Wednesday, 18 December 2024

থানা ছুঁয়ে দেখা

 নানা জায়গার অভিজ্ঞতা নানা রকম । আমরা সাধারণত যে সব জায়গা যাওয়া আসা করি , সেখানেও নানান ঘটনা ঘটে , কিছু মজার , কিছু চিন্তার।  

জীবনে বেশ কয় বার থানাতে হানা দিয়েছি। তিনবার এটা সেটা হারিয়ে তা নথিভুক্ত করতে missing diary করতে গেছি । এই কিছুদিন আগে এক ভিন্ন কারণে সেখানে হাজিরা দিলাম। 

কিছু চিন্তাজনক কারণজন্য মেয়েকে যার কাছে রাখতাম তাকে বরখাস্ত করেছিলাম। সে বাড়ি এসে পরেরদিন হামলা স্টাইলে হুংকার দিলো ... সে রোগা পাতলা হলে কি হবে তার ওই রণচণ্ডী রূপে আবির্ভাবে আমরা মোটা আর মুটি যারপরনাই মুষিক তখন। আমার শরীরে তখন ভীতি জনিত কাঁপন ধরে গেছে । ছোটকালের বান্ধবী পারমিতা সহ আরো অনেকেই বললে ...  সাবধান সাবধান সাবধান !!!

পরামর্শ মতন জায়গা মতন কথা হল ... শুনে তেনারা 👮‍♂️👨‍✈️অভয় দিয়ে আমাদের লেখা চিঠির ভিত্তিতে সব লিপিবদ্ধ করবেন বললেন .... যিনি লিখি পড়ি করবেন তার পিছনে দেখলাম মেঝেতে থাবা গেড়ে এক ছিঁচকে চোর বসে আছে । বসার স্টাইলের সাথে চিড়িয়াখানার খাঁচার ভিতরের হালুমের মিল মালুম হচ্ছিল , কিন্তুক সে পরে খাঁচা থুড়ি লকআপে চালান হলেও তখন বাইরেই বিরাজমান ছিল। আর আসে পাশে জেনারেল ডাইরী লেখাতে আসা আমাদের মতন কজনা একই রকম ছানাবড়া চোখ মেলে বসে ছিল । পুরো অন্য জগত। 

এর মধ্যেই আরেক মহিলা পুলিশ এসে তার জিম্মার কেসগুলি কে কোথায় সেট করবেন তা নিয়ে ছানবিন চালিয়ে গেলেন । সবটাই মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল । হেনকালে মন দিয়ে চিঠি পড়ে নিয়ে মাথা নাড়িয়ে আমাদের ঘটনা কে লিপিবদ্ধ কারী ভদ্রলোক বললেন .. গলা গম্ভীর...." বুঝলাম ... ডাক্তার বাবু তাহলে স্ত্রীর দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছেন , স্ত্রী দুর্ব্যবহার করছেন । " 🙄 

আমি এমনিতেই কম শুনি , ওই পরিবেশ আরো সব ঘেঁটে দিয়েছে তাই বেশ পরে ব্যপারটা বুঝে প্রথমে আঁতকে উঠলাম ... সন্দেহ নিয়ে তেনাকে জিগালাম ... " চিঠিতে কি লিখেছ ??? 🤔 যদিও চিঠির বয়ান আমার জানা ... চিঠি আমি পড়েছি , ওখানে পদার্পণের ঠিক আগে .... কি বুদ্ধিমান পতিদেব আমার  ... আগে ভাগে পড়াশোনা করিয়ে দিয়েছে  !!!! আমি যথারীতি পড়তে চাইনি , তিনি বলেছেন ...  না না পড়ে দেখো !!! 

আরেক অফিসার ব্যপারটা সামলে দিলেন , কর্তামশাই বললেন ... স্ত্রী তো আমার পাশেই।  

এই কথা বলে কি বোঝাতে চাইলেন কে জানে ?? কোথায় প্রতিবাদী হবেন তা না !!! 

আরেকটু হলে কি হোতো বলো দেখি ??? 

কাল কর্মস্থলে এই গল্পের ভিত্তিতে এমন বিদগ্ধ আরো গপ্প ভাঁড়ারে জমা হল .... সে না হয় পরে বলা যাবে কখনও।

এসো হে বৈশাখ

 এসো হে বৈশাখ এসো এসো 🎶🎶🎶🎶 ... এই সাদর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গরম গরম  গ্রীষ্মের আগমন হতে না হতেই গান বদলে যায় ... দারুণ অগ্নিবাণে রে !!! কি মুশকিল বলো দেখি !!! তবে আমার সব সময়ের ভালবাসার মাস শীত । এ বছরের শীতে নানান আপদ বিপদের ভারে জর্জরিত থাকলেও শীতের প্রতি প্রেম ভালবাসা কমার প্রশ্নই নেই আমার কাছে । গরমের নানান কষ্টের গল্প লেখার বদলে আজ তার মধ্যেও খুঁজে পাওয়া ভাল র কথা লিখতে বসেছি । আমার মনে হয় কোন ব্যক্তির , কোন বিষয়ের সব কিছু নেতিবাচক হতে পারে না । হয়ত আমি ভুল হয়ত আমি ঠিক ... জানা নেই। আমার এ ভাবে ভাবতে ভাল লাগে। সব সময়ই যে ওমন ভাবে ভাবতে পেরেছি তা নয় , তবে চেষ্টা করি । 

গরমের শুরুতে ভোরের আমেজটা just অসাধারণ থাকে । হাল্কা ঠাণ্ডার মাঝে নরম রোদ আর সাথে পাখিদের কলকাকলি। এক সময় হঠাৎ খেয়ালে ভোরের দিকে ছাদে হাঁটার চেষ্টা করেছিলাম ( গত বছর দুয়েক গরমের শুরুর দিকে [সাময়িক ] ) ... কতশত পাখি যে আকাশ জুড়ে উড়ে যেত ডাকতে ডাকতে তা বলার নয় । মনে হতো বা ওদের দখলে তখন জগত সংসার । 

বিকেলের কালবৈশাখীর পরের ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাঁপটা যখন চোখে মুখে লাগে ( মাইনাস ধুলো 😄 ) আহা !!! ধুলোর জন্য হোক বা ঠাণ্ডার আমেজে চোখ বুজিয়ে ফেলি কিনা ভেবে দেখিনি , ভাই 🙏🏻 । তবে সেটা দারুণ অনুভূতির জনক বৈকি !!!

এ সময়ের উপযোগী ফলের ভাঁড়ার পূর্ণ করে দিয়েছেন স্বয়ং উপরওয়ালা। সব রসে টইটম্বুর। সে অমৃতফল হোক , কি তরমুজ, কি আনারস । আরো রসে বশে বাঙালির থুড়ি সারা দেশবাসীর ( গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চল) রসনা তৃপ্ত করতে হাজির রসালো সব ফল। কেটে খাও , শরবত বানিয়ে খাও। কাঁচা আম পোড়া শরবত ।পাকা আমের শরবত । ফলের যদি অগ্নিমূল্য হয় , তাহলে চলতে পারে পাতিলেবুর শরবত ... আহা !!! গরমের দিনে প্রাণ জুড়িয়ে যায় না ? এ ছাড়াও আছে দই এর সুস্বাদু ঘোল । এ ঘোল খুব উপকারী আর সাদামাটা । কেন যে দ্বর্থক হিসেবে এমন একজনকে বেছে নেওয়া হল কে জানে ??

গরমের দিনের হাল্কা খাবারের খুব আদর কদর , অন্য সময়ের থেকে । সে নিম-বেগুন হোক , হাল্কা কালোজিরে - বড়ির মাছের ঝোল হোক , লাউ দিয়ে মুগের ডাল , পাঁচফোড়ন দিয়ে পাতলা মুসুর ডাল , তেতোর ডাল , টক ডাল , শুক্তো, আমের টক .... সব রান্না গুলো যতোই হাল্কা হোক , খেতে কিন্তু একঘর। আর পেটের জন্য বন্ধু শুলভ। 

বিকেলে কখনও কখনও আকাশের ঈশাণ কোণে ঘন মেঘের দেখা , যা আস্তে ধীরে সারা আকাশে ছড়িয়ে তুমুল কালবৈশাখী ... যদিও এখন চারিদিকের পরিবর্তনের ছোঁয়া থেকে আবহাওয়ারও রেহাই মেলেনি তাই কালবৈশাখীর দেখা মিলতে দেরি হয় ... তাও একদিন আসে তো বটেই । ক্যালেন্ডার মেনে আর কোন কাল আসছে এখন !!!

ঝড় বাদলের পরের আরাম আরাম ব্যাপার টা বেশ দারুণ লাগে তাই না ??? এ সবের পরে আছে ... গরমে জল ছপাছপ স্নানের আরাম । দিনের শুরু হোক , শেষ হোক  ... যখন তখন । হাল্কা সুতির পোশাক, গা ভর্তি ট্যালকম পাউডার, ঘামের ওপর পাখার হাওয়ার ছড়িয়ে পড়া আরাম ... আর গরমের আরামে আলাদা মাত্রা যোগ করতে আছে অবশ্যই আইসক্রিম .... আর আছে গরমের বিকেলের গঙ্গার ধার নাকি আমাদের দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর লেক ... তাহলে গরমের সবটা বোধহয় খারাপ নয় । তবে তাও আমার ভোট পাবে সেই শীতের দিন - রাত । 

আসলে সবার ভাল লাগার শর্ত যে আলাদা রকম । তাই সব ভাল সবার দ্বারা গ্রাহ্য হয় না। তাতে ভালোর ভালত্ব কি কমে ?? একদমই নয় । 😊😊😊😊

#copied 

...Suchismita Shipi Aunty

চিত্র বিচিত্র

 " আরে তোর আঁকা ছবিতে আমরাই বাদ ??? " ----- মায়ের প্রশ্নের উত্তরে একটুও না ঘাবড়ে পুপের জবাব  ... " ধরলো না তো !! কি করবো ?" 

ইদানীং তো আঁকায় আক্রান্ত আমাদের পুপে । যেখানেই যান আমার ফিদা হোসেন আঁকতে বসেন ... অনেকেই বেশ ফিদা ওনার গুণ পানায় । আর আমি ভাবি 🤔... যে কদিন করছে করুক । 

আঁক কষতে বসলে তো আঁকসি বাগিয়ে ধরেও সংখ্যা যথাস্থানে প্রয়োগ হয় না !!! একই অঙ্কে যা যা শেখা হোলো তার সব গুলো apply করেও বেচারী করো মন পায় না ।  🙃😛... গুণ করতে গিয়ে mix & match করে ওতে খানিক খানিক গুণ এবং অন্য আরো জ্ঞানের যোগ করে , বাবাকে তাক লাগিয়ে দেবে ভাবল  !!! কিন্তু 🤐 বাবা তো খুশি হলোই না , উল্টে রেগে আগুন হয়ে বলেই দিলো "তুই একটা বে-গুন !!!! " কি দুঃখের কথা বলো দেখি .... মাকে বলেছে পুপে...." ওমন করলে আমার বুকে কষ্ট হয় , মা 🙄" 

আমাদের কালে বকুনি খেলে কোথাকার কষ্ট কোথায় উঠতো ---- সত্যিই বলছি একদম মনে নেই কো । 

তো অঙ্কন চলুক ... কিন্তু বাদ দেবে তাতে আমাদের  ??? এই তো সেদিন একজনের প্রশ্নের উত্তরে ঘটা করে যা রাষ্ট্র করে এসেছে সে চত্বরে , কোথায় লুকোই সেই জায়গা খুঁজছি সেদিন থেকে !!! 

আর কিছুই না , প্রশ্ন ছিল নেহাৎই সহজ সরল ... " আচ্ছা পুপে দিদি , কে তোমাকে বেশি আদর করে মা নাকি বাবা ??? " 

উত্তর একদম মার কাটারি !!! কিন্তু হাতে হ্যারিকেন টাইপের ---

 " আমাদের বাড়িতে সবাই সবাইকে আদর করে .... মা আমাকে, আমি মাকে , বাবা আমাকে , আমি বাবা কে .... " এই ওবধি গাড়ি লাইনেই চলছিল ... এর পর 🤫 অন্য ট্র্যাকে ... বেলাইনে গড়গড়িয়ে এগলো আর প্রশ্ন যে করেছে এবার তার গড়াগড়ি দিয়ে হাসির পালা !!! আর সে কি একা হেসে পার পেলো ?? ওদিক পানের সবাই ওই খরচে হেসেই খুন হলো -----  

তো এমন বর্ণনার পর কিনা ছবি থেকে এমন দুজন আদর-কারীদের অদরকারি মনে করলি ??? 

