রোজনামচা
শুচিস্মিতা ভদ্র
" একটু বেরিয়ে পড়লে কি খুব সমস্যা হবে ?" .... রিক্তার আকুলতা প্রলয়ের দৃষ্টি এড়ায় না । কিন্তু এই লকডাউনে বেরিয়ে পড়া উচিত না অনুচিত সেই নিয়ে মনের দ্বৈরথে প্রলয় নিজেও যথেষ্ট বিব্রত। বিগত কয়েক মাস ঘরের চার দেওয়ালে কাজের বোঝা , একঘেয়েমি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
অতিমারির অভিজ্ঞতা কারোর নেই । প্রলয়ের বাবা, মা ও দুই দাদা থাকে হাওড়ার কদমতলায়। সেখানেও যাওয়ার উপায় নেই। কতদিন আদরের দুই ভাইঝি তিথি আর মিঠিকে দেখেনি !! ওয়ার্ক ফ্রম হোমের গেরোয় জীবন জেরবার। সে একটা বেসরকারি ফার্মে কর্মরত। বাড়িতে বেশ আনন্দে, নিশ্চিন্তে আছিস .... এমনটা যারা বলছে , তাদের হাতের কাছে পেলে , প্রলয় যে কি করতো !!!
রিক্তা গৃহবধূ , কিন্তু সে একমাত্র সন্তান। এই পরিস্থিতিতে বাপের বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই। বাপি ও মামনি সব সামলে নিলেও মেয়ে কে বিয়ের পর এতোদিন না দেখে থাকেন নি। রিক্তা র ও মনে জমেছে নিরূপায়ের মেঘ। আনলক ওয়ান এরপর একদিন অল্প সময়ের জন্য নামমাত্র দেখা করে এসেছে। মন ভরেনি। কিন্তু বয়স্ক মা , বাবার বিপদের আশঙ্কায় মনকে বুঝিয়ে নিয়েছে। ভিডিও কল-ই এখন ভরসা। নানারকম কাজে বেরনো পুরোপুরি বন্ধ। আগে মনে হোতো বাইরে এতো কাজের থেকে একটু ছুটি মিললে ভালো হয়। কিন্তু এখন !!! সবার মনে একই প্রশ্ন .... এই ছুটি শেষ হবে কবে ?
" সেটা ই বুঝতে পারছি না। মা তো ও বাড়িতে যেতেও বারন করছে। কি যে চলছে !! আর এতো বাড়ছে .... কি ভরসায় বেরবো ? " .... প্রলয়ের উত্তরে রিক্তা নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নেয়।
" কিন্তু আমি তো কারো বাড়িতে যাওয়ার কথা বলিনি আর ও বাড়িতে এখন যাবোই বা কি করে ? ওটা তো কনটেনমেন্ট জোন । আমি মিকিকে নিয়ে চিন্তিত। ওর আচরণ তুমি কি লক্ষ্য করেছো ? "
প্রলয় , একটু অবাক চোখে তাকায় !!
" কেন ? এর মধ্যে আবার মিকি এলো কি করে ? "
রিক্তা বিষন্ন হাসে " আসবে কেন বুলু (প্রলয়ের ছোট ডাক নাম ) ? ও তো প্রথম থেকেই ছিল । একই ভাবে , একই ঘরবন্দি জীবনে। বাধ্যতা বোঝার বয়স কি ওর হয়েছে ? আমরা বুঝেও বুঝতে চাইছি না। ও কি করবে ?"
" কিন্তু ভিকু তো আছে , ওর খেলার সাথি ।" .... প্রলয়ের উওরে এবারও রিক্তা করুণ হাসি হাসে , প্রলয়ের কাছে আসে ল্যাপটপ টেবিলের কাছে , পাশে দাঁড়িয়ে প্রলয়ের চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কাটে, বলে .... " সব কিছু কি ওমন নিয়ম অনুযায়ী হয় ? একজন বন্ধু ছাড়াও , ওর আরো কতো বন্ধু আছে ভাবো একবার .... স্কুলের, পাড়ার, ফুটবল ক্লাবের। আর যতোই যা হোক ভিকু তো কুকুর !!!!
