিটা সমুদ্রে র ঢেউ এ চড়ে নাগাল ছাড়া হয়ে গেল। এমন প্রকৃতি র মাঝে আমার খুব গান পায় । তবে সে সব যেখানে প্রকাশ করা সহজ , তিনি আগাগোড়া মেয়ের বাবা হয়ে মেয়ে কে হামলে পড়ে সামলে ধরতে অন্য গাড়ি তে আসীন হয়েছেন। কি বেআক্কেলে বেরসিক হয়েছে বলার নয় !!! আগে ভাগে বেরিয়ে পড়লে জনতা জনার্দন বলতো ... ভদো ( ভদ্র এর আদুরে ডাক বন্ধু মহলে ) কি রোমান্টিক !!! সে রামও নেই আর সেই ভদোও ঘুমন্ত। পুরো দস্তুর, আগাপাশতলা বাবা র উদয় হয়েছে । মহা বাবা , দুয়ারে বাবা , বেড়িয়ে বাবা .... বাবা রে বাবা ।
সাগর থেকে আসা নোনা হাওয়া খেতে খেতে তাজপুর পেরিয়ে শঙ্করপুর ধরে ফেলতে ফেলতেই মন বলল , গাড়ি থেকে নেমেই প্রথম তিনি বলবেন ... কেমন দুদিনে সমুদ্র সৈকত বরাবর যা যা ফেলা ছড়া করে আছে সব দেখিয়ে দিলাম । কেমন বুঝছ ?? তবে যে বলো অন্য কথা ??? কথার কারিগরি শুনে না হেঁসে পারিও না । আবার রাগও হয়।
এই করতে করতে আঁধার নামা বিজলী বাতি জ্বলা পথে দীঘায় ঢুকে পড়লাম । পড়েই মনে হল .... কি সর্বনাশ !!! এ কি কলকাতায় দূর্গাপূজা তে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি ?
এই অধমের কথা কে আর কবে শুনেছে ? আমার বিদ্যে বুদ্ধি বলেছিল ; জগা দা র নতুন আবাসে জগাখিচুড়ী ভিড় না হয়ে যায় না। বাঙালি চিরকেলে হুজুগ প্রিয়। আমি কি তবে বাঙালি নইকো ?? আসলে আমি ভিড়ে ভয়ানক ভড়কে যাই তাই ভিড়ে ভিড়ি না এক্কেরে। ভেবেছিনু পরে কোনো একদিন যেয়ে দেখে নেবো ক্ষণ। কলকাতায় পূজোর ভিড়ে ভড়কে গেলেও উপায় নাস্তি। পূজোর সময় একা ছাড়া চাপ জনক । তাই দুজনেই লেগে পড়ি। তবে ছোটকালের এবেলা ওবেলা ঘুরু বেড়ু এখন ইতিহাস। ভোর ভোর মণ্ডপ চষে ক্ষ্যামা দিয়ে কারোর ; নয়কো নিজের ঘরেই ঢুকে পড়ি।
ভিড় বলে ভিড় !!!! জয় জগন্নাথ !!! ওদিক থেকে তিনি ফোন মারফত নির্দেশ দান করার পর সে মতন গাড়ি ফিরতি পথ ধরে নেওয়া র আগে এক জায়গায় থেমে গেলাম। একদিকে দেবাশ্রিতা অন্য দিকে আমাদের বাহন চালকের তখন মন জোড়া দুঃখ। অভয় দানে হাজির তাদের দাদাভাই , রথের দিনে প্রথম কোর্টসিপ শুরু হয়েছিল আমাদের ; অগাদ বিশ্বাস কর্তা মশাই এর । অভয় দানে তেনার জুড়ি মেলা ভার .... চিন্তা কোরো না , কাল ভোরে সব দর্শন হবে। আর just ভাবো !!! কেমন আড়াই দিনে সব দেখিয়ে দিচ্ছি । এত দুঃখেও দেবাশ্রিতা আমার দিকে চাইল !!! এত বছর তবে কি করলাম ????
@শুচিস্মিতা ভদ্র
No comments:
Post a Comment