Wednesday, 3 May 2023

 




বেড়াতে গিয়ে মজারু ৩৩


কাশ্মীর চিরকালের স্বপ্ন রাজ্য আর অধরা গন্তব্য। ছোট থেকেই মায়ের কাছে গল্প শুনলেও ওখানকার পরিস্থিতির খবরাখবরে জানতাম ওসব স্বপ্নে আর হিন্দী চলচ্চিত্রের গানে গানে দেখে নেব । কিন্তু ... হঠাৎই সাজো সাজো রব ... যেদিকে কান পাতি শুনি কাশ্মীরের ডাকে জনতা ধেয়ে চলেছে ওদিক পানে । দেখছি , শুনছি ... হেনকালে গতবছর কর্তা মশাই কাশ্মীরের নামের গন্ধ ছড়ানো উড়িষ্যার কাশ্মীরের নিয়ে গেলেন , বলতে নেই মন্দ লাগেনি । তবে হ্যাঁ তুলনামূলক আলোচনা তোলা থাক। ওসব ভালো নয়কো । মধ্য মার্চে গিয়ে গরমে পুরো ভাজা ভাজা হয়ে গিয়েছিলাম।

 এরপরের পর্ব ইতিহাস .... কন্যার বান্ধবীর মাতৃদেবীর উৎসাহে টাকা জমানোর পর্ব শুরু হলেও, হাল তো কর্তামশাই এর হাতে । মাঝে মাঝেই ঝপ করে সোমে ফিরে আসে ... খরচের দিকে তাকিয়েই এই দোলচাল । উৎসাহের সাথে সাথে মানসিক নানা রকম ভাব অভাব পেরিয়ে গতবছর দূর্গা পূজোর অষ্টমীর দিন যখন টিকিট কেটে ই ফেলা হল আমাদের ট্রাভেল এজেন্সির সুমিতদার কাছে গিয়ে ... তখন মন নেচে উঠল । সুমিতদাও ভরসা জোগালেন আর সুবিধাজনক কিছু উপায় বাতলে দিতে , কর্তামশাই খানিক ঠাণ্ডা হলেন । তখনও কিন্তু ঢের পথ বাকি । নড়বড়ে কর্তামশাই কে ফিক্সড করার জন্য আমার মতন খরুচে যখন টাকা বাঁচাও আন্দোলনের হাল ধরল তিনি খানিক হাপ ছাড়লেন।  নাহলে যে কোন সময়ে ব্যপারটা গড়বড়ে হয়ে যেত । যদিও স্বভাব  অনুযায়ী তেনার ৫২/৫৩ এর হিসেব কষাকষি মাঝে মাঝেই আমায় ভয় পাইয়ে দিত  !!!! 

আস্তে ধীরে প্রস্তুতির খরিদারী শুরু হল, চলতে থাকল ... সময় এগিয়ে আসতে লাগল , হেনকালে আমার ছুটির ঝুটিতে টান পড়ল ... সে সবও উতরে গেল অনেকের সহযোগিতার মাধ্যমে । যে কোন বেড়ানোর আগে এই বাঁধার বাধ্যতামূলক একখান ব্যাপার প্রতিবারেই হয় এবং এক একবার এক একজনকে নাড়িয়ে দেয় । এবারের নাড়া টা আমি খেলাম।  গেলাম গেলাম করতে করতে সব মিটিয়ে নড়ানড়ি থামিয়ে যথাস্হানে পাড়ি দিলাম রাত তিন ঘটিকায় । 

আকাশ পথে চলা শুরু হল , সাথে দিদি জামাই বাবু তো ছিলেনই।  সহযাত্রী হিসেবে এক মামাকেও পেয়ে গেলাম।  গল্পে গল্পে রাজধানীর মাটি ছুয়ে , টারমিনাল বদল করে আর খিদের খাবার প্যাক করে যখন পরের বিমান মুখী হলাম ... তখন সবারই ছুটন্ত মোড, কারণ ফাইনাল কলিং হচ্ছে তখন । এর মধ্যে আবার দিক ভুল করে আমরা কজন বাইরের দিকের পথ ধরে ফেলেছিলাম 🤫 তারপর এই বয়সে যা ধমক খেলাম !!!! বাপ রে .... 

