Tuesday, 9 April 2024

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪২

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪২ 

এ বছরের ঘুরতে যাওয়ার বাতাবরণ বেশ দুর্যোগ পূর্ণ ছিল শুরু থেকেই।  কারণ গত বছরের শেষ প্রান্তে এসে পা ভেঙে বেশ কিছু ছুটি খরচ হয়ে গিয়েছিল আর সর্বোপরি চক্ষু লজ্জার মাথা মুণ্ডণ করে আবার যাব , ঘুরতে যাব এমন সুপ্ত ভাবনাকে মনের গুপ্ত কোণা থেকে বের করার সাহস হচ্ছিল না । এখন দূরপাল্লার কু ঝিক ঝিকের টিকিট যখন তখন কেটে ফেলার উপায় নাস্তি । সাথের ভ্রমণ বন্ধুদের অসহায়তা জানানোর পর তেনারা গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে পড়ার টিকিট টকাটক কেটে ফেললেন । আর দেখা হলেই হাড়ি মুখ আরো হাড়ি করে বলতে থাকলেন যে ... আমাদের সাথে যেতে চাও ই না !!! কি আর বলব 😥 ?? 

হেনকালে মেয়ের বাৎসরিক পরীক্ষা শুরু হল ... মনের মধ্যে ঝড় চলছে গুপ্ত ভাবেই। মন বলল ... দিন দুই হলেও একটু তাজা বাতাস না পেলে মন খারাপের দিস্তা কাটানোই দায় হবে !!!! কিন্তুক টিকিট তখন ডুমুরের ফুল । এদিকের লোকাল গার্জেন গর্জন করছেন , তিনি সদ্য কন্যার পড়াশোনার তরণীর হাল ধরতে দিন তিনেক ছুটি নিয়েছিলেন ... তাই ঘোরাঘুরিতে আপাতত লাগাম দিতে বললেন । 

মন বেশ খারাপ হলেও  ... একদিন ক্যালেন্ডার খুলে মুখে হাজার বাতির সাময়িক আলো জ্বলে উঠল , যখন হোলি , দোল , গুড ফ্রাইডে র ছুটি এক সাথে এক সপ্তাহে হাজির হল ... সে মতন ঘোরাঘুরির আয়োজন হলেও টিকিট রইল বাকি !!! বিপদ আপদ কি একা আসে ??? মেয়ের পরীক্ষার শেষ দিনের নোটিশে পিলে আবার ফুটবলার পেলে র মতন লম্ফ দিল !!! রেজাল্ট বেরনো দিনে গোলযোগ নেই বটে তবে নতুন করে  হাই স্কুলে ( জুনিয়র থেকে ) ভর্তির দিনে , ঠিক করা কথা মতন আমাদের থাকার কথা পাহাড়ী পথের বাঁকে বাঁকে তার রহস্য আর অপরূপ প্রকৃতির মাঝে । তবে ???? ট্রেনের টিকিট বাদে সব আয়োজন তখন হাতের তালুতে।  তার মধ্যেই এ আবার কি কথা ??? মন আবার হাল ছাড়া , পাল ছেঁড়া নৌকো হয়ে দুঃখে একাকার !!! খোঁজ লাগিয়ে , স্কুলে গিয়ে অনেক দৌড় ঝাঁপ করে দ্বিতীয় একখান তারিখ জোগাড় করা হল কন্যার রেজাল্টের দিনে । তখনও আমাদের ট্রেনের টিকিট বহু দূর । 

ছুটির ঘন্টা বাজলেও টিকিটের টিকি টাক কিছুই তখন নাগালে আসছে না । মনে শুধুই চিন্তার টাচ্। ওদিকে কলেজের মেলাই কাজের বেশ কিছু  গুছিয়ে দিয়ে এবং নিয়ে ব্যাগ পত্তরের গুছু তখন প্রায় প্রায় শেষের পথে ... হেনোকালে কর্তামশাই এর অতি ভরসা যোগ্য ততকাল টিকিটের কাণ্ডারী, দু হাত তুলে পুরো নিত্যানন্দ স্টাইলে জানালেন নেই নেই  .... ওনার নামের সাথে স্টাইল একদম মিলে গেল এবারে। তেনার নাম নিতাই বাবু । আরো দুই প্রস্থ চেনা জানার ক্যাচের ধরাধরি র পর বেরনোর সাড়ে তিন ঘন্টা আগে একখান ক্যাচ ফসকে গেল , আমি মনের দুঃখে বিছানায় কাত হলাম। কর্তামশাই দেখলাম সেভিং ক্রিম মাখছেন ... বললাম যারা যাচ্ছেন ওই ট্রেনে , তাদের বাই করতে যাচ্ছো ?? কটমটে দৃষ্টি দেখেও দেখলাম না। বলার সুযোগ আমার ঘটেছে , ছাড়লে হয় ??? কিন্তুক পরবর্তী ক্যাচ একদম ম্যাচ করল , ভাসুর ঠাকুরের হাতযশ এবারেও কামাল করল আর আমরা রওনা হলাম। পদাতিকের ফার্স্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্টে জীবনে প্রথম ওঠার পর ওদিকের দৃষ্টিতে বেশ কলার তোলার গর্বিত ছাপ চোখে পড়ল পষ্ট !!! ভাব খানা ... কেমন দিলাম বলো দেখি ??? 

