বেড়াতে গিয়ে মজারু (৪)
বেড়াতে গিয়ে ইচ্ছে আর অ্যাডভেঞ্চার কে গোলালেই গোলমাল। আমি একদমই অ্যাডভেঞ্চার প্রবণ নই। কারণ ওসবে বিপদের সম্ভাবনা কিছু না কিছু থাকেই। অনেকেই বলেন অ্যাক্সিডেন্ট যে কোনো সময় হতে পারে.... নিশ্চয়ই point ... কিন্তু আমি ওই ভাবে ভাবতে পারি না। মনে হয় ক্ষণিকের আনন্দতে বিষাদের ছোঁয়া নাই বা লাগালাম ।
বেড়াতে গিয়ে কিছু কিছু আপাত সরল ইচ্ছে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে আর তার নিচে আমার ভয় ব্যাকুলতা কিছু ক্ষণের জন্য চাপা পড়ে।
ভাইজাগ গিয়ে প্রথম ঘোড়া চড়েছিলাম। ওখানকার Vuda park এ গিয়ে দেখি , এক জায়গায় লেখা রয়েছে Horse ride.... । ইচ্ছে দানা বাঁধতে শুরু করেছে .... কিন্তু ভীতি ও মনে মনে বারণ করছে। যথারীতি আমার মন পড়ে ফেলায় যার জুড়ি নেই , সে অভয় দিয়ে বলল যে , শুধু মাত্র photo session এর জন্য একটু সাহস করো .... । ইচ্ছা র জয় হল... অনেক কসরত করে উঠলাম ঘোড়ার পিঠে। একটা চেয়ারে উঠে, তার সামনে রাখা আর একটু উঁচু টেবিলে উঠে , সেখান থেকে ঘোড়ার পিঠে আসীন হলাম.... অনেকটা যেন পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি ... মনে এমন একটা ভাব ঘোরাফেরা করছে। ঘোড়া টা কিন্তু ময়দানের ঘোড়ার মতো অতো বড় না হলেও খুব ছোট ও নয়। তবে একদম ই টাট্টু নয়। কিন্তু পিঠে চড়ার আনন্দ নিমেষে উধাও .... কেন ? আমায় নিয়ে ঘোড়া তখন ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেছে.... আরেক জনের চোখের ইশারায় যে কাজটি হয়েছে বলাই বাহুল্য। ওই পার্কে একটা round দিয়ে সে ফিরে এল। আমি ও নেমে পড়লাম অনেক কষ্টেসৃষ্টে।
এরপরের ঘটনা কুফরী তে। হিমাচলের সিমলা বেড়াতে গেলে... ওখান থেকে অনেকেই কুফরী ও চ্যাল যায়। আমরা ও গেলাম। একটা জায়গা ওবধি গাড়িতে গিয়ে তারপর ঘোড়া য় চড়ে যেতে হয়। আমি তো বদ্ধপরিকর ঘোড়ায় ? কভি নেহি ..... । কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার যে হাল দেখলাম !!! বাপ্ রে .... তখন মনে হচ্ছে আভি ঘোড়া লাও । দুটো টাট্টু তে দুজন উঠেছি। আমি সামনে , পিছনের ঘোড়ায় তিনি । কিন্তু তিনি ঘোড়ায় ওঠার সাথে সাথেই ঘোড়ার পেটে চাপ পড়ার দরুণ ....... আর কি বলতে হবে ? বুঝে নাও please ।তারপর ঘোড়া বোধহয় খুব ভালো feel করল ... পেট তো হাল্কা হোলো !!! তো তারপর পাহাড়ী পথে , খাদের ধার ঘেষে ঘেষে চললাম। একসময় পৌঁছলাম.... সব দেখে আবার ও ঘোড়ায় করে ফিরলাম।
মানালি থেকে আমরা সোলাং ভ্যালি গিয়েছিলাম। সেদিন সকালে খুব বৃষ্টি , সেই সঙ্গে জব্বর ঠাণ্ডা। আকাশের মতো আমার ও মুখের অবস্থা। এমন সময় গাড়ির ড্রাইভার অন্নু ফোন করে বলল ... কব নিকলেঙ্গে ? আমরা বৃষ্টির কথা বলার সাথে সাথেই ওদিক থেকে উত্তর এলো .... চলিয়ে ভাবি... আজ উপর বহুত মজা আয়েগা।
