Monday, 11 April 2022





বেড়াতে গিয়ে মজারু ২৯ 


এ বছরের বেরিয়ে পড়া , অনেকটা যেন দীর্ঘায়িত বন্দী দশা কাটিয়ে ঘরে ফেরার মতন । যদিও ইতি উতি চেয়ে বিপদ আপদ বাঁচিয়ে আমরা টুকটাক ধারে কাছে ঘুরেছি । অতিমারির প্রতিটি ধাক্কার পর একটু করে ঘুরতে বেরিয়েছি । বলতে নেই ভয় থাকলেও,  সৌভাগ্য বশত ভয়ের কারণ ঘটেনি । এ বছরের শুরুতেই ওমিক্রণে কাত হলাম সপরিবারে । তারপর কন্যার পরীক্ষা ঢেউ আঁছড়ে পড়ল সংসার সমুদ্রের ওপর । খাবি খেতে খেতে কূলের দিকে এবং বেড়াতে যাওয়ার নানা জায়গার ওপর নজর দিলাম।  লক্ষ স্থির করতে পারছিলাম না । কারণ আমাদের দেশের অনেক কিছুই দেখা বাকি,  কাকে ছাড়ি আর কাকে রাখি !!!! মহা বিপদ ... এর মধ্যেই কর্তা মশাই ঘোষণা করলেন,  বিপদ এখনও সব পরিষ্কার হয়নি বটে , রাজ্যের বাইরে এখনই নয় । 🙄 

নানা উদাহরণ দেওয়া সত্ত্বেও তিনি এক কথার মানুষ ... অগত্যা হাতের কাছের অদেখা অজানার দিকে চোখ ফেরাতেই হলো । সেই মতন উত্তরবঙ্গের শুলুক সন্ধান চালু হল , নেট ঘেটে , ট্রাভেল ব্লগ দেখে , উত্তরবঙ্গের পরিচিত মানুষ জনের সাথে কথা বলে । ভিডিও র আধিক্যে এক দিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু ... স্বপ্নে হাজির বাঘ মামা । কিন্তু .... এসব পড়াশোনার চক্করে ট্রেন টিকিটের টিকি ধরা গেল না । বক্সা - জয়ন্তী এবারের মতন বাক্স বন্দী হল ।আপামর জনতা দু বছরের পর কি আনন্দ আকাশে বাতাসে বলে বেরিয়ে পড়েছেন , যেটা খুবই স্বাভাবিক। অনেকে সত্যিই ঘরের বাইরে ঘুরতে যাননি গত দু বছরে । আবার নতুন জায়গার সন্ধান ... নেট... ব্লগ...এই করতে করতে আবার নির্ধারিত ডেটের টিকিট টুক করে শেষ ... প্রায় যখন হাল ছেড়ে দিয়েছি , মনে বাজছে দুঃখের সুর ... শেষমেষ পরবর্তি নির্বাচিত জায়গার টিকিট পাওয়া গেল একটু ঘুরপথে । আর আমরাও নিজ রাজ্যের বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। 

উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্তবর্তী পাহাড়ী জনপদ দারিংবাড়ি ও ফিরতি পথে গোপালপুর অন সী । একাধারে খানিক উত্তরবঙ্গ ও খানিক দক্ষিণবঙ্গের পাহাড় ও সমুদ্রের touch ....।  মন্দ নয় , কি বলো ? তবে কথা হলো ,  ট্রেনের টিকিটে সকলের যাত্রার সময় অবস্থান পৃথক পৃথক । কন্যার সহ আমি একদিকে , কন্যার মামা-মামী আরেক দিকে আর আমার কর্তা মশাই ঝাড়া হাত পা হয়ে অন্যত্র। রাতের ট্রেন যথা সময়ে যাত্রা করল ... আমরাও নিজেদের ট্রেনের সংসার সাজিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম,  তবে এবার একটু সজাগ হয়ে ঘুম দিলাম , কারণ ট্রেনের আমাদের দুই জাগন্ত পরিজন অন্য দিকে শয়ন করেছেন।  আমার পাশের দুই সহযাত্রী পত্রপাট নিদ্রামগ্ন হলেন , তা বুঝলাম তাদের নাসিকা বহনকারী বার্তা মারফত। ঘুম - জাগরণের মাঝেই সকাল হল , সময় মতন আমাদের গন্তব্য বেহরমপুর ওরফে ব্রক্ষ্মপুরে নেমে পড়লাম। নামার আগের আলাপ চারিতায় জানলাম যে উড়িষ্যা রাজ্যের শেষ স্টেশন হল এই ব্রক্ষ্মপুর । এর পরের স্টেশন ইচ্ছাপূরম অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে । মোটের উপর আমাদের বেড়ুর ইচ্ছাপূরণ হল ওই স্টেশনের খানিক আগেই । 

গাড়ি আগে থেকেই ঠিক করা তাই , যোগাযোগ করে আমরা বাহন চালক টিটোর গাড়িতে আসীন হয়ে , প্রথমেই কাছেই একটা হোটেলে হাজির হলাম তরতাজা হতে । ব্যবস্থাপনায় আমার ভাসুর ঠাকুর। কর্মসূত্রে তিনি নানা দিকে যান । খেয়ে , স্নান করে ১১ টা নাগাদ  বেরিয়ে পড়লাম দাড়িংবাড়ির উদ্দেশ্যে । বেরিয়েই বুঝলাম আমাদের তাজা ভাবটা বেশিক্ষণ ধরে রাখা মুশকিল,  শিগগিরই তা ভাজা ভাজা হবে , এমনই রোদের তেজ । যেটা আমাদের সকলেরই জানা ছিল , মোটেও সিলেভাসের বাইরে ছিল না । শহরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চললাম।  পথে সুরুডা ড্যাম , কন্টেশ্বরী মন্দির দেখে , দুপুরের পেট পূজোর পর দারিংবাড়ি পৌঁছলাম বিকেলে । 

                                     

@শুচিস্মিতাভদ্র

No comments:

Post a Comment