বেড়াতে গিয়ে মজারু (৮)
কতো কিছু ই যে এতো দিন ধরে জমে রয়েছে ... যা সত্যি ই বুঝতে পারিনি ... একে একে অবচেতন থেকে চেতন স্তরে প্রবেশ করছে সব।
বেড়ানোর গল্পে , খাওয়ার অংশ বাদ দেওয়া উচিত ই নয়। যেখানে আমরা দুই মক্কেল ই ভোজন বিলাসী । খাদ্যের পরিমাণে হেরফের অবশ্যই আছে ... কিন্তু ভোজনরসিক দুজন ই। কার intake বেশি আর কার কম .... তোমরা ই বুঝে নিও কেমন ? ও সব বিতর্কিত বিষয়ে আমি বাবা নেই।
তো কথা হলো গিয়ে .... বেড়াতে বেরলে আমাদের দুজনের ই ক্ষিদে অনেক বেড়ে যায়। আর কি আশ্চর্য খাবার সব দিব্বি হজম হয়ে যায় !!!! অথচ এই আমার ই নিজ শহরে থাকাকালীন হজম নিয়ে হাজারো সমস্যা !!! কারণ টা কি কে জানে ?
নিজের রাজ্যে বেড়াতে গিয়ে মনোমতো খাবার নিয়ে সমস্যা নেই কো !!! কিন্তু ভিন রাজ্যে তা মেলা ভার !! তো আমিষের common কিছু পদ নিয়ে ই চলতে থাকে ক্ষুধা নিবারণ। মুম্বাই তে মাছ পাওয়া গেলে ও , ঔরঙ্গাবাদ ও মহাবালেশ্বরে চিড়বিড়ে মশলাদার চিকেন ও বিরিয়ানি খেয়েছিলাম !!! চোখের জলে ,নাকের জলে ভেসে গিয়েছিলাম। আর চেন্নাই তে টক স্বাদের রান্না খেয়ে ও কান্না আটকাতে পারিনি !!!
গত বছর , অসুস্থতার কারণে আমাদের বারাণসী যাওয়া বাতিল হওয়ার পর , মাস তিনেক পরে গরমের সময় গেলাম উত্তরাখণ্ড। ওখানে গরমে পৈটিক গোলযোগের কারণে কিছু লোভনীয় পদ খাওয়ার সাহস করি নি। কারণ ... ছোট থেকে ই আমি পেট রোগা । স্কুল , কলেজের বন্ধুরা আমার টিফিনের বিখ্যাত চিড়ে সিদ্ধ র সাথে বিশেষ ভাবে পরিচিত।সেই গোলোযোগ এখনো থাকলেও , এখন ওই ভয়কে অনেকটা ই জয় করেছি... কর্তার অভয় দানে । খাবার ও খাই , ওষুধ ও খাই... সমান উৎসাহে । একবার দীঘা তে হোটেল "মানসকন্যা" তে খেতে বসে ... সাবধানতা অবলম্বন জনিত কারণে আগাম ওষুধ খেতে দেখে আমার কর্তার বন্ধু পার্থ দা অবাক বিস্ময়ে বলেছিল ... "তুই medicine খেতে ও সমান ভালোবাসিস দেখছি"। যা খানিকটা তা ই বটে । কোন একটা গল্পে যেন পড়েছিলাম ... রোগ হওয়ার আগেই সারাও ... সম্ভবতঃ শিবরাম চক্রবর্তীর হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন সিরিজ। সে যাই হোক ... সে যাত্রায় গরমের গুঁতোয়় হরিদ্বারে রাবড়ি খাওয়ার সাহস করতে পারিনি। আর দুঃখের কথা কাকে বলি .... ওখানে নিরামিষ খেয়ে মন ভার হয়ে গিয়েছিল। আমরা দুজন ভয়ানকভাবে আমিষের ভক্ত। মুসৌরি গিয়ে দুঃখ খানিকটা মিটবে ভেবেছিলাম... পুরো মেটেনি। ওখানে যে হোটেলে আমাদের বুকিং ছিল , সেই হোটেল বিষ্ণু প্যালেস ছিল নিরামিষ হোটেল। যা জানতে পেরে কি যে দুঃখ পেয়েছিলাম !!!! বলার নয়। অবশ্য আমরা ওখানে সব সময় খেতাম না .... আমিষ খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়তাম । দিনে যাই হোক.... রাতে আমিষ চাই চাই।