এরা ভালো জানে , ওখানকার বাসিন্দা !! চটজলদি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরলাম। সত্যি ই উপর মজা আয়া.... বরফ পড়ছিলো তো !!!! অপূর্ব অভিজ্ঞতা। দাঁড়িয়ে, বসে , হেলে সব রকম ভাবে ছবি তোলার পর .... আবার ইচ্ছে ডানা মেলল.... কি রকম ? বরফ পরে ভ্যালি পুরোপুরি সাদা হয়ে গেছে... ওখানে বুদ্ধদেব এর অনন্তশয়ান style এ ছবি তুলবো.... তো সেই অনুযায়ী এগোচ্ছি, পিছোচ্ছি.... আমার photographer একবার বলে এদিকে একটু সরো , আবার বলে ওদিকে একটু ঘোরো .... এই করতে করতে একদম বিপদজনক zone এ চলে গেছিলাম আর কি !!! হঠাৎ photographer এর খেয়াল হতে .... একটু র জন্য বাঁচ গিয়া .... ।কি বলো তো ? বোঝোনি তো !!! পোস্ দিতে গিয়ে আর একটু হলেই নোংরা র ওপর পড়তাম। নিঃসন্দেহে কুকুরের কাণ্ড । আমাদের কাণ্ডজ্ঞানের কথা নাই বা বললাম।
এরপরের ঘোড়া চড়ার ঘটনা হলো উত্তরাখণ্ডের ধনৌলটি। সেখানে গিয়ে ওখানকার ইকো পার্কে ঘুরে নিয়ে বাইরে এসে দেখি ঘোড়া চড়ার ধূম । আমার এবার ইচ্ছে না থাকলে ও সাধিলেই যাইব ... এমন ভাব। তো কন্যার বায়নায় এক ই ঘোড়ায় দুজন উঠেছি। বাকি রা কেউ উঠবে না। তারা রইল অপেক্ষায়। আস্তে আস্তে চলেছি পরিষ্কার, ঝকঝকে রাস্তা.... আবহাওয়া ও অনুকূল.... এমন পরিবেশে আমার আবার গান পায়। মনে গুনগুন শুরু করেছি কি না করেছি ... এমন সময় ঘোড়া তার মালিকের নির্দেশে পাহাড়ী পথ ধরল। গান তখন gone....পুপে কে বলছি ... এই রে এখানে পড়লে তো আর দেখা যাবে না রে !!! হরিদ্বারে shopping করলাম সেগুলোর কি হবে রে ? পরা হবে না !!! আমার কন্যার ও তখন almost বোলতি বন্ধ।কার্যত ঘোড়ার পিঠে র বসার জায়গায় সামনে একটা লোহার হাতল আছে ধরার জন্য , সেটা পুপের পেটের কাছে চেপে বসে ওর তখন নাভিশ্বাস !!! নড়তে অপারক । ওর পিছনে আমি নামক ওজনদার মা বসে আছি যে !!! ও মাঝে মাঝে হিন্দি বাংলা মিশিয়ে বিচিত্র ভাষায় লগরি লগরি বলে চিল চিৎকার দিচ্ছে। পরে পাঠোদ্ধার তো নয় ভাষা উদ্ধার করলাম .... লগ রহি হ্যায় বলতে গিয়ে বেচারী গুলিয়ে বাদ দিয়ে যোগ করে একটা ভজঘট শব্দ বলে ফেলেছে । আমাদের কর্মজীবন আমাদের এমন ট্রেনিং দিয়েছে ভাষার নতুনত্ব আমাদের চমকিত করতে পারেই না।
। ইকো পার্কের পিছন দিয়ে ঘুরিয়ে আবার main road এ আসতেই নিজের সকলকে দেখে ধড়ে প্রাণ এলো , মুখে হাসি ফুটলো। বাপ্ রে ঘোড়া নিয়ে ঘোরাঘুরি বেশ কেমন যেন। চড়ার পর মনে হয় কেন চড়লাম ? নামার পর মনে হয় আবার চড়বো। ওঠার আগে মনে হয় কেন চড়বো না? বেশ গোলমেলে না ব্যাপারটা ? বেশ গোলমেলে !!!