" না না এই তো দেখো তোমাদেরও আলাদা এঁকেছি " 

পুপের বুদ্ধি আছে দেখা যাচ্ছে ... আর (সান্ত্বনা?) পুরস্কার পেয়ে আমরাও খুশ্ ।।

দোষ কারো নয় গো মা

 মা একটা কথা বলতেন , আগে দেখনদারি পরে গুণবিচারী , কথাটা খুব একটা মানতে না পারলেও,  কার্যত অনেক ক্ষেত্রেই এই সত্য উপলব্ধি করেছি আগেও , এখনও।  

মজার কথা হল , সাজ গোজ ব্যাপারটাতে বরাবরই আমার দৌড় বেশ পিছনে । তখনকার জামিনী শাড়ির বিজ্ঞাপনের ট্যাগ লাইন আমার ছিল পছন্দের সাজের definition ... তোমাদের অনেকেই যারা আমার সমসাময়িক , জানো সেই বিজ্ঞাপিত বাণী ... ছোট্ট টিপ , হাল্কা লিপস্টিক আর শাড়ি । 

সাজের ক্ষেত্রে রাতের অনুষ্ঠান আর বিয়ে বাড়িতে ওষ্ঠরঞ্জনী হালকার জায়গায় হয়তো গাঢ় হয় , এই যা পার্থক্য । 

সাজের ব্যাপারে আমার সুমিত্রা দি র ( সুমিত্রা সেন ) গানের ক্লাসের (তখন শিখতাম )এক দিদি , শক্তিরূপা দি , পেশাগত ভাবে সিনিয়র গাইনোকোলজিস্ট একবার বলেছিলেন ... ব্যাগে একটা ফেস ওয়াস আর লিপস্টিক রাখি , সারাদিনের কাজের ফাঁকে সুযোগ মতনই ফ্রেস হয়ে , একটু লিপস্টিক লাগিয়ে নিই । শুনে  ভাল লাগলেও,  নিজের ঘরের চৌহিদ্দির বাইরে লিপস্টিক লাগানোর ক্ষমতা আমার সেদিনও ছিল না , আজও নেই। 

কলেজে পড়ার সময় সাজার সুযোগ ছিল , মায়েরও হাল্কা সাজে আপত্তি ছিল না , কিন্তু যাদবপুরের ফেস্ট ছাড়া অন্য সময় সাজন গোজন হোতো না আমার দ্বারা , ফেস্টের সময় সেজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরিচিত এক কাকুকে দেখে উল্টো পথে ঘুরে ঘুরে বাস স্ট্যান্ড গিয়েছিলাম,  এখন ভাবলে হাসি পায় 😄

মা চিরদিন ই ছিলেন ফিটফাট । তবে মাকে কখনো সাজতে দেখিনি  তেমনভাবে । শুনেছি বাবা অফিস ( ১০টা - ৫টা ) থেকে ফেরার আগেই মা , সুন্দর করে চুল বেঁধে , সারাদিনের পরা শাড়ি পরিবর্তন করে অপেক্ষা করতেন । মাকে আমি সব সময়েই পরিপাটি দেখতাম । বিপরীতে মায়ের মেয়ে বাড়িতে থাকলে সাক্ষাৎ শেওড়াগাছের বাসিন্দা মনে হোতো মায়ের । বলতেন ... কি যে ভুতের মতন থাকিস বাড়িতে ? তো আমার ঘরে ওমনই ভাল লাগে , মা রাগ করতেন । 

     আমার স্কুলের বন্ধু হৈমন্তীর মা , কাকিমা ছিলেন খুব সাদাসিদে , ঘরে থাকতেন অনেকটা আমার মতন , ভবানীপুরের বাড়িতে একদিন সবাই যখন বেরিয়েছে , কাকু অফিসে, হিমু স্কুলে আর ওর দাদা কলেজে ... আগমন এক সেলস গার্লের , কাকিমা দরজা খুলেছেন হাতে ঝাঁটা .... কিছু বলার আগেই কাকিমা ... " বৌদিমণি , দাদাবাবু কেউ নেই , পরে আসবে কেমন? " 🙃😇 

পত্রপাট সেলস গার্লের প্রস্হান ।

তো ভুত / পেত্নির মতন থাকার এটা হল গিয়ে ইতিবাচক দিক । তাই না ?? খতিয়ে দেখলে প্রতি বিষয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে । যে দিকের পাল্লা ভারি , আমরা সেটাই মনে রাখি , এই যা !!!

সাধারণত ঘরের থেকে সামান্য উন্নত সাজে , পাড়ার দোকান আর একটু দূরের বাজারে যাই । ধরো একটা মোটামুটি ভদ্রস্থ পোশাক , চুলটা ক্লিপ করা যাহোক করে । 

কোভিড এর প্রথম লকডাউনের কিছু আগেই পাড়ায় খুলল এক নতুন মেডিসিন সপ্ । টপ করে ওই সময় তারা হোম ডেলিভারি শুরু করে , বাজার জমিয়ে নিল , দোকান থেকে যে নিত্য ওষুধ সরবরাহ করে , তাকে ছাড়া কাউকেই চিনি না , এমনকি সে মুখেও মুখোশ,  কাজে সেও খুব পরিচিত নয় । মাস খানেক আগে কিছু মেডিসিন বাড়িতে না দেওয়ায় , পাড়ার দোকান থেকে ফেরার পথে , ওষুধের ডাক খোঁজে হাজিরা দিলাম ... অচেনা আমাকে দেখে খুব একটা পাত্তা তো দিলই না , উপরন্তু বেশ খারাপ লাগা নিয়েই ফিরলাম ... ছোটবেলায় পড়া একটা কবিতা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ... কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়াছে পায়ে , তা বলে কুকুরে কামড়ানো কি মানুষের শোভা পায় ? " 

গত মঙ্গলবার , আবারও আমি ওই দোকানে গেলাম আমার একটা ওষুধের খোঁজে...ব্যবহারে আকাশ,  পাতাল প্রভেদ চোখে পড়ল , কারণও পরিষ্কার বুঝলাম  আর বুঝে মনে মনেই হাসলাম ... বুঝতে পারলে কি তোমরা ?? পারোনি তো !!! খোলসা করি তবে ... মঙ্গলবার আমি ওখানে গিয়েছিলাম কলেজ যাওয়ার পথে , সাজ গোজ ছিল একেবারেই জামিনী শাড়ির ট্যাগ লাইন অনুসারে ... তাতেই আমাকে কোন এক তালেবর ঠাউরে এত মিষ্টান্ন সদৃশ ব্যবহার।  

 মুখে যাই বলি না কেন , আমরা এখনও দর্শনকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি , আরো একবার প্রমাণ পেলাম...

#দোষকারোনয়গোমা



টীকা র টিকি

 " টীকা " শব্দটা নতুন কিছুই নয় , কিন্তু হঠাৎই নতুন get-up এ আমাদের দরবারে হাজির।  নেবো কি নেবো না ... এই দ্বিধায় ধরাধামের জনতা বেশ ভাবিত । আসলে টীকা বলতেই ..... ছোট্ট কালের কথা মনে পড়ে কি পড়ে না ... এমন একটা বোধ হয়। তো কথা হল , তখন টীকা নিয়ে টিক টিক করার ব্যাপারটাই missing ছিল।   কে আর তখন  ছোট্ট  সত্তার মতামত নিয়ে , তাকে  মানুষ বলে গণ্য করেছে !!! ধর তক্তা , মার পেরেক স্টাইলে কোলে কোলে টীকাকরণ কেন্দ্র বা শিশু বিশেষজ্ঞের দরবারে নিয়ে গিয়েই খেল খতম ।  কি নিষ্ঠুর !!! এরপরও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ... চকোলেট,  লজেন্স নামক টোপ দিয়ে .... । অনেক আপত্তি জানিয়েও লাভের লাভ কিছুই হয়নি !!! কোনও বাঁধা দানই ধোপে টেকেনি ।😔

   কিন্তু পরিবর্তনের হাত ধরে এখন নানা বয়সে , নানা রকম টীকার প্রচলন হয়েছে নিজেকে আরো খানিক টিকিয়ে রাখতে ... আর এখন আমরা বেজায় বড় হয়েছি , তাই মতামতের মূল্য আর কেউ না দিক , নিজে তো দিতেই পারি !!! 

    বাজারে এলো স্লীভহোল জামা । স্লীভলেস আগেই ছিল , এ তার ওপর এক কাঠি । একটু উকি , টুকি স্টাইল  বটে ।এর ডিজাইন দেখে আমার মনে হয়েছিল এ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য একদম আদর্শ । স্লীভহোল নামটা আমার দেওয়া , ও নিয়ে ভাবার কিছু নেই কো !!! আমার ছোটদি ওই জামা পরিহিত এক ললনাকে দেখে ভয়ানক রেগে বলেছিল ... " গরমের রোদে হাত গুলো কেমন বিকট রকম আধা খ্যাচড়া sun burn হবে বল তো ??? 😡 কথাটা বেশ ভাবনার । কিন্তু সে ভাবনা ভাবার সুযোগ পেলাম কই ??? আর তার পর পরই সারা জগত জুড়ে কি হৈ চৈ , কি ভয়ানক পরিস্থিতির ভাবনা সবের দখল নিয়ে নিল  !! ভয়ানক ভাইরাসবাহি অতিমারি।ভ্যাকসিনও হাজির , দুরকম । 

   কিন্তু নিলেই যে কেল্লা ফতে ... ওমন ভাবার কারণ কোথায় ?? ভালো preparation er পরও পরীক্ষা ভাল হয় না , ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফলাফল গুবলেটের নজির প্রচুর ... তাতে কি পড়াশোনার পাট উঠে গেছে জগত থেকে ? এও তাই ... জীবনে কোন কিছুই নিশ্চিত নয় যেখানে , সেখানে সামান্য টীকা যে এবারের বিপদের থেকে পুরোটাই রেহাই দেবে এমন ভাবাটা বাড়াবাড়ি নয় কি ???

এই কারণ জন্য অনেকেই ভাব সাগর সাঁতরে চলেছে তো চলেছেই ... যাবো কি যবো না , ভেবে ভেবে হায় রে .... 

   আরো একটা কারণ আছে বটে 🤣🤫

ভাবো , ভাবো ... এই তো একদম ঠিক লাইনে ভেবেছো । ৪৫ বছরের age group টা খুলে দিয়েই কাল হয়েছে , ওটা যদি ৩০+ হতো দলে দলে মহিলা মহল হাজির হোতো ... কিন্তু  বয়সের ওই সংখ্যাতেই আটকে আছে অনেকে । চুপিচুপি বলি আমি আর আমার এক বান্ধবী প্রথম দফার টীকাতে টিক মেরে এসেছি ... টীকা দিতে গেলাম সপ্তাহ দেড়েক আগে .... অনেক খোঁজাখুঁজির পর টীকা করণ  উপযুক্ত ( কিছুটা😒)পোষাক পাওয়া গেল । কেন্দ্রে গিয়ে দুকান জুড়িয়ে গেল বটে !!! মুখোশধারী মেডিক্যাল / প্যারা মেডিক্যাল অফিসার যখন বললেন ... " আপনাদের ৪৫ হয়েছে তো ??" 

মুখে বিগলিত হাসি যদিও মাস্ক বন্দী , মনে মনে বললাম... কটা টীকা দেবেন দিন না কেন ? কোনো আপত্তিই নেই , ভয় নেই,  যখন দেবেন , যেভাবে দেবেন ... সবেই রাজি ,আমি আজি ।" 

বিশেষজ্ঞ(?) বলছে প্রথম ডোজ নিয়ে বিপদ আছে , ৬/৮ সপ্তাহের পরের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার  দুই  সপ্তাহ পর তা কার্যকরী কিন্তু তাতেও বিপদ আছেই 🙄🤔 ।সোনার কেল্লার মন্দার বোসের মতন বলতে ইচ্ছে করছে .... লে হালুয়া !!! নাকি লে ভ্যাকসিন 😶

 বাড়ি ফিরে whatsapp group এ ছোত্তকালের বন্ধুদের এই ঐতিহাসিক টীকাদান জানাতেই ঝড় বয়ে গেল ... কয়েকজন বলেই ফেলল আমরা এখনও ছোট বটে !! তবে আমি কি কেলাসে ঠিক মতন উত্তীর্ণ হইনি ??? আতঙ্কিত হতে হতেই এক বান্ধবী হাল ধরল, আমিও হালে পানি পেয়ে নিশ্চিন্ত হলাম বটে ... সে বান্ধবীর এক কথা বয়স তো একটা সংখ্যা মোটে !!! এ নিয়ে কচকচি ?? মনটাকে সবুজ রাখ না বাপু ... এই না বলে আমার বন্ধুনী তার খানকতক সবুজ ও অবুঝ ছবি group এর আঙিনায় সাঁটিয়ে দিল ... 

অতএব বন্ধুগণ ভাব সাগর পেরিয়ে তীরে উঠে পড়ো .... দলে দলে যোগ দিয়েই ফেলো !!!

Power cut

 কবিগুরু  সুরে সুরে যেমন বলেছেন " এসো হে বৈশাখ এসো এসো "... আবার এমনও বলেছেন ... "দারুণ অগ্নিবাণে রে !!! " তবে গীতবিতানে প্রকৃতি পর্যায়ের পর্যালোচনা করলে কিন্তু দেখা যায় বর্ষার বরিষণের অঝোর ধারা ঝরে পড়েছে বারংবার। তাতেই মনে হয়েছে কবি হয়তো বা বোলপুরের বৃষ্টি সর্বোপরি বর্ষার প্রেমে মাতোয়ারা ছিলেন । হবে না ই বা কেন ... বর্ষার বৃষ্টি ধারায় সমগ্র প্রকৃতি যে সতেজ হয়ে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরে ওঠে , মেতে ওঠে । এ দিকে গ্রীষ্মের ঘর্মাক্ত কলেবর নিয়ে আর যাই হোক কাব্য হয় না সাধারণের । বিশ্ব কবির ভাঁড়ারেও  গরমের বন্দনা নেহাত ই অল্প সল্প  !! তবে হক কথা হল এখনকার তপনের প্রখরতা মারাত্মক রকম বৃদ্ধি পেয়েছে !!! সেই সাথে অনেকদিন পরে ,  আমরা যারা আশিতে স্কুলে যেতে শুরু করেছিলাম তখনকার মতন যদি আঁধার রাতের হ্যারিকেন ( যার পাট আর নেইকো) পর্বের কিছুটার পুনরাবৃত্তি হয় তো গল্প পুরো জমে ক্ষীর !!! 

গত বুধবারে রাজ্য থুড়ি দেশ জুড়ে ধর্মীয় ছুটি ( প্রায় প্রায় সকলের ) ছিল। মঙ্গলবার রাতের আঁধারের বিভীষিকা তখনও আঁধারে ই বিরাজমান ... পরেরদিন ভোরে ওঠার পাট নেই ভেবে আনন্দ নিয়ে শুতে গেলেও ... পরের ভোরের বদলে মাঝরাত থেকেই পাড়াময় সকলে জেগে উঠে ঘুমের বদলে ঘাম সহ রাত কাটালাম। 

কারণ জানাতে ফোনের দরবারে CESC হাজির। সাথে আগাম জানিয়ে দিলেন তারা দুঃখিত। ট্রান্সফর্মার দুম ফটাস !!!! দু তরফের গাফিলতির গল্প থাকলেও ভোগান্তি সকলের আর সারাইকারীদের ভোগান্তি যে চূড়ান্ত তা বলা ই বাহুল্য। 

এমন আঁধার রাতে আমাদের ছোটকালে আমি মায়ের সাথে গানের লড়াই খেলতাম ... স্মৃতির ওপার থেকে এদিকের মা-মেয়ের দিকে চোখ ফেরালাম। মেয়ে আমার ,  তার জন্ম ইস্তক লোডশেডিং এর গপ্পো ই শুধু শুনেছে এবারে প্রত্যক্ষ করে যারপরনাই আতঙ্কিত!!! বেচারী র ঘামের গুঁতোয় গলা বসে জ্বর এসে গেছে। একেই সূজ্জি মামার রাগত দৃষ্টিতে এ সপ্তাহের শুরুতেই তিনি লু লাগিয়ে sweet home এ রয়েছেন বিশ্রামের আর ঘ্যানোর ঘ্যানোর করছেন ।

তো সেদিন গরম গরম রাতের আঁধারে গানের লড়াইয়ের রিপিট টেলিকাস্ট শুরু করেই হোঁচট খেলাম ... ঘর থেকে লোকাল গার্জেন জিগাইলেন ..." মা মেয়ে কি পাগলে গেলে ?? " মূর্তি মান রসভঙ্গ !!! সবে দরদ দিয়ে গান ধরেছিলাম ঘাম ভুলে ... " রাত এখনও অনেক বাকি 🎶🎶 ।" দিলো জল ঢেলে ... আগে দিত না কিন্তুক!!  টাক নেড়ে তাল দিত 😡 । যাক ওসব কানে গেলেও মনে নিতে নেই । আর সত্যিই কি দারুণ গান নির্বাচন করেছিলাম বলো !!! তখন সত্যিই রাত অনেকখানি বাকি ছিল । 

