Monday, 4 April 2022

 বেড়াতে গিয়ে মজারু (১০)


আমার পশু প্রেম , বিশেষ করে কুকুর , বেড়াল প্রীতি মোটামুটি সর্বজন বিদিত।তো বেড়াতে গিয়ে কি আর তার ব্যতিক্রম হতে পারে ? বেড়াতে গিয়ে যেখানে ওদের দেখা পাই, একটু কথা বলে নিই .... ক্যামেরা বন্দি করি। পাহাড়ী কুকুরের বাহারী চেহারা একদমই একঘর। আমার এই ধরনটা খানদানি বলা যায়.... মায়ের পশু ও পাখি উভয়েই সমান ভাব ভালোবাসা ছিল আর পশুর ভালোবাসার তালিকা শুধুমাত্র দুই এ সীমাবদ্ধ ছিল না। যাক্ সে কথা..... । একবার পুরীতে হোটেলের করিডরে এক বেড়ালের দেখা পেয়ে , যথারীতি তাকে ডাকা ডাকি করলাম... সে বিস্ময় মাখা দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়েই র‌ইল কাছে এলো না। কেন যে এলো না ? ভাবতে গিয়ে বুঝলাম ... আসলে  গোড়ায় গলদ করে ফেলেছিলাম  !!!! পশুদের ডাকার কিছু সংকেত আছে , সেটা follow করলে ওরা সাড়া দেয়। আমি খোদ উড়িষ্যায় বাংলা ভাষায় ওকে আয় , আয় ডাকলে ... ও শুনবে কেন ? উড়িষ্যা নিবাসী ম্যাও ওড়িয়া ভাষা বুঝলেও বুঝতে পারে , কিন্তু বাংলা ? নৈব নৈব চ।এরপর অন্য রাজ্যে বেড়াতে গেলে ওদের সাথে বার্তালাপ করি ওদের terms মেনে সংকেতে চুক্ চুক্ শব্দ করে। Response বলতে নেই... বেশ ভালোর দিকেই।

আসলে মানুষের মতো ওদের ও temperament এক এক জনের এক এক রকম। বলে লাভ নেই তো !! একবার কুদঘাটে আমার এক বন্ধুর বেড়ালকে পেটে আদর করতে গিয়ে কামড় খেয়েছিলাম আর কি !!! পরে শুনলাম তিনি খুব মেজাজি আর পেটে আদর একদমই না পসন্দ্। আমার আরেক বান্ধবী অর্চিতার বাড়িতে তো কুকুর আর বেড়ালের পুরো team আছে। ওদেরও শুনি একএক জনের ধরণধারণ একএক রকম। আমার মাসতুতো দিদির বাড়িতে গিয়ে তার কুকুরের কপালে আদর করতে গিয়ে ও .... একই অবস্থা !!! Almost ইনজেকশন নেওয়ার মতো কাণ্ড হতে হতে হয়নি। 

যাক্ গে , আসলে এ ক্ষেত্রে দেখে বলো , ঠেকে বলো আমাকে ঠেকানো বেশ মুশকিল। ওদের দেখলেই বাৎসল্য রস জেগে ওঠে। কি করি বলো ? ওমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, নির্ভরতা আর কোথায় পাওয়া যায় ?বেড়াতে গিয়ে অনেকবারই বাঁদরের বাঁদরামির সম্মুখীন হয়েছি। একবার এ্যলিফ্যান্টা কেভের সামনে বাঁদর ধেয়ে এসেছিল .... না না এবার চেপে ধরেনি...আর এসেছিল আমার দিকে... সেখানে ধারে পাশে উদ্ধার করার মতো কেউ ছিল না .... পেপসির বোতল দিতেই সে যাত্রায় রেহাই মিলেছিল। এ তো আর উড়িয়া বাঁদর নয় , যে মুড়ি নেবে !!! স্থান মাহাত্ম্য বলে একটা ব্যাপার আছে না !!! 

