বেড়াতে গিয়ে মজারু (৫)
বেড়ানোর কথা লিখতে শুরু করে , নিজের খেয়ালে লিখছি ফলে বেখেয়ালে ঘটনা গুলোর ক্রম অনুযায়ী লেখা হয়নি। যেমন যেমন মনে পড়ছে , সে অনুযায়ী লেখা এগিয়ে চলেছে। আসলে তোমাদের আসরে আমার যেন একটা দাবি তৈরি হয়ে গেছে , যেখানে মন জোর দিয়ে বলছে ... হলো ই বা একটু আগে পরে !!! তাতে কি ?
ছোটবেলার বেড়ানোর স্মৃতি তেমন জোরালো ও নয় , আবার খুব বেশি ও নয়। যার মধ্যে কয়েকটা আবার মায়ের কাছে শোনা । যেমন আমার মুখেভাতের পরের দিন বাড়ির সকলের দীঘা গমন। ওখানে নাকি আমার প্রথম বসতে শেখা। এরপরের অল্প ব্যবধানে তিরুপতি ও রাজগীর গিয়েছিলাম যার , স্মৃতি এতো টাই আবছা লেখার রসদ তার থেকে মেলা ভার !!! বাবার দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে , চিকিৎসকের পরামর্শে আমরা একমাসের জন্য রাজগীর গিয়েছিলাম।শরীর সারানোর জন্য ওখানকার জল হাওয়া খুবই ভালো। সাথে ছিলেন আমার দিদিমা। ওখানকার একটা ঘটনা শিশু মনে প্রভাব ফেলেছিল। কেবলকার ভ্রমণ। এই ঘটনায় আড়াই বছরের আমি কি মজা পেয়েছিলাম, তা আর আজ ভেবে পাইনা। মনে আছে সামনের কেবলকারে বাবার কোলে চড়ে আমি , পিছনের কেবলকারে বসা মা আর দিদিমা কে দেখে খিলখিলিয়ে হাসছিলাম আর হাত নাড়ছিলাম। ভয়ের বোধ তখনো মনের কোথাও প্রবেশাধিকার পায়নি।
এরপর বেড়াতে যাওয়া হলো , অনেক অনেক দিন পরে আবার দীঘা। মাধ্যমিক পরীক্ষা র পর। তারপরের গন্তব্য , স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পর .... । আমার প্রিয় বান্ধবী শুভদ্রার এক দাদার ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্র রাজস্থানে। অনেক জনের দল। নতুন নতুন আলাপচারিতার মধ্যে ই একসময় ট্রেন পৌঁছালো বীকানের। যোধপুর এক্সপ্রেস করে হাওড়া থেকে রওনা দিয়েছিলাম। আমাদের দলে অনেকে ছিলেন ... সবার নাম মনে নেই। আশীষ দা, বৌদি , দেবাশিস দা, বৌদি , রাজা দা, শ্যামল দা .... মুন্নি দি , এক মাসিমা , মেসোমশাই, ৩/৪ জন বিচ্ছু ... যারা অনেকটা সময় আমার কাছে থাকতো। বিশেষ করে দেবাশিস দার কন্যা সোনাই। কতই বা হবে ? সোনাই তখন বড়োজোর ৫/৬ বছরের। আর ছিলেন রহমান দা।বেকবাগান এর বাসিন্দা। খুব মজার মানুষ। অথচ গম্ভীর , রাশভারী। চেহারায় বনেদিয়ানার ছাপ। অকৃতদার । ফেরার পর ও অনেক দিন যোগাযোগ ছিল। আমাদের বাড়িতে ও রহমান দা এসেছেন। যা হয় , পরে কখন কোন ফাঁকে যোগাযোগ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে ... শূন্যতে হারিয়ে গেছে মনে নেই। একটা ঘটনা মনে পড়ে ... আমরা সবাই পুস্করে গিয়েছি। রহমান দা ও সাথে রয়েছেন , একটু পিছনে । পুস্কর একমাত্র হিন্দু তীর্থ স্থান , যেখানে ব্রক্ষ্মা র মন্দির আছে। কোন এক অভিশাপের আখ্যান এর সাথে জড়িত, যা আমরা পুরাণে পাই। যাইহোক , সকলেই পূজো দিতে প্রস্তুত , স্নান করেই গিয়েছি। পুস্করে সরোবরের ধারেই মন্দির। পুরোহিত মশাই এতোজনের দল দেখে দক্ষিণা জনিত কারণে ই হয়তো খুবই আহ্লাদিত হয়ে এগিয়ে এসে যা যা করণীয় করতে শুরু করলেন। সব শেষে সবার নাম আর গোত্র শুনে নিয়ে পূজো র সংকল্প পাঠ করবেন.... সেই অনুযায়ী প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করছেন... রহমান দা একটু পিছনে স্মিত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরোহিত মশাই এর প্রশ্নে নাম না বলে , সরাসরি রহমান দা বললেন যে , ওনার গোত্র ওনার জানা নেই। পুরোহিত মশাই ও নাছোড়বান্দা। দৃঢ় কন্ঠে বললেন যে যেকোনো নাম শুনলেই উনি বলে দিতে পারেন কার কি গোত্র। তখনো রহমান দা র মুখে হাসি লেগে রয়েছে। ধীর কন্ঠে বললেন ... আমার নাম রহমান। পুরোহিত মশাই একটু ও বিচলিত না হয়ে রহমান দার নামে সংকল্প পাঠ করলেন... বললেন ... আপনার গাজী গোত্র। আমরা সবাই হেসে উঠলাম। আর রহমান দা ও হাত জোর করলেন। পূজো সম্পূর্ণ হলো।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
বেড়ানোর কথা লিখতে শুরু করে , নিজের খেয়ালে লিখছি ফলে বেখেয়ালে ঘটনা গুলোর ক্রম অনুযায়ী লেখা হয়নি। যেমন যেমন মনে পড়ছে , সে অনুযায়ী লেখা এগিয়ে চলেছে। আসলে তোমাদের আসরে আমার যেন একটা দাবি তৈরি হয়ে গেছে , যেখানে মন জোর দিয়ে বলছে ... হলো ই বা একটু আগে পরে !!! তাতে কি ?