যাক এর আরো কিছু পর আলো আমার আলো ওগো গাইবার মতন আলো এলো .... তবে যেই গিয়ে পিঠ খাটে ঠেকিয়েছি না ঠেকিয়েছি .... আবার তিনি হুস করে চলে গেলেন মন পুরো টুকরো টুকরো হয়ে ঘামে দুঃখে ভিজে একাকার হয়ে গেল !!! আর মনে বল পেলাম না ... নির্জীব হয়ে শুয়েই রইলাম। পুপে এবার গরম কে কাঁচকলা দেখিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ওদিকে তিনিও নাক মারফৎ ঘুমের জানান দিলেন । আমি একাকী জাগন্ত। আবার পাখা চলমান হতে এবার ঘুম দিলাম । কিন্তুক দেড়ঘন্টার মাথায় পাখাও বন্ধ হল আর জাগন্ত হয়ে দেখি ভোর হয়েছে । ৫ . ১০ ঘটিকা । আবার তিনি এলেও সাড়ে ছয় টার দিকে নেই হয়ে গেলেন। তখন আমরা কেমন হতাশ হয়ে আশা ছাড়া হয়ে ঘেমে নেয়ে গপ্প ও দৈনন্দিন কাজে লেগে পড়লাম।  পুপে দেবী তখনও ঘুমিয়ে আছেন ... এই সব যাওয়া আসা র তোয়াক্কা না করেই। এরপর আরো আসা যাওয়ার পাট চালু থাকতে থাকতেই একদম আধা বাঙালি স্টাইলে দুপুরে মেয়ে আর বাবা কে হাত পাখার বাতাস সহ খাবার টেবিলের দুদিকে বসিয়ে খাওয়ানো হল এই শর্তে ... যে , আমি বাতাস খেতে খেতে খাবার খাবো !! কিন্তুক  ওদের ( CESC ) তর সইল না ... ওমনি সব সারাই শেষে পাখা চালু হল । খাবার খেলাম বটে তবে হাত পাখার বাতাস টা আপাতত pending রইল । পরের ক্ষেপে ওটা আগে খেয়ে নিতে হবে । কারণ ভিতরের খবর ... এ বার আমরা ছোটবেলার মতন লোডশেডিং সংক্রান্ত নস্টালজিক হওয়ার বিস্তর সুযোগ নাকি সকলেই অল্প বিস্তর পাবো ।

শাড়ি কাহন

 ছোটবেলার খেলার সাথি ছিল দু বাড়ি পেরিয়ে থাকা সংযুক্তা। ছাদে ছাদে বয়ে  চলত কথার মেল ট্রেন। হতচ্ছাড়া ফ্ল্যাট বাড়ি মাথা চাড়া দিল ... ছাদ বার্তালাপ বন্ধ হল ।  মন খারাপের তোয়াক্কা কে করে ওই বয়সে ?? বাড়ি বাড়ি বাড়াবাড়ি যাতায়াতের মধ্যেই দিন যাপন চলতে লাগল। 

পুতুল খেলার সাথে সাথে  স্কুল টিচার খেলা ছিল কমন । আর তাতে শাড়ি পরা মাস্ট।  সেই শুরু !!! সংযুক্তা যদিও আমার থেকে ১১ মাসের ছোট ছিল কিন্তুক শাড়ি পরত দুরন্ত। মায়ের দুখান শাড়ি দুজন পরে আর গামছা দিয়ে মাথায় খোপা করে আমরা টিচার টিচার খেলতাম। সেই শুরু আমার শাড়ি প্রীতি।

ভয়ানক রকম শাড়ি পরেও প্রীতি থেকে তা কখনোই ভীতি তে পরিণত হয়নি। কতবার শাড়ি পরে বেকায়দায় পড়েছি , যখন খুলে গেছে  পথে ঘাটে ( সে সব আরেক গপ্পো) 😄!!! 

শাড়ি কেনার খেয়াল অনেক পরের ... বলা ভাল বিয়ের পরের সংযোজন।  আগে সুযোগের আর ট্যাকের বিস্তর সমস্যা ছিল। সমস্যার রেশ এখনও আছে , তবে স্বাকার হলে চুপচাপ ফুলে ছাপের পদ্ধতি চলে চোরাগোপ্তা ভাবে । 

গতকাল zee5এ একখান শাড়ি সংক্রান্ত ওয়েব সিরিজ দেখলাম। গল্প সাধারণ । কিন্তু শাড়ি জড়িয়ে তা আমাকে জড়িয়ে ধরল .... বিশেষ এক শাড়ি পৈঠানী।  যা মহারাষ্ট্রের ট্র্যাডিশনাল শাড়ি। পৈঠান অঞ্চলের শিল্প। এই শাড়ির আঁচলের এক বিশেষত্ব হল  এই যে এখানে টিয়া অথবা ময়ূরের কল্কা  থাকে। টিয়ার ডিজাইনের মূল্য ময়ূরের থেকে কম। আমার দিদির ছেলে মজা করে বলেছিল ... " কাকের পৈঠানি ডিজাইন নেই মাসি ?   তার মূল্য আরো একটু কম হোতো  তবে !!! " 🤫

তাঁতে হাতে বোনা হয় রেশম আর সোনার সুতো দিয়ে। তাই তার দাম আকাশ ছোঁয়া। গল্প এক পৈঠানি শাড়ি বোনা কারিগরের। যার নাম গোদাবরী।

এই শাড়ির কথা প্রথম শুনি আমার বিবাহ পরবর্তী বান্ধবী জিনিয়ার কাছে আমাদের মুম্বাই যাওয়ার আগে। মুম্বাই গিয়ে এ দিক ওদিক খোঁজ লাগিয়ে খান দুই তিন পৈঠানি কারখানায় গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরেছিলাম । আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০১০ সালে যখন মুম্বাই গিয়েছিলাম তখন ওর দাম শুনেছিলাম ৫০০০/- থেকে শুরু। শুরুর দাম শুনেই মোর বক্ষ দুরু দুরু 🤪 ... এখন মূল্য কোথায় উঠেছে তার খানিক নমুনা ওই সিরিজেই পেলাম । চক্ষু ছানা বড়া করে জানলাম সর্বোচ্চ মূল্য নাকি লাখের ঘরে এখন .... কয় কি ??? হরি বোল !!!!

পরে সেবার , মুম্বাই ডে ট্যুর করতে গিয়ে মুম্বাই নিবাসী এক বাঙালি পরিবারের সাথে আলাপ হয় । তাদের কাছে শুনি , ওরাজিনালের বদলে সেমি পৈঠানি কিনলে দাম ওতো হবে না । 

সে যাত্রায় অন্য দুখান শাড়ি কেনার পর পৈঠানি বিহনে ঘোরার পালা সাঙ্গ করে  ঘরে ফিরে আসি।

আমার মুম্বাই নিবাসী ছোটবেলার আরেক বান্ধবী এষা, পরে আমার অনুরোধে মুম্বাই থেকে সেমি পৈঠানি কিনে এনেছিল ... 

অনেক বছর পর ওই ওয়েব সিরিজ স্মৃতিতে উস্কে দিল ...

চক্ষু চড়কগাছ

 বয়সের সাথে সাথে শরীরের গতি প্রকৃতির অদল বদল হতেই থাকে। নতুন কিছু নয় বটে , তবে যখন যার হয় তার কাছে ভয়ানক রকম নতুন 🤫। কল কব্জা বিকল না হলেও গড়বড় করছে বিস্তর।  বিস্তারিত সার্ভিসিং জরুরি হয়ে পড়ছে। 

কিছু বছর ধরেই এমন নব নব উৎপাতে এক একবার চিতপাত হচ্ছি , আবার খানিক মন থেকে মেনে নিয়ে তা সারাই এর দিকে মনোনিবেশ করছি।

হালে মাস দুয়েক ধরে চোখ নিয়ে আতান্তরে পড়েছি। চোখে জল , চোখে বেদনা আর এমনিতেই অনেক কিছু চোখে পড়ে না তা ওমনিতেও সামিল হয়ে ঝাপসা পানা দেখে ভয়ানক গোলমাল করে ফেলেছিলাম ক্রমাগত ... একদিন মেয়েকে নিয়ে বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার পথে তিন তিনবার তিনজনকে চেনা ভেবে হাসি বিনিময় করার পর মেয়ে শুধরে দিলে ... বললে ... কাকে শুক্লা মাসি বলছ ??? ... আবার কাকে দেখে চিনতে পারছ ভাবছ ??? এ তো অচেনা !!!! 

এ দিকে ফোনে মন আর ল্যাপটপ ল্যাপে না হোক প্রায় প্রায় ল্যাপে নিয়ে ঘোরাঘুরি বিস্তর বেড়েছে !!! অগত্যা অগস্ত যাত্রার বদলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের দুয়ারে হাজির হলাম । তিনি পুরাতন প্রেসক্রিপসন দেখে আর এখনকার চোখের ছানবিন করে দেখলেন। বললেন ... 2017তে চোখের প্রেসার বাড়ার দরুণ যে আইড্রপ দিয়েছিলেন তার নিত্য ব্যবহারে উর্ধগামী চোখের প্রেসার এখন ঠিক জায়গায় ঘাটি গেড়েছে ( যদিও শারীরিক উচ্চরক্তচাপ উর্ধ্বগামী থাকে সময়ে সময়ে) । আমি বরাবর কথা মেনে চলার দলে ( বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই , সব নয়কো 🤫)

প্রেসার যদি ঠিকঠাক তাহলে এমন ধারার কারণ ??? আরো শুভদৃষ্টি যুক্ত পরীক্ষার পর চিকিৎসক জানালেন , চোখের পাওয়ার বৃদ্ধি প্রাপ্ত আর সাথে ল্যাপটপ জনিত কাজের বাড় বৃদ্ধি এর মূল কারণ !!! বুঝলাম বয়সের বৃদ্ধির হাতযশ আছে , কারণ বিগত 2016 তে ল্যাপটপ জনিত কাজ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হলেও চক্ষু তখন বয়সের গোলোযোগ ঘটার সীমান্ত অতিক্রম করে নাই।

তবুও 2017 সালের গ্লকোমা যে আর বাড়াবাড়ি করেনি ... তা ভেবে ভারি ফুর্তি হল। 

চিকিৎসক আরো সাবধানী হয়ে আই ফিল্ড টেস্ট করতে দিলেন। এ পরীক্ষা 2017তে হয়েছিল । 

পরীক্ষিত হতে গেলাম যথাস্থানে।  একচোখে ঠুলি পরিয়ে একখান মেশিনে মাথা ঢুকিয়ে ঠুলিহীন চোখে আলোর জ্বলে ওঠা ( এদিক ওদিক থেকে আসা আলোর বিন্দু) মেশিনের মাঝে ঠুলি বিহীন চক্ষু স্থির রেখে দেখে মেশিনের সাথে তার ( wire)  সহযোগে যুক্ত বটন প্রেস করে জানাতে হবে। এ ভাবেই এক এক চোখে পরীক্ষা হবে মিনিট ১০ করে মোট ২০ মিনিট।  বটন টেপার সাথে সাথেই শব্দ হবে । এক চোখে ঠুলি পরে এই সব টেপাটেপি করতে করতে মাঝে ঘুম হাজির !!! টেকনিশিয়ানের ডাকে জাগরিত হয়ে আবার আলোর উপস্থিতি গোনাগুনি শুরু করলাম । এক সময় মনে হচ্ছিল অনন্ত কাল যেন বসেই আছি আর গুনে ই চলেছি !!

এক সময় শেষ হল পরীক্ষার পালা। পরে জানলাম রিপোর্টে খানেক চিকিৎসকের কথার রিপিট টেলিকাস্ট হয়েছে। 

রিপোর্টের ভিত্তিতেই তিনি চশমার কাঁচে ব্লু ফিল্টার লাগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। সাথে দিলেন গুটি কতক চোখ সংক্রান্ত নিদান । চোখের শুকিয়ে যাওয়া কমার  ড্রপ বদল হল। চোখ  blink করে নাকি তার যোগ ব্যায়াম করা জরুরি , সাথে ফোন আর ল্যাপটপের ব্যবহার কমানোর নির্দেশ।  তা কতকটা সম্ভব কেউ কি জানো ???? 

নতুন রূপের চশমা হাজির ... বাকি নিদান ও বিধান মানার চেষ্টা চালিয়ে যেতে ই হবে !!! এই যা !!!!

একে তো চোখ দুখান ছোট্ট, তাতে গোলুমলু হয়ে তা দেখা যায় না !! হাসলেন তো বুজেই গেলেন !!! তাতে যদি দেখার সমস্যা যুক্ত হয় , তাহলে সে দুঃখ রাখব কোথায় ??? গল্পের বই পড়া ছাড়া তো বেঁচে বর্তে থাকা খুবই চাপের !!! চাপজনক বটে !!!

