মা একটা কথা বলতেন , আগে দেখনদারি পরে গুণবিচারী , কথাটা খুব একটা মানতে না পারলেও, কার্যত অনেক ক্ষেত্রেই এই সত্য উপলব্ধি করেছি আগেও , এখনও।
মজার কথা হল , সাজ গোজ ব্যাপারটাতে বরাবরই আমার দৌড় বেশ পিছনে । তখনকার জামিনী শাড়ির বিজ্ঞাপনের ট্যাগ লাইন আমার ছিল পছন্দের সাজের definition ... তোমাদের অনেকেই যারা আমার সমসাময়িক , জানো সেই বিজ্ঞাপিত বাণী ... ছোট্ট টিপ , হাল্কা লিপস্টিক আর শাড়ি ।
সাজের ক্ষেত্রে রাতের অনুষ্ঠান আর বিয়ে বাড়িতে ওষ্ঠরঞ্জনী হালকার জায়গায় হয়তো গাঢ় হয় , এই যা পার্থক্য ।
সাজের ব্যাপারে আমার সুমিত্রা দি র ( সুমিত্রা সেন ) গানের ক্লাসের (তখন শিখতাম )এক দিদি , শক্তিরূপা দি , পেশাগত ভাবে সিনিয়র গাইনোকোলজিস্ট একবার বলেছিলেন ... ব্যাগে একটা ফেস ওয়াস আর লিপস্টিক রাখি , সারাদিনের কাজের ফাঁকে সুযোগ মতনই ফ্রেস হয়ে , একটু লিপস্টিক লাগিয়ে নিই । শুনে ভাল লাগলেও, নিজের ঘরের চৌহিদ্দির বাইরে লিপস্টিক লাগানোর ক্ষমতা আমার সেদিনও ছিল না , আজও নেই।
কলেজে পড়ার সময় সাজার সুযোগ ছিল , মায়েরও হাল্কা সাজে আপত্তি ছিল না , কিন্তু যাদবপুরের ফেস্ট ছাড়া অন্য সময় সাজন গোজন হোতো না আমার দ্বারা , ফেস্টের সময় সেজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরিচিত এক কাকুকে দেখে উল্টো পথে ঘুরে ঘুরে বাস স্ট্যান্ড গিয়েছিলাম, এখন ভাবলে হাসি পায় 😄
মা চিরদিন ই ছিলেন ফিটফাট । তবে মাকে কখনো সাজতে দেখিনি তেমনভাবে । শুনেছি বাবা অফিস ( ১০টা - ৫টা ) থেকে ফেরার আগেই মা , সুন্দর করে চুল বেঁধে , সারাদিনের পরা শাড়ি পরিবর্তন করে অপেক্ষা করতেন । মাকে আমি সব সময়েই পরিপাটি দেখতাম । বিপরীতে মায়ের মেয়ে বাড়িতে থাকলে সাক্ষাৎ শেওড়াগাছের বাসিন্দা মনে হোতো মায়ের । বলতেন ... কি যে ভুতের মতন থাকিস বাড়িতে ? তো আমার ঘরে ওমনই ভাল লাগে , মা রাগ করতেন ।
আমার স্কুলের বন্ধু হৈমন্তীর মা , কাকিমা ছিলেন খুব সাদাসিদে , ঘরে থাকতেন অনেকটা আমার মতন , ভবানীপুরের বাড়িতে একদিন সবাই যখন বেরিয়েছে , কাকু অফিসে, হিমু স্কুলে আর ওর দাদা কলেজে ... আগমন এক সেলস গার্লের , কাকিমা দরজা খুলেছেন হাতে ঝাঁটা .... কিছু বলার আগেই কাকিমা ... " বৌদিমণি , দাদাবাবু কেউ নেই , পরে আসবে কেমন? " 🙃😇
পত্রপাট সেলস গার্লের প্রস্হান ।
তো ভুত / পেত্নির মতন থাকার এটা হল গিয়ে ইতিবাচক দিক । তাই না ?? খতিয়ে দেখলে প্রতি বিষয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে । যে দিকের পাল্লা ভারি , আমরা সেটাই মনে রাখি , এই যা !!!
সাধারণত ঘরের থেকে সামান্য উন্নত সাজে , পাড়ার দোকান আর একটু দূরের বাজারে যাই । ধরো একটা মোটামুটি ভদ্রস্থ পোশাক , চুলটা ক্লিপ করা যাহোক করে ।
কোভিড এর প্রথম লকডাউনের কিছু আগেই পাড়ায় খুলল এক নতুন মেডিসিন সপ্ । টপ করে ওই সময় তারা হোম ডেলিভারি শুরু করে , বাজার জমিয়ে নিল , দোকান থেকে যে নিত্য ওষুধ সরবরাহ করে , তাকে ছাড়া কাউকেই চিনি না , এমনকি সে মুখেও মুখোশ, কাজে সেও খুব পরিচিত নয় । মাস খানেক আগে কিছু মেডিসিন বাড়িতে না দেওয়ায় , পাড়ার দোকান থেকে ফেরার পথে , ওষুধের ডাক খোঁজে হাজিরা দিলাম ... অচেনা আমাকে দেখে খুব একটা পাত্তা তো দিলই না , উপরন্তু বেশ খারাপ লাগা নিয়েই ফিরলাম ... ছোটবেলায় পড়া একটা কবিতা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ... কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়াছে পায়ে , তা বলে কুকুরে কামড়ানো কি মানুষের শোভা পায় ? "
গত মঙ্গলবার , আবারও আমি ওই দোকানে গেলাম আমার একটা ওষুধের খোঁজে...ব্যবহারে আকাশ, পাতাল প্রভেদ চোখে পড়ল , কারণও পরিষ্কার বুঝলাম আর বুঝে মনে মনেই হাসলাম ... বুঝতে পারলে কি তোমরা ?? পারোনি তো !!! খোলসা করি তবে ... মঙ্গলবার আমি ওখানে গিয়েছিলাম কলেজ যাওয়ার পথে , সাজ গোজ ছিল একেবারেই জামিনী শাড়ির ট্যাগ লাইন অনুসারে ... তাতেই আমাকে কোন এক তালেবর ঠাউরে এত মিষ্টান্ন সদৃশ ব্যবহার।
মুখে যাই বলি না কেন , আমরা এখনও দর্শনকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি , আরো একবার প্রমাণ পেলাম...
#দোষকারোনয়গোমা
No comments:
Post a Comment