Thursday, 10 October 2019

বেড়াতে গিয়ে মজারু (৩)

বেড়ানোর মজার অভিজ্ঞতা , স্মরনীয় অভিজ্ঞতা লিখতে গিয়ে দেখছি মনের মধ্যে কতো না ঘটনা লুকিয়ে আছে .... একটু ভাবনায় নাড়াচাড়া করতেই ঝুলি থেকে উঁকি মারছে। মা সব সময় বলতেন আনন্দ ও দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে হয় , তাতে একটা আরো বেড়ে যায় আর অপরটা কমে যায়। প্রথমটায় আমার ভাবনা মাকে অনুসরণ করেছে। কিন্তু দুঃখের কথা সমব্যথী ছাড়া ভাগ করলে হেয় হতে হয ... সেটা মা ও হয়তো বুঝতেন পরে ,  আমার অভিজ্ঞতাও তাই। যাক ... গম্ভীর কথা ... থাক।
একবার পুরী গিয়েছি , সাথে আরেকটি বন্ধু পরিবার ও আছে। প্রথম দিন  সমুদ্র বিলাস এর পর হোটেলে ফিরে , ঘরে ঢোকার পর পাশের ঘর থেকে আমাদের বান্ধবী জিনিয়া জানালো যে ... ঘর তছনছ। কারণ অনুসন্ধানে জানা গেল , রুমের খোলা জানালা গলে ঘরে ঢুকেছিল যে , এ তার ই বাঁদরামি। আজ্ঞে হ্যাঁ ... এখানে ও বাঁদর। ওদের কন্যা তখন বেশ ছোট। তার জন্য আনা মুড়ির কৌটো ও উধাও। কোথায় , কোন ডালে বসে এখন চোর মুড়ি খাচ্ছে ... জানার উপায় নেই। অগত্যা সাবধান হতে হবে... জানিয়ে দিলেন ম্যানেজার সহ এক কর্মচারী।
সেবার আমাদের পুরীতে বেশ যাযাবরের মতো কেটেছিল। তিনদিনের মধ্যে একদিন হোটেল বদল , বাকি দুদিন রুম বদল। তো এসব বদলাবদলি র মধ্যে ও আমাদের সমুদ্র স্নান ( যদি পা ডোবানোকে স্নান বলা যায় {আমার ক্ষেত্রে }তবেই)  , মন্দির দর্শন , সমুদ্রের ধারে বসে সঙ্গীত পরিবেশন , কেনাকাটা কোনটাই বাদ পড়েনি। সেবার একদিন গিয়েছিলাম উদয়গিরি আর খণ্ডগিরি। ফেরার ট্রেন ছিল ভুবনেশ্বর থেকে। তখন ওই স্টেশনে থেকেই ধৌলি এক্সপ্রেস ছাড়তো। ফেরার দিন ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির দর্শন করেছিলাম। পূজা দেওয়া নয়, শুধুমাত্র দর্শন।
ঘটনার প্রাণকেন্দ্র হলো উদয়গিরি ও খণ্ডগিরি। এবার ও বাঁদর !!!! বলা ভালো বাঁদরের দল। তো যা বলছিলাম .... উদয়গিরি ও খণ্ডগিরি তে গাড়ি থেকে নামতেই একদল বাদাম বিক্রেতা এগিয়ে এলো। বলল ... বৌদি , এক টাকা করে দশটাকার বাদাম কিনে নিন । ভিতরে বাদাম খাওয়াবেন বাঁদরদের। তা সে অনুযায়ী বাদাম নিয়েই , বকুনি খেলাম । কি আর করা !! ওরা খাক বাদাম ... এই ভেবে গুটি গুটি এগিয়ে গেলাম.... বাকি সবাই আসছে পিছনে। হঠাৎ খেয়াল করলাম একে একে গাছ থেকে তেনারা নামছেন , এগিয়ে আসছেন। ব্যাস .... এবার আমার অবস্থা ভাবো। নিমেষের মধ্যে ই বাদাম শেষ ... কিন্তু