বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৩
রাতের শেষে ভোর হলেও আলো ফুটল না । চারিদিকের চরাচর কুয়াশার চাদরে আবৃত । বেড়াতে গিয়ে এমন ছন্দ পতনের সাথে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না আদেও তাই মনের আঙিনায় মেলা মেঘ জমে গেল । বেলা বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতির কিঞ্চিত অদল বদল হলেও সে একদমই নামমাত্র। জানলা খুলে যদি বা দেখি আকাশের মুখ একটুখানি ফর্সা ...পর মুহুর্তেই সে ভরসা নেতিবাচক দিকে রওনা দিচ্ছিল । এ সবের মধ্যেই আমরা জলখাবারের পর্ব মিটিয়ে মোটের ওপর বেরিয়ে পড়ার ধরাচূড়ো পরে ফেললাম আর কতকটা যেন সে জন্যই বেরিয়ে পড়লাম। বেরিয়েই দেখি হাল্কা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমরা এগিয়ে চললাম। আমাদের বাহন চালকের সাথে প্রথমেই আমরা পরের দিনের ছাঙ্গু ও নাথুলা যাওয়ার অনুমতি মিলবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান আলোচনা শুরু করলাম । আকাশের ভাব গতিকে অনুমতিপত্রের চারদিকে বেশ সংশয়ের ঘন মেঘের দেখা পেলাম । সামনেই নির্বাচণ তার প্রচারে দু দলের ব্যস্ততার আঁচ পেলাম চলার পথে । আমরা এগিয়ে চললাম আমাদের প্রথম গন্তব্য রুমটেক মনাস্ট্রির দিকে । পাহাড়ী কিন্তু প্রসস্থ পথ ধরে একসময় পৌঁছলাম , নেমে পড়লাম... সামনে এক জায়গায় পরিচয়পত্র দেখিয়ে অল্প চড়াই পথ ধরে হেঁপোরাম হয়ে এগিয়ে , এক সময় পৌঁছলাম মনাস্ট্রির সামনে । আকাশ তখন আঁধার করে সেজে উঠছে । মন খারাপের মেঘ নিয়ে মনাস্ট্রির ভিতরে সব ঘুরে ফিরে , উঠে , নেমে , অন্দরে বাহিরে দেখে বেরিয়ে এলাম। ছবি তোলা হল বিস্তর ও বিস্তারিত ভাবে । এবার মনাস্ট্রির প্রেয়ার হলে ছবি তোলায় মানা , তাই সে নিষেধের সম্মান করে বাইরে এসে দেখি মেঘ আর কুয়াশার চাদরের আদরে সামনের পথ অদৃশ্য। পুরো ম্যাজিক .... ভ্যানিস !!! আর তার সাথে পুরো আয় বৃষ্টি ঝেঁপে কেস। ঝেঁপে আসতে না বললেও শুধু যে বৃষ্টি ঝেঁপে এল তা নয় আমরা আপামর টুরিস্ট কূল পুরো কেঁপে গেলাম ভিজে ঠাণ্ডার দাপটে। উতরাই পথের শেষে এক চায়ের দোকানে গরম গরম চা , যেন প্রাণ জুড়িয়ে দিল । আমরা এরপর এগিয়ে চললাম বন ঝাকরি জলপ্রপাতের দিকে । পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পড়া ঝর্ণা কে ঘিরে গড়ে উঠেছে সাজানো গোছানো অ্যামুজমেন্ট পার্ক। কোন জল কে দেখব আর কাকে আলাদা করব তা ভাবতেই অনেকক্ষণ চলে গেল। একদিকে আকাশ থেকে ঝমাঝম বৃষ্টি অন্যদিকে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা মাটি গোলা চকোটেল রঙের জলপ্রপাত। প্রথম দর্শনেই মেয়ের সাথে দেখা ছোটদের মুভি চার্লি অ্যাণ্ড চকোটেল ফ্যাক্টরী র চিত্রায়ণ মনে ভেসে উঠলেও , বেশিক্ষণ থিতু হতে পারল না , কারণ অসংখ্য ছত্রধারী ( আমরাও আছি ) র ছাতার জল আর খোঁচা খেয়ে প্রাণ তখন অতিষ্ঠ। ছবি তোলা , সব দেখার পর আমরা যতটা পথ ওপরে উঠেছিলাম, পত্রপাট নেমে এলাম । ওখানের এক চিনে রেস্টুরেন্টে দুপুরের পেট পূজোর জন্য বসে পড়লাম । খাওয়ার খেয়ে মন ভরে না , শুধুমাত্র পেট ভরল .... কারণ খাবারের গুণ গাওয়ার মতন নুন তেনারা দেন নাই । টেবিলের ওপরেও ছিল নুন বাড়ন্ত। অগত্যা !!! আর নুন বারংবার চাওয়ার পরও যখন মিলল না আমরা আপস করলাম । খেয়ে বেরিয়েই একটু এগোতেই পড়ল এক মনাস্ট্রি , বৃষ্টির ধারাপাতে বিপর্যস্ত আমরা ধরা না দিয়ে একই ভাবে ছেড়ে এলাম তাসি ভিউ পয়েন্ট। কারণ ভেবে দেখলাম বৃষ্টির ধারাপাতে কোন ভিউ ই আর ভিউ নেই। এরপর বৃষ্টির মধ্যেই আমরা নেমে পড়লাম নানান ফুলে ভরা এক বাগানের সামনে । টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। চারিদিকে ফুলে ফলে তবে বৃষ্টির জলে তারা প্রায় প্রায় ঢলে ঢলে .... পড়ছে , কিছু ফুল বলে ধন্য আমি মাটির পরে বলে ভূমি শয্যা নিয়েছে। ওখানেই ছাতা সামলে , ক্যামেরা তাক করে বেশ কিছু তাক লাগানো ছবি তুলে আমরা গেলাম ওই বাগানের মধ্যেই অবস্থিত নানান ফুল ও অর্কিডের কাচ ঘেরা ঘরে । সেখানে গিয়ে মন ভরিয়ে ফুল দেখলাম বৃষ্টির কনসার্ট সহ। তবে কাচের ঘেরাটোপে আমরা বৃষ্টির জলের থেকে সাময়িক রেহাই পেয়েছিলাম। ওখান থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে পথেই পড়েছিল গণেশ টক/ গণেশ মন্দির। কিন্তুক বাড়াবাড়ি রকমের বৃষ্টির জন্য আমাদের তালিকার বেশ কিছু জলের তোড়ে ভেসে গেল আর আমরা ঘরে থুড়ি হোটেলে ফিরে এলাম । সেদিন ছিল দোল পূর্নিমা। ফেরার পথে গ্যাঙটকের পার্ক স্ট্রিট এম.জি.রোডে রঙের মাতন দেখলেও সবটাই ছিল বৃষ্টির জন্য একটু ম্রিয়মান ।
সন্ধ্যার পর বেরনো হল না , আগের দিনের জার্নি আমাদের অনেকখানি ক্লান্ত করে দিয়েছিল। এরপর সন্ধ্যার বেরনোর চাপানউতোরের পালা চলার মধ্যেই আবার বরুণদেব নতুন উদ্যমে ঝমঝমিয়ে জাকিয়ে এসে পড়লেন ।
No comments:
Post a Comment