শেষমেষ শ্রীনগরগামী বিমানে চড়ে প্যাক করা খাবার আনপ্যাক আর হুস হাস করে পেটকে শান্ত করা হল । মুড়ি আর ভুড়ির কি সুন্দর কানেকশন...ভুড়ি শান্ত হতেই মুড়ি অর্থাৎ মাথা ঠাণ্ডা হল । শুরু হওয়া মাথা ব্যাথা সেরে গেল ঝটপট । আগের বিমানে কানের কটকটানি বেশ জোরালো হলেও , ছোটদি আর এক সহযাত্রিনীর উপদেশ মেনে কানে তুলো গুজে এবার ওসব আপদ বালাই থেকে সকলেই রেহাই পেয়েছিলাম।  দুদিন আগে খানিক একই পথে কাটরা ( কলকাতা - দিল্লি - শ্রীনগর [২০মিনিট হল্ট] - জম্মু) যাওয়া ছোটগিন্নি ওরফে দেবাশ্রিতার (যার উৎসাহে আমরা কাশ্মীর মুখী হলাম )থেকে ও আরো অনেকের থেকে আকাশ থেকে কাশ্মীরের পাহাড়কে ছবিতে ধরার জন্য মোবাইল তাক করে বসে ছিলাম । এক সময় কারাকোরাম দৃষ্টিপথে দৃশ্যমান হলেও সেদিনের মেঘলা দিনের জন্য ছবি একটু মায়াবী টাইপের আধো আলো আধো ছায়া মাখা  এক অন্য রকম হল । ওপর থেকে হলুদ সবুজ জমি দেখলাম বিস্তারিত বর্ণময় শাড়ির মতন ছড়িয়ে থাকা । পরে যখন আকাশ থেকে জমিতে ল্যান্ড করে পহেলগাও যাত্রা করলাম ... সেই হলদে সবুজ দিগন্ত ব্যাপী সর্ষে ক্ষেত দেখে নীল দিগন্তের খোঁজ করতে লাগলাম।  পরে পেলেও সেদিন দিগন্ত ছিল ঘনঘোর মেঘের সঙ্গী। পথে কাব্যি ঠাসা মন নিয়ে সর্ষে ক্ষেতে নেমেই থেমে যেতে হল ঠাণ্ডা হাওয়ার দরুণ। কবি বলেছেন শীতের হাওয়ার লাগল নাচন। একদম সত্যিই নাচন কাঁপনে ভরপুর হয়ে ছবি তুলেছি কি না তুলেছি ... ঝমাঝম বৃষ্টি শুরু হতেই সবাই দে ছুট... বাসে উঠে পড়লাম। শ্রীনগর থেকে আমাদের সাথে ছিল চালক ইমরাণের টেম্পো ট্রাভেলার । দোকা ছবির জন্য  ( বৃষ্টিপাতের জন্য হয় নাই যে) তেনাকে ভাল দেখে সর্ষেক্ষেত চিহ্নিত করার টাস্ক দিয়ে নিদ্রামগ্ন হলাম ... সেই মধ্য রাতে উঠেছি কিনা !!! বেশ কিছুক্ষণ পর বাস থামার ঝাঁকুনিতে জাগন্ত হয়ে খানিক ধাতস্ত হয়ে দেখি এক হোটেলের সামনে বাস থেমেছে ... ওমা !! এসে গেল !!! মনে করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার আগেই শুনলাম ... চা বিরতি... আরো দূরে ... চলো যাই বলে আমাদের যেতে হবে আরো ... তখন সবে বিকেল ৪টে । আরো ঘন্টা ২ তখনও বাকি । "বাপ রে"... বাস থেকে নেমেই ঠাণ্ডার প্রকোপে সবার প্রথম অভিব্যক্তি ছিল ঠিক এই । আমাদের টিমের বাকি পঞ্চাশ শতাংশ আগের দিনে জয় মাতা বৈষ্ণোদেবীর দর্শন করে সকাল সকাল কাটরা থেকে পহেলগাওয়ের দিকে রওনা দিয়েছিল । শ্রীনগর থেকে একই পথ ... ওরা খানিক আগে আগে আর আমরা পিছু পিছু চলেছি ... দূরাভাসে কথা আর ছবি চালাচালি হচ্ছিল .... চা-বিরতিতে যখন আমরা চা আর টা নামক পাকোড়া কে পাকড়াও করলাম ... ওরা তখন পহেলগাওয়ের হোটেল পৌঁছে , হোটেলের চা পানে রত । পথের আপেল বাগানে আপেলের রস খেয়ে আর ন্যাড়া গাছের পাশে দাঁড়ানো ছবি গ্রুপের দরবারে আমরা আগেই দেখে নিয়েছি । তবে আমাদের সেদিন সর্ষে বাগানে নামা হলেও রুখা শুখা আপেল বাগানে নামা হয়নি আর এ দিকের বিখ্যাত জাফরাণ ক্ষেতও দূর থেকে দেখেছি । আপেল আর জাফরাণ দুজনার সময় এখন নয়কো , তাই তারা তাদের রঙের খেলা দেখাতে পারে নি । 

এরপর পাহাড়ী পথের শোভা দেখতে দেখতে দিদি আর আমি" কিতনি খুবসুরত ইয়ে তসবীর হ্যায়"🎶🎶 ..  গাইতে গাইতে পাইনাস রিসর্টে র দিকে ধেয়ে চললাম । আজ্ঞে হ্যাঁ , সেখানেই আমাদের দুদিনের ঘর সংসার । কিন্তু .... পথের এক দিক ওদিকে চোখ চালিয়েও পাইনাস এর দেখা না পেয়ে ... পাশে বয়ে চলা লিডার নদীর শোভা কিঞ্চিত মাইনাস হয়ে গেল । ফোনাফুনির শেষে পাহাড়ের গায়ে সাইনবোর্ডের দেখা মিলল ... মূল পথ থেকে বেশ খানিক ওপরে পাহাড়ের গায়ে দেখা মিলল পাইনাস রিসর্ট। ভিজে ভিজে থম থমে আর কনে কনে পাইনাসে এন্ট্রি নিলাম , এনার্জি লেভেল তখন মাইনাসে .... 


#শুচিস্মিতাভদ্র

2 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. পাহাড়ী ওদের হিন্দি শুনতে দারুন লাগে

    ReplyDelete