Thursday, 17 October 2019

বেড়াতে গিয়ে মজারু (৮)

কতো কিছু ই যে এতো দিন ধরে জমে রয়েছে ... যা সত্যি ই বুঝতে পারিনি ... একে একে অবচেতন থেকে চেতন স্তরে প্রবেশ করছে সব।
বেড়ানোর গল্পে , খাওয়ার অংশ বাদ দেওয়া উচিত ই নয়। যেখানে আমরা দুই মক্কেল ই ভোজন বিলাসী । খাদ্যের পরিমাণে হেরফের অবশ্যই আছে ... কিন্তু ভোজনরসিক দুজন ই। কার intake বেশি আর কার কম .... তোমরা ই বুঝে নিও কেমন ? ও সব বিতর্কিত বিষয়ে আমি বাবা নেই।
তো কথা হলো গিয়ে .... বেড়াতে বেরলে আমাদের দুজনের ই ক্ষিদে অনেক বেড়ে যায়। আর কি আশ্চর্য খাবার সব দিব্বি হজম হয়ে যায় !!!! অথচ এই আমার ই  নিজ শহরে থাকাকালীন হজম নিয়ে হাজারো সমস্যা  !!! কারণ টা কি কে জানে ?
নিজের রাজ্যে বেড়াতে গিয়ে মনোমতো খাবার নিয়ে সমস্যা নেই কো !!! কিন্তু ভিন রাজ্যে তা মেলা ভার !! তো আমিষের common কিছু পদ নিয়ে ই চলতে থাকে ক্ষুধা নিবারণ। মুম্বাই তে মাছ পাওয়া গেলে ও , ঔরঙ্গাবাদ ও মহাবালেশ্বরে চিড়বিড়ে মশলাদার চিকেন ও বিরিয়ানি খেয়েছিলাম !!! চোখের জলে ,নাকের জলে ভেসে গিয়েছিলাম। আর চেন্নাই তে টক স্বাদের রান্না খেয়ে ও কান্না আটকাতে পারিনি !!!
গত বছর , অসুস্থতার কারণে আমাদের বারাণসী যাওয়া বাতিল হ‌ওয়ার পর , মাস তিনেক পরে গরমের সময়  গেলাম উত্তরাখণ্ড। ওখানে গরমে পৈটিক গোলযোগের কারণে কিছু লোভনীয় পদ খাওয়ার সাহস করি নি। কারণ ... ছোট থেকে ই আমি পেট রোগা । স্কুল , কলেজের বন্ধুরা আমার টিফিনের বিখ্যাত চিড়ে সিদ্ধ র সাথে বিশেষ ভাবে পরিচিত।সেই গোলোযোগ এখনো থাকলেও , এখন ওই ভয়কে অনেকটা ই জয় করেছি