Thursday, 10 October 2019

বেড়াতে গিয়ে মজারু (৬)

বেড়ানোর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে ... কত অচেনা মানুষ ক্ষণিকের জন্য চেনা হয়ে যায়... হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর একটা গান আছে না !!! "এই যে পথের এই দেখা , হয়তো পথেই শেষ হবে ..... তবু ও হৃদয় মোর ভাবে সঞ্চয় কিছু যেন রবে .... ক্ষণিকের এই জানা শোনা ... স্মরণে করে যে আনাগোনা ..... " 🎶🎶🎶🎶.... এমনটা জীবনের পথ চলতে গিয়ে ও হয় আর তারই সংক্ষিপ্তকরণ হয় বেড়াতে গিয়ে। এই স্বল্প পরিচিত মানুষের কাছ থেকে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যে আমরা সমৃদ্ধ হ‌ই। অপরিচিত কে পরিচিত করতে আমার কন্যার জুড়ি মেলা ভার। একবার জামসেদপুর বেড়িয়ে ফিরছি.... ট্রেনে বসে ই পুপের প্রথম প্রশ্ন ... আচ্ছা মা , ওরা কারা ( আমাদের সামনের যাত্রীদের নির্দেশ করে ) ? চিনতে পারছি না তো !!!! বোঝো কাণ্ড !!! দুনিয়া শুদ্ধু সবাইকে যে চেনা যায় না ... তা সে মানতে নারাজ। একে জীবন জুড়ে চেনা মানুষ ই হঠাৎ হঠাৎ করে অচেনা হয়ে যাচ্ছে !!!!
তো এভাবেই যাত্রা পথে আলাপচারিতায় মনোনিবেশ করে আমার কন্যা। দিনকালের হালহকিকত বেশ ঘোরালো ... তাই আমাকে-ও ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি করতে হয়।
একবার আমরা নর্থবেঙ্গল গিয়েছি। ঘোরাঘুরি
র মধ্যে চা বাগানে হাজির হয়ে , অনেক ছবি তোলার পর ফিরতি পথে গল্প জমে উঠেছে। ড্রাইভার না না রকম অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করছে... তখন ই জানলাম যে চা বাগানে অজগরের থাকার সম্ভাবনা প্রচুর। আর থাকে চিতা বাঘ। বাপ্ রে .... কি সাঙ্ঘাতিক !! এমন তথ্য পরিবেশনের পর আমার কর্তা বললেন যে .... এতো জানা কথা !! ভাবো কি কাণ্ড !!! এতোই যদি জ্ঞানের ভাণ্ডার , তো ছবি তোলার সময় সতর্ক করার কথা মনে ছিল না ? নাকি .....
লাটাগুড়ির জঙ্গল সাফারি তে কিছুই দেখলাম না ... কিন্তু গল্পের গরু থুড়ি চিতা গাছে উঠতে শুনলাম। তা হয়েছিল কি ... জিপ সাফারিতে পর পর জিপ ঢুকছে জঙ্গলের অন্দরে ...  ময়ূর দেখে উৎফুল্ল হবো কিনা ভাবছি , কারণ আমার সহকর্মী সঞ্চিতা দি বলে দিয়েছিলো যে , জঙ্গল ভ্রমনে প্রথম ময়ূর দর্শন অপয়া ... এমন সময় সামনের জিপের মানুষজনের চাঞ্চল্য নজরে এলো ... একটু অপেক্ষা করে শুনলাম একটু দূরে ঝোপে কিছু নড়তে দেখা যাচ্ছে .... কিন্তু তারপর আবার সব চুপচাপ। কিছু ই দেখা হলো না... যাত্রা প্রসাদ watch tower এ আমাদের guide নিয়ে গেল ই না। ওখানে গেলে কিছু না কিছু দেখতে পেতাম ই ... এমন guidance পেয়েছিলাম সঞ্চিতাদির কাছে। ফিরতি পথে গরু মারা অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে খান পাঁচেক গরু দেখতে দেখতে মন ভার করে গেস্ট হাউস এ ফিরলাম। সন্ধ্যায় বারান্দায় চা , পাকোড়া খেতে খেতে , ওখানকার রাঁধুনির কাছে শুনলাম চিতা বাঘের নাকি দেখা পাওয়া গিয়েছে সেদিন। বেশ আফসোস হোলো .... একটুর জন্য মোলাকাত না হ‌ওয়ার জন্য। কিন্তু .... সত্য দা আর আমার কর্তার জেরার মুখে গল্পের চিতা একেবারে চিতপাত হলো , ধরাশায়ী হলো আমাদের গেস্ট হাউসের দোতলার বারান্দায়.... ওই যে ঝোপ নড়েছিল .... সেই ঘটনা ই ডানা মেলে উড়ে কোথায় যে উড়েছে .... কোথায় থেমেছে !! ভেবে ই চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল।
ঝোপ নড়ে চিতা শুধু দর্শন ই দেন নি ... শিকার ধরে আবার তা টেনে নিয়ে ও গিয়েছে ..... উফ্ পু্রো বাংলা serial !!! আমাদের কপালে ময়ূর আর হরিণ ছাড়া দেখা মিলেছিল গরুর ... বুঝেছিলাম গরু মারা নাম খানিকটা হলেও সার্থক । না দেখেছি বাইসন , না গণ্ডার , না হাতি !!!
বেড়াতে গিয়ে পথ চলতি motion sickness এ এখন সিদ্ধহস্ত আমার কন্যা। ওকে সামলাতে গিয়ে আমার sickness ফিকে হতে হতে এখন সম্পূর্ণ সেরে গেছে। এখন এমন পরিস্থিতিতে আমি পুপে কে নিয়ে আর প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে গাড়িতে পিছনে বসি , সামনে ড্রাইভারের সাথে খোস গল্পে যোগ দেয় , আমার কর্তা।আর মেয়ে র ও রকমের sickness দেখা দিলেই মনে হয় আমি আর আমার কন্যা ছাড়া , অন্য সহযাত্রী ... বিশেষ করে আমার কর্তা যেন অপরিচিত । গাড়ি এগিয়ে চলে থামতে থামতে , নামতে উঠতে সময় গড়িয়ে যায় ... । সব রকম টোটকার application চলে । সাধারণ নিয়মে কখনো সে থামে ... টোটকার হাতযশ এই ভাবনা নিমেষে নস্যাৎ হয়ে যায় । আবার চলা শুরু হয়। কিন্তু আমাদের দমাতে পারেনা। চলতে থাকি।।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র

No comments:

Post a Comment