কবিগুরু সুরে সুরে যেমন বলেছেন " এসো হে বৈশাখ এসো এসো "... আবার এমনও বলেছেন ... "দারুণ অগ্নিবাণে রে !!! " তবে গীতবিতানে প্রকৃতি পর্যায়ের পর্যালোচনা করলে কিন্তু দেখা যায় বর্ষার বরিষণের অঝোর ধারা ঝরে পড়েছে বারংবার। তাতেই মনে হয়েছে কবি হয়তো বা বোলপুরের বৃষ্টি সর্বোপরি বর্ষার প্রেমে মাতোয়ারা ছিলেন । হবে না ই বা কেন ... বর্ষার বৃষ্টি ধারায় সমগ্র প্রকৃতি যে সতেজ হয়ে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরে ওঠে , মেতে ওঠে । এ দিকে গ্রীষ্মের ঘর্মাক্ত কলেবর নিয়ে আর যাই হোক কাব্য হয় না সাধারণের । বিশ্ব কবির ভাঁড়ারেও গরমের বন্দনা নেহাত ই অল্প সল্প !! তবে হক কথা হল এখনকার তপনের প্রখরতা মারাত্মক রকম বৃদ্ধি পেয়েছে !!! সেই সাথে অনেকদিন পরে , আমরা যারা আশিতে স্কুলে যেতে শুরু করেছিলাম তখনকার মতন যদি আঁধার রাতের হ্যারিকেন ( যার পাট আর নেইকো) পর্বের কিছুটার পুনরাবৃত্তি হয় তো গল্প পুরো জমে ক্ষীর !!!
গত বুধবারে রাজ্য থুড়ি দেশ জুড়ে ধর্মীয় ছুটি ( প্রায় প্রায় সকলের ) ছিল। মঙ্গলবার রাতের আঁধারের বিভীষিকা তখনও আঁধারে ই বিরাজমান ... পরেরদিন ভোরে ওঠার পাট নেই ভেবে আনন্দ নিয়ে শুতে গেলেও ... পরের ভোরের বদলে মাঝরাত থেকেই পাড়াময় সকলে জেগে উঠে ঘুমের বদলে ঘাম সহ রাত কাটালাম।
কারণ জানাতে ফোনের দরবারে CESC হাজির। সাথে আগাম জানিয়ে দিলেন তারা দুঃখিত। ট্রান্সফর্মার দুম ফটাস !!!! দু তরফের গাফিলতির গল্প থাকলেও ভোগান্তি সকলের আর সারাইকারীদের ভোগান্তি যে চূড়ান্ত তা বলা ই বাহুল্য।
এমন আঁধার রাতে আমাদের ছোটকালে আমি মায়ের সাথে গানের লড়াই খেলতাম ... স্মৃতির ওপার থেকে এদিকের মা-মেয়ের দিকে চোখ ফেরালাম। মেয়ে আমার , তার জন্ম ইস্তক লোডশেডিং এর গপ্পো ই শুধু শুনেছে এবারে প্রত্যক্ষ করে যারপরনাই আতঙ্কিত!!! বেচারী র ঘামের গুঁতোয় গলা বসে জ্বর এসে গেছে। একেই সূজ্জি মামার রাগত দৃষ্টিতে এ সপ্তাহের শুরুতেই তিনি লু লাগিয়ে sweet home এ রয়েছেন বিশ্রামের আর ঘ্যানোর ঘ্যানোর করছেন ।
তো সেদিন গরম গরম রাতের আঁধারে গানের লড়াইয়ের রিপিট টেলিকাস্ট শুরু করেই হোঁচট খেলাম ... ঘর থেকে লোকাল গার্জেন জিগাইলেন ..." মা মেয়ে কি পাগলে গেলে ?? " মূর্তি মান রসভঙ্গ !!! সবে দরদ দিয়ে গান ধরেছিলাম ঘাম ভুলে ... " রাত এখনও অনেক বাকি 🎶🎶 ।" দিলো জল ঢেলে ... আগে দিত না কিন্তুক!! টাক নেড়ে তাল দিত 😡 । যাক ওসব কানে গেলেও মনে নিতে নেই । আর সত্যিই কি দারুণ গান নির্বাচন করেছিলাম বলো !!! তখন সত্যিই রাত অনেকখানি বাকি ছিল ।
যাক এর আরো কিছু পর আলো আমার আলো ওগো গাইবার মতন আলো এলো .... তবে যেই গিয়ে পিঠ খাটে ঠেকিয়েছি না ঠেকিয়েছি .... আবার তিনি হুস করে চলে গেলেন মন পুরো টুকরো টুকরো হয়ে ঘামে দুঃখে ভিজে একাকার হয়ে গেল !!! আর মনে বল পেলাম না ... নির্জীব হয়ে শুয়েই রইলাম। পুপে এবার গরম কে কাঁচকলা দেখিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ওদিকে তিনিও নাক মারফৎ ঘুমের জানান দিলেন । আমি একাকী জাগন্ত। আবার পাখা চলমান হতে এবার ঘুম দিলাম । কিন্তুক দেড়ঘন্টার মাথায় পাখাও বন্ধ হল আর জাগন্ত হয়ে দেখি ভোর হয়েছে । ৫ . ১০ ঘটিকা । আবার তিনি এলেও সাড়ে ছয় টার দিকে নেই হয়ে গেলেন। তখন আমরা কেমন হতাশ হয়ে আশা ছাড়া হয়ে ঘেমে নেয়ে গপ্প ও দৈনন্দিন কাজে লেগে পড়লাম। পুপে দেবী তখনও ঘুমিয়ে আছেন ... এই সব যাওয়া আসা র তোয়াক্কা না করেই। এরপর আরো আসা যাওয়ার পাট চালু থাকতে থাকতেই একদম আধা বাঙালি স্টাইলে দুপুরে মেয়ে আর বাবা কে হাত পাখার বাতাস সহ খাবার টেবিলের দুদিকে বসিয়ে খাওয়ানো হল এই শর্তে ... যে , আমি বাতাস খেতে খেতে খাবার খাবো !! কিন্তুক ওদের ( CESC ) তর সইল না ... ওমনি সব সারাই শেষে পাখা চালু হল । খাবার খেলাম বটে তবে হাত পাখার বাতাস টা আপাতত pending রইল । পরের ক্ষেপে ওটা আগে খেয়ে নিতে হবে । কারণ ভিতরের খবর ... এ বার আমরা ছোটবেলার মতন লোডশেডিং সংক্রান্ত নস্টালজিক হওয়ার বিস্তর সুযোগ নাকি সকলেই অল্প বিস্তর পাবো ।
No comments:
Post a Comment