এ বছরের প্রথমে আমরা গিয়েছিলাম , হিমাচল প্রদেশ। সেখানে ও একই দুঃখ। বেশিরভাগ হোটেল ই নিরামিষ। কিন্তু হোটেল এ পৌঁছে সন্ধ্যা থেকেই আমিষ খেয়ে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করতাম। দুষ্টু লোক জন সে সব গল্প শুনে , অনেক কিছুই বলেছে .... হিমাচলের বাজার থেকে ওই কদিন নাকি আমিষ পদের আকাল দেখার সম্ভাবনা হয়েছিল.... ওসবে আমরা কান ও দিই নি। পাগলে কি না বলে !!!! তবে আমরা ছাগল নই কো।
তো একদিন সকালে জলখাবারে আলুর পরোটা খেয়ে একটু গোলমেলে ব্যাপার হয়ে গেল। সে এক কাণ্ড বটে .... খেয়ে দেয়ে আমরা রওনা দিলাম ... চাম্বা হয়ে খাজিয়ার যাবো। অনেক টা পথ.... ৮০ কিলোমিটার। পথ চলা শুরু হওয়ার পর পৈটিক গোলযোগের হাল্কা আভাস পেলে ও , ওতো গুরুত্ব না দিয়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গের দিকে মন দিলাম। কিন্তু..... । একসময় পাহাড়ী পথের বাঁকে , একে একে দোকানপাট পিছনে রেখে আমাদের গাড়ি যখন দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে.... তখন শেষ আশ্রয়ের মতো একটা হোটেলের দেখা পেয়ে .... গাড়ি থামিয়ে নামতে বাধ্য হলাম। উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে , মায়ের কাছে শুনেছি বাঘকে ও ভয় লাগে না !!! লজ্জা , ঘেন্না , ভয় সব একদিকে , আর আমি অন্যদিকে। এখানে ও .... "আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা" .... এমন ভাবে ই একই সাথে হাত ধরাধরি করে অচেনা হোটেলে গেলাম বিপদমুক্ত হতে। সাদর অভ্যর্থনা ও পেলাম , সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ জন ... এগিয়ে এসে একটু আগে খালি হয়ে যাওয়া একটা রুম খুলে দিল। সব সময় আমার পাশে থাকার অঙ্গীকারবদ্ধ যে , সে বাইরে অপেক্ষায় রইল। আমার কন্যা গাড়ি তে ওর মাসি ও মেসোর কাছেই ছিল। আবার যাত্রা শুরু হলো .... আমার জামাই বাবু স্মরনীয় এমন একখান ঘটনার কথা লেখার অনুরোধ জানালো , সেই সাথে একই অনুরোধ এলো তার ভাইরাভাই এর তরফে ..... অগত্যা। তোমাদের দুজনের কথা কি ফেলতে পারি বলো ????
খাওয়ার জন্য ই তো সব কিছু তোমরাই বলো । যা ই হোক না কেন ওকে বড়ো ই ভালোবাসি। কদিন আগে মাইথনে গিয়ে ও , সন্ধ্যা য় কিছু ই করার না থাকায় টুকটাক খেতে শুরু করলাম.... আমার কর্তা খেতে খেতে ই বলল যে .... আমরা তিনজন যা খাচ্ছি । হোটেলের রান্না ঘরে হৈচৈ পড়ে গেছে !!! যা order দেওয়া হচ্ছে আসা ইস্তক । আমি সম্মতি জানানোর আগে ই আমার একরত্তি কন্যা টিভি দেখা থামিয়ে বলে কি না ... তিনজন কৈ ? তোমরা তো দুজন !!! আমি খাচ্ছি কোথায় ?