ভিকুর সাথে সারা দিন গল্প, খেলা , ঝগড়া চলে মিকির । সাথে আদরের পর্বও চলে। কিন্তু ইদানীং মিকি র গরম মেজাজের তাপে ভিকুও বেশ নিরানন্দ জীবন কাটাচ্ছে। একে রোজনামচায় পরিবর্তন হয়ে ইস্তক তার মন মেজাজ বিগড়ে আছে , তারপর মিকির আদরের বহরটা ও ইদানীং কমে গেছে। এসব কথা যে ভিকুকেও ভাবিত করেছে ..... তা ওর চুপ করে সামনের দুই পায়ে মাথা রেখে শুতে দেখলেই ..... রিক্তার কেন জানি এসবই মনে হয়।
পাড়ার মাঠের হৈচৈ , এখন নৈঃশব্দ্য বুকে করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে। একের পর এক , ছোট থেকে বড় দের খেলা , আড্ডা, গল্প সব যেন মৌন ব্রত অবলম্বন করেছে ।
এই আলোচনার পর আরো বেশ কদিন পেরিয়েছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের চাপে , বিষয়টা নিয়ে ভাবার অবকাশ মেলেনি প্রলয়ের। সকালে ঘুম থেকে উঠে, রোজনামচার পর ই লগইন করে সেই যে অফিস শুরু হয় , কোন কোনো দিন, বিশেষ করে যেদিন বাজার যেতে হয় জলখাবার খাওয়া হয়ে ওঠে না। লাঞ্চ ব্রেক পেতে পেতে ৩ /৪ টে হয়ে যায়। আর লগআউট করতে করতে হয় ৭.৩০ । তখন আর অন্য কিছু ভাবার ইচ্ছে থাকে না। আজও লগআউট করার ঘন্টা খানেক আগে, একতলা থেকে রিক্তার চীৎকার কানে আসছিল , সাথে ভিকুর ভৌ ডাক। কিছু নিশ্চয়ই মা-ছেলেতে বেঁধেছে। মিকির কান্না। কি যে করে !! ওই টুকু ছেলে , তাকে-ও সামলাতে পারছে না। একটু বিরক্তি নিয়ে, সামনের ব্যালকনিতে বেরিয়ে আসে। সবে রাত সাড়ে আটটা। কে বলবে ? চারদিক, সারা পাড়ার রাস্তার যতো টা চোখে পড়ল, সব শুনশান। শুধু প্রতিটা আলোকিত বাড়ি ও ফ্ল্যাট জানান দিচ্ছে, এখনো সকলে জেগে । এখনো অতো রাত হয়নি। তবে সব যেন ভীষণ দম বন্ধ করা পরিবেশ।
" তুমি এখানে ? সেদিন বললাম মিকির ইদানীং এর আচরণের ব্যপারে, কান-ই দিলে না । জানো আজ কি করেছে ? " .... রিক্তার গলায় উষ্মা চাপা থাকে না । প্রলয় ব্যালকনি র রেলিংয়ে ভর দিয়ে রাস্তা দেখছিল , ঘাড় ঘুরিয়ে রিক্তার দিকে তাকায়, রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট এর মৃদু আলোয় , ভালো দেখতে পায় না, বিরক্তি একটু বাড়ে ..... " ওই টুকু ছেলে , কি আবার করবে ? সারাদিন ঘরে থেকে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মানছি এভাবে ভালো লাগে না, বাপি , মামনির কাছে যেতে পারছো না । তা সেই ফ্রাসট্রেশনে মিকির ওপর রাগারাগি করবে ? ৭ বছরের একটা ছোট্ট শিশু কে সামলাতে পারছো না ? তুমি কি সাংঘাতিক জোরে চীৎকার করছিলে জানো ?? ভিকু পর্যন্ত ভয়ে চীৎকার করছিলো।"