Wednesday, 10 July 2024

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৭

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৭

রাবাংলার শান্ত পাহাড়ি পরিবেশ ছাড়তে মন না চাইলেও আমাদের ওখানে থাকার মেয়াদ ফুরিয়েছিল তাই আমরা সময় মতন  শান্ত সমাহিত পাহাড়ী জনপদ রাবাংলা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। 

আবার পাহাড়ের পাকদণ্ডী , কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ,পথের পাশের  নাম না জানা অযত্ন লালিত ফুলের শোভা দেখতে দেখতে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে চললাম। ঘন্টা দুই আড়াই পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম সন্ড্রুপসে স্তুপা দর্শনে । প্রবেশদ্বার থেকে টিকিট কেটে স্তুপার দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলাম পথের একপাশে সারিবদ্ধ  নানান রঙের মন্ত্র লেখা পতাকা । মা - মেয়ে খানিক রঙ মেলান্তি খেলায় মেতে উঠলাম। বেড়াতে বেরলে আমাদের সুপ্ত অনেক ছেলেমানুষী মনের গহীন থেকে বেরিয়ে , আমাদের অবাক করে দেয় । আমাদের পরিধেয় র সাথে রঙ মিলিয়ে পতাকা বেছে তার সামনে দাঁড়িয়ে ছবিছাবা তুলে স্তুপের সামনে হাজির হলাম !!! কনকনে ঠাণ্ডা আর খানিক সিঁড়ি ওপরে উঠে আমরা হাঁপিয়ে কাপিয়ে একশেষ। বিশেষ করে আমি । শরীর জানান দিচ্ছিল জলদি জলদি পাহাড়ের বেড়ু সেরে ফেলতে হবে । এখানেও যথারীতি বৌদ্ধ ধর্ম গুরু পদ্মনাভ র বিশালকার মূর্তির নিচে এক বৌদ্ধ মনাস্ট্রির প্রেয়ার হল। প্রেয়ার হলের মধ্য দিয়েই পদ্মনাভ র সামনে পৌঁছনোর সিঁড়ি । এখানে ভিতরে বাইরে অসংখ্য সিঁড়ি র ভুলভুলাইয়া !!! ওপরে উঠে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া পুরো কাঁপন ধরালেও বেশ ভাল লাগল। যদিও মেঘের চাদরে সব ঢাকা পড়ার জন্য আসল সৌন্দর্য দেখা দিল না। অন্য এক ভ্রমণার্থির মুখে শুনলাম, ওখান থেকে সামনে বিস্তারিত কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন মেলে। দুর্ভাগ্য আমাদের কাঞ্চন দা দেখা দিলেন না এবার । নামার সময় প্রেয়ার হলের একপাশের টেবিলে রাখা অসংখ্য প্রদীপের আলোর স্নিগ্ধ  রূপ ভারি ভাল লাগল , ওমন নিরিবিলি পরিবেশে । বেলা তখন বেশ খানিক এগিয়ে গেছে , বেড়ানোর সাথে যুক্ত আমার খাই খাই বাই তখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে , কারণ সকালের ৯ টার জলখাবার হজম হয়ে গেছে অনেক আগে । বেলা তখন বেশ বেশি !!! এরপর নাকি চারধাম দর্শনের পালা । আমাদের বাহন চালক বিজয় ভাইয়া র মতে চারধামের আগে পথেই পৈটিক ধামের পূজা হবে । চললাম এগিয়ে , এরপর  পথের পাশের এক ছোট কিন্তু গোছানো ছিমছাম খাবার হোটেলে আমরা পেট পূজো সেরে নিয়ে চারধাম পৌঁছলাম বিকেল ৩.৪৫ এর কাছে । 

এক সাথে বদ্রিনাথ, রামেশ্বরম , জগন্নাথ ধাম , দ্বারকাধামের ,  আদলে তার ছোট্ট মিনিয়েচার সহ , মহাদেবের জ্যোতিরলিঙ্গের মন্দির সব মিলিয়ে এক মন্দিরের মেলা । প্রসস্ত চত্বরে নানান রঙ বাহারি ফুলের সমারোহের মাঝে বিশালাকার ভোলা নাথের মুর্তির সামনে বিস্তারিত চত্বরের নানান মন্দির । 

 পড়ন্ত দিনের শেষে ঠাণ্ডার প্রকোপ বাড়ছিল আর সাথে অসংখ্য সিঁড়ির চড়াই পেরিয়ে ওপরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শারীরিক কষ্টের ছাপ বোধহয় পড়েছিল মুখের আয়নায় । মন চাইছে না মানতে , এদিকে শরীর চাইছে বোঝাতে যে সে ঠিকঠাক কাজ করছে না !!! এক সময় আমার লোকাল গার্জেন গর্জন না করেই শান্ত কন্ঠে আমাকে ক্ষেমা দিতে বললেন । তখনও বেশ কিছু মন্দির ঘুরে দেখা হয়নি ।আমি খুব প্রতিবাদী নই  , তার উপর আবার একেবারেই সিলেভাস বহির্ভূত হেঁপো রুগী টাইপ আচরণ সারা শরীর জুড়ে প্রভাব বিস্তার করছে .... অগত্যা প্রসস্ত চত্বরের সামনে এক বিশালকার ঘন্টার সামনে ধপাস হলাম। আমার ভোলানাথ (?) এর ভয়ানক ভক্তি , তিনি শিব শম্ভু র দর্শন করবেন না তা কি হয় ??? কন্যা আমার জিম্মায় নাকি আমি কন্যার জিম্মায় !!! রইলাম , কে জানে ?? তিনি আরও কিছু  সিঁড়ি পেরিয়ে ভোলে বাবার দর্শন করে ফিরলেন আমাদের কাছে।

সব দেখাশোনা র সাথে বিস্তর ছবি তোলার পালা সাঙ্গ করে পরবর্তী গন্তব্য পেলিং এর পথ ধরলাম আমরা। ক্লান্ত শরীর তখন ঘরের উষ্ণতা র জন্য উন্মুখ হলেও সামনে তখনও ঘন্টা দুয়েকের আঁধারের ঘেরাটোপে বন্দী পাহাড়ী পথের পাকদণ্ডী। 

বেশ একটা গা ছমছমে পথের মাঝে একবার চা পান বিরতি নিলাম। সেখানে আলাপ থেকে পেলিং থেকে ফেরত আসা দুই বাইকার ভ্রমণার্থি দ্বয়ের সাথে । তারা  নানান ঘোরাঘুরি করছে বাইকের ভরষা য় ,  টিকিট পেলাম নাকি পেলাম না তাকে তোয়াক্কা না করেই।  তবে এ কথাও ঠিক ওনাদের ভাবনা আর আমাদের ছাপোষা মানুষের বেড়ানোর ভাবনা সমান্তরাল , সমান নয় । ক্লান্তির সাথে অদ্ভুত এক প্রাপ্তির খুশি দেখেছিলাম ওদের চোখে মুখে । আমরা ও রসে বঞ্চিত তাই ট্যারা হয়ে চায়ের কাপে মন দিলাম ওনাদের কথা শুনতে শুনতে । এক সময় দুই ভিন্ন ও বিপরীত পথ ও ভাবনায় ভাবিত আমরা আর ওনারা আবার পথে নামলাম, উভয়ের গন্তব্যবিপরীতমুখী। চা তথা কথিত এনার্জি দায়ক পানীয় , তা পান করে নতুন উদ্যমে আঁধার নামা পাহাড়ী পথে আমরা এগিয়ে চললাম। 

আবার সেই পাহাড়ী  চড়াই পথে আঁধার ঘেরা রাতে আমাদের পথ চলা শুরু হল । মাঝে মাঝে পাহাড়ী জনপদ এর আলো পেরিয়ে আবার আঁধারের মাঝে হারাতে হারাতে পেলিং এর দিকে এগিয়ে চললাম। চলতে চলতেই এক সময় দেখলাম আমার কন্যা আগের বারের মতন গুটি শুটি মেরে আমার কোলের ঘেঁসে বসেছে। ভাল লাগল যেমন , তেমন মজাও লাগল। এখন আর সেই ছোট্ট টি নেই যদিও , তবে এখনও মা ছাড়া তার চলে না । যেটা খুব স্বাভাবিক।  ফেরার পর এক ভ্রমণ পাগল দিদির কাছে শুনলাম রাবাংলা তে নাকি ভূতের দেখা মেলে । সেখানে মেলাই ভূত !!! তবে সত্যিই বলছি ... ওমন কোন ভৌতিক অভিজ্ঞতা ঘটেনি । এমন কি যে দিদি এই তথ্য প্রদান করল , সে নিজেও খোঁজ  খবর করেও সন্ধান পায়নি । ওখানে গিয়েও হোটেলের রিসেপশনে শুনেছিল যে তেনারা আছেন বটে !!! কিন্তুক সদ্য আগত অতিথিদের সাথে দেখা সাক্ষাত করেনি জানান দিয়ে । 

আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় তারা ই বা যায় কোথায় পাহাড় ছাড়া ? কিছু কি আর বাকি রেখেছি আমরা মানুষেরা  !!! ফাঁকা আর নিরালা র সন্ধান পেলেই তো আমরা বাক্স গুছিয়ে ফাঁকা স্থান ভরিয়ে ফেলছি  !!!! 

যাইহোক  , এক সময় পেলিং নজরে ধরা দিল ... তখনও আমরা পাহাড়ী পথের বাঁকে । দূর থেকে আলোর জোনাকি জ্বালানো পাহাড়ী শহর দৃশ্যমান হল। চিনিয়ে  দিলেন আমাদের বাহন চালক বিজয় ভাইয়া। অবশেষে আমরা আপার পেলিং এর হোটেল সামথেনলিং এ পৌঁছলাম সন্ধ্যা ৭.৩০ টা র সময় ।

হোটেলের ঘরে  ঢুকে আপাদমস্তক কাঁপুনি ধরে গেল !!! বাপ রে কি ঠাণ্ডা !! কিন্তুক আগের রুমহিটার জনিত ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে এ দিকের আমাদের লোকাল গার্জেনের ভয়ানক আপত্তি। একদম গর্জন করে থামিয়ে দিলেন বটে 🥺 । বুঝতেই চাইল না যে রাবাংলার হোটেলের ঘরের থেকে পেলিং এর হোটেলের ঘর অনেক বড়। তাই কোনা কানাচিতে ভাল রকম ঠাণ্ডা জমে আছে । কে আর কবে আমাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে ??? আজীবন দেখে দেখে মন পাথর হয়ে যেতে যেতেও যাচ্ছে না 😭। আমার কথা তখনই শোনা হয় যখন লোকাল গার্জেনের সাথে বিষয়টা মিল খায়। 

যাক দুঃখের কথা বেশি বলা অনুচিত !!! ওখানে দু রাতের সংসার ভাল করে গুছু করে ফেললাম। এবার পেটপূজো না করলেই নয় । তাই চা ও টা খেয়ে গুটি গুটি বিছানার ডবল কম্বলের মাঝে সিঁধিয়ে গেলাম সাথে আনা গল্পের বই সহ। ওদিক থেকে বাণী নাকি নির্দেশ জারি হল ... ঘুম দিলে চলবে না রাতের খাবার খেতে হবে। .... এটা একটা কথা ?? আমি ঘুমালে খাব না ??? এতদিন ঘর করে  আমার খাওয়া নিয়ে সন্দেহ ? আমি ঘুমিয়ে পড়ে , খাব না ??? আলবাৎ খাব । জেগে উঠে খাব। যত রাগ হোক , মা বলতেন খাবারের পরে রাগ করতে নেই। মায়ের অনেক কথা মেনে নিয়েছি ভাল না লাগলেও ( আখেরে ভালই যদিও হয়েছে ) কিন্তুক এ কথা খান মেনে তো নিয়েইছি, মনেও নিয়ে রেখে দিয়েছি । যাক কথা বাড়ালাম না । 

যথা সময়ে খাবার খেয়ে কনকনে ঠাণ্ডা জলে হাত মুখ ধুয়ে দাঁত কাপাটির বাজনা শুনতে শুনতে বিছানার ডবল কম্বলের ওমে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।  ভোরে ঘুম ভাঙল কর্তামশাই এর ডাকাডাকির জেরে। ধাতস্ত হওয়ার আগেই টেনে নিয়ে গেল বারান্দায় । 

দূরে দুদিক বিস্তার করে কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন জানালো সুপ্রভাত।  মনটা ভাল লাগায় ভরে গেল। ঘুমিয়ে শরীরটা ঝরঝরে হয়ে গিয়েছিলই, কাঞ্চন দা দেখা দিয়ে মনটাও ভাল করে দিল । 


Thursday, 30 May 2024

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৬

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৬

গ্যাংটক থেকে আমরা চললাম রাবাংলার দিকে। কর্তামশাই যদিও সিকিমে বেশ কয়েকবার এসেছেন কিন্তু তিনি সিকিমের একই জায়গা গুলোর মধ্যেই গোল গোল ঘুরেছেন নানান ক্ষেত্রের বন্ধুদের সাথে । তেনার সাথের এত বছরের অভিজ্ঞতার রেশ ধরে বলতে পারি বিস্তর গাইড সদৃশ ভাবমূর্তির উপস্থাপনা করেই আর নতুন কিছু তার দেখা হয়ে ওঠেনি সেই সব ভ্রমণে । রাবাংলা আমাদের দুজনার কাছেই অচেনা ও অদেখা। পথ চললাম দুপাশের পাহাড়ী জনপদ, পাহাড়ী সৌন্দর্য আর নির্বাচনের নিদর্শন দেখতে দেখতে । বেলা গড়িয়ে বিকেল হল । রাবাংলার পথে শুনেছিলাম পড়বে বিখ্যাত টেমি চা বাগান। কথা ছিল আমরা সেখান ঘুরে নিয়েই রাবাংলার হোটেলের দিকে রওনা দেব। সেই মতন পথের দুপাশের চা বাগানের শোভা দেখতে দেখতে মুগ্ধতার রেশ কাটাতে না কাটাতেই আমাদের বাহন চালক বিজয় ভাইয়া একখান মোড় ঘুরে প্রসস্ত রাস্তার এক পাশে গাড়ি পার্ক করলেন। নামতে নামতেই পথের বিপরীতে একই সাথে  দেখতে পেলাম বড় করে লেখা ও পাহাড়ী ধাপে ধাপে নেমে আসা দুটিপাতা, একটি কুড়ি সমৃদ্ধ রাশি রাশি চা গাছ। ইদানিং সব কিছুতেই ভালবাসা জাহির করার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে , তাই হয়তো আসল ভালবাসা কম পড়িয়াছে 🤫 । প্রকৃতি প্রেমীকে , অঞ্চল প্রেমীকে আলাদা করে  বলে দিতে হয়না যে প্রকৃতিকে, অঞ্চলকে সে ভালবাসে , তবে এখন এটাই দস্তুর। সেই মতন দেখলাম বড় বড় হরফে ভালবাসার প্রদর্শিত লিখন। I love Temi 😃.... সে সব হরফ জড়িয়ে হেলে দুলে খান কতক ছবি তুলে ফেললাম। এ সব ক্ষেত্রে নিজেদের ছবির থেকেও আমার কাছে প্রকৃতির ছবি অগ্রাধিকার পায় । ছবি তোলার পর দেখি সন্ধ্যার আঁধার নামব নামব করছিল !!! পাহাড়ী পথের আঁধার বেশ গা ছমছমে । চা বাগান থেকে বেরিয়ে একটু চা পান বিরতি নিয়ে ফেললাম সাথে ফেসবুকের কল্যাণে বাগানের দিকে চায়ের কাপ ধরা হাত শূন্যে তুলে এক কায়দাবাজী ছবিও তুলে ফেললাম কর্তামশাই এর নির্দেশে। তিনি ইদানিং ছবি তোলার নানান  ধরনের রকম বেরকমের সমঝদার হয়েছেন ফেসবুক পরিবারের হাত ধরে । টেমি চা ফ্যাক্টরির নির্ধারিত দোকান থেকে অল্প করে চা কেনা হল। আবার পথ চলা শুরু করলাম আঁধার নামা পাহাড়ি পথে । উদয় শঙ্কর সরণী বেয়ে আমরা রাবাংলার দিকে চললাম। আমার কন্যার আতঙ্কিত মুখ দেখে বুঝলাম ... বেচারী অন্ধকার পাহাড়ী পথে অশরীরি উপস্থিতির কথা ভেবে ভয়ানক ভীত সন্ত্রস্ত !!!  ভয়টাকে তার পিতাজী তা দিয়ে জোরালো করতে করতে পথ চলল আর কন্যা একদম আমার কোলের কাছে ঘেঁসে আতঙ্ক চেপে চলতে লাগল। এই ভাবেই আঁধার ঘেরা পথে এক সময় অনেক দূর থেকে আলোকিত বুদ্ধের শান্ত সৌম্য মূর্তি দেখা দিলেন পাহাড়ী পথের বাঁকে। মেয়েকে অভয় বাণী দিয়ে খানিক ধাতস্ত করলাম কারণ বুঝলাম আমরা আমাদের গন্তব্য রাবং অথবা রাবাংলাতে পৌঁছে গেছি । এবার শুরু হল হোটেলের খোঁজ .... আমাদের ভ্রমণ গাইড সুমিত দা র কথা মতন আমাদের হোটেল বুদ্ধা পার্ক রেসিডেন্সী রাবাংলার বিখ্যাত বুদ্ধা পার্কের ভিতরেই অবস্থিত। কিন্তু পরন্তু কথা হল ... হোটেল রিসেপশনের  নানান পথ নির্দেশ আমাদের পুরো ঘেঁটে ঘ করে দিল !!! পরে দেখা গেল আমাদের গুগুল বাবু একমাত্র ঠিকঠাক নিশানা বাতলেছিলেন .... হোটেলের রিসেপশন আলো করে তখন যিনি ছিলেন তিনি পাহাড়ী ঠাণ্ডার প্রকোপ কমাতে একটু রঙিন হয়ে ছিলেন ক পাত্তর গলধঃকরণ করে 🤔 সেই সব চাপানউতোরের পাট মিটিয়ে ঘরে ঢুকে মোটামুটি শীতের হাওয়ার লাগল নাচন বলা ভাল লাগল কাঁপন । রাবাংলার উচ্চতা গ্যাংটকের থেকে বেশি আর ছোট্ট পাহাড়ী জনপদ , তেমন জনবহুল নয় কাজেই ঠাণ্ডা বেশ বেশি ছিল। কিছু পরে আমার কাঁপাকাপি মাপামাপি করে আমার কর্তামশাই রিসেপশনের এক স্বাভাবিক কর্মী মারফত রুম হিটার আনা করালেন । সত্যিই তখন আরাম পেলাম !!! বিছানার পাশের দেওয়াল জোড়া কাচের শার্শি র পর্দা সরিয়ে বুদ্ধা পার্কের বুদ্ধদেবের দর্শন পেলাম । জানালার একটু ফাঁকের জন্যই ঘর যে ওমন ঠাণ্ডা তা বুঝলাম । 