জীবনে প্রথমবার ফার্স্ট ক্লাস কুপে উঠে আমি তখন অন্য লোকে বিরাজ করছি। সব কিছুই ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে। শুভাকাঙ্খি দের জানান দিয়ে , নিজেদের গুছিয়ে নিলাম । কুপে শুধুই তিনজনা।  দরজা টেনে দিয়ে একদমই নিজের আস্তানা , ভিতরে জোরালো আলো বন্ধ করতেই জ্বলে উঠল নীলাভ রাত-বাতি ( night lamp ) পুরো এলাহী ঘুমের আয়োজন। ঘুম খানিক পরেই কুপময় স্বশব্দে ছড়িয়ে পড়ল🙂 । এক সময় ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ল। ভোরে ওঠার এতদিনের অভ্যাস অনেক চেষ্টা করেও সাময়িক দূরে রাখা অসম্ভব। কাজেই উঠে পড়ে , আপার বার্থ থেকে নেমে পড়লাম ... মুখ ধুতে না ধুতেই হাজির চায়ে গরমের সেই ট্রেনজাত হাঁক ... যার কোন ক্লাসগত ভেদ নেই। চা আর দিনযাপনের প্রয়োজনীয় ওষুধ খেয়ে নিলাম । এক সময় চেনা গন্তব্য নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলাম। স্টেশনের বাইরে এসে থিকথিকে জনতা জনার্দন দেখে প্রথম একটু ঘাবড়ে গেলেও , একটু পরে সামলে নিলাম । ফোনাফুনির পর আগে থেকে বুক করা বাহন চালক হাজির হল ... আলাপ পর্ব মিটিয়ে চললাম চারচাকার বাহনের দিকে। আগের কদিনের বৃষ্টিপাতের চিহ্ন স্বরূপ জমা কাদা জলের খানাখন্দ দক্ষতা সহ পেরিয়ে গেলাম । গাড়ির গদিতে গদিওমান হয়েই জানলাম যে চেনা পথ বিগত দিনের বৃষ্টির দরুণ ধসে গেছে , আমাদের যেতে হবে অচেনা পথে লাভা আর কলিম্পং হয়ে ... স্বাভাবিক সময়ের থেকে আরো ঘন্টা তিনেক বেশি সময় নিয়ে ... কি আর করা .... বেশ গরমাগরম আবহাওয়ার মধ্যেই আমরা পথ চলা শুরু করলাম  হোমিও ও অ্যালো সব রকমের বমি নিরোধক ওষুধ খেয়ে ও খাইয়ে ( মা - মেয়ে only )। 

সমতল পেরিয়ে আস্তে ধীরে পাহাড়ের পাদদেশ পেরিয়ে এগিয়ে চললাম সামনের দিকে । এক সময় সেবকের কাছে এক জায়গায় ভারি জলখাবার খেতে নেমে পড়লাম। ছোট্ট এক খাবারের দোকানে চীনা, অ-চীনা সব রকমের ঢালাও আয়োজন। সামনের ঘুরপথে খাবার কোথায় কখন পাই না পাই আগাম ভেবে আমরা পেট ভরিয়ে আবার পাহাড়ি পথে হারিয়ে , ঘুমিয়ে , আবার জেগে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম । কোথাও মেঘ , কোথাও বা ঘন কুয়াশা, কোথাও বা ভরপুর রোদের ঝকমকানি .... সে সব পেরিয়ে সন্ধ্যার আঁধারে ঘন্টা আটেকের জার্নির শেষে আমরা পৌঁছলাম আমাদের গন্তব্য গ্যাংটকে। গণ্ডগোলের তখনও গল্প অল্প বাকি ... যার শুরুয়াত হল পরের দিন সকাল সকাল । 

No comments:

Post a Comment