" তোমার বলা শেষ হয়েছে ? আমি কিছু বলি এবার ? "... ঠাণ্ডা গলায় রিক্তা বলে । প্রলয় উত্তর দেয় না। রিক্তা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শুরু করে .... " আমি কি পারি আর কি পারি না , তার কৈফিয়ত আমি এই মুহূর্তে দেবো না , কারণ এখন সব বিচার করার মতন অবস্থায় তুমি নেই , আমি জানি তুমি এতক্ষণ অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলে। বাট্ ফর ইয়োর কাইণ্ড ইনফরমেশন, জানিয়ে রাখছি , আমাদের একরত্তি মিকি র একটা খেলনা নিয়ে ভিকু খেলছিল , সেটা দেখে মিকি প্রথমে ভিকুর খেলার একটা লাল বল পিটিয়ে নষ্ট করেছে , তারপর ভিকুর লেজ পেঁচিয়ে ব্যাথা দিয়ে তাকে শাস্তি দিচ্ছিলো।" .... কথা শেষ করে রিক্তা দাঁড়ায় না।
প্রলয় ঘুরে দাঁড়িয়ে, রিক্তার চলে যাওয়া দেখে । হতবাক হয়ে যায় ঘটনা শুনে ।
" সরি রিক্তা। "..... প্রলয়ের কথায় রিক্তা কোন উত্তর দেয় না। এমনকি সে যেভাবে মিকিকে জড়িয়ে শুয়েছিলো , সেভাবেই শুয়ে থাকে। প্রলয়ের কথায় আজ তার রাগের থেকেও দুঃখ হয়েছে বেশি। সাংসারিক অনেক ছোটখাটো সমস্যা সে নিজেই সমাধান করে নেয়। আর অনেক ক্ষেত্রে প্রলয়ের মতামতের জন্য তাকে জানাতেই হয়, প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও, পরে সব শোনে , পরামর্শ দেয়। কিন্তু এভাবে সরাসরি দোষারোপ করতে দেখেনি। যদিও এই পরিস্থিতিতে সবাই বিরক্ত , সে বোঝে , কিন্তু তাকেও তো কেউ বুঝবে ? বিশেষ করে প্রলয় বুঝবে না তাকে ? অজান্তে ই চোখ ভিজে যায়।
সকাল থেকে কাজের মাঝে খেই হারিয়ে, আবার যখন সমে ফেরার ফুরসত মিলল , তখন রিক্তার খেয়ালে মিকি আর ভিকুর নির্ধারিত জায়গায় অনুপস্থিতি ধরা পড়লো। গেলো কই ? আবার কি বাধালো দুটোতে ? এসব ভাবতে ভাবতেই ছাদের সিঁড়ি তে পা দিল। ছাদের লাগোয়া একটা ছোট্ট ঘর আছে । পুরনো জিনিসপত্র রাখা হয়। ইদানিং ভিকু আর মিকির গোসা ঘর-ও বটে , আবার খেলাঘর-ও বলা যায়। যতটা সম্ভব চুপিচুপি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকল রিক্তা। ছাদের ঘরে চুপিচুপি উঁকি মেরে প্রথমে কিছু ই নজরে এলো না , পরে আরো মুখ বাড়িয়ে দেখল যে মিকি মাদুরে অঘোরে ঘুমিয়ে, আর তার পায়ে মাথা রেখে ভিকু ও ঘুমিয়ে কাদা। ওই জন্যই সাড়া নেই। অনলাইন ক্লাসের পর কখন দুটোতে এখানে এসে ঘুম দিয়েছে , তা রিক্তা জানতেও পারেনি। ঘরে ঢুকে,আসতে ধীরে ওদের পাশে বসে। কেমন অসহায় ভঙ্গিতে দুজনে ঘুমিয়ে আছে , মনটা ভালোলাগায় থৈথৈ হয়ে যায়। হঠাৎ চোখে পড়ে, মাদুরের একপাশে একটি পুরনো খাতা , মিকির পেনসিল বক্স চাপা দেওয়া। খাতাটা হাতে নিতেই ভিতর থেকে পেজ মার্ক দেওয়া স্কেলটা বেরিয়ে পড়ে। রিক্তা খাতাটা খোলে ..... মিকি মাঝেমধ্যে অনেক আগডুম বাগডুম লেখে , কখনো বাবাকে দেখায় । মাকে ও কখনো বা। রিক্তা বারণ করে না , লেখা যেমনই হোক, এই অভ্যাস ভালো ই । আর এখন মিকি মোটে ৭ বছরের। কি বা লেখার বয়স ?