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
বেড়াতে গিয়ে ইচ্ছে আর অ্যাডভেঞ্চার কে গোলালেই গোলমাল। আমি একদমই অ্যাডভেঞ্চার প্রবণ নই। কারণ ওসবে বিপদের সম্ভাবনা কিছু না কিছু থাকেই। অনেকেই বলেন অ্যাক্সিডেন্ট যে কোনো সময় হতে পারে.... নিশ্চয়ই point ... কিন্তু আমি ওই ভাবে ভাবতে পারি না। মনে হয় ক্ষণিকের আনন্দতে বিষাদের ছোঁয়া নাই বা লাগালাম ।
বেড়াতে গিয়ে কিছু কিছু আপাত সরল ইচ্ছে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে আর তার নিচে আমার ভয় ব্যাকুলতা কিছু ক্ষণের জন্য চাপা পড়ে।
ভাইজাগ গিয়ে প্রথম ঘোড়া চড়েছিলাম। ওখানকার Vuda park এ গিয়ে দেখি , এক জায়গায় লেখা রয়েছে Horse ride.... । ইচ্ছে দানা বাঁধতে শুরু করেছে .... কিন্তু ভীতি ও মনে মনে বারণ করছে। যথারীতি আমার মন পড়ে ফেলায় যার জুড়ি নেই , সে অভয় দিয়ে বলল যে , শুধু মাত্র photo session এর জন্য একটু সাহস করো .... । ইচ্ছা র জয় হল... অনেক কসরত করে উঠলাম ঘোড়ার পিঠে। একটা চেয়ারে উঠে, তার সামনে রাখা আর একটু উঁচু টেবিলে উঠে , সেখান থেকে ঘোড়ার পিঠে আসীন হলাম.... অনেকটা যেন পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি ... মনে এমন একটা ভাব ঘোরাফেরা করছে। ঘোড়া টা কিন্তু ময়দানের ঘোড়ার মতো অতো বড় না হলেও খুব ছোট ও নয়। তবে একদম ই টাট্টু নয়। কিন্তু পিঠে চড়ার আনন্দ নিমেষে উধাও .... কেন ? আমায় নিয়ে ঘোড়া তখন ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেছে.... আরেক জনের চোখের ইশারায় যে কাজটি হয়েছে বলাই বাহুল্য। ওই পার্কে একটা round দিয়ে সে ফিরে এল। আমি ও নেমে পড়লাম অনেক কষ্টেসৃষ্টে।
এরপরের ঘটনা কুফরী তে। হিমাচলের সিমলা বেড়াতে গেলে... ওখান থেকে অনেকেই কুফরী ও চ্যাল যায়। আমরা ও গেলাম। একটা জায়গা ওবধি গাড়িতে গিয়ে তারপর ঘোড়া য় চড়ে যেতে হয়। আমি তো বদ্ধপরিকর ঘোড়ায় ? কভি নেহি ..... । কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার যে হাল দেখলাম !!! বাপ্ রে .... তখন মনে হচ্ছে আভি ঘোড়া লাও । দুটো টাট্টু তে দুজন উঠেছি। আমি সামনে , পিছনের ঘোড়ায় তিনি । কিন্তু তিনি ঘোড়ায় ওঠার সাথে সাথেই ঘোড়ার পেটে চাপ পড়ার দরুণ ....... আর কি বলতে হবে ? বুঝে নাও please ।তারপর ঘোড়া বোধহয় খুব ভালো feel করল ... পেট তো হাল্কা হোলো !!! তো তারপর পাহাড়ী পথে , খাদের ধার ঘেষে ঘেষে চললাম। একসময় পৌঁছলাম.... সব দেখে আবার ও ঘোড়ায় করে ফিরলাম।
মানালি থেকে আমরা সোলাং ভ্যালি গিয়েছিলাম। সেদিন সকালে খুব বৃষ্টি , সেই সঙ্গে জব্বর ঠাণ্ডা। আকাশের মতো আমার ও মুখের অবস্থা। এমন সময় গাড়ির ড্রাইভার অন্নু ফোন করে বলল ... কব নিকলেঙ্গে ? আমরা বৃষ্টির কথা বলার সাথে সাথেই ওদিক থেকে উত্তর এলো .... চলিয়ে ভাবি... আজ উপর বহুত মজা আয়েগা।