ওরা তখন দলে দলে যোগ দিন ... এমন ভাবনায় মত্ত। আর পিছন ফিরে দেখি .... আমার ঘর শত্রু "বেশ হয়েছে" ধরনের দৃষ্টি নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হতাম অন্য কেউ  !! ওমন পারতো করতে ... এসব ভাবছি !! প্রায় কাঁদো কাঁদো ভাব ... এমন সময়... ভগবান আছেন । ওই বাদাম বিক্রেতা ও আরো কয়েকজন এগিয়ে এসে বাঁদর গুলো কে তাড়িয়ে আমাকে উদ্ধার করলো ... বলতে পারো। তখন বাকি রা এসে অনেক মশকরা করতে লাগলো.... । তো একটা কথাই বলি .... এক মাঘে শীত যায় না। পরের হাসি হাসার সুযোগ ও পরে পরেই পেয়ে গেলাম.... ।
ওখানে ঘোরাফেরা, ছবি তোলা সব‌ই হলো। এবার ফেরার পালা। যারা গিয়েছ জানো উদয়গিরি ও খণ্ডগিরি দুটো ই ছোট্ট পাহাড় , সেখানে কিছু বৌদ্ধ গুহা আছে আর মন্দির ও আছে। তো কোনটা উদয়গিরি আর কোনটা খণ্ড গিরি সে খেয়াল করিনি। মোটের ওপর আমাদের নামার রাস্তাটা ঢালু মতন। সবাই যখন নামছি ... ওখান থেকেই দেখলাম নিচের দিকে কয়েকজন বসে আছে উপর পানে চেয়ে। বুঝলে তো কারা পাদদেশে অপেক্ষমান ? আমার অবস্থা আবার আশঙ্কা জনক। কি করি !!! শুধু আমরা পাঁচ জন নয়... আরো ভ্রমণার্থী ও রয়েছেন। আমার কর্তা বীর দর্পে এগিয়ে গেলেন .... আমরা সবাই ওর পিছুপিছু। হঠাৎ একটা বাঁদর এগিয়ে এসে সোজা আমার কর্তার পা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে গেল। এবার !!!! তখন কোথায় smart phone ? ক্যামেরা থাকলেও সাহস হয়নি .... । ক্যামেরা চেপে ধরে যদি মুড়ির কৌটো র মতো নিয়ে যায় !!! আমার বীরপুরুষ তখন তুলনামূলক ভাবে নম্র গলায় বলেই চলেছে ... এ্যাই যা । যা বলছি !!!! শান্তিনিকেতনী ঢঙে অবশ্য বলেনি। যাই হোক আমরা আপামর টুরিস্ট কূল ওকে শিখণ্ডী করে , হাসি পেলে ও হাসবো না না না না ... আমরা রামগড়ুড়ের ছানা ...  এমন ভাবে নেমে এলাম। ওই ভক্ত তখনো প্রভুর পা ধরে দাঁড়িয়ে !!! এখানে ও ত্রাণকর্তা ওই আমার সদ্য পরিচিত দেওরকুল ( বাদাম বিক্রেতা ) । যাওয়ার শুরুতে বৌদি উদ্ধার ... ফেরার সময় দাদা উদ্ধার। পুরো কোটা কমপিলিট !!!! যাত্রা পালা।
হোটেল ফেরার পথে মনের ব্যাথায় কাতর হয়ে একজন বলেছিল তোমরা সব আমার বন্ধু না শত্রু ? আমায় ফেলে .... কথা আটকে গেল বোধ হয়। বিরল ঘটনা। আরে বাবা, ফেললাম কোথায় ? অপেক্ষা করছিলাম তো নিচে দাঁড়িয়ে.... হোটেলে তো একসাথেই ফিরলাম .... তোমরাই বিচার করে বলো দেখি !!!! নিরপেক্ষতা বাধ্যতামূলক......
@ শুচিস্মিতা ভদ্র

No comments:

Post a Comment