" একি ? এভাবে এ ঘরে বসে আছো কেন ? ওরাই বা এখানে ঘুমোচ্ছে কেন ? " .... প্রলয়ের প্রশ্নে চমক ভাঙে রিক্তার। " কিছু বলছ ? " - - জানতে চায়। প্রলয় , এগিয়ে আসে , বসার সময় নেই । হঠাৎ কারো সাড়া না পেয়ে, ঘাবড়ে গিয়ে খুঁজতে খুঁজতে ওপরে উঠে এসেছে । এভাবে ওঠা যায় না, লগ আউট করাও যায় না , করেও নি , হঠাৎ খুব শান্ত, শব্দ হীন বাড়ির বাতাবরণে ঘাবড়ে গিয়েছে সে। এমনিতেই সেদিনের পর থেকে রিক্তা একটু দূরে দূরেই থাকছে। খুব অভিমানী সে। আজ থেকে তো নয়, সেই কলেজের সময় থেকেই তো রিক্তা তার চেনা।
খাতার পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে মিকির শিশু মনের ভাবনা। কিন্তু তাতে রিক্তা আর প্রলয়ের এতো চিন্তা কেন ? আসলে সেই ভাবনায় থাবা গেড়েছে বিদেশী ভাইরাস। ওতেই বাবা ও মা ভয় পেয়েছে। সেদিনের মিকির ভিকুকে শাস্তি দেওয়ার মূল কারণের আভাস-ও আছে ওই লেখার মধ্যে। দুজনে বল নিয়ে খেলছিল , আসলে টেলিভিশনের কল্যাণে সবার জানা করোনা ভাইরাসের আকার বলের মতনই গোলগাল। কাজেই ভিকুর একটা বলকে করোনা বলে চিহ্নিত করে নষ্ট করা নিয়ে ভিকুর সাথে আগাম আলোচনা করা সত্ত্বেও, ভিকু নিজের বল ফেলে মিকির বল নষ্ট করেছে ....তাই শাস্তি। আর মা তো মিকিকে বলেই যে কান মুললে খুব ব্যাথা লাগে , তাই তো ভিকুর লেজ মুলেছিল, আর তাতে ভিকু এতো চীৎকার করলো , মা এসে গেল আর ভিকুর জন্যই বকুনি, মার সব জুটলো !!!!
" আমরা সবাই কি পাগল হয়ে যাচ্ছি রে ? " .... প্রলয়ের প্রশ্নে আলয় , প্রলয়ের দাদা , কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে, ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর দেয় " এই পরিস্থিতিতে সবাই কমবেশি অবসাদগ্রস্ত। কিন্তু কাটাতে হবে আমাদের ই । কবে কি হবে , সবার অজানা। অতি ভয় যেমন খারাপ, অতিরিক্ত ক্যাজুয়াল অ্যপ্রোচ-ও ক্ষতিকর। বেরিয়ে পড়্ ওদের নিয়ে। ঘুরে আয়। বিপদ বাড়িতে বসেও হতে পারে। বরং সাবধানতা অবলম্বন করে বেরিয়ে পর একটু। ইমিউনিটি বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। সেটা তো ঘরে বসে থেকে পুরোপুরি গোল্লায় যেতে বসেছে। "
" বলছিস ? রিক্তা একদিন বলছিল রে । কিন্তু .... " প্রলয়ের কথা থামিয়ে আলয় বলে .... " ঠিকই বলেছে । ছোটদের মনের খোঁজ কে রেখেছি বল ? ওরা কোনো কিছুই ভালো করে বুঝতে পারে না। এখনকার বাচ্চাদের সমস্যা টা কি জানিস ? অনেকটাই জগাখিচুড়ি ধরন । "
