Wednesday, 29 January 2025

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৯

বছরের কিছু কিছু সময়ের সাথে একটা বেড়িয়ে পড়ার ডাক ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে থাকে। এমনিতে যদিও যখন খুশি বেরিয়ে পড়াতে কোন লিখিত বাঁধা নেই। কিন্তুক গণ্ডাখানেক বাঁধার গেরো সব সময়ই থাকে। আর তার সাথে ভ্রমণ পিপাসুদের চলে লুকোচুরি খেলা । এবারে বাংলা বছরের গোড়ার দিকে গরম যেমন মারাত্মক রাগিয়ে দিয়েছিল , ঠাণ্ডার কাঁপন তেমন মেঘের কোলে এক হাসিখুশি রোদের সাথে ভাসিয়ে শহর থেকে আরো অনেক দূরে চলো কোথাও চলে যাই বলে হাজির হলো। ঝোপ বুঝে কোপ মারতে গিয়েও ঝাড়খণ্ড যখন খণ্ড খণ্ড তখন মন ভার , মুখ ভার .... এবার আবার সেই কর্তা মশাই এর ব্লগ ভ্রমণের ফাঁক গলে ট্রেনের টিকিট, নেতারহাটের চলনসই বাসভূমি পিছলে গেল , হাতে রইল কেবল রাচি .... সোনা মুখ করে বলে কিনা চলো চলো আছে রাজরাপ্পা ... ওসবে আমি ভুলি ??? কভি নেহি !! নেতারহাটে , পত্রাতুর উপত্যকায় পরে যাবে নিয়ে আবার ??? ওদিক নিরুত্তর !!! কি ধাপ্পাা  , কি ধাপ্পা !! রাঁচিতে পুরো কাঁচি চালাতেই হল । আমি নিরূপায় । দেবাশ্রিতা শুনলে কাঁচি নিয়ে তাড়া করবে , ওর যে ওখানে মামা বাড়ি ভারি মজা , কিল চড় নাই !!! 🤫

আলোচনার সূত্রপাতে বিহারের বৌদ্ধ বিহার নালন্দা যা দেখতে যাওয়ার স্বপ্ন দু চোখে এঁকে দিয়েছিল স্কুলের পাঠ্যক্রম, তা নাকচ করে দিয়েছিলেন তিনি , কারণ অতীতের কোন ঘটনা ঘাটি গেড়ে বসেছিল নালন্দা ও আমাদের মধ্যেকার যাওয়ার পথে। এই বাঁধা আজকের না , পুপে দেবীর আগমনের আগেও একবার আমার নালন্দা যাওয়ার ভাবনাতে চাবি পড়েছিল আর শর্ত আরোপিত হয়েছিল ... শুধুই আমরা তিন ওদিক পানে যাব না। যদি হয় তিন অধিক টিম তবেই ... ।

এদিকে তেনার বন্ধু সাগ্নিক কর্মসূত্রে ওদিকে নিত্য যাত্রী, প্রস্তাব দিতেই নাকচ ... সাথে নালন্দার প্রত্নতত্ত্বে আগ্রহে যত্ন না হলেই ভাল ... এমন মন খারাপ করা বার্তা জ্ঞাপন করে সে দুরভাষ থেকে দূরে ঘাটি গাড়ল । তাহলে কি এবার শীতে নিজ শহরেই কেক , সিঙ্গাড়া খেয়ে ঘরেই ঘুরপাক খাব ??? যদিও কলকাতার দ্রষ্টব্য দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া হয়ে থেমে আছে ... তার লিস্টি করে নেমে পড়া ই যায় !!! পুপেকে দেখানোর সাথে সাথে নিজের দেখাও হবে। সাথে যদি তিনি সহ আরো খানকতক গ্যাড়াগ্যাড়ি থাকে তাহলে তো কথাই নেই !!

