বেড়াতে গিয়ে মজারু ১৩
বেড়ু বেড়ু করতে যারা সিদ্ধহস্ত , তাদের বেড়ু ভণ্ডুল হওয়ার অভিজ্ঞতা যে , কোনো না কোনো সময় হয়নি , তা হলপ করে কেউ কি বলতে পারবে ? মনে তো হয় না । আমাদের যুগলের এমন বেড়ু ভণ্ডুলের বেশ কিছু অভিজ্ঞতা মজুদ আছে । সেই যে সপ্তপদীর পর মিষ্টি মধুচন্দ্রিমা যাওয়া , সে তো বটেই , তার পিছনে পো ধরে আরো অনেকবার নানা রকমের গুরুতর কারণ জন্য বেড়ানোতে দাড়ি , fullstop দিতে হয়েছে। অসুস্থতা , আত্মীয় বিয়োগই প্রধান কারণ। অসুস্থতাতে এক একবার এক একজন এগিয়ে এসেছে ... আগে কে বা প্রাণ করিবেক দান style এ । এই দলে আমার মা , শ্বাশুড়ি মা , আমার কন্যা যেমন সামিল । এই অধমও আছি । এখানে দুই মায়ের অসুস্থতা জনিত কারণ একটা সুন্দর ব্যালেন্স এর দারুন example । বিয়ের শুরু থেকেই তো একটা ব্যালেন্সের খেলা শুরু হয় , সেখানে মা-তুমি আর মা-আপনি দুজনের performance একঘর ।কেউ আর " তোমার মায়ের জন্য .ইত্যাদি প্রভৃতি ..... বলে কোমর বাঁধতে পারিনি।
এই সব কারণে বাঁধা পড়েছিল দার্জিলিং , বেনারস, মাইথন ও নৈনিতাল যাওয়া। তারমধ্যে যাবোই যাবো এই ভাবনা নিয়ে প্রথম তিনটে জায়গায় পরে ঘুরে এসেছি । ভাবনা এখনো চালু ... বুঝতেই পারছো। তবে তার মানে এই নয় যে পরেরবারের গন্তব্য নৈনিতাল ।
বাধা পড়ায় সংখ্যাধিক্যও আছে , মাইথনে দুবারের বাধা কাটিয়ে তৃতীয় বার যেতে সফল হলাম , দার্জিলিং ও দুবার বিফলে গিয়েছিল যাওয়া। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমরা ওই কুসংস্কারটা নস্যাৎ করতে কসরত করতেই থাকি । যেতে নাই পারি তবে , যাব না কেন ?
আর যে কোন বেড়াতে যাওয়ার আগে আগেই একটা পণ্ড গীতি শুরু হয় হালকা করে। যেমন দিল্লী যাওয়ার আগে দেশ জুড়ে সোয়াইন ফ্লু । এদিকে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে .... চলো তবে ,ভ্যাকসিনকে আলিঙ্গনই সই । তিন মক্কেল ভ্যাকসিন শরীরে ভরে নিয়েই রওনা দিলাম । হিমাচল প্রদেশ যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে তো হৈ হৈ কাণ্ড , রৈ রৈ ব্যাপার .... যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ফুলওয়ামা কাণ্ড ঘিরে। তারপর ?? Tight security তে বেশি fight না করেই দারুন ঘুরু, ঘুরু হলো।
গত বছর ফেব্রুয়ারি নাগাদ বেনারস ও আরো কিছু জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে pnr status এ নজর করতে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম !!! কেন ?? কেন আবার ট্রেন বাতিল !!!!! যাহ্ কি হবে ? এসব ক্ষেত্রে আমি অতো ঘাবড়ে যাই না। আমাকে ঘাবড়ে দেওয়ার মতো অঢেল বিষয় আছে market এ... শুধুমাত্র এসবে ছাড় আছে। যাক্ গে পরে ব্যবস্থাও হলো । তৎকালিন ব্যবস্থাপনায় যুগ যুগ জিও তৎকাল।আর অতি অবশ্যই আছে আমাদের মুশকিল আসান দাদার ( আমার ভাসুর )হাতযশ। এছাড়াও বেড়ু পণ্ড হওয়ার মোক্ষম করোনা ভাইরাস just একটুর জন্য কান ঘেঁসে বেরিয়ে গেছে .....