একটু পরেই সদালাপী আমি পাশের ঘরের আরেক বাঙালি  পরিবারের সাথে আলাপ করে এলাম । আগেই কর্তামশাই এর আলাপ হয়েছিল যখন রিসেপশন বিভ্রাট চলছিল তখন !!! দুজনেই কলকাতার সরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা সাথে ছোট্ট ছেলে । বছর পাঁচেক র । অল্প গল্প করে ঘরে ফিরে দুজনে মুখোমুখি খানিক গপ্পো জুড়লাম , কন্যার মন তখন ফোনে । নিজের সংসারে মুখোমুখি গপ্প করার বড়ই সময়াভাব । মাঝে এসে ভিড় করে কাঁচা বাজার , জলখাবারের পাট , মাসের বাজার ইত্যাদি প্রভৃতি । সেই প্রচলিত প্রবচন ... খাওয়ার পরে রাঁধা আর রাঁধার পরে খাওয়ার এক পাঁচালি !!! 

গপ্পো শেষে মুড়িঝুড়ি দিয়ে কনকনে ডাইনিং রুমে খেতে গেলাম । বিশালাকার খাওয়ার ঘরের একদিকে রান্না ঘরে যাওয়ার দরজা খান খোলা আর সেজন্যই ঠাণ্ডার প্রকোপ খাওয়ার ঘরে ভয়ানক। চটপট খেয়ে আমরা ঘরে ফিরে বিছানার নরম গদি আর দুখান লেপের মাঝে হারিয়ে গেলাম । ঘুম এসে গেল চটপট। পায়ের কাছে রুমহিটার ঘরকে হট করতে থাকল । কিন্তুক মাঝরাতে আমি আর আমার কন্যার এতোই হট হলাম যে আমাদের ছটফটানি গেল বেড়ে আর ঘুমন্ত কর্তামশাই জাগন্ত হয়ে রাগে হট হয়ে হিটারের সুইস বন্ধ করলেন ফট করে । কিছু কিছু রাগের বক্তব্য বিতরণ করে জল খেয়ে তিনি তুরন্ত নিদ্রামগ্ন হলেন , আমার নিদ্রা তখন ভগ্ন দশায় !!! দফায় দফায় মুখে চোখে কনকনে জল দিয়ে ও খেয়ে খানিক ধাতস্ত হয়ে নিদ্রায় মগ্ন হওয়ার আরাধনা করতে করতে এক সময় সত্যিই মগ্ন হলাম । ঘুম ভাঙল তখন ৫.৩০ , জানালা খুলতেই এক ঝাপটা কনকনে হাওয়া পুরো কাঁপিয়ে দিলেও ভোরের আলোয় গৌতম বুদ্ধের সৌম্য মূর্তি র দর্শন করলাম। মনটা ভারি ভাল হয়ে গেল ।রাতে যখন ঘুমের সাধনা চলছিল তখন একবার জানালার কাঁচে চোখ রেখে গৌতম বুদ্ধের দর্শন মেলেনি। অবাক কাণ্ড কিছুই নয় কুয়াশা ঢেকে রেখেছিল তাঁকে । বেলা বাড়ার সাথে সাথে এমন লুকোচুরি চলতে থাকল । আকাশের মুখ ভার মুক্ত হল না তাই বুদ্ধা পার্কের একপাশে যে আকাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে দর্শন দেন কাঞ্চনজঙ্ঘা তার কোন প্রমাণ মিলল না । তবে জলখাবার গলধঃকরণ করে আমরা সুবিশাল বুদ্ধের মূর্তি সহ প্রেয়ার হল , সুবিশাল পার্ক সবটাই হেঁটে ঘুরপাক খেলাম অনেক সময় নিয়ে । যদিও ব্যাটারী চালিত গাড়ির ব্যবস্থাপনা ছিল ওপরের প্রেয়ার হলে যাওয়ার ও পার্ক ঘোরার জন্য। 

ঘোরাঘুরির পর আমাদের বাক্স প্যাটরাসহ বেরিয়ে যাওয়ার কথা আগে থেকেই ঠিক ছিল,  পরবর্তি গন্তব্যের দিকে। রাবাংলার নিঝুম , শান্ত প্রকৃতি ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না , কিন্তু যেতে তো হবেই।  সেদিন আমাদের নামচি আর চারধাম ঘুরে রাতে পেলিং পৌঁছনোর কথা !!! 

Friday, 24 May 2024

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৫

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৫

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙল যথা সময়ে । দেখি আগের দিনের তুলনায় আকাশ একটু গাল ফুলিয়েছে  , কিন্তু আমাদের গ্যাংটকের দেখা  প্রথম প্রভাতের মতন সে অতোটাও বিষন্ন নয় । মন বলল .. এ হল মানিয়ে নেওয়ার মতন মুখ ভার । তাও মনে যে সংশয়ের দোলচাল একেবারেই ছিল না ; তা নয় । তবে আস্তে ধীরে সময় এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আকাশ আরো খানিক ভার মুক্ত হলো। আমাদের হোটেল ম্যানেজারের দেখানো পথে আমরা আমাদের মন পবনের নাও থুড়ি চার চাকার বাহনে আসীন হয়ে বেরিয়ে পড়লাম জলখাবার খেয়ে। কথা হয়েই ছিল যে আমরা প্রথমেই ছাঙ্গুর পারমিট নিয়ে সেদিকে রওনা দিয়ে , বরফ দেখে আবার ফিরে আসব গ্যাংটকের হোটেলে । সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজনের পরে মালপত্র সহ বেরিয়ে পড়ব রাবাংলার উদ্দেশ্যে। সকালে বেরনোর আগেই আমাদের চাবি বন্ধ সব লটবহর হোটেলের রিসেপশনে জিম্মা করে আমরা হোটেলের ঘর ছেড়ে দিয়েছিলাম । 

অনেক বছর আগে ছাত্র জীবনে আমার কর্তামশাই বার ২/৩ এ দিক পানে ঘুরে গেছেন তার নানান সেট অফ ফ্রেণ্ডস দের সাথে ( একবার স্কুল / একবার কলেজ / একবার পাড়াতুত বন্ধুরা ) । কাজেই স্বাভাবিক ভাবেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে আর বন্ধ ই হয় না !!! এমন কি ফেরার পরে বিদেশ ও স্বদেশ নিবাসী বন্ধুরা অনেকেই নস্টালজিক হয়ে দূরাভাসে , মুখপুস্তিকার দরবার আলো করে স্মৃতিচারণে হাজিরা দিল । তো সে যাই হোক , শুনলাম যে আগের বদলে ছাঙ্গুগামী নতুন পথ তৈরি হয়েছে , যা আগের পথের থেকে অনেক প্রসস্ত কিন্তু একটু সময় সাপেক্ষ। প্রথমে চোখ ছানাবড়া হল যখন পারমিট হাতে এল , দেখলাম কাতারে কাতারে গাড়ি পারমিট মেলার জন্য অপেক্ষারত । কিন্তু এর পরে যে আরো অনেক কিছুই বাকি তা বুঝলাম যখন এক অফিসার আমাদের গাড়ির কাছে এসে পারমিট নিয়ে তাতে নম্বারিং করে দিলেন । দেখলাম আমাদের গাড়ির ক্রমিক সংখ্যা , ট্যারা হয়ে গেলাম ...  serial no.536  !!!!

আস্তে ধীরে আমরা কুয়াশার চাদরে মোড়া পথের মধ্যে ঢুকে পড়লাম , ঘন কুয়াশার জন্য সামনের গাড়ি আর একপাশের অতলান্ত খাদ দুই ই প্রায় প্রায় অদৃশ্য। কখনও কুয়াশার আস্তরণ হাল্কা হলে কিছু কিছু দৃশ্যমান হচ্ছিল চারপাশ । সার বাঁধা মন্ত্র লেখা পতাকার সারিবদ্ধ রূপ দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছিলাম আমরা। পুরোটাই আর্মির অঞ্চল। তার চিহ্নও দেখছিলাম মধ্যে মধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা আর্মির বিশালাকার শক্তিমান ( বাহন ) গুলোর ধেয়ে চলার গতিতে । কোনটা বোঝাই আর্মির জিনিসপত্রে তো কোনটাতে আর্মির সেনা বাহিনীর জওয়ান। অদ্ভুত একটা অনুভূতির উদয় হয় এই নিরলস পরিশ্রমী বীর দের দেখলে , এদের জন্যই আমরা নিরাপদে , নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াই দেশের নানান প্রান্তে। এদিকের পাহাড়ের ওদিকেই নাকি রহস্যের খাসমহল চীন দেশ । কোন সুদূর অতীতে এই সব পাহাড়ের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বিদেশী বণিক , পর্যটক , ধর্ম প্রচারক গণ চলাচল করতেন । এখনকার সুযোগ সুবিধা তখন স্বপ্নাতীত।  কি ভাবে তারা আসতেন ভাবতেই অবাক লাগে !!!

ছাঙ্গু যাওয়ার পারমিট মিলেছিল মূল স্থানের থেকে সম্ভবত ৫কিমি আগে ১৫ মাইল নামক স্হানে। কোন জায়গার নাম যে এমন হতে পারে ধারনা পরিষ্কার হতে বিস্তর সময় লেগেছে । তাও কি হয়েছে !!!! কলকাতার হাজির হতে তবে বুঝেছি বলে মনে করছি । পাহাড়ী পথে বেশ ঝগড়া লেগে গিয়েছিল আমাদের দুজনার ... এ কেমনতর কথা এই শুনছি ৫ কিলোমিটার আবার এই বলছ ১৫ মাইল এলে নেমে পড়ো !! একে তো ঠাণ্ডা তে জমে কুলফি হয়ে যাচ্ছি ওই ১১নাকি সাড়ে এগারো হাজার ফিট ওপরে !! তারপর এমন বিতিকিচ্ছিরি অঙ্ক ধরিয়ে দিলে কার ভাল লাগে ? এমনিতেই অঙ্ক দেখলে আমার হাত পা কলকাতার চরম গরমেও ঠাণ্ডা হয়ে যায় তায় ওই ঠাণ্ডার মধ্যে এসব কারণে যারপরনাই গম্ভীর হয়ে বরফে হাঁটার উপযুক্ত বুট ভাড়া করতে ও পরে ফেলতে নেমে পড়লাম এক দোকানে। সেখানে বুট ভাড়া ছাড়াও রয়েছে চা জলখাবার, দুপুরের খাবারের ঢালাও ব্যবস্থা ( ধুমায়িত ভাত , সব্জি আর পাহাড়ী মুরগীর ঝোল )আবার খুচরো কিছু শীত পোশাকের বিক্রি বাটার ব্যবস্থাপনা।  মালকিন এক কথায় সত্যিই দশভূজা । একা হাতে ভাড়া জুতো পরাচ্ছেন হাসি মুখে অত্যন্ত যত্ন সহকারে , পরমূহুর্তেই চা / জলখাবার পরিবেশন করছেন সমান ক্ষিপ্রতার সাথে ... মুখে হাসি লেগেই আছে। 

আরো কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে দুদিকের পাহাড়ে বরফ সাথে বরফ দেখে পাগল হওয়া সমতলবাসী দৃশ্যমান হল । গাড়ির চালক বিজয় ভাইয়া ,  বললেন যে গাড়ি নিয়ে আর এগিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।  সত্যিই বরফের বদলে গাড়ির গলিগুজির মধ্যেই নেমে পড়লাম !!! বাপ রে !!! বরফ নিয়ে কাব্য তখন গাড়ির ভিড়ে হারিয়ে গেছে !!! কর্তামশাই চট করে ধাতস্ত হয়ে একপাশে সরিয়ে আনলেন মা - মেয়েকে ... বললে ... যা দেখার , ছবি তোলার এখানেই সারো আর সরে পড়ো। কারণ এই উচ্চতা সমতলবাসীদের অনভ্যস্ত শরীরের পক্ষে খুব সুবিধাজনক নয় । অসুস্থ হলেও হতে পারি । বলতে না বলতেই আমাদের সামনে একটি বাচ্চা মেয়েকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলাম। 