ছোটবেলার বেড়ানোর স্মৃতি তেমন জোরালো ও নয় , আবার খুব বেশি ও নয়। যার মধ্যে কয়েকটা আবার মায়ের কাছে শোনা । যেমন আমার মুখেভাতের পরের দিন বাড়ির সকলের দীঘা গমন। ওখানে নাকি আমার প্রথম বসতে শেখা। এরপরের অল্প ব্যবধানে তিরুপতি ও রাজগীর গিয়েছিলাম যার , স্মৃতি এতো টাই আবছা লেখার রসদ তার থেকে মেলা ভার !!! বাবার দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে , চিকিৎসকের পরামর্শে আমরা একমাসের জন্য রাজগীর গিয়েছিলাম।শরীর সারানোর জন্য ওখানকার জল হাওয়া খুবই ভালো। সাথে ছিলেন আমার দিদিমা। ওখানকার একটা ঘটনা শিশু মনে প্রভাব ফেলেছিল। কেবলকার ভ্রমণ। এই ঘটনায় আড়াই বছরের আমি কি মজা পেয়েছিলাম, তা আর আজ ভেবে পাইনা। মনে আছে সামনের কেবলকারে বাবার কোলে চড়ে আমি , পিছনের কেবলকারে বসা মা আর দিদিমা কে দেখে খিলখিলিয়ে হাসছিলাম আর হাত নাড়ছিলাম। ভয়ের বোধ তখনো মনের কোথাও প্রবেশাধিকার পায়নি।
এরপর বেড়াতে যাওয়া হলো , অনেক অনেক দিন পরে আবার দীঘা। মাধ্যমিক পরীক্ষা র পর। তারপরের গন্তব্য , স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পর .... । আমার প্রিয় বান্ধবী শুভদ্রার এক দাদার ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্র রাজস্থানে। অনেক জনের দল। নতুন নতুন আলাপচারিতার মধ্যে ই একসময় ট্রেন পৌঁছালো বীকানের। যোধপুর এক্সপ্রেস করে হাওড়া থেকে রওনা দিয়েছিলাম। আমাদের দলে অনেকে ছিলেন ... সবার নাম মনে নেই। আশীষ দা, বৌদি , দেবাশিস দা, বৌদি , রাজা দা, শ্যামল দা .... মুন্নি দি , এক মাসিমা , মেসোমশাই, ৩/৪ জন বিচ্ছু ... যারা অনেকটা সময় আমার কাছে থাকতো। বিশেষ করে দেবাশিস দার কন্যা সোনাই। কতই বা হবে ? সোনাই তখন বড়োজোর ৫/৬ বছরের। আর ছিলেন রহমান দা।বেকবাগান এর বাসিন্দা। খুব মজার মানুষ। অথচ গম্ভীর , রাশভারী। চেহারায় বনেদিয়ানার ছাপ। অকৃতদার । ফেরার পর ও অনেক দিন যোগাযোগ ছিল। আমাদের বাড়িতে ও রহমান দা এসেছেন। যা হয় , পরে কখন কোন ফাঁকে যোগাযোগ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে ... শূন্যতে হারিয়ে গেছে মনে নেই। একটা ঘটনা মনে পড়ে ... আমরা সবাই পুস্করে গিয়েছি। রহমান দা ও সাথে রয়েছেন , একটু পিছনে । পুস্কর একমাত্র হিন্দু তীর্থ স্থান , যেখানে ব্রক্ষ্মা র মন্দির আছে। কোন এক অভিশাপের আখ্যান এর সাথে জড়িত, যা আমরা পুরাণে পাই। যাইহোক , সকলেই পূজো দিতে প্রস্তুত , স্নান করেই গিয়েছি। পুস্করে সরোবরের ধারেই মন্দির। পুরোহিত মশাই এতোজনের দল দেখে দক্ষিণা জনিত কারণে ই হয়তো খুবই আহ্লাদিত হয়ে এগিয়ে এসে যা যা করণীয় করতে শুরু করলেন। সব শেষে সবার নাম আর গোত্র শুনে নিয়ে পূজো র সংকল্প পাঠ করবেন.... সেই অনুযায়ী প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করছেন... রহমান দা একটু পিছনে স্মিত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরোহিত মশাই এর প্রশ্নে নাম না বলে , সরাসরি রহমান দা বললেন যে , ওনার গোত্র ওনার জানা নেই। পুরোহিত মশাই ও নাছোড়বান্দা। দৃঢ় কন্ঠে বললেন যে যেকোনো নাম শুনলেই উনি বলে দিতে পারেন কার কি গোত্র। তখনো রহমান দা র মুখে হাসি লেগে রয়েছে। ধীর কন্ঠে বললেন ... আমার নাম রহমান। পুরোহিত মশাই একটু ও বিচলিত না হয়ে রহমান দার নামে সংকল্প পাঠ করলেন... বললেন ... আপনার গাজী গোত্র। আমরা সবাই হেসে উঠলাম। আর রহমান দা ও হাত জোর করলেন। পূজো সম্পূর্ণ হলো।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
No comments:
Post a Comment