খানিক খানিক চাপানউতোরের পর এদিকের সিংহ মশাই একদিন দুপুরের দিকে হালুম হালুম করে এক নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে জুনিয়র কলিগের বাড়ি বেরনোর আগে ভাগে বলেই বেরলেন ... আজ এসপার নয় ও ওসপার !!! কলকাতা ভ্রমণ করবে ??? কাভি নেহী !!! অতএব কলকাতা থাকুক কলকাতাতেই ... থাকুক "দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া" ... এই প্রবচন, অক্ষয় হোক। 

বিকেল গড়াগড়ি দিয়ে সন্ধ্যায় পৌঁছল। তেনার দেখা নাই রে , তেনার দেখা নাই !!! হেনকালে ফোন ... ওদিকের ব্যারিটোন কন্ঠ আরো গম্ভীর শোনাল ... বার্তা এল শর্ত কর্তন করে নাকি এবার সত্যিই আমরা তিন চলেছি নালন্দা দেখতে , সাথে আরো কয়খান দ্রষ্টব্য যুক্ত। মনে তখন উথাল পাতাল আনন্দ ... কিন্তুক ওদিকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এদিকও খানিক সংযত। গদোগদো আমি জলদি বাড়ি ফেরার নির্দেশ দিয়ে মনে মনে ঘুরতে শুরু করলাম ।

এরপরে পুরো কাটে নেহী কাটতে ইয়ে দিন ইয়ে রাত... কেস । একদিকে চিরাচরিত নিয়মে অপেক্ষার সময় কাটে না আবার অপেক্ষার শেষের দিন চলে যায় এক লহমায়। এবারে অপেক্ষার আরো একটু রকমফের ছিল ... প্রথম বার বন্দেভারত নামধারী ট্রেনে যাত্রার উত্তেজনা তখন উচ্চগ্রামে বাঁধা পড়েছে । 

তিনজনে ঘুরতে যাওয়া কিন্তুক বেড়ে দাঁড়াল ছয়ে । কেন কেন ??? ওদিকে টিম নিয়ে যাওয়ার কর্তিত শর্ত আরোপিত করলেন স্বয়ং উপরওয়ালা । কন্যার নার্সারি র বন্ধু সিদ্ধার্থ। তারা সপরিবারে জুড়ে একদম জড়াজড়ি করে আমরা এক স্মরণীয় ঘোরার সাক্ষী থাকলাম । ওদের সাথেও টিকিট কাটার আগে যোগাযোগ করে যুক্ত করে নিতে চাইলেও, জেনেছিলাম যে ওদের যাওয়া নির্ধারিত হয়েছে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিঙে। হোটেল বুকিং ডান ... ট্রেনের টিকিট হাতে এলেই ওরা উত্তর মুখী হবে । কিন্তুক পথ যখন বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থী আর সে বাঁধন যখন দিলেন স্বয়ং উপরওয়ালা তখন কি আর ওদের গাড়ি উত্তর মুখী হওয়ার জো আছে ???ওদের টিকিট বাড়ন্ত হল আর অদ্ভুত ভাবে ঠিক তিনদিনের মাথায় এক গাড়ি ও একই হোটেলে কাছাকাছি ও পাশাপাশি আমাদের বুকিং টুক করে সুসম্পন্ন হল। যাওয়ার আগে একটা মিট জরুরি ... "কথা কিছু কিছু বলে নিতে হয় , সে তো ফোনে বলা যায় না , সে তো 🎼🎼 ফোনে বলা যায় না 🎼" অগত্যা আমরা কর্তা গিন্নি একদিন হাত ধরাধরি করে ওদের বাড়ি গিয়ে সব কথা বলে নিলাম আর অপেক্ষার শেষ প্রহরে এক আঁধার কাটা ভোরে হাওড়া মুখী হলাম। আমাদের ট্রেন ছিল হাওড়া-গয়া বন্দেভারত। সময় সকাল ৬.৫০ । তখন আমার কলেজে ওদিকে মেয়ের স্কুলে শীতের ছুটি জাকিয়ে শুরু হয়ে গেছে।

স্টেশনের খানিক অপেক্ষার পর রূপা বাহিনী কাহিনীতে মাত্রাযুক্ত করতে হাজির হল , দুই বন্ধুর এখন section ভিন্ন, তাই তেনারা দুদিকে মিটি মিটি হাসি মুখে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে সেঁটে গেলেন । ফেরার সময় তেনারা যে ফের অভিন্ন হবেন জানা ছিল । অবিকল হল তাই !!! 