ভিড়ে আমার বড় এ্যালার্জি চিরকাল !!! বরফ যতটা দেখার দেখে ছবি নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। কন্যা ওইটুকু পথের ধারের গাড়ির মেলার পাশ কাটিয়ে ভিন্ন প্রদেশের ( দক্ষিণ ভারত ) এক তরুণীর সাথে স্নোম্যান বানিয়ে ফেলেছিল  কিন্তুক মনের সুখে বরফের গোল্লা ছোড়াছুড়ি টা তেমন জমলো না !! ও সব ফাঁকা বরফ বেছানো প্রান্তরে সম্ভব, যা শুধু চলচিত্র কেন ? আমরা পেয়েছিলাম ও সম্ভব করেছিলাম খাজিয়ারে , কাশ্মীরে , ডালহৌসী আর সোলাং ( আমরা দুজন ) ভ্যালিতে । এখানে তার কোনরকম সম্ভবনা ছিল না ....  অগত্যা কি আর করা !!! ফেরার পথ ধরতে দেখলাম শরীরটা অল্প অল্প বিগরোচ্ছে ... মাথা ব্যথা আর গা গোলানো। যা আমার সমতলেও কমন সিলেভাস। যদিও কোনরকম দাওয়াই ছাড়াই তা সেরে গেল খানিক নামার পরে পরেই। এদিকের ঘরের চিকিৎসক মশাই কইলেন ওটা অলটিটিউড সিকনেস।  কে জানে ভাই !! এ সব জানি না , কারণ কলকাতার গরমে , পথে ঘাটে দূরে কোথাও চারচাকায় আসীন হলে এমন ধারা সিকনেস আমার হয়ে থাকে অনেক সময় !!! হয়তো মনটা বেরলেই পাহাড়মুখী হয়ে ওমন ঘটায় । মন রোগ বিশেষজ্ঞ কইতে পারেন । থাক ওসব খুব ঝামেলায় না ফেললে যেমন চলছে চলুক ।

এরপর আমরা ফিরে এলাম গ্যাংটকের হোটেলে । সেখানে ভরপেট্টা ঘরোয়া খাবারে ক্ষিদে মিটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম রাবাংলার দিকে । বরফ দেখার রেশ ধরেই এগিয়ে চললাম সামনের নতুন কিছু দেখার বাসনা নিয়ে।

Friday, 17 May 2024

 


বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৪

প্রথমদিনের গ্যাংটকে ঘোরাঘুরি একদম ভিজে ঝুপ্পুস হয়ে গেল। ঘরে থুড়ি হোটেলে ফিরে চা খেয়ে নিজেদের একটু গরম করে নিতে না নিতেই গ্যাংটকে গণ্ডোগোল .... গ্যাংটকের পার্ক স্ট্রিট সম এম.জি.মার্গে যাওয়া নিয়েই হোটেলের ঘরে গোলযোগের সূত্রপাত হতে না হতেই আবহাওয়ার মোড় ঘুরে গেল যথারীতি আমার কর্তামশাই এর দিকেই। আর ঝমঝমে বৃষ্টি আর কনকনে ঠাণ্ডার প্রকোপে আমরা তিনজনেই এম .জি .মার্গের বদলে লেপের ভিতরে গুটিশুটি মেরে ঢুকে পড়লাম আর ঘরের একমাত্র টেলিভিশনে এদিক ওদিক খিচুড়ি অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করলাম। আবহাওয়া নানান ধ্বণাত্মক শব্দ সহযোগে দুর্যোগের জানান দিতেই থাকল । এর মধ্যেই আমার কন্যা এখনকার জ্ঞানের আধার Google বাবুর( নেট তখনও সেট ছিল )শ্মরণাপন্ন হয়ে আগামী সব দিনের দুর্যোগের ঘোষণা করে মনটা কে আরো  খারাপে ভিজিয়ে দিল । অগত্যা ভেবে নিলাম কটা দিন নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রামেই কাটানো যাবে । কর্তামশাই আমার ভাবনা শুনে চোখ কপালে তুলে বলেই ফেললেন ... তোমার কি লেবেল !!!! এত খরচ করে গ্যাংটকে এলে বিশ্রাম নিতে ???? কি বলব বলো ?? নুনের ছিটে হজম করে নিলাম । তোমরাই বলো , ঘুরতে না পারার হতাশার কথা ছোটজনকে বলা যায় ??? আর ওমন দুর্যোগে কি ঘুরতে এসেছি বলে ঘুরতে হবেই  ???? তাই যেটা যুক্তি গ্রাহ্য সেটা করাই তো বাঞ্ছনীয় ।

ডিনার করার পর আমাদের হোটেল বজ্র রেসিডেন্সি র ম্যানেজার অতিরিক্ত নিশ্চিত ভাবেই আশার কথা শোনালেন ... বললেন আজ যখন এতো বৃষ্টির ঝরে পড়া হয়ে যাচ্ছে , কাল পাবেন ঝকঝকে রোদে ভরা দিন .... যদিও তখনও বাইরে তোড়ে বৃষ্টি পড়ছিল। ওনার মুখেই শুনলাম হোটেলের এক রুমের বোর্ডার গণ একদিন আগে ইয়ুমথাং ঘুরতে গিয়েছিলেন , তারা এই দুর্যোগের মধ্যেই ফিরছে। পাহাড়ী পথের দুর্যোগ আর রাতের আঁধার সত্যিই খুব চিন্তার বাতাবরণ তৈরি করল। 

পরেরদিন সকালে সত্যিই সূজ্জি মামার আগমন ঘটল খুশীয়াল মুডে  আর আমরাও গত রাতের সেই  বোর্ডার দের দুর্যোগ পেরিয়ে হোটেলে ফেরার খবর নিয়ে জলখাবার গলধঃকরণ করে বেরিয়ে পরার জন্য প্রস্তুত হয়েই জানতে পারলাম আরেক দুঃখের খবর। আগের দিনের আবহাওয়ার দরুণ ঝরে পড়া বরফের পাহাড় আমাদের ছাঙ্গুর পারমিট বাতিল করে দিয়েছে। নাথুলাতে তো ঢ্যারা পড়েইছিল ছাঙ্গুও হাতছাড়া হল !!! একেই কি বলে গোদের ওপর বিষফোঁড়া ?? হবেও বা । শুধু শুধুই কি আর প্রবাদ প্রবচনের সৃষ্টি ??? আমাদের বাহন চালক বিজয় ভাইয়া ফোনের ওপারে আশাবাদী হলেন , বললেন ... তিনি আগের দিনের বাকি রয়ে যাওয়া দ্রষ্টব্য ঘুরিয়ে আনবেন । সেদিন বেরিয়ে পাহাড়ী পথের বাঁকে কচিত কদাচিৎ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দিলেন । চকিত দর্শন হলোই বা !! কে বলবে আগের দিন ওমন অঝোর ধারা আমাদের ভিজিয়ে , ভাসিয়ে একশা করেছিল !!! প্রথমেই আমরা চললাম চড়াই পথ বেয়ে হনুমান টকের দিকে। এখানে যা বুঝলাম  টক মানে হল মন্দির , যার সাথে ইংরেজি ও বাংলা কোন "টক"শব্দের অর্থের যে সমতা নেই তা টক করে বুঝে গেলাম।  ঝকঝকে রোদে টপাটপ মন্দিরের সামনে এসে পৌঁছলাম।  গাড়ি থেকে নেমে আরো একটু উপরের দিকে উঠে পৌঁছলাম মন্দিরে । পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শান্ত পরিবেশ বড় ভাল লাগল। মন্দির লাগোয়া রেলিং ঘেরা প্রসস্ত চত্বরের একপাশে আবার চকিতে দেখা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা মেঘের চাদরে মুখ লুকিয়ে ফেললেন আর আমরা এগিয়ে চললাম পরের গন্তব্যের দিকে। একে একে দেখে নিলাম গণেশ টক, তাসি ভিউ পয়েন্ট। আমাদের গ্যাংটকের হোটেলের ম্যানেজার সহ সর্বমোট ৪/৫ জন কর্মচারী , প্রত্যেকেই বাঙালি। তাদের একজন আগের দিনেই বলেছিলেন যে সারা গ্যাংটকের সেরা বৌদ্ধ মনাস্ট্রি নাকি রাঙ্কাতে অবস্থিত, আর সে খান দেখে নিলে বাকি সব অদেখা মনাস্ট্রির দর্শন হয়ে যায় ... সেই মতনই পথের নিশানা ধরিয়ে দিলাম আমাদের সারথি বিজয় ভাইয়াকে । সামনেই নির্বাচণ , তার চিহ্ন ছড়ানো পথ থামতে থামতে পেরিয়ে ( মিছিল ) আমরা চললাম রাঙ্কা মনাস্ট্রির দিকে । পথ আর শেষ দেখাচ্ছে না দেখে আমরা মা - মেয়ে মায় মেয়ের বাবাও পর্যন্ত খানিক ঘুমন্ত , ঝিমন্ত ও জাগন্ত মোড সচল অচল করতে করতে পৌঁছলাম রাঙ্কা মনাস্ট্রির সুবিশাল চৌহদ্দীর ভিতরে । বলতে নেই ... অসম্ভব ভাল লাগল মনাস্ট্রির সবটুকু !!! দেখা শেষ করে পাশের ছোট খাওয়ার জায়গাতে পেটকে শান্ত করে , পাশের পশরা সাজানো দোকান থেকে টুকটাক কিছু খরিদারি করে হোটেলের দিকে রওনা দিলাম । পথে নির্বাচণী নিদর্শন পেরিয়ে সন্ধ্যার মুখে হোটেলে ফিরে এলাম। সেদিন ঝকঝকে আবহাওয়ার দারুণ ঠিক হল এম . জি . মার্গ ভ্রমণ আর সেখানেই খ্যাটন পর্ব মিটিয়ে ঘরে থুড়ি হোটেলে ফিরব রাত করে। সেই মতনই ঘুরে ফিরে খেয়ে দেয়ে আমরা ফিরে এলাম হোটেলে। 

পরের দিন আমাদের গ্যাংটক কে বিদায় জানানোর পালা। এদিকে আমাকে ছাঙ্গুর বরফ দেখাতেই হবে এমন পণ ম্যানেজার সহ বাকিদের । আমার দেওয়া যে প্রস্তাব এক কথায় কটমটে দৃষ্টিতে বাতিল করে দিয়েছিল এদিকের কর্তামশাই , সেই একই প্রস্তাব কার্যকর করতে লেগে পড়ল সদ্য পরিচিত সকলে। ঠিক হল পরের দিন আমাদের বাক্স প্যাটরা হোটেলের রিসেপশনে রেখে আমরা পারমিট বগলদাবা করে ছাঙ্গুর দিকে যাব ( যতটা পারমিশেবল) , দুপুরে ফিরে হোটেলে খেয়ে বিদায় জানাবো গ্যাংটক কে । তাই অনেক আশায় বুক বেঁধে আমি সে রাতে নিদ্রামগ্ন হলাম । 

Friday, 10 May 2024

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৩ 

রাতের শেষে ভোর হলেও আলো ফুটল না । চারিদিকের চরাচর কুয়াশার চাদরে আবৃত । বেড়াতে গিয়ে এমন ছন্দ পতনের সাথে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না আদেও তাই মনের আঙিনায়  মেলা মেঘ জমে গেল । বেলা বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতির  কিঞ্চিত অদল বদল হলেও সে একদমই নামমাত্র। জানলা খুলে যদি বা দেখি আকাশের মুখ একটুখানি ফর্সা ...পর মুহুর্তেই সে ভরসা নেতিবাচক দিকে রওনা দিচ্ছিল । এ সবের মধ্যেই আমরা জলখাবারের পর্ব মিটিয়ে মোটের ওপর বেরিয়ে পড়ার ধরাচূড়ো পরে ফেললাম আর কতকটা যেন সে জন্যই বেরিয়ে পড়লাম। বেরিয়েই দেখি হাল্কা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমরা এগিয়ে চললাম।  আমাদের বাহন চালকের সাথে প্রথমেই আমরা পরের দিনের ছাঙ্গু ও নাথুলা যাওয়ার অনুমতি মিলবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান আলোচনা শুরু করলাম । আকাশের ভাব গতিকে অনুমতিপত্রের চারদিকে বেশ সংশয়ের ঘন মেঘের দেখা পেলাম । সামনেই নির্বাচণ তার প্রচারে দু দলের ব্যস্ততার আঁচ পেলাম চলার পথে । আমরা এগিয়ে চললাম আমাদের প্রথম গন্তব্য রুমটেক মনাস্ট্রির দিকে । পাহাড়ী কিন্তু প্রসস্থ পথ ধরে একসময় পৌঁছলাম  , নেমে পড়লাম... সামনে এক জায়গায় পরিচয়পত্র দেখিয়ে অল্প চড়াই পথ ধরে হেঁপোরাম হয়ে এগিয়ে , এক সময় পৌঁছলাম মনাস্ট্রির সামনে । আকাশ তখন আঁধার করে সেজে উঠছে । মন খারাপের মেঘ নিয়ে মনাস্ট্রির ভিতরে সব ঘুরে ফিরে , উঠে , নেমে , অন্দরে বাহিরে দেখে বেরিয়ে এলাম। ছবি তোলা হল বিস্তর ও বিস্তারিত ভাবে । এবার মনাস্ট্রির প্রেয়ার হলে ছবি তোলায় মানা , তাই সে নিষেধের সম্মান করে বাইরে এসে দেখি মেঘ আর কুয়াশার চাদরের আদরে সামনের পথ অদৃশ্য। পুরো ম্যাজিক  ....  ভ্যানিস  !!! আর তার সাথে পুরো আয় বৃষ্টি ঝেঁপে কেস। ঝেঁপে আসতে না বললেও শুধু যে বৃষ্টি ঝেঁপে এল তা নয় আমরা আপামর টুরিস্ট কূল পুরো কেঁপে গেলাম  ভিজে ঠাণ্ডার দাপটে। উতরাই পথের শেষে এক চায়ের দোকানে গরম গরম চা , যেন প্রাণ জুড়িয়ে দিল । আমরা এরপর এগিয়ে চললাম বন ঝাকরি জলপ্রপাতের দিকে । পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পড়া ঝর্ণা কে ঘিরে গড়ে উঠেছে সাজানো গোছানো অ্যামুজমেন্ট পার্ক। কোন জল কে দেখব আর কাকে আলাদা করব তা ভাবতেই অনেকক্ষণ চলে গেল। একদিকে আকাশ থেকে ঝমাঝম বৃষ্টি অন্যদিকে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা মাটি গোলা চকোটেল রঙের জলপ্রপাত। প্রথম দর্শনেই মেয়ের সাথে দেখা ছোটদের মুভি চার্লি অ্যাণ্ড চকোটেল ফ্যাক্টরী র চিত্রায়ণ মনে ভেসে উঠলেও  , বেশিক্ষণ থিতু হতে পারল না , কারণ অসংখ্য ছত্রধারী ( আমরাও আছি ) র ছাতার জল আর খোঁচা খেয়ে প্রাণ তখন অতিষ্ঠ। ছবি তোলা , সব দেখার পর আমরা যতটা পথ ওপরে উঠেছিলাম, পত্রপাট নেমে এলাম । ওখানের এক চিনে রেস্টুরেন্টে দুপুরের পেট পূজোর জন্য বসে পড়লাম । খাওয়ার খেয়ে মন ভরে না , শুধুমাত্র পেট ভরল  .... কারণ খাবারের গুণ গাওয়ার মতন নুন তেনারা দেন নাই । টেবিলের ওপরেও ছিল নুন বাড়ন্ত।  অগত্যা  !!! আর নুন বারংবার চাওয়ার পরও যখন মিলল না আমরা আপস করলাম । খেয়ে বেরিয়েই একটু এগোতেই পড়ল এক মনাস্ট্রি , বৃষ্টির ধারাপাতে বিপর্যস্ত আমরা ধরা না দিয়ে একই ভাবে ছেড়ে এলাম তাসি ভিউ পয়েন্ট। কারণ ভেবে দেখলাম বৃষ্টির ধারাপাতে কোন ভিউ ই আর ভিউ নেই। এরপর বৃষ্টির মধ্যেই আমরা নেমে পড়লাম নানান ফুলে ভরা এক বাগানের সামনে । টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। চারিদিকে ফুলে ফলে তবে বৃষ্টির জলে তারা প্রায় প্রায় ঢলে ঢলে .... পড়ছে , কিছু ফুল  বলে ধন্য আমি মাটির পরে বলে ভূমি শয্যা নিয়েছে। ওখানেই ছাতা সামলে , ক্যামেরা তাক করে বেশ কিছু তাক লাগানো ছবি তুলে আমরা গেলাম ওই বাগানের মধ্যেই অবস্থিত নানান ফুল ও অর্কিডের কাচ ঘেরা ঘরে । সেখানে গিয়ে মন ভরিয়ে ফুল দেখলাম বৃষ্টির কনসার্ট সহ। তবে কাচের ঘেরাটোপে আমরা বৃষ্টির জলের থেকে সাময়িক রেহাই পেয়েছিলাম। ওখান থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে  পথেই পড়েছিল গণেশ টক/ গণেশ মন্দির। কিন্তুক বাড়াবাড়ি রকমের বৃষ্টির জন্য আমাদের তালিকার বেশ কিছু জলের তোড়ে ভেসে গেল আর আমরা ঘরে থুড়ি হোটেলে ফিরে এলাম । সেদিন ছিল দোল পূর্নিমা। ফেরার পথে গ্যাঙটকের পার্ক স্ট্রিট এম.জি.রোডে রঙের মাতন দেখলেও সবটাই ছিল  বৃষ্টির জন্য একটু ম্রিয়মান । 

