বেড়াতে গিয়ে মজারু ৩৫
গুলমার্গের হোটেল পৌঁছনোর পর একে একে অনেকেই কাত হল । সে রাতের মতন কেউ কেউ মুড়ি চিড়ের ওপর থাকল , কেউ পেটে কিল মেরে দরজায় খিল দিলো , আমার শরীর কাত হবো হবো করলেও খেতে বড় ভালবাসি , তাই ও কিছু হবে না ভেবে রাতে হোটেলের ডাইনিংহলে গিয়ে অল্প করে ভেজ ও নন ভেজ পেটে চালান করলাম .... রাতের ঠাণ্ডার মাঝে গরম ব্ল্যাঙ্কেটের ওমে হারিয়ে গেলেও ভোর রাতে মা - মেয়ে দুজনেই একে একে বাথরুম মুখী হলাম .... এরপর আপদ বালাই বাড়তেই লাগল ... এক দিকে পেটুতে গোল অন্য দিকে কর্তামশাই এর কলরোল ... পেট গুলু গুলু সাথে বকুনির ঠ্যালায় বুক দুরুদুরু অবস্থায় খান ৩/৪ রঙ বেরঙের ওষুধ খেয়ে আমি কন্যাসহ ব্ল্যাঙ্কেটের তলায় লুকিয়ে পড়লাম। এ দিকে আগের রাতে যারা পেটে কিল মেরে নিদ্রামগ্ন হয়েছিল ... তেনারা হাজির হয়ে অনেক উপদেশ দিয়ে গেলেন । কারণ তেনারা তখন যারপরনাই ফিট। তাদের না খেয়ে থাকা হিট করে গেছে । এমতাবস্থায় মুখে কুলুপ আঁটাই দস্তুর....। হেনকালে তিনি ঘোষণা করলেন ... " যেতে হলে চলো , না হলে হোটেলেই থাকো"
কাভি নেহী .... রেগে গেলে বাঙালি সব ভাষা বলতে পারে , আর রাষ্ট্র ভাষা কে না জানে ? উঠে পড়লাম, মানে উঠতেই হল । মনে পড়ল প্রবচন ... পড়েছ যবনের হাতে , খানা খেতে হবে সাথে । আর একটু কষ্ট হলেও যেতে নিশ্চয় পারব ... পরে কি হয় তখন দেখে নিলে হবে ... এর মধ্যেই ছোটগিন্নি চিড়ে সেদ্ধ বানিয়ে দিয়ে গেল , ওদিকের কজনাও (সবাই নয় )চিড়ে খেয়ে রেডি স্টেডি গো মোডে চলে গেছে । আমরাও গুটি গুটি সব গুটিয়ে , নিজেদের গুলমার্গের কেবলকার ওরফে গণ্ডোলা রাইডের পথ ধরে ফেললাম। গুটিয়ে নিতে হল এ জন্যই ফেরার পরই ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ার আগাম ব্যবস্থা হয়ে আছে ।
প্রথম গেলাম স্নোবুটের ঠেকে। ওরে বাপ !! সেই বুট পরে হাঁটতেই নিজেকে ইয়েতির মতন মনে হল । যাক , দেখলাম সকলেই পরে নিয়েছে ... আরো খানিক গাড়ি করে এগোতেই গণ্ডোলার লম্বা লাইনের অলি গলি চলি তে চালু হয়ে সিঁধিয়ে গেলাম । আমার কর্তামশাই এর আবার বদ্ধতার ব্যরাম আছে ... ওই জন সমুদ্র দেখেই তিনি কেমনতর ফ্যাকাসে পাণা হয়ে একখান চেয়ার পাকড়াও করে বসে পড়লেন , সাথের গাইড ( নেওয়া হয়েছিল , পরে দেখি লাভ বিশেষ হয় নাই তাকে নিয়ে )এ ব্যাপারে তাকে সাহস জুগিয়ে আকাশে মানে গণ্ডোলায় তুলে দিল । তোলার আগের চার প্রস্থ ঘুরপাক খেয়ে আরো লাইনের আইন মেনে তবে কেষ্ট র থুড়ি গণ্ডোলার দেখা মিলল । তাতে উঠে নিজেদের ফিট করে নিলাম, কেবলকারে কেবল বসার বিধান দেওয়া আছে ... ছবি তোলার জন্য আমার দিদি আকুলি বিকুলি করে উঠে পড়ে ঘুরে মোবাইল তাক করতে যেতেই আমরা তেনারে থামিয়ে দিলাম। সামনে , পাশে ও নীচে সাদা বরফের চাদরের মাঝে মাঝে দাঁড়ানো পাইনের পাশ দিয়ে চলেছিলাম ঝুলতে ঝুলতে । শরীর নানা গোলোযোগের কথা অল্প জানান দিলেও প্রকৃতি সব আস্তে আস্তে ভুলিয়ে দিচ্ছিল । নীচে মাঝে মাঝে বরফের মধ্যে সেনা ছাউনি (সম্ভবত) দেখতে পাচ্ছিলাম । দূর থেকে বোঝার উপায় নেই । অবশেষে ফেস ওয়ানে এসে নামলাম .... দেখলাম মেলাই জনতা । তারমধ্যে চলেছে ভয়ানক বিকিকিনি...