আমার কর্তা মশাই বিজ্ঞানের ছাত্র হলে কি হবে ? আধ্যাত্মিক মনোভাবাপন্ন ও অনেক ক্ষেত্রে , আবার সংস্কারও কিছু আছে। যার ব্যাখ্যা নেই বুদ্ধিতে ।
কেন এই দুই প্রসঙ্গে র অবতারণা ... বলছি সংক্ষেপে । বিয়ের আগের কোর্টসিপ পর্বে , কোথায় হারিয়ে গেছি শুনবে ? ডাকাত কালিবাড়িতে( কলকাতার মেয়ে হয়েও চিনতাম না ) , দক্ষিণেশ্বরে ,বেলুড়ে .... । অন্য common কিছু জায়গাও ছিল । বলতে হবে নাকি ??? তো এসব মন্দির পরিক্রমার বিবরণ শুনে , আমার জামাই বাবু খুব চিন্তিত মুখে জিজ্ঞাসা করেছিলো .. " হ্যাঁ রে , তোকে আবার সিনেমার মতো মন্দিরেই সিঁদুর পরিয়ে দেবে নাকি ?? আমরা তো আনন্দ বাজার পত্রিকা থেকে আনন্দের সাথে তোদের আলাপ করিয়ে দিলাম , বিয়ের দিনক্ষণও দেখে ঠিক করে রেখেছি.... "
কি আর উত্তর দেবো এর ?? আমি তখন নিজেই confused ....
আর কুসংস্কারের তালিকাটা এখনো আমার পুরোপুরি আয়ত্তে আসেনি । তবে কিছুটা হয়তো বা কমেছে । তবে যাত্রা পথে ডিম নাস্তি । সেবারের কথাই ধরো না কেন !!! তখনো ট্রেন বাতিলের খাস খবর আসেনি ... আমাদের সহযাত্রী ছোটদি আর জামাইবাবুর সাথে ট্রেনে রাতে খাবারের মেনু দূরাভাষে ঠিক করতে গিয়েই সতর্কবার্তা শুনলাম । আণ্ডা লেনা মানা হ্যায় ।
আমরা কে কোন পদ রান্না করে ট্রেনে রাতের ভোজসভা বসাবো ... তার আলোচনায় প্রথমেই বাদ পড়ল ডিম কষা । ঠিক হলো (আমি)বাসন্তী পোলাও ,(ছোটদি) আলুর দম আর বেগুন ভাজা তৈরি করে নিয়ে যাবো। পরের দিন ট্রেন বাতিলের দুঃসংবাদ আমাদের নাড়িয়ে দিলো । ছোটদি রাতে ফোনে বলেই ফেলল ... দেখ পাখিতে( নাম উচ্চারণ করবো না , তাই পাখি )যা পাড়ে , তা দেয় , তার নাম নিতেই ট্রেন বাতিল । সাথে নিলে না জানি কি হোতো বল্ দেখি ???? আরেকজন মুখ গম্ভীর করলো আমাদের দুই অবিশ্বাসী দিদি -বোনের কথোপকথনে.... ।
তবে রওনা দেওয়ার পরের দিন সকালে মুঘলসরাই স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে ওই পাখির ডিমের অমলেট আর পাউরুটি আমার কর্তা মশাই নিয়ে এলেন। তখন যাত্রা almost গন্তব্য বেনারসে পৌছানোর পথে। আর সমস্যা হওয়ার কথা তখন ছিল না বোধহয় ... কি বলো তোমরা ????
বেনারসে গিয়ে এবার আমি অবাক !!! ঝগড়া বাঁধানোর নূন্যতম প্রয়াস না করেই(পরে ঝগড়া অন্য কারণে হয়েছে ) সন্ধ্যায় নৌকা থেকে আরতি দেখে , দশাশ্বমেধ ঘাটে নেমেই আমার ভোলানাথ শাড়ির দোকানের পানে ধাওয়া করে এগিয়ে চললো।আমি ভাবছি ... এ কি বাবা বিশ্বনাথের মহিমা ? জয় বাবা ভোলানাথ ।
কিন্তু কাশির বিখ্যাত গলির গোলকধাঁধায় পাক খেতে খেতে আমার ভোলানাথ স্বমহিমায় ফিরে এলো জলদি , উপরন্তু convert করলো প্রায় ঋষি দূর্বাসা এ । আমিও খানাখন্দে আছাড় খেতে খেতে, সামলে নিয়ে এগিয়ে চললাম। শাড়ির কি মহিমা !!! ব্যোম ভোলে !!! অবশেষে মিলল শাড়ি , একটার পর আরেকটা শাড়িতে হাত দিতেই শুনলাম ... না ঠিক হুংকার নয় , অনেকটা যেন আর্তনাদের মতো শোনালো। বড্ডো মায়া হলো মুখের দিকে তাকিয়ে , মনটা আমার আবার বড়োই নরম কিনা !!!! থামলাম.. মানে আপাততো সেদিনের মতো থামলাম । কি ঠিক করেছি না ??? কি বলো ? সবে তো সেদিন পৌঁছেছি .... ধীরে ধীরে ....
@শুচিস্মিতা ভদ্র
No comments:
Post a Comment