সন্ধ্যার পর বেরনো হল না , আগের দিনের জার্নি আমাদের অনেকখানি ক্লান্ত করে দিয়েছিল। এরপর সন্ধ্যার বেরনোর চাপানউতোরের পালা চলার মধ্যেই আবার বরুণদেব নতুন উদ্যমে ঝমঝমিয়ে জাকিয়ে এসে পড়লেন ।

Tuesday, 9 April 2024

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪২

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪২ 

এ বছরের ঘুরতে যাওয়ার বাতাবরণ বেশ দুর্যোগ পূর্ণ ছিল শুরু থেকেই।  কারণ গত বছরের শেষ প্রান্তে এসে পা ভেঙে বেশ কিছু ছুটি খরচ হয়ে গিয়েছিল আর সর্বোপরি চক্ষু লজ্জার মাথা মুণ্ডণ করে আবার যাব , ঘুরতে যাব এমন সুপ্ত ভাবনাকে মনের গুপ্ত কোণা থেকে বের করার সাহস হচ্ছিল না । এখন দূরপাল্লার কু ঝিক ঝিকের টিকিট যখন তখন কেটে ফেলার উপায় নাস্তি । সাথের ভ্রমণ বন্ধুদের অসহায়তা জানানোর পর তেনারা গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে পড়ার টিকিট টকাটক কেটে ফেললেন । আর দেখা হলেই হাড়ি মুখ আরো হাড়ি করে বলতে থাকলেন যে ... আমাদের সাথে যেতে চাও ই না !!! কি আর বলব 😥 ?? 

হেনকালে মেয়ের বাৎসরিক পরীক্ষা শুরু হল ... মনের মধ্যে ঝড় চলছে গুপ্ত ভাবেই। মন বলল ... দিন দুই হলেও একটু তাজা বাতাস না পেলে মন খারাপের দিস্তা কাটানোই দায় হবে !!!! কিন্তুক টিকিট তখন ডুমুরের ফুল । এদিকের লোকাল গার্জেন গর্জন করছেন , তিনি সদ্য কন্যার পড়াশোনার তরণীর হাল ধরতে দিন তিনেক ছুটি নিয়েছিলেন ... তাই ঘোরাঘুরিতে আপাতত লাগাম দিতে বললেন । 

মন বেশ খারাপ হলেও  ... একদিন ক্যালেন্ডার খুলে মুখে হাজার বাতির সাময়িক আলো জ্বলে উঠল , যখন হোলি , দোল , গুড ফ্রাইডে র ছুটি এক সাথে এক সপ্তাহে হাজির হল ... সে মতন ঘোরাঘুরির আয়োজন হলেও টিকিট রইল বাকি !!! বিপদ আপদ কি একা আসে ??? মেয়ের পরীক্ষার শেষ দিনের নোটিশে পিলে আবার ফুটবলার পেলে র মতন লম্ফ দিল !!! রেজাল্ট বেরনো দিনে গোলযোগ নেই বটে তবে নতুন করে  হাই স্কুলে ( জুনিয়র থেকে ) ভর্তির দিনে , ঠিক করা কথা মতন আমাদের থাকার কথা পাহাড়ী পথের বাঁকে বাঁকে তার রহস্য আর অপরূপ প্রকৃতির মাঝে । তবে ???? ট্রেনের টিকিট বাদে সব আয়োজন তখন হাতের তালুতে।  তার মধ্যেই এ আবার কি কথা ??? মন আবার হাল ছাড়া , পাল ছেঁড়া নৌকো হয়ে দুঃখে একাকার !!! খোঁজ লাগিয়ে , স্কুলে গিয়ে অনেক দৌড় ঝাঁপ করে দ্বিতীয় একখান তারিখ জোগাড় করা হল কন্যার রেজাল্টের দিনে । তখনও আমাদের ট্রেনের টিকিট বহু দূর । 

ছুটির ঘন্টা বাজলেও টিকিটের টিকি টাক কিছুই তখন নাগালে আসছে না । মনে শুধুই চিন্তার টাচ্। ওদিকে কলেজের মেলাই কাজের বেশ কিছু  গুছিয়ে দিয়ে এবং নিয়ে ব্যাগ পত্তরের গুছু তখন প্রায় প্রায় শেষের পথে ... হেনোকালে কর্তামশাই এর অতি ভরসা যোগ্য ততকাল টিকিটের কাণ্ডারী, দু হাত তুলে পুরো নিত্যানন্দ স্টাইলে জানালেন নেই নেই  .... ওনার নামের সাথে স্টাইল একদম মিলে গেল এবারে। তেনার নাম নিতাই বাবু । আরো দুই প্রস্থ চেনা জানার ক্যাচের ধরাধরি র পর বেরনোর সাড়ে তিন ঘন্টা আগে একখান ক্যাচ ফসকে গেল , আমি মনের দুঃখে বিছানায় কাত হলাম। কর্তামশাই দেখলাম সেভিং ক্রিম মাখছেন ... বললাম যারা যাচ্ছেন ওই ট্রেনে , তাদের বাই করতে যাচ্ছো ?? কটমটে দৃষ্টি দেখেও দেখলাম না। বলার সুযোগ আমার ঘটেছে , ছাড়লে হয় ??? কিন্তুক পরবর্তী ক্যাচ একদম ম্যাচ করল , ভাসুর ঠাকুরের হাতযশ এবারেও কামাল করল আর আমরা রওনা হলাম। পদাতিকের ফার্স্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্টে জীবনে প্রথম ওঠার পর ওদিকের দৃষ্টিতে বেশ কলার তোলার গর্বিত ছাপ চোখে পড়ল পষ্ট !!! ভাব খানা ... কেমন দিলাম বলো দেখি ??? 

জীবনে প্রথমবার ফার্স্ট ক্লাস কুপে উঠে আমি তখন অন্য লোকে বিরাজ করছি। সব কিছুই ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে। শুভাকাঙ্খি দের জানান দিয়ে , নিজেদের গুছিয়ে নিলাম । কুপে শুধুই তিনজনা।  দরজা টেনে দিয়ে একদমই নিজের আস্তানা , ভিতরে জোরালো আলো বন্ধ করতেই জ্বলে উঠল নীলাভ রাত-বাতি ( night lamp ) পুরো এলাহী ঘুমের আয়োজন। ঘুম খানিক পরেই কুপময় স্বশব্দে ছড়িয়ে পড়ল🙂 । এক সময় ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ল। ভোরে ওঠার এতদিনের অভ্যাস অনেক চেষ্টা করেও সাময়িক দূরে রাখা অসম্ভব। কাজেই উঠে পড়ে , আপার বার্থ থেকে নেমে পড়লাম ... মুখ ধুতে না ধুতেই হাজির চায়ে গরমের সেই ট্রেনজাত হাঁক ... যার কোন ক্লাসগত ভেদ নেই। চা আর দিনযাপনের প্রয়োজনীয় ওষুধ খেয়ে নিলাম । এক সময় চেনা গন্তব্য নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলাম। স্টেশনের বাইরে এসে থিকথিকে জনতা জনার্দন দেখে প্রথম একটু ঘাবড়ে গেলেও , একটু পরে সামলে নিলাম । ফোনাফুনির পর আগে থেকে বুক করা বাহন চালক হাজির হল ... আলাপ পর্ব মিটিয়ে চললাম চারচাকার বাহনের দিকে। আগের কদিনের বৃষ্টিপাতের চিহ্ন স্বরূপ জমা কাদা জলের খানাখন্দ দক্ষতা সহ পেরিয়ে গেলাম । গাড়ির গদিতে গদিওমান হয়েই জানলাম যে চেনা পথ বিগত দিনের বৃষ্টির দরুণ ধসে গেছে , আমাদের যেতে হবে অচেনা পথে লাভা আর কলিম্পং হয়ে ... স্বাভাবিক সময়ের থেকে আরো ঘন্টা তিনেক বেশি সময় নিয়ে ... কি আর করা .... বেশ গরমাগরম আবহাওয়ার মধ্যেই আমরা পথ চলা শুরু করলাম  হোমিও ও অ্যালো সব রকমের বমি নিরোধক ওষুধ খেয়ে ও খাইয়ে ( মা - মেয়ে only )। 

সমতল পেরিয়ে আস্তে ধীরে পাহাড়ের পাদদেশ পেরিয়ে এগিয়ে চললাম সামনের দিকে । এক সময় সেবকের কাছে এক জায়গায় ভারি জলখাবার খেতে নেমে পড়লাম। ছোট্ট এক খাবারের দোকানে চীনা, অ-চীনা সব রকমের ঢালাও আয়োজন। সামনের ঘুরপথে খাবার কোথায় কখন পাই না পাই আগাম ভেবে আমরা পেট ভরিয়ে আবার পাহাড়ি পথে হারিয়ে , ঘুমিয়ে , আবার জেগে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম । কোথাও মেঘ , কোথাও বা ঘন কুয়াশা, কোথাও বা ভরপুর রোদের ঝকমকানি .... সে সব পেরিয়ে সন্ধ্যার আঁধারে ঘন্টা আটেকের জার্নির শেষে আমরা পৌঁছলাম আমাদের গন্তব্য গ্যাংটকে। গণ্ডগোলের তখনও গল্প অল্প বাকি ... যার শুরুয়াত হল পরের দিন সকাল সকাল । 

Thursday, 7 March 2024

বেড়াতে গিয়ে মজারু পর্ব ৪১

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪১

বেড়ানোর গাড়ি কিছু সময়ের জন্য থামাতে হয়েছিল , আসলে নকলে মোদ্দা কথা হল পকেট পুরাণ। শেষবারের ভ্রমণে ভূস্বর্গের যুক্ত হওয়ার ফলে ছাপোষা বাঙালির যা হয় , আমাদেরও পকেট গড়ের মাঠ হয়েছিল। তার থেকে উত্থান পর্ব এখনও চালু , তবে মন বেশ অনেকদিন ধরেই আকুপাকু করছে । হেন কালে আপদ বিপদের প্রথম ঢেউ একেবারে আমায় খাটে শুইয়ে দিল ... পায়ের আঙ্গুল  ভাঙল । বেরিয়ে পড়ার ভাবনা আবার বাক্স বন্দী হল । পদ যুগলের একখান সম্বল করে আর যাই হোক বেরিয়ে পড়া যায় না। ক্যালেন্ডার মোতাবেক শীতকাল হাজির হল । হাড় বিশেষজ্ঞের অনুমতি নিয়ে এক শনিবারের সকালে আমরা ঝোলা ঝুলিয়ে তিন পরিবার রওনা দিলাম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামের দিকে। লোধাশুলি র জঙ্গলের নাম শুনেছি আগে মাওবাদীদের গল্পের পটভূমি স্বরূপ। সকলেই রোমাঞ্চিত .... আমি সদ্য পায়ের বিপদ কাটার পরবর্তী ভ্রমণ নিয়ে বেশ চিন্তিত , ইচ্ছে থাকলেও মনে বিস্তর ভয়ের আনাগোনা তখন । পারব তো ?? আমার জন্য অন্যদের ঘোরাঘুরির আনন্দে ছেদ পড়বে না তো ?? আগেও লিখেছি ... আমার ভয় ব্যকুলতা দুখান ক্ষেত্রে মাথা চাড়া দিলেও , ঘাঁটি গেড়ে ঘোট পাকাতে পারে না। তার মধ্যে একখান ক্ষেত্র অবশ্যই বেড়ানো । আর আমাদের কাণ্ডারী একটা কথাই বলছিলেন ... নিয়ম মেনে , সময় দিয়ে ভাঙা পায়ের মেরামত করার পরে যখন যাতায়াতের নির্ধারণ, তখন ভাবনাকে হাওয়ার সাথে ভাসিয়ে , সাবধানী হয়ে পথ চললেই হয় , যেখানে থামার নির্দেশ মিলবে , থেমে গেলেই হবে। অতএব....