যেমন চলছে আদরে করে চাদর / শাল দেখানো তেমন কাহওয়া পানের অনুরোধ আর সর্বোপরি স্লেজ/ স্ক্যাটিং/ স্নো স্কুটার চড়ার অনুরোধ সহ ব্যাখান। মানতেই হয়েছে তেনাকে আমার থেকেও ঘ্যানঘ্যানে মানুষ পৃথিবী থুড়ি দেশেই আছে। আমি তো শিশু !! কিছু কেনার বায়না ক দিন ঘ্যানোর ঘ্যানোর করেই ক্ষান্ত দিই। এদের সময় কম হাতে ... তাই এই ব্যাপারে পরিশ্রম লাগাতার ... লে লিজিয়ে না , স্লেজ পে রাইড কিজিয়ে না , কাহওয়া পিজিয়ে না , স্ক্যাটিং কিজিয়ে না , আগর ডর লাগে তো সির্ফ খড়ে হো কর ফোটো লে লিজিয়ে না 🙏🏻 মাথা র পুরো পাগলা কন্ডিশন হয়ে গিয়েছিল।
আমাদের ছোটগিন্নি ২য় ফেজের দিকে রওনা হল , আমার ইচ্ছাপূরণ হল না । দুই ভায়রাভাই একজোট হয়ে আমাদের দুই দিদি আর বোনকে যেতে দিলেন না । ওপরে যদি কেবলকারে গোলযোগ হয় !!! কথা হল ঝুলন্ত কেবলকারে এ পর্যন্ত আসার ব্যাপারেও একই রকম ভাবনার সম্ভাবনা ভাগ্যিস মাথায় উঁকি দেয়নি । দিলে খুব মুশকিল হতো , গুলমার্গ দেখাই হতো না । ছোট ভায়রাভাই বড়জনের মাথায় যেই ঢুকিয়ে দিল খোদ কলকাতায় বসে যে ওতো ওপরে কিছু সমস্যা ঘটলেও ঘটতে পারে বটে .... তখন ???? আমার জামাই বাবুও এক বাক্যে বিধান দিলেন ... আমি আমার বৌকে যেতে নাহি দিব । এদিকে আমার জন এক কাঠি এগিয়ে বলে কিনা ... তুমি ওদের সাথে গেলে যাও , মেয়ে কে ছাড়ব না আমি । এ কেমনতর কথা বটে ? রাগ করে ঘ্যান ঘ্যানানি তে ইতি দিলাম। উৎসাহই পেলাম না । মাঝখান থেকে পাহাড়ের মাথায় ওঠা হল না , এমনিতেও কারোর মাথায় ওঠার সুযোগ পাইনি , পাহাড়ের ক্ষেত্রেও সে সুযোগে বঞ্চিত হলাম ।
ছোটগিন্নিও তার ছোটছানা নিয়ে পাহাড়ের মাথায় উঠতে গেল ছোটকর্তা সহ আর এদিকে আমরা ফেজ ওয়ান আলো করে সব রকমের অপসনের ( স্লেজ / পানীয় / স্কুটার / স্ক্যাটিং ) ঝাড়াই বাছাই করে শেষমেষ স্লেজ চেপে বসলাম ... কর্তামশাই গেলেন না কজনার সাথে রয়ে গেলেন। আমি কন্যাসহ, দিদি , জামাই বাবু স্লেজ বিলাসী হলাম । একটু কসরত করে দড়ি চেপে খানিক গেলাম , ছবির পর্ব চুকিয়ে স্লেজ চালককে পাকড়ে ধরে এদিক ওদিক ঘুরে ফেরত এলাম । কর্তামশাই এর মেজাজখান দেখলাম অতো ঠাণ্ডার মধ্যেও বিশেষ সুবিধার নয় ... যাক এরপরে সব মিটিয়ে শারীরিক কষ্ট চেপে চুপে হোটেল ফিরলাম। সেদিনই পরের গন্তব্যে রওনার বায়নাক্কা আছে । ফিরে দেখি আমাদের পাহাড় প্রমাণ লটবহর আগের কথা মতন রিসেপশন আলো করে আমাদের জন্য অপেক্ষা রত । কি আর করা অনেক অনুরোধেও বিশ্রাম ও দ্বিপ্রাহরিক আহার যখন মেলা ভার বোঝা গেল ... ( রোজা চলছিল সব কর্মী উপস্থিত ছিল না ... বদল ডিইটিরত) তখন মানে মানে তল্পি গুটিয়ে সরে পড়লাম সাথের টেম্পো ট্রাভেলার এসে পড়ার পর ।
@শুচিস্মিতাভদ্র
No comments:
Post a Comment