বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৭(ক)
রাবাংলাকে বিদায় জানিয়ে আমরা পাড়ি দিলাম নামচি র পথে । নামচি তে সত্যিই নামছি বলে নেমে এলাম অনেকখানি। রাবাংলার উচ্চতা নামচির থেকে বেশ বেশি ছিল। ঠাণ্ডার কাঁপনে তা ধরতে পারছিলাম হাঁড়ে হাঁড়ে ই। ওদিক থেকে বেলা ১১ নাগাদ বেরিয়ে গড়গড়িয়ে নেমে নামচিতে থামলাম বেলা সাড়ে বারটা র দিকে । পথে বেরলে আমাদের মা -মেয়ের খাই খাই বাই পেটে সিগনাল দিলেও তাকে পাত্তা না দিয়েই আমরা নামচির বিখ্যাত স্তুপ স্যাণ্ড্রুপসে দেখতে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। টপাটপ টিকিট কেটে গেট পেরিয়ে গটগটিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লাম। সিকিমের ঐতিহ্যবাহী নানা রঙের পতাকা র নিচে দাঁড়িয়ে আউট অফ সিলেভাস ছবি তোলা হল আমাদের মা - মেয়ের । আমাদের দু মক্কেলের বিরল মুহুর্ত বন্দী করা হল ক্যামেরাতে।এরপর হাল্কা চড়াই পেরিয়ে ওই স্তুপের সংলগ্ন মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য সিঁড়িতে উঠতে শুরু করলাম।মন্দিরের মাথায় বৌদ্ধ ধর্মের গুরু পদ্মসম্ভবের সুবিশাল মূর্তি সম্ভ্রম জাগায় । মূর্তির মুখখানি বেশ রাগি রাগি !!! নজর করল আমাদের কন্যা । দৈনন্দিন জীবনে রাগি মুখের সাথে তেনার ওঠা বসা , তাই ও চিনতে তেনার ভুল হয়নি !!! সে বলার পর আমরাও শতকরা একশ ভাগ সহমত হলাম পুপের সাথে । সত্যিই গুরুদেব পদ্মসম্ভব রাগি ছিলেন , মালুম হল !!! মূর্তির চোখের দিকে তাকিয়ে ।
ভাগ যোগ করে বিস্তর সিঁড়ির দেখা পেলাম এক সিঁড়ি বেয়ে খানিক ওপরে ওঠার পর । প্রসস্ত চত্বরের দুপাশ দিয়ে যেমন আরো দুখান সিঁড়ি নেমে গেছে , তেমন ই স্তুপের ভিতরের মন্দিরের মধ্য দিয়ে আরো ওপরে যাওয়ার সিঁড়ির দেখা পেলাম। সেই সিঁড়ির শেষে হাঁপানো কাপানোর পর্ব চুকিয়ে পৌঁছে গেলাম বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবের পায়ের কাছে .... সামনে নাকি বিস্তারিত কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন দেন। কিন্তুক কপালের নাম গোপাল ... আমরা দর্শন পেলাম না। সামনের দিকের কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন ম্যাজিশিয়ানের যাদু দণ্ডের ছোঁয়ায় পুরোটাই ভ্যানিস !!!!
ওপরের চত্বরের এক সময় আমরা মা - মেয়ে বসে জিরিয়ে নিয়ে ফেরার পথ ধরে ফেললাম , স্যান্ড্রুপসে স্তুপের বাইরে বেরিয়ে আমরা যত জোর দিয়ে খাই খাই করলাম , তার থেকেও জোরালো যাই যাই এর পো ধরে আমাদের বাহন চালক চার চাকায় পথে নেমে পড়লেন আমাদের নিয়ে .... কিছুক্ষণ পরেই পথের ধারের এক চালু খাবারের দোকানে আমাদের নিয়ে এলেন , খেয়ে নিলাম তৃপ্তি করে । ক্ষিদের মুখে সব খাবার ই অমৃত !!! খাওয়ার পর আমরা চললাম নামচি চারধাম দেখতে ।
নামচি চারধাম পৌঁছলাম যখন , তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাকে ঘোড়া মনে হল ... কারণ সময় তখন প্রায় বিকেলের দিকে এগিয়ে চলেছে । এখানে দেখলাম আমাদের দেশের নানান ধামের অনুকরণে তৈরি এক মন্দিরের মেলা। সবাইকে সাথে আগলে রেখেছেন এক বিশালকার দেবাদিদেব মহেশ্বরের মূর্তি। একে একে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরপাক খেতে খেতে এক সময় শরীরে নানান পাক পাকাপাকি থাবা গাড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করল । মুখ নাকি শরীরের মনের আয়না .... অভিজ্ঞ কর্তামশাই সেই আয়না দেখে এক জায়গায় বসার নির্দেশ দিয়ে বাকি আরো কিছু মন্দির দর্শন করতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে মন্দিরে গেলেন ... মেয়েকে আমার নাকি আমাকে মেয়ের জিম্মায় রেখে । আমিও কোন বায়না না করে সাজানো , গোছানো প্রশস্ত চত্বরের এক ধারে বসে পড়লাম। শরীরের কিছু অস্বস্তি হচ্ছিল সেই মূহুর্তে।
কর্তামশাই মন্দির ঘুরে ফিরে আসার পর আমরা চারধাম থেকে ফিরতি পথে পা বাড়িয়ে আমাদের বাহনের কাছাকাছি হাজির হলাম !!! বাহন চালক বিজয়ের দেখা পাওয়া তো গেলই না , তার ফোনেও যোগাযোগ ব্যবস্থাকারী নেট সেট নেই এই বার্তা এসে আমাদের আপাদমস্তক সেটিং ঘেঁটে দিল !!! আমি অল্প ঘাবড়ে গেলেও বেশি ঘাবড়ালেন তিনি .... অচেনা স্থানে বৌ ও ছানা নিয়ে বেজায় চিন্তিত হলেও, তিন মোটেও দেখালেন না। সোজা কলকাতায় ফোন !!! কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি বিজয় একগাল হাসি নিয়ে সামনে হাজির !!! সে পার্কিং এর মাঝেই অন্য গাড়িতে দেশোয়ালি ভাই এর দেখা পেয়ে গল্পে মেতে গিয়েছিল !!! আমরা যে তার গাড়ির দুয়ারে হাজির, তা সে নজর করেনি। আসলে দুয়ারের কনসেপট টা একদম আমাদের সম্পত্তি !!! বালাই ষাট আর কারোকে দিতে পারি কিন্তু কেন দেব ?
এরপর সাড়ে চারটে নাগাদ নামচি থেকে আবার যতটা নেমেছি , তা মেকাপ করতে পেলিং এর দিকে উঠতে শুরু করলাম !!!!
No comments:
Post a Comment