এরা ভালো জানে , ওখানকার বাসিন্দা !! চটজলদি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরলাম। সত্যি ই উপর মজা আয়া.... বরফ পড়ছিলো তো !!!! অপূর্ব অভিজ্ঞতা। দাঁড়িয়ে, বসে , হেলে সব রকম ভাবে ছবি তোলার পর .... আবার ইচ্ছে ডানা মেলল.... কি রকম ? বরফ পরে ভ্যালি পুরোপুরি সাদা হয়ে গেছে... ওখানে বুদ্ধদেব এর অনন্তশয়ান style এ ছবি তুলবো.... তো সেই অনুযায়ী এগোচ্ছি, পিছোচ্ছি.... আমার photographer একবার বলে এদিকে একটু সরো , আবার বলে ওদিকে একটু ঘোরো .... এই করতে করতে একদম বিপদজনক zone এ চলে গেছিলাম আর কি !!! হঠাৎ photographer এর খেয়াল হতে .... একটু র জন্য বাঁচ গিয়া .... ।কি বলো তো ? বোঝোনি তো !!! পোস্ দিতে গিয়ে আর একটু হলেই নোংরা র ওপর পড়তাম। নিঃসন্দেহে কুকুরের কাণ্ড । আমাদের কাণ্ডজ্ঞানের কথা নাই বা বললাম।
এরপরের ঘোড়া চড়ার ঘটনা হলো উত্তরাখণ্ডের ধনৌলটি। সেখানে গিয়ে ওখানকার ইকো পার্কে ঘুরে নিয়ে বাইরে এসে দেখি ঘোড়া চড়ার ধূম । আমার এবার ইচ্ছে না থাকলে ও সাধিলেই যাইব ... এমন ভাব। তো কন্যার বায়নায় এক ই ঘোড়ায় দুজন উঠেছি। বাকি রা কেউ উঠবে না। তারা রইল অপেক্ষায়। আস্তে আস্তে চলেছি পরিষ্কার, ঝকঝকে রাস্তা.... আবহাওয়া ও অনুকূল.... এমন পরিবেশে আমার আবার গান পায়। মনে গুনগুন শুরু করেছি কি না করেছি ... এমন সময় ঘোড়া তার মালিকের নির্দেশে পাহাড়ী পথ ধরল। গান তখন gone....পুপে কে বলছি ... এই রে এখানে পড়লে তো আর দেখা যাবে না রে !!! হরিদ্বারে shopping করলাম সেগুলোর কি হবে রে ? পরা হবে না !!! আমার কন্যার ও তখন almost বোলতি বন্ধ।কার্যত ঘোড়ার পিঠে র বসার জায়গায় সামনে একটা লোহার হাতল আছে ধরার জন্য , সেটা পুপের পেটের কাছে চেপে বসে ওর তখন নাভিশ্বাস !!! নড়তে অপারক । ওর পিছনে আমি নামক ওজনদার মা বসে আছি যে !!! ও মাঝে মাঝে হিন্দি বাংলা মিশিয়ে বিচিত্র ভাষায় লগরি লগরি বলে চিল চিৎকার দিচ্ছে। পরে পাঠোদ্ধার তো নয় ভাষা উদ্ধার করলাম .... লগ রহি হ্যায় বলতে গিয়ে বেচারী গুলিয়ে বাদ দিয়ে যোগ করে একটা ভজঘট শব্দ বলে ফেলেছে । আমাদের কর্মজীবন আমাদের এমন ট্রেনিং দিয়েছে ভাষার নতুনত্ব আমাদের চমকিত করতে পারেই না।
। ইকো পার্কের পিছন দিয়ে ঘুরিয়ে আবার main road এ আসতেই নিজের সকলকে দেখে ধড়ে প্রাণ এলো , মুখে হাসি ফুটলো। বাপ্ রে ঘোড়া নিয়ে ঘোরাঘুরি বেশ কেমন যেন। চড়ার পর মনে হয় কেন চড়লাম ? নামার পর মনে হয় আবার চড়বো। ওঠার আগে মনে হয় কেন চড়বো না? বেশ গোলমেলে না ব্যাপারটা ? বেশ গোলমেলে !!!
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
No comments:
Post a Comment