 আমাদের দু দলের বগি এপারে থাকব আমি , তুমি রইবে ওপারে স্টাইলে .... একজনের C5 তো অন্যজনের C14 । কাজে কাজেই একই ট্রেনে দুই পরিবার একে অপরকে টা টা করে বাক্স প্যাটরা টেনে তুলে গদিওমান হলাম । 

আহা বড় ভাল ব্যবস্থাপনা। দরজা নিজে নিজে বন্ধ হতেই আমি হাফ ছাড়লাম । তেনার ট্রেনে ওঠার পর থেকে গন্তব্যের আগে ভাগেই টুকটাক নামা ওঠার এক কচি পানা অভ্যাস আছে , যার থেকে এই ট্রেন যে কি শান্তি দিয়েছে বলার না !!! যিনি এমন দরজার ভাবনা ভেবেছেন তেনার কাছের কেউ না কেউ এই নামা ওঠার সাথে অবশ্যই জড়িত ছিলেন তাকে আতঙ্কিত করে। আমি একদম নিশ্চিত। 

আহা কি আনন্দ মনের সব দিকে । মেয়ে রইল তার বাবার সাথে , ওরা থাকল ওধারে । আমি অন্য এক হৈচৈ পরিবারের সিনিয়র মোস্ট কর্তা ও গিন্নির পাশে নিজেকে ফিট করে খানিক গল্পের বই, খানিক ফোন দেখাদেখি , খানিক গান শোনাশুনি করতে করতেই দেখি জলখাবার হাজির সাথে মশলা চা । আমার পছন্দের দুধ চা । অন্য ধারার চা , তা আমার কাছে চিনি যুক্ত হোক, না হোক গরম জল সদৃশ লাগে। তবে কাঁচা পাউরুটি খানা খুব সুবিধাজনক লাগে না , আমার হজম শক্তি খুব মানী, সকলকে হজম করেন না তিনি। খাওয়ার পর্ব মিটলে মনে ওপারের বাসিন্দাদের সাথে দেখা করার যাই যাই ধ্বনি ধ্বনিত হতে শুরু করতেই , আমি ট্রেনের মধ্যেই হাঁটা শুরু করলাম। বগি সবাই পরস্পর পরস্পরের সাথে যুক্ত, যাওয়ার পথও প্রশস্ত। মর্নিং ওয়াকের বদলে ট্রেন ওয়াক করে এক সময় রূপা , দিবাকর আর সিদ্ধার্থ র বগিতে হাজির হলাম । খানিক গপ্প করার পর ঘরে অর্থাৎ আপাত নিজের বগিতে ফিরলাম। 

খানিক পর খ্যাটন পর্ব শুরু হল ... কিন্তু একি ??? সবাই কে দিলেও আমরা বাদ !!! তাও আবার খাবার থেকে ???এমন করতে হয় ? মাথা ঝুকিয়ে টুকি করে এবং ঝাকিয়ে কন্যা র আতঙ্কিত মুখ দেখতে পেলাম ..." আমাদের দেবে না মা ? " এ আতঙ্ক তখন অন্তসলীলা এ দিকেও। বলতে নেই, দেখাতে নেই !!! মা বলে কথা !!! বললাম ... দেবে দেবে !!! ভাবছিস কেন ? " কিছু পরে বাকিদের পেট ভর ভরন্ত ... আমরা খানিক রাগন্ত 😡 । তিনি মাঠে নামতেই খানা হাজির !!! আমরা জলদি ডান হাতের কাজে লিপ্ত হলাম । গয়া তখন প্রায় প্রায় আগ্যয়া। 

অবশেষে গয়া এল , বন্ধ দরজা চিচিং ফাঁক হল আর ঝকঝকে ও কটকটে রোদে আমরা গয়া স্টেশনে নেমে পড়লাম। গল্প জমাট বাঁধতে শুরু করল ... দুই পরিবার একত্রিত হয়ে ছবি বন্দী হয়ে এগিয়ে গেলাম টোটোর দিকে .... 


No comments:

Post a Comment