কি কাণ্ড দেখলে একবার !!! টিভি দেখলে ও কানটা এদিকে ই আছে । আর দুঃখের কথা কি জানো ? এমন খানেওয়ালা বাবা-মা এর এমন নিখাকী কন্যা কেমনে হয় বলো দেখি ? আমি তো বুঝি না।আশায় আছি ... নিশ্চয়ই পুপে পরে বড়ো হয়ে নিরাশ করবে না.... ।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
কতো কিছু ই যে এতো দিন ধরে জমে রয়েছে ... যা সত্যি ই বুঝতে পারিনি ... একে একে অবচেতন থেকে চেতন স্তরে প্রবেশ করছে সব।
বেড়ানোর গল্পে , খাওয়ার অংশ বাদ দেওয়া উচিত ই নয়। যেখানে আমরা দুই মক্কেল ই ভোজন বিলাসী । খাদ্যের পরিমাণে হেরফের অবশ্যই আছে ... কিন্তু ভোজনরসিক দুজন ই। কার intake বেশি আর কার কম .... তোমরা ই বুঝে নিও কেমন ? ও সব বিতর্কিত বিষয়ে আমি বাবা নেই।
তো কথা হলো গিয়ে .... বেড়াতে বেরলে আমাদের দুজনের ই ক্ষিদে অনেক বেড়ে যায়। আর কি আশ্চর্য খাবার সব দিব্বি হজম হয়ে যায় !!!! অথচ এই আমার ই নিজ শহরে থাকাকালীন হজম নিয়ে হাজারো সমস্যা !!! কারণ টা কি কে জানে ?
নিজের রাজ্যে বেড়াতে গিয়ে মনোমতো খাবার নিয়ে সমস্যা নেই কো !!! কিন্তু ভিন রাজ্যে তা মেলা ভার !! তো আমিষের common কিছু পদ নিয়ে ই চলতে থাকে ক্ষুধা নিবারণ। মুম্বাই তে মাছ পাওয়া গেলে ও , ঔরঙ্গাবাদ ও মহাবালেশ্বরে চিড়বিড়ে মশলাদার চিকেন ও বিরিয়ানি খেয়েছিলাম !!! চোখের জলে ,নাকের জলে ভেসে গিয়েছিলাম। আর চেন্নাই তে টক স্বাদের রান্না খেয়ে ও কান্না আটকাতে পারিনি !!!
গত বছর , অসুস্থতার কারণে আমাদের বারাণসী যাওয়া বাতিল হওয়ার পর , মাস তিনেক পরে গরমের সময় গেলাম উত্তরাখণ্ড। ওখানে গরমে পৈটিক গোলযোগের কারণে কিছু লোভনীয় পদ খাওয়ার সাহস করি নি। কারণ ... ছোট থেকে ই আমি পেট রোগা । স্কুল , কলেজের বন্ধুরা আমার টিফিনের বিখ্যাত চিড়ে সিদ্ধ র সাথে বিশেষ ভাবে পরিচিত।সেই গোলোযোগ এখনো থাকলেও , এখন ওই ভয়কে অনেকটা ই জয় করেছি... কর্তার অভয় দানে । খাবার ও খাই , ওষুধ ও খাই... সমান উৎসাহে । একবার দীঘা তে হোটেল "মানসকন্যা" তে খেতে বসে ... সাবধানতা অবলম্বন জনিত কারণে আগাম ওষুধ খেতে দেখে আমার কর্তার বন্ধু পার্থ দা অবাক বিস্ময়ে বলেছিল ... "তুই medicine খেতে ও সমান ভালোবাসিস দেখছি"। যা খানিকটা তা ই বটে । কোন একটা গল্পে যেন পড়েছিলাম ... রোগ হওয়ার আগেই সারাও ... সম্ভবতঃ শিবরাম চক্রবর্তীর হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন সিরিজ। সে যাই হোক ... সে যাত্রায় গরমের গুঁতোয়় হরিদ্বারে রাবড়ি খাওয়ার সাহস করতে পারিনি। আর দুঃখের কথা কাকে বলি .... ওখানে নিরামিষ খেয়ে মন ভার হয়ে গিয়েছিল। আমরা দুজন ভয়ানকভাবে আমিষের ভক্ত। মুসৌরি গিয়ে দুঃখ খানিকটা মিটবে ভেবেছিলাম... পুরো মেটেনি। ওখানে যে হোটেলে আমাদের বুকিং ছিল , সেই হোটেল বিষ্ণু প্যালেস ছিল নিরামিষ হোটেল। যা জানতে পেরে কি যে দুঃখ পেয়েছিলাম !!!! বলার নয়। অবশ্য আমরা ওখানে সব সময় খেতাম না .... আমিষ খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়তাম । দিনে যাই হোক.... রাতে আমিষ চাই চাই।
