বেড়াতে গিয়ে মজারু ১৪
ছোট থেকেই শুনে এসেছি বার্ধক্যে বারাণসী যাওয়ার কথা । কিন্তু সেই চল এখন আর নেই । যার যখন যেমন সময় , সুযোগ আর টানের টানাটানি চলে সে তখন সেদিকেই হাঁটা দেয় , উঠিয়ে ঝোলা । তাই বলে সবাই যে ভোলার মতন ভালো মানুষ এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। ভালো মন্দের মিশেলেই আমরা তৈরি।
তবে আমাদেরও মেঘে মেঘে বেলা অনেকটাই এগিয়েছে। যদিও আমার সাথি , তা মানতে নারাজ ।
তো বয়সের আলোচনা বাদ দিলাম।
আমরা নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে ভালোবাসি । আর দেখতে , ইতিহাস জানতেও মোটের ওপর ভালোই লাগে ।কাজেই সেই ভালো লাগার হাত ধরেই বেরিয়ে পড়া । ধর্মীয় স্থানের মাহাত্ম্য থেকেও তার ইতিহাস , আর্কিটেকচার জানি, হামলে পড়ে শুনি।
গতবারের বেনারস , এলাহাবাদ ও লক্ষ্ণৌ যাওয়া একই কারণ জন্য ।তার ব্যতিক্রম হবে কি করে ?
ট্রেনে বাপসোহাগী কন্যা এবার আপার বার্তে তার বাবার সাথে যখন শুয়ে পড়লো , আমি সত্যিই হাপ্ ছাড়লাম .... যাক্ বাবা রাতের মতো নিশ্চিন্তি !!!! কিন্তু সে যে সিনেমার ট্রেইলার ছিল .... তা বুঝলাম রাতের গভীরতার সাথে সাথেই । প্রথম রাউন্ডে , মানে ঘুম আসার আগে দেখলাম.... মানে দেখতেই হলো আমার কর্তার দোল খাওয়া , আপার বার্ত থেকে ঝুলন্ত মধ্যপ্রদেশের কিয়দংশ । দেখতে দেখতে নিজের মধ্যপ্রদেশ কতটা পিছিয়ে এসব তাত্মিক আঁক কষতে কষতে(খুব পিছিয়ে নেই , ধরে ফেলব শিগগিরই ) কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি , খেয়াল নেই। খেয়াল যখন ফেরৎ এলো !!! মানে আসতেই হলো ।তখন বুঝলাম বিপদ বেশ গুরুতর । কেন বলো তো ? আমার কন্যা ঘুমের মধ্যে তার বাবাকে নাকি অপমান করে নিচে নামিয়ে দিয়েছে । মানেটা কি ? ঘুমিয়ে স্বপ্নে অপমান করা সম্ভব ... কিন্তু !!! মোদ্দা কথা হাত পা ছড়িয়ে শোয়ার সম্ভাবনা যে ট্রেনে নেই ,সেটা জাগন্ত পুপে বুঝলেও , ঘুমন্ত পুপে কি করে বুঝবে ? কষিয়ে পা চালিয়ে দিয়েছে আর তারপরে বুঝতেই পারছো কি হয়েছে !!! কিন্তু .... কিছুক্ষণ বসার পর গুটি গুটি সে শুয়েই পড়ল !!! একেই যে বলে "বসতে পেলে শুতে চায় " একদম হাড়ে হাড়ে প্রবাদ প্রবচন মর্মে পশলো। কিন্তু কথা হলো গুটিয়ে শোয়া কি আমাদের মতো মোটা মুটির সম্ভব !!!! কাজেই ঘুম টাই লেজ গুটিয়ে পালালো । ঝিম ধরা ঝিমুনি নিয়েই চলেছি ভোরের অপেক্ষায়। ওদিকে এই সব ওঠা নামার আগেই , অত্যাধিক ঠাণ্ডায় পাশের আপার বার্ত ছেড়ে জামাইবাবুও দিদির পাশে আশ্রয় নিয়েছেন.... কিন্তু সুবিধা হলো দুজনেই খুব রোগা না হলেও মাঝারি রোগা আর ছোটখাটো। তাই no অসুবিধা । দিদি , লোয়ার বার্তে ঠাণ্ডায় সত্যিই গুটিসুটি মেরে শুয়েছিল , জামাইবাবু পাশে আসতেই দুজন perfect fit করে গেল বার্তে আর দুজন দুজনকে মৌখিক ধন্যবাদ জানিয়ে , টুক করে ঘুমিয়ে যে পড়ল , কিছূক্ষণের মধ্যেই আমরা ঝিমুনি র মধ্যেই পষ্ট শুনতে পেলাম। নাক জানান দিচ্ছিল যে !!!!