পরিচিত কজনার নির্দেশ মেনে দুখান বাহনের একখানের পিছনের সিটে পদ যুগলকে যত্ন সহ শায়িত করে যাত্রা শুরু হল । আমাদের সাথের দুই ছানা অন্য গাড়িতে পুরোপুরি মজা নেবার জন্য রইল। মা র সাথে থাকা মানেই নানাবিধ জ্ঞানের ধারাবিবরণ শুনতে শুনতে পথ চলা। অন্য সময় যাও বা তা সয় , সইতে হয় , বেড়ানোর সময় যদি সুযোগ থাকে অন্যরকম , কে না তার সদ্ব্যবহার করে ?? পুপে তো কোন ছার ?? সাথের আরেক পুপে অবশ্যি মা নেওটা।  আমার জন এক ব্যাপারে ভারি বিবেচক। নেওটা র ভাগাভাগাতে বাবা আর মা দুজনকেই সমান ভাগ দিয়েছে। যদিও মা মনে করে কন্যা বাপ-সোহাগী , ওদিকের জনের ভাবনায় কন্যা রত্নটি মা অন্ত প্রাণ। ও সব বিতর্কিত আলোচনা আনন্দ ক্ষণে তোলা থাক । 

মোটের পর মা আর কন্যা আলাদা বাহনে পেরিয়ে গেল লোধাশুলির জঙ্গল।  ঝকঝকে পথের দুপাশে শালের জঙ্গলের রোদ ছায়া র লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে আমরা ঝাড়গ্রামে পৌঁছলাম। তখন দ্বিপ্রহর । মনে ভাবা হল ... মুখ হাত ধুয়ে মধ্যাহ্ন ভোজনের পাট চুকিয়ে আমরা কাছেই অবস্থিত কনকদূর্গা মন্দির দেখতে যাব , যা নাকি ডুলুং নদীর ধারে অবস্থিত।  এই কনকদূর্গা মন্দিরের পিছনে রয়েছে ডুলুং নদী । ওখানে সন্ধ্যারতি দেখে ফেরার ইচ্ছে নিয়ে আমরা ঝাড়গ্রামের টুরিস্ট লজের ডাইনিং রুমে হাজির হলাম  । 

ওখানে ঢুকতেই নজরে এল একখান বিশৃঙখল চিত্র । কিছু কিছু বোর্ডার লাঞ্চে রত। কিছুজন অপেক্ষারত।  আমরা নিজেদের দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত করে একখান অপরিষ্কার টেবিলের পাশে ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। ডাইনিং হলের পাশের রান্নাঘরে উকি দিতে না দিতেই পাশ দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে খাবারের সুগন্ধ ছড়াতে ছড়াতে ট্রে নিয়ে বেয়ারা ছেলেটি বেয়াড়া ভাবে বেরিয়ে গেল , কিছু বাদেই একই রকম দুর্নিবার গতিতে ফেরত এলো। অতি কষ্টে তাকে সামনের টেবিল পরিষ্কার করার নির্দেশ দিতেই সে বললে ... অপেক্ষা করতে হবে। অগত্যা ... অপেক্ষার প্রহরে তা দিতে থাকলাম । পারদ উর্ধ্বগামী  হচ্ছিল সবারই  , খানিক অপেক্ষার পরেও অবস্থার পরিবর্তন যখন চোখে পড়ল না , সাথের পুরুষ সিংহদের সিংহত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছি কি না করেছি ... তাদের হালুম গর্জনে ডাইনিং হল পুরো গেলুম হয়ে গেল। ম্যানেজার ছুটে এলেন ... তুরন্ত খাবারেরও দেখা মিলল । আর .... !!! পাশের টেবিলের এক সুবেশা সুন্দরী এসে সিংহদের অভিবাদন জানিয়ে গেলেন । সিংহদের চোখে মুখে এক অদ্ভুত দ্যুতি খেলে গেল তৎক্ষণাৎ। এরপর সপরিবারে ভরপুর আহারের পর , দিন দেখি প্রায় যায় যায় ... চারটে বাজে প্রায় , তখন আর বেরনোর কথা ভাবা যায় ?? যাব কি যাব না , ভেবে ভেবে হায় রে !!! যাওয়া তো হলো না !!! অতএব আমরা কটেজ মুখী আর সাথের দুই পুপে , ( হ্যাঁ ওদের দুজনের নামই এক ) বাগানের দোলনামুখী হল । আমাদেরও ঘরে বিশেষ বসা হলো না , ক্যামেরা তাক করে বাগানে বাকিদের সাথে যোগ দিলাম। দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই এই লজের বেশ কিছু বাসিন্দাদের ক্যামেরাবন্দী করলাম। লজের বাসিন্দা বলতে ছোট বেলার পড়া ছাড়ার সেই এক পাল হাঁস । যাদের দেখে শুনে কোন ছোটবেলায় মুখস্থ করা ছড়া মনে পড়ে গিয়েছিল .... এক পাল হাঁস শুধু হাসে প্যাকপেকিয়ে। রাজহাঁস, পাতি হাঁস তো বটেই, ছিল বেশ কটি কুকুর ছানা তাদের মা সহ আর ছিল দুখান টার্কি। যাদের ধারে কাছে না ঘোরাঘুরি করলেও বেশ একটা ভয় পাওয়ানো ভাব দেখানোর চেষ্টার ত্রুটি রাখছিল না তারা। পরে সত্য দা র মুখে শুনলাম যে বেসিক্যালি ওরা ভয় পেয়েই ওমন করছিল । আসলে আমরা মানুষেরাই বোধহয় সব চেয়ে ভয়ানক প্রাণী !!!! 

সন্ধ্যার সময় যথা নিয়মে আমাদের ঘরেই আড্ডার মজলিস বসল। যদিও দুই পুপে তাদের ধন সম্পত্তি সহ অন্য ঘরে খেলতে গেল । সাথে সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত Animal ছবির গান শোনার ব্যবস্থাও সাথে নিল তারা । গল্প চলল , সাথে আমরা সকলেই ভোজন রসিক তাই আমাদের খাওয়ার বহরে ওখানকার রান্নাঘর ব্যস্ত হয়ে উঠল। আমরা একসময় আড্ডার শেষে আড্ডাঘরে তালা ঝুলিয়ে খাওয়ার ঘরে গেলাম।  এরপরের গল্পে কোন টুইস্ট নেই। খেয়ে ঘুম । পরের দিন সকাল সকাল তৈরি হয়ে জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।  এবারেও দুই পুপে অন্য গাড়িতে । আমাদের গন্তব্য বেলপাহাড়ি ... সংলগ্ন এলাকার দর্শনীয় যতটা দেখা যায় । মাসখানেক আগেই পা ভেঙেছিল, তাই পায়ের যত্ন নিয়ে যতটা ঘোরা যায় ততটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। পায়ের প্রতি যত্নবান যেমন হয়েছিলাম  , তেমনই ঝাড়গ্রামের ভয়ানক হাঁড় কাপানো শীতের গল্প আগাম কলকাতায় বসে শুনে সেই মতন যত্নবান হয়ে শীত পোষাক সাথে নিয়ে এবারে যাত্রা করেছিলাম। কিন্তু পরন্তু কথা হল , মিঠে রোদের দেখা মেলেনি , বরং খর রোদে শালের কাপড়ের তৈরি পোশাক পরে যারপরনাই অতিষ্ঠ হয়েছিলাম।  একদিকে পা নিয়ে যাতনা , অন্যদিকে শরীর জোড়া গরমের যুগল বন্দী আমাদের এবারের বেড়ানোকে ধীর গতি সম্পন্ন করে দিয়েছিল । বেলপাহাড়ির ঘাঘরা ফলস্ গিয়ে একজায়গায় পাথরের ওপর আমাকে বসিয়ে সকলে ঘুরে দেখল চারিপাশ। আমি পাথরে পা ছড়িয়ে বসে খান কতক ছবি তুললাম মনের খুশিতে । সব কিছুর ইতিবাচক দিক থাকেই। আমি যখন সবার সাথে ঘুরি , দর্শনীয় স্থানের ছবি তুলতে থাকি আমাকে রেখে সবাই এগিয়ে যায় , এবারে সবার ঘোরাঘুরির পর আমাকে নিতে এলো , আমিও মন ভরে রুখাশুখা পাথরের আশপাশের সুন্দর প্রকৃতির ছবি তোলার পর আস্তে ধীরে পরের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেলাম । এরপর খানদারানি লেক ও তারাফেনি জলাধার দেখে তপন মামা থুড়ি সুজ্জি মামার দাপটে ফেরার পথ ধরলাম ... আমার তখন গরমে শালের তৈরি পোশাক পরে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা !!! ওই চত্বরের আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থানের কথা শুনলেও সে গুলোকে বাতিল করতেই হল । ফেরার পথে সকলেই খেঁজুরের গুঁড় ও পাটালি চাটাচাটি আর বাছাবাছি করে নিজেদের ও ফরমায়েস মোতাবেক খরিদারি হল । এরপরে ঠিক হল পেট পূজোর পর ঝাড়গ্রামের ফিরতি পথে টুরিস্ট লজমুখী না হয়ে আমরা যাব কনকদূর্গা মন্দির, ডুলুং নদী আর চিলকি গড়। বেলপাহাড়ি আসার পথে ফুড ব্লগ দেখে আমরা আগেই দুপুরের খাবারের অর্ডার করে দিয়েছিলাম " কাঁচা লঙ্কা " নামক খাওয়ার হোটেলে । ফিরতি পথে সেখানে এসে মালুম হল যে সকলেই দামু ছায়াছবির বিখ্যাত চরিত্র দামুর ন্যায় চালাক হয়ে গেছে। সকলেই ওখানে আগাম খাবারের বুকিং করেছেন এবং সে মত কুকিং হলেও স্থান সংকুলানে বেশ বিপদ । বেশ খানিক ধর্ণা দিয়ে তেঁতুল পাতায় ন'জন স্টাইলে সিলিম (slim) ট্রিম বেঞ্চিতে বসে ছোট্ট ছোট্ট বাটিতে পরিবেশিত ইঞ্চি মাপা  খাবারে পেট ঠাণ্ডা করলাম সবাই ।

খাওয়ার পর্ব চুকতে আমরা বেরিয়ে পড়লাম ভাবনা অনুযায়ী। বেশ অনেকখানি পথের শেষে এসে পৌঁছলাম কনকদূর্গা মন্দিরের কাছে। গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা পথ হেঁটে যেতে হয় । আমার পায়ের যাতনা জানান দিলেও থেমে থেমে এগিয়ে যেতে লাগলাম । যাওয়ার পথ আর আসার পথ একই। একটু এগিয়ে এক বৃদ্ধা ভদ্র মহিলাকে যখন ফিরতে দেখলাম লাঠিতে ভর দিয়ে , মনের মধ্যে থেকে কে যেন আমাকে নাড়িয়ে দিল ... ওনাকে দেখে মনে হল আমার হাঁটার কষ্ট কি ওনার থেকেও বেশি নাকি ??? অদ্ভুত জোর পেলাম। এরপর এগিয়ে চললাম আগের থেকে দ্রুত ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপে। বিশাল মন্দির চত্বরের একদিকে পুরাতন মন্দির অন্য দিকে নব নির্মিত মন্দির। তবে পুরাতন মন্দিরের সর্বাঙ্গে নতুন রঙের চমক । আগের ট্রাভেল ব্লগে দেখা ও আগে ঘুরতে আসা বন্ধুদের থেকে শোনা সেই পুরাতনের গন্ধ মাখা মন্দির কে না পেয়ে সকলে যারপরনাই হতাশ হলাম !! 

প্রাঙ্গনে দর্শনার্থীদের থেকে ভিড় বেশি যাদের তারা গাছের ডালে ডালে , নাটমন্দিরের রেলিং এ সার দিয়ে লেজ ঝুলিয়ে কেউ বসে , কেউ ঝুলন্ত, দুলন্ত, চলন্ত ও ছুটন্ত মোডে বিদ্যমান ছিল । খানিকক্ষণ কাটানোর পর আমরা বেরিয়ে এলাম আস্তে ধীরে । এরপর আমরা ডুলুং নদীর ওপরের ব্রীজ পেরিয়ে পৌঁছলাম চিলকী গড়ে । তখন দিন ক্রমশঃ মিশে যাচ্ছে রাতের আঁধারে । চিলকিগড়ের প্রধান ফটক পেরিয়ে আমরা  গড়ের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলাম অন্ধকারের বুক ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে অনেক অজানা ইতিহাসের সাক্ষী বহনকারী চিলকিগড়। যদিও গড়ে ঢোকার কোন উপায় নেই , ব্যবস্থাও নেই। বাইরে থেকেই সবটা দেখে ফেরার পথ যখন ধরলাম তখন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ । শহুরে আলোর অভাবে চাঁদের আলোর জৌলুশ যে আরো বাড়ে  তা বলা ই বাহুল্য । 

এরপরে আমরা ফিরে এলাম টুরিস্ট লজে। সেদিন লজের মধ্যেই সাঁওতাল নৃত্য দেখানোর বিস্তারিত আয়োজন হয়েছিল। এই নৃত্য দেখানোর একটা চল হয়েছে বেশ কিছু বছর। আগেও দেখেছি । এবারে একটু বেশি রকম প্রফেশনালিজমের ছোঁয়া সমৃদ্ধ সাঁওতালি নৃত্য দেখলাম। 

ঘরোয়া আড্ডার মজলিস শেষে আমরা খেয়ে ঘুমের মাঝে হারিয়ে গেলাম। দিনের তাপ রাতে কমে এক আরামদায়ক পরিবেশের রচনা করেছিল , তাই ঘুম হলো অসাধারণ। পরেরদিন ফেরার পালা। পথে টুকটাক কিছু ঘুরে নেওয়ার কথাও ছিল । কিন্তু সব গোছাগুছির শেষ প্রহরে যখন বেলা ১১টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম, রোদের প্রখরতা আমাদের সব ঘোরাঘুরির ভাবনা বাতিল করতে বাধ্য করল। আমরা বাড়ির পথ ধরে ফিরে চললাম কলকাতার দিকে। ফেরার পর শুরু হয় যে কোনো নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার ভাবনা আর তার জন্য অপেক্ষা । অতএব আবার চলতে থাকুক অপেক্ষা !!!!