Saturday, 21 June 2025

 আজ একটা অন্য গল্প বলি .... সবাই নয় না-ই শুনলো থুড়ি পড়লো , কেউ কেউ তো পড়বেই। তো যা বলছিলাম .... আমার ছোটবেলার প্রথম পুষ্যির কথা। আমার বন্ধুরা সকলেই নামে তো বটেই , কেউ কেউ আবার রীতিমত তার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে ও চেনো। হ্যাঁ , একদম ঠিক ধরেছ আমি কুট্টুসের কথা-ই বলছি। ওর আগে কিছু পোষার শখ থাকলেও , মায়ের অনুমতি মেলেনি। তাহলে কুট্টুস -ই বা এলো কেমনে ?? সেটা ই হলো ওই কুট্টুস নামের মতোই ছোট্ট একটা গল্পের হাত ধরে। কুট্টুস ছিল একটা কাঠবেড়ালি। ওই যে ছোটদের ছড়ার বই এ দেখেছিলাম , পড়েছিলাম কাজী নজরুল এর জবানীতে.... " কাঠবিড়ালি, কাঠবিড়ালি পেয়ারা তুমি খাও ??? " সেই পরিচিত একরত্তি ছোট্ট প্রাণী।

সরস্বতী দির ছেলে একদিন রাতে বাড়ি ফেরার পথে ঝড়ে পড়ে যাওয়া ছোট্ট বাচ্চা কাঠবিড়ালি কে পেয়েছিল , আমাদের পিছনের পাড়া আমবাগানের রাস্তায়। বাড়ি ফিরে সে তার মাকে দিয়েছিল .... তারপর হাত বদল হয়ে মায়ের জিম্মায়। খাওয়া শেখেনি। আমাদের খাবার টেবিলে একটা খবর কাগজে ওকে রাখলাম.... দক্ষিণের জানলার হাওয়ায় কাগজ সহ সে উড়ে যায় আর কি !!! এতোই ক্ষীণজীবি তখন। তুলোয় ভিজিয়ে দুধ খাইয়ে তিনি ক্রমে শক্তিমান হলেন। কিন্তু আজীবন আর আহ্লাদে নিজে খেতে শিখলেন না । মা ব্রিটানিয়া বিস্কুট দুধে ভিজিয়ে নরম করে ওকে খাইয়ে দিতেন। আম কালে আমে ও রুচি ছিল, কিন্তু কবির বাণী নস্যাৎ করে পেয়ারা খেতে অরুচি দেখিয়েছিল। 

ওর জন্য কাঠের ঘর বানানো হলো , সেখানে থাকতো , জানালা বন্ধ করে ঘরের আগল খুলে দিলে আমাদের কাঁধ, মাথা আর জানালার পর্দায় দোল খেতো। মা অনেকক্ষণ ফোনে মন দিলে তার আবার ভারি রাগ হোতো , ফোনের তার বেয়ে যা তা করে , ফোন ছাড়তে বাধ্য করতো। রাগের মাত্রা বেশি হলে কাঁধে উঠে কানে কটাস !!!! ভাবো একবার কি দুঃসাহস !!!

ওকে নিয়ে ( ঝুড়ি বন্দী ) বাসে চেপে একবার মামাবাড়ি গিয়েছিলাম। বাস শুদ্ধু সবার চোখে কি কৌতুক ও কৌতূহল । তিন বছর ওকে নিয়ে আমারা মেতে ছিলাম। কসবায় ও এসেছিল আমাদের সাথেই। বাসা বাড়িতে।

ও চলে যাওয়ায় জ্ঞানত প্রথম শোক কাকে বলে বুঝেছিলাম। যারা বোঝে না , তাদের হয়তো অতিরঞ্জিত মনে হতেই পারে । কিন্তু তাতে কি আমার আর মায়ের কষ্ট কিছু কমে গিয়েছিল ??? 

আজ অনেক বছর পেরিয়ে, ফিরে দেখলাম। আরো অনেক কিছু মনে পড়ছে , কিন্তু থাক ওসব আমার নিজের কাছেই থাকলো। বলা ভালো বাকি টা ব্যাক্তিগত।

তাই ওদের যেখানে দেখি, ক্যামেরায় ধরার চেষ্টা করি । বড়ো চঞ্চল !!! সেই একই রকম স্বভাব .... বড্ড অশান্ত

No comments:

Post a Comment