" মানে ? এখন আর তখন ... প্রলয় আবারও বাঁধা পায় .... " তুলনা আসেই রে বুলু । আমরা বড়দের ব্যাপারে কিছুই বুঝতাম না, সেই সময়-ও ছিল না। ভাব একবার , সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুল , ফিরে জামা বদলে খেলার মাঠ, দেরি করলে বাবার পিটুনি আর তারপর পড়াশোনা করে খেয়ে , আবার ঘুম । এর মধ্যে বাবা, মা , কাকামণি, কাকিমা, পিসি সকলেই ছিলেন, কিন্তু তাদেরকে নিয়ে বা তাদের বড় বড় বিষয় নিয়ে ভাবার অবকাশ ছিল কি ? যতটুকু দরকার ছিল, তাতেই যোগাযোগ । কাকামণির কাছে ঘুড়ি ওড়ানোর দরকার, পিসির কাছে আবদার...মায়ের কাছে-ও বাবার থেকে কোন সম্মতি আদায়ের বায়না.... এসব ওরা পায় কোথায় ? আমাদের বাড়ি তো ছিল হট্টমালার রাজ্য। যাক ওসব ভেবে লাভ নেই রে , এখনকার সময় অনুযায়ী ওদের সামলাতে হবে। ওরা থাকে পাকাদের ঘিরে , পাকাদের মানে আমাদের মাঝে । তাই বুদ্ধি না পাকলেও , পাকামোর ছোঁয়া লাগে , ওদের বুদ্ধি দিয়ে ওদের মতন করে কঠিন বিষয় কে বোঝে , বোঝার চেষ্টা করে.... ওদের পাকা বলে লাভ আছে? আর সেই বোঝার বোঝা নিয়ে আরো বিরক্তি আসে। ওকে সময় দে , একটু খেলা কর, গল্প শোনা, উৎসাহিত করতে থাক ওর পছন্দমত বিষয়ে। নিয়ে বেরো। সাবধান হয়ে বেরিয়ে পড়। ওতেও যে সব আগের মতই হবে তা নয়, কিন্তু কিছু তো হবেই। "
" বুঝলাম। কিন্তু দাদা একটা কথা বলো দেখি, বেরিয়ে পরার উপায় যাদের নেই, তারা কি করবে ? "
" দেখ বুলু , সবার সব উপায় থাকে না। আবার কিছু না কিছু তো আছেই। সেই মতনই ভাবনাকে এডযাস্ট করতে হবে। তুই ফুটপাতের বাচ্চাদের কখনো মন দিয়ে লক্ষ্য করেছিস ? ওদের কিছুই নেই। কিন্তু খেলা , খুশি, আনন্দের অভাব নেই। এই প্রতিকূলতার সাথে লড়ছে , আবার কারো ফেলে দেওয়া পুরোনো , ভাঙা জিনিস নিয়ে মজায় খেলছে। তাহলে ? আর আমাদের ছোটরা ও দেখবি অদ্ভুত সব অ-খেলনা নিয়ে খেলে। কাজেই আনন্দ খুঁজে নিতে ওরা আমাদের থেকে অনেক ভালো জানে , আমাদের শুধুমাত্র খেয়াল রাখতে হবে , যে ওদের আনন্দ পাওয়ার মাধ্যম টা সঠিক কিনা । আর সঙ্গ দিতে হবে। " ..... দাদার কথায় আসস্ত প্রলয় সম্মতি জানায়।
" মিকি তো কতো ছোট্ট। আমাদের বাড়ির দুটোতে কি কম ঝামেলা করছে ? তবে ওই যে , ওরা তাও দুজন। মিকি তো একা । তোরা তো অন্য কিছু ভাবলি না । এখন যেটা ভাবার সেটা ভাব আর সকলে মিলে সাবধানতা অবলম্বন করে বেরিয়ে পর। দেখবি কতো ভালো লাগবে সকলের। ভিকুর-ও আনন্দ দেখতে পাবি। "
দাদার সাথে কথা বলে মনটা হাল্কা হয় প্রলয়ের। এবার একদিন মিকির জন্য, নিজেদের জন্য-ও বেরিয়ে পড়তে হবে। সেদিন ফুসফুসে ভরে নিতে হবে বাইরের মুক্ত , সতেজ বাতাস। তা জীবাণুমুক্ত কিনা , এই মুহূর্তে সত্যিই তা ভাবতে রাজি নয় প্রলয়। প্রলয় এখন একটু বেরিয়ে পড়ার ভাবনাতেই মাতোয়ারা, বেরলে না জানি কি হবে ?? ভালো-মন্দ যাই হোক , রোজনামচায় একটু তো অন্য রকম হবে .... । প্রতিদিনের এই আতঙ্ক থেকে একটু হলেও তো প্রাণ ভরে বাঁচবে !!!! তাই বা কম কি ?????
No comments:
Post a Comment