আর একবার কুকুরের কাণ্ড দেখেছিলাম তিরুপতি স্টেশনে। সে গল্প না বললেই নয়। কিন্তু একটু গৌড়চন্দ্রিকারও দরকার়। তিরুপতি মন্দিরে না খেয়ে পূজো দেওয়ার তেমন নিয়ম কানুন নেই। তাই তেমনভাবেই প্রথম দিন পূজো দিলাম সাড়ে চারঘন্টার  special লাইন দিয়ে। কিন্তু বাড়িতে জানাতেই , মা রেগে আগুন, তেলে বেগুন ... তাই পরের দিন না খেয়ে রিপিট টেলিকাস্ট আর তার ফল হাতে নাতে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে , গরমে ভিড়ে আমার হাল বেহাল। যাক্ এরপর পূজোর পর খাট্টা খাবার পেটে পড়তেই পেট পুরো ঠাট্টার মেজাজে .... আর আমি হোটেলে ফিরে ওষুধ খেয়ে কাত্ । এক ঘুম দিয়ে উঠে , তারপর হালে পানি পেলাম। আমার কর্তা তখন একরাশ দুঃশ্চিন্তায় বেশ ভাবিতো। কারণ .... সেই মধ্যরাতেই আমাদের ফিরতি ট্রেন যশবন্তপুর হাওড়া। তো যাক্, আমি খাড়া হলাম.... রাতে হালকা খাবার খেয়ে , আবার এক প্রস্থ ঘুমিয়ে স্টেশনের দিকে রওনা হলাম, হোটেল থেকে ঠিক করা অটো করে। অটোর চালক গলায় মোটা সোনার চেন দুলিয়ে এফএমে দক্ষিণী গান শুনতে শুনতে আর তাতে গলা মেলাতে মেলাতে রাত দেড়টা নাগাদ স্টেশন চত্বরে নামিয়ে দিলো।

পৌঁছে দেখি , অনেক মানুষ সেখানে। তবে বেশির ভাগই দেহাতি মানুষ জন , যাদের অধিকাংশই প্ল্যাটফর্মে কিছু না কিছু চাদর পেতে ঘুমের দেশে। আমরা দুজনও ( তখনও কন্যা সঙ্গী হয়নি )  একটা ফাঁকা বেঞ্চে বসলাম। হাতে প্রায় এক ঘন্টা সময়। কি করে কাটবে ? ভাবতে ভাবতেই নজরে এলো আমাদের থেকে কিছুটা দূরে এক ঘুমন্ত যাত্রী আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে আর তার মাথার পাশে রাখা থলি থেকে একটা পলিপ্যাকের  কিয়দংশ দৃশ্যমান । সেই পলিপ্যাক কিছু ক্ষণের মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করল যার অপরিসিম  অধ্যাবসায়ের জন্য.... সে আর কেউ না। এক অতি সাধারণ street dog.....নেড়ি বললে বড্ড খারাপ শোনায় কিনা !!!! তো কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই পলিপ্যাক টিফিন কৌটো সহ নতুন মালিকের মুখে দোল খেতে লাগলো। আমি ভাবলাম .... প্রকৃত মালিক কে সতর্ক করি !!! কিন্তু আমার নাক যেহেতু খুব টিকোলো নয় , আমার পাশের টিকলো নাকধারি সাথি টিপ্পনী কেটে ... অযথা ওতে নাক গলাতে বারণ করলো। কি আর করা, মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকতে চাইলেও কি পারি ?? কৌতুহল বলে একটা ব্যাপার তো আছেই । তাকালাম.... মানে তাকাতেই হলো.... চারপেয়ে তখনো মাথা , মুখ নাড়িয়ে টিফিন কৌটো খোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে.... । এবার আমার মনে অন্য সন্দেহ দানা বাঁধলো !!! প্ল্যাটফর্মের ঘুম এমন গভীর হয় ? (যদিও ঘুমিয়ে দেখিনি মোটেই )কিচ্ছুটি টের পাচ্ছে না !!! লোকটা মরে যায়নি তো ?? আকুপাকু করে ভাবনাটা জানাতেই উওর এলো .... না ঠিক উওর নয়... এমনভাবে তাকালো !!! যেন এক্ষুনি খাতা কলম নিয়ে বসিয়ে দেবে... গল্প লেখাতে। অগত্যা .... মনের কষ্ট মনে চেপে কুকুরের দিকে নজর দিলাম। সে তখন প্যাকেট -টিফিনকৌটো সব নিয়ে হাঁটা ছোটা সব শুরু করে প্ল্যাটফর্ম থেকে রেলওয়ে ট্র্যাকে ল্যাণ্ড করেছে। উল্টো দিকের প্ল্যাটফর্মে আরো কয়েকজন চারপেয়ে ও জড়ো হয়েছে.... এর মধ্যে সময় যে কোথা দিয়ে গলে গেল জানতে পারিনি .... ট্রেন আসার ঘোষণা শুনে , আমার সব কষ্টকল্পনা ব্যর্থ করে , সেই যাত্রীও জেগে , উঠে বসেছে.... এবার তার reaction দেখার অপেক্ষা.... । কিন্তু তার আগেই শুনতে পেলাম.... "এখানে বসে ওসবই দেখবে ? না উঠবে ??? "

কি আর করা, উঠতেই হলো। ট্রেনে ওঠা নিয়েও একটু ঝামেলা হয়েছিল.... Attendent ঘুমিয়ে পড়ে , আমাদের ঘামিয়ে দিয়েছিল .... অতঃপর ট্রেনে উঠতে পারলাম.... ওঠার সাথে সাথেই ট্রেন ছেড়ে দিল।


@শুচিস্মিতা ভদ্র

No comments:

Post a Comment