এ বছরের প্রথমে আমরা গিয়েছিলাম , হিমাচল প্রদেশ। সেখানে ও একই দুঃখ। বেশিরভাগ হোটেল ই নিরামিষ। কিন্তু হোটেল এ পৌঁছে সন্ধ্যা থেকেই আমিষ খেয়ে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করতাম। দুষ্টু লোক জন সে সব গল্প শুনে , অনেক কিছুই বলেছে .... হিমাচলের বাজার থেকে ওই কদিন নাকি আমিষ পদের আকাল দেখার সম্ভাবনা হয়েছিল.... ওসবে আমরা কান ও দিই নি। পাগলে কি না বলে !!!! তবে আমরা ছাগল নই কো।
তো একদিন সকালে জলখাবারে আলুর পরোটা খেয়ে একটু গোলমেলে ব্যাপার হয়ে গেল। সে এক কাণ্ড বটে .... খেয়ে দেয়ে আমরা রওনা দিলাম ... চাম্বা হয়ে খাজিয়ার যাবো। অনেক টা পথ.... ৮০ কিলোমিটার। পথ চলা শুরু হওয়ার পর পৈটিক গোলযোগের হাল্কা আভাস পেলে ও , ওতো গুরুত্ব না দিয়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গের দিকে মন দিলাম। কিন্তু..... । একসময় পাহাড়ী পথের বাঁকে , একে একে দোকানপাট পিছনে রেখে আমাদের গাড়ি যখন দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে.... তখন শেষ আশ্রয়ের মতো একটা হোটেলের দেখা পেয়ে .... গাড়ি থামিয়ে নামতে বাধ্য হলাম। উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে , মায়ের কাছে শুনেছি বাঘকে ও ভয় লাগে না !!! লজ্জা , ঘেন্না , ভয় সব একদিকে , আর আমি অন্যদিকে। এখানে ও .... "আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা" .... এমন ভাবে ই একই সাথে হাত ধরাধরি করে অচেনা হোটেলে গেলাম বিপদমুক্ত হতে। সাদর অভ্যর্থনা ও পেলাম , সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ জন ... এগিয়ে এসে একটু আগে খালি হয়ে যাওয়া একটা রুম খুলে দিল। সব সময় আমার পাশে থাকার অঙ্গীকারবদ্ধ যে , সে বাইরে অপেক্ষায় রইল। আমার কন্যা গাড়ি তে ওর মাসি ও মেসোর কাছেই ছিল। আবার যাত্রা শুরু হলো .... আমার জামাই বাবু স্মরনীয় এমন একখান ঘটনার কথা লেখার অনুরোধ জানালো , সেই সাথে একই অনুরোধ এলো তার ভাইরাভাই এর তরফে ..... অগত্যা। তোমাদের দুজনের কথা কি ফেলতে পারি বলো ????
খাওয়ার জন্য ই তো সব কিছু তোমরাই বলো । যা ই হোক না কেন ওকে বড়ো ই ভালোবাসি। কদিন আগে মাইথনে গিয়ে ও , সন্ধ্যা য় কিছু ই করার না থাকায় টুকটাক খেতে শুরু করলাম.... আমার কর্তা খেতে খেতে ই বলল যে .... আমরা তিনজন যা খাচ্ছি । হোটেলের রান্না ঘরে হৈচৈ পড়ে গেছে !!! যা order দেওয়া হচ্ছে আসা ইস্তক । আমি সম্মতি জানানোর আগে ই আমার একরত্তি কন্যা টিভি দেখা থামিয়ে বলে কি না ... তিনজন কৈ ? তোমরা তো দুজন !!! আমি খাচ্ছি কোথায় ?
কি কাণ্ড দেখলে একবার !!! টিভি দেখলে ও কানটা এদিকে ই আছে । আর দুঃখের কথা কি জানো ? এমন খানেওয়ালা বাবা-মা এর এমন নিখাকী কন্যা কেমনে হয় বলো দেখি ? আমি তো বুঝি না।আশায় আছি ... নিশ্চয়ই পুপে পরে বড়ো হয়ে নিরাশ করবে না.... ।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র