Wednesday, 18 December 2024

শাড়ি কাহন

 ছোটবেলার খেলার সাথি ছিল দু বাড়ি পেরিয়ে থাকা সংযুক্তা। ছাদে ছাদে বয়ে  চলত কথার মেল ট্রেন। হতচ্ছাড়া ফ্ল্যাট বাড়ি মাথা চাড়া দিল ... ছাদ বার্তালাপ বন্ধ হল ।  মন খারাপের তোয়াক্কা কে করে ওই বয়সে ?? বাড়ি বাড়ি বাড়াবাড়ি যাতায়াতের মধ্যেই দিন যাপন চলতে লাগল। 

পুতুল খেলার সাথে সাথে  স্কুল টিচার খেলা ছিল কমন । আর তাতে শাড়ি পরা মাস্ট।  সেই শুরু !!! সংযুক্তা যদিও আমার থেকে ১১ মাসের ছোট ছিল কিন্তুক শাড়ি পরত দুরন্ত। মায়ের দুখান শাড়ি দুজন পরে আর গামছা দিয়ে মাথায় খোপা করে আমরা টিচার টিচার খেলতাম। সেই শুরু আমার শাড়ি প্রীতি।

ভয়ানক রকম শাড়ি পরেও প্রীতি থেকে তা কখনোই ভীতি তে পরিণত হয়নি। কতবার শাড়ি পরে বেকায়দায় পড়েছি , যখন খুলে গেছে  পথে ঘাটে ( সে সব আরেক গপ্পো) 😄!!! 

শাড়ি কেনার খেয়াল অনেক পরের ... বলা ভাল বিয়ের পরের সংযোজন।  আগে সুযোগের আর ট্যাকের বিস্তর সমস্যা ছিল। সমস্যার রেশ এখনও আছে , তবে স্বাকার হলে চুপচাপ ফুলে ছাপের পদ্ধতি চলে চোরাগোপ্তা ভাবে । 

গতকাল zee5এ একখান শাড়ি সংক্রান্ত ওয়েব সিরিজ দেখলাম। গল্প সাধারণ । কিন্তু শাড়ি জড়িয়ে তা আমাকে জড়িয়ে ধরল .... বিশেষ এক শাড়ি পৈঠানী।  যা মহারাষ্ট্রের ট্র্যাডিশনাল শাড়ি। পৈঠান অঞ্চলের শিল্প। এই শাড়ির আঁচলের এক বিশেষত্ব হল  এই যে এখানে টিয়া অথবা ময়ূরের কল্কা  থাকে। টিয়ার ডিজাইনের মূল্য ময়ূরের থেকে কম। আমার দিদির ছেলে মজা করে বলেছিল ... " কাকের পৈঠানি ডিজাইন নেই মাসি ?   তার মূল্য আরো একটু কম হোতো  তবে !!! " 🤫

তাঁতে হাতে বোনা হয় রেশম আর সোনার সুতো দিয়ে। তাই তার দাম আকাশ ছোঁয়া। গল্প এক পৈঠানি শাড়ি বোনা কারিগরের। যার নাম গোদাবরী।

এই শাড়ির কথা প্রথম শুনি আমার বিবাহ পরবর্তী বান্ধবী জিনিয়ার কাছে আমাদের মুম্বাই যাওয়ার আগে। মুম্বাই গিয়ে এ দিক ওদিক খোঁজ লাগিয়ে খান দুই তিন পৈঠানি কারখানায় গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরেছিলাম । আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০১০ সালে যখন মুম্বাই গিয়েছিলাম তখন ওর দাম শুনেছিলাম ৫০০০/- থেকে শুরু। শুরুর দাম শুনেই মোর বক্ষ দুরু দুরু 🤪 ... এখন মূল্য কোথায় উঠেছে তার খানিক নমুনা ওই সিরিজেই পেলাম । চক্ষু ছানা বড়া করে জানলাম সর্বোচ্চ মূল্য নাকি লাখের ঘরে এখন .... কয় কি ??? হরি বোল !!!!

পরে সেবার , মুম্বাই ডে ট্যুর করতে গিয়ে মুম্বাই নিবাসী এক বাঙালি পরিবারের সাথে আলাপ হয় । তাদের কাছে শুনি , ওরাজিনালের বদলে সেমি পৈঠানি কিনলে দাম ওতো হবে না । 

সে যাত্রায় অন্য দুখান শাড়ি কেনার পর পৈঠানি বিহনে ঘোরার পালা সাঙ্গ করে  ঘরে ফিরে আসি।

আমার মুম্বাই নিবাসী ছোটবেলার আরেক বান্ধবী এষা, পরে আমার অনুরোধে মুম্বাই থেকে সেমি পৈঠানি কিনে এনেছিল ... 

অনেক বছর পর ওই ওয়েব সিরিজ স্মৃতিতে উস্কে দিল ...

No comments:

Post a Comment