সব রাতেরই শেষ আছে । অবশেষে ভোর হলো .... বিভীষিকাময় রাত ফুরোলো কিন্তু আরো নতুন নতুন ঘটনা জমে উঠল ভবিষ্যতের ঝুলিতে । বেনারস পৌঁছলাম।
এরপরের episode একদমই সিলেবাসের মতোই । কুলি , গাড়ি , পথ সব পেরিয়ে গঙ্গা পারে হোটেল পৌঁছলাম। সবই সুন্দর ... কিন্তু হোটেলে ঢোকার মুখেই গো পরিবারের বসবাস ... একদমই ঠিক ধরেছ খাঁটাল। ছোটবেলায় আমাদের পাড়ায় একটা খাঁটাল ছিল, গন্ধটা খুব সুবিধাজনক নয় বটে ,তবে পরিচিত ।
আমার কর্তা একটু upper hand নিয়েই নিল , আসলে হোটেল যেন নদীর ধারে হয় এমন একটা গো ( জীবনে বেড়াতে গিয়ে এই প্রথম বার .... নাক কান নিজে সব মুলে নিয়েছি ) ধরেছিলাম । এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে ? বলল , বারান্দায় দাঁড়িয়ে গন্ধ শুকতে শুকতে নদীর ঢেউ গোনার অভিজ্ঞতা ভালোই হবে। শুনেও না শোনার ভান একটা উৎকৃষ্ট আর্ট । ওটা ভালো রকম রপ্ত হয়নি , তাই চেষ্টা চালালাম। এরপর সবই যেমন হয় , সে রকম চলতে থাকলো। এর মধ্যে ঘাট থেকে যখন পশরা সাজানো হাটের মাঝে আমরা ঘুরছি , তখন সাধুবেশী এক পকেটমার আমার কর্তার পকেটে হাত দিয়েছিল , কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমাদের এই ভোলানাথ একদমই ভোলাভালা নন , shopping এর লাগাম নিয়ে সতর্ক থাকতে থাকতে সতর্কতা মজ্জাগত হয়ে গেছে। সাধারণত এই সব বাজার দোকান এলাকায় মহিলা ঢুকলে , কর্তারা অনেকটা তল্পি বাহকের ভূমিকা পালন করে, পিছনে থাকেন। কিন্তু আমার সবই উল্টো পুরাণ । আমি পিছনে , আরেকজন সামনে .... অন্যবার দুরন্ত গতিতে বাজার চত্বর ছাড়িয়ে চলে , এবার অদ্ভুত ভাবে প্রথম দিন দোকান পানে এগিয়ে চলেছিল । তবে ওই একদিনই । পরের দিন অন্য একটা দোকানে পুরো সর্বহারা ভঙ্গিতে পা দুটো ছড়িয়ে দোকানের গদিতে বসেছিল । এক সময় করুণ গলায় জানালো,মানে স্মরণ করানোর চেষ্টা করলো একটা জানা বিষয় যে , আকাশ পথে মালপত্রের ওজন নির্দিষ্ট আছে ।
আর আমার ছোটদি বেড়াতে গেলেই (জায়গা বিশেষে ) পুঁতি collector নাকি পুঁতি বিবি হয়ে যায়। সে বার হরিদ্বারেও দ্বারে দ্বারে থুড়ি দোকানে দোকানে না না রঙের , না না ধরনের পুঁতি খুঁজতে দেখেছি , আতিপাতি করে । গতবছর হিমাচলের পথেও একই খোঁজ খবর করেছিলাম তিনজন। দিদির সেলাই , বোনাই , রান্না ,গোছাই ( গুছিয়ে রাখা ) সবই আশ্চর্য রকমের নিখুঁত আর অসাধারণত্ব ও অভিনবত্বের দাবি রাখে । এক ফোঁটাও বাড়িয়ে বলছি না । এখন শখ করে পুঁতির গহনা তৈরিতে মনোনিবেশ করেছে। এখানে অবশ্যই জামাইবাবু পিছেও আছেন , কখনো পাশে।
লিস্টের প্রথম দুটো বিষয়ে আমার ঝোঁক , দখল সবটা ই নেতিবাচক । সেলাই মানেই স্কুলের সেলাই এর হাসি দিদি মণির ক্লাস আর অনিচ্ছুক আমার , উতরে দেওয়ার সেলাই এই কথাই মনে পড়ে । রান , বকেয়া আর হেম .... যতোই বলো shame shame ... ওতেই চালিয়ে নিচ্ছি।
নৌবিহার , পূজো , আসপাস বেরু হলো দিব্বো । পূজা দিতে গিয়ে আমার পুরনো হাওয়াই হাওয়া হলো । নতুন একজোড়াও marketing এর লিষ্টিতে যুক্ত হয়ে গেল । যতোই ঘরে পরা চপ্পল হোক না কেন , নতুন কেনার এমন হাতে আসা সুযোগ আমি বাপু হাত ছাড়া করিনে মোটেও। সে তোমরা যা বলো তা বলো 🎶🎶🎶🎶 আমার লাগে না মনে .... ।
পরের দিন এলাহাবাদ রওনা হয়েই আমাদের গাড়ির চালককে দায়িত্ব দিলাম নিজের বুদ্ধির তালা খোলার দাওয়াই জোগাড় করার । জোগাড়ও হলো আর সত্যি সত্যিই মনে হলো .... ও খাইকে পান বণারস ওয়ালা.. খুলি যায়ে বন্ধ্ আকালকা তালা .... ছোটদি ছাড়া বাকি সবারই বুদ্ধি খুলে গেলো । খয়েরের সোয়াদটাই দিদির বুদ্ধি তো খুলতে সাহায্য করলোই না , উল্টে কষাটে স্বাদে মেজাজটাও তিতকুটে করে দিলো। মোটের ওপর দিদির কাছে পানটা বলো আর ওই famous গানটা বলো কোনোটাই খোলতাই হলো না । কি আর করা !!! ওমন তো হতেই পারে । সব ভালো যে সবার কাছে ভালোই হবে এমন তো নয় । তাই কিনা বলো ?
@শুচিস্মিতা ভদ্র
No comments:
Post a Comment