Saturday, 21 June 2025

 গরমের সব্জি বাহার


আমাদের দেশে ছয় ঋতুর ভাগ যোগ যাই থাকুক না কেন , মোটামুটি তিন ধরনের আবহাওয়ার আবেদনই প্রবল । আর তা নিয়েই চলে আমাদের নানা নিবেদন । তো সেই তিন মূর্তি হলেন গলদ ঘর্ম গরমকাল , ঝমঝমে-ছিটেফোঁটা বর্ষাকাল আর সোনা রোদ আর লেপের ওম মাখানো শীতকাল। 

      শীতকালীন সব্জির রকম বাহারের পর গরমকালের সব্জি নিতান্তই ঝিম ধরা ধরনের। শীতকালীন সব্জির কথায় চোখের সামনে সারি সারি রঙীন সব্জির ছবি ভেসে ওঠে , সেখানে গরমের সব্জি একদমই সংখ্যালঘু দলের । কিছু কিছু আইটেম কমন পড়লেও , শীতকালের উপস্থাপনা আর গরমের উপস্থাপনার বৈপরীত্য চোখে পড়ার মতন । গরমকালের সব্জির নামও বিশেষ সুবিধের নয় । ঝিঙে , পটল , ঢ্যাড়স গরমের বাজারের হিট আইটেম, কিন্তু হট্ ফেভারিট কি ?? আসলে নামই হট হ‌ওয়ার পথে প্রধান অন্তরায় !!!! পটল ব্যাপারটার নামে না যাওয়াই ভালো , কেমন একটা পটল তুলেছি এমন ফিলিং হয়। তবে হাল্কা ঝোল , তেল গরগরে রান্নায় পটলের নাম ডাক মোটের ওপর ভালই। 

  বিয়ের পর আমার নতুন ঠিকানায় আসার পর , বাবা বললেন যে পটল দিয়ে ডালনা ছাড়া কি বা এমন হয় ?? হয় কিন্তু !!!! আর সে সব খেলে পটল তুলছি , এমনও মনে হয় না । আমার মা , নিজের পরিচিত দেশোয়ালি রান্না ছাড়াও যখন তখন যে কারো কাছ থেকে নতুন রান্না শিখে , তার সাথে নিজের পছন্দের আরো কিছু যোগ বিয়োগ করে , একটা দারুণ ব্যাপার বানিয়ে ফেলতেন । আর তখন সেই আটপৌরে রান্নার পদোন্নতি ঘটে যেত । 

         তো কথা হচ্ছে পটল নিয়ে , পটল চেরা চোখের যেমন কদর , পটলের আদরও নেহাত কম নয় । আর সত্যিই নামে কি বা এসে যায় বলো তো ?? পটল ভাজা যেমন মাঝখান চিরে হয় , আমাদের জেঠিমণির( জেঠিশ্বাশুড়ি) থেকে একটু আর্টিস্টিক ভাবে পটল কাটা শিখেছিলাম ভাজার জন্য। গোটা পটলের খোসা অল্প অল্প কেটে দুই পাশ থেকে তেরছা করে কাটতে হবে , একটু গ্যাপ রেখে রেখে , অথচ পটল থাকবে গোটা , লালচে করে ভাজার পর পুরু পাতার মতন দেখাবে । কি দারুণ না ??? এছাড়াও পটল পোস্ত , পটলের তেল ঝাল , নারকেল পটল , দৈ পটল , পটলের নিরামিষ দোলমা , পটলের আমিষ দোলমা , পটল আলু দিয়ে হাল্কা কালো জিরে ফোড়নের ঝোল , পটল আলুর গামাখা চচ্চড়ি , গামাখানো ডাল(মুগ)পটল , সরষে পটল , পোনা মাছের ঝোলেও পটল দেওয়ার চল্ আছে আমাদের (কালো জিরে /সাদা জিরে উভয়েই)ইত্যাদি প্রভৃতি । 

      শীত চলে যাওয়ার মুখে এদের নাম যাই হোক না কেন ? দাম কিন্তু মোটেই ফেলনা না । আর যারা দামেই দাম দেন বা দম দেন তারা এই সময়েই বাজারের ব্যাগ বাগিয়ে এদের ব্যাগস্থ করে ফেলেন। কারণ আসল সময়ে তাদের লিস্টিতে তখন শীতকালীন মূল্যবান সব্জির লাইন !!! আমি সময় মতন আর পকেট বুঝে বাজারে বিশ্বাসী ।আরও একটা বিষয়ে বিশেষ নজর রাখি .... সময়ের সব্জির স্বাদ অসময়ে যে মাইনাস হয়ে যায় , সেটা মানি । যদিও সারা বছরই এখন সব সব্জি পাওয়া যায় !!! তবে এই গরমের সব্জি দিয়ে সুক্তো , তেতো , সজনে ডাটা-কুমড়ো-লালআলুর কম্বিনেশন ,ঝিঙে পোস্ত, ঢ্যাড়স ভাজা , ঢ্যাড়স-কুমড়োর চচ্চড়ি , সর্ষে ঢ্যাড়স, কাঁচা আমের টক ... আহা !!! শুনেই মন আর পেট কেমন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে । কাঁচাপোস্ত বাটা পেট ঠাণ্ডা করে আর তা কাঁচা লঙ্কা ও সর্ষের তেল দিয়ে মেখে নিলে তো মনও ঠাণ্ডা !!! তাই না বলো ??? আরো আছে বিস্তর !!! 

   তবে আমরা যারা ভোজনরসিক, তারা কি শীত , কি গ্রীষ্ম , কি বর্ষা .... যাই হোক , যেমনই হোক খাবারের উপকরণ পেলেই হলো , উপকরণকে উপাদেয় করে নেবার দায়িত্ব নিতে ভয় পাই না । উপকরণ অল্প হলেও ক্ষতি নেই , তা নিয়েও গল্প লিখে ফেলতে আমাদের জুড়ি নেই কো । পেট কা সাওয়াল হ্যায় না ??? খাবার জন্যই তো অনেক কিছু ... সবটা নয় নাই হোলো । কি বলো তোমরা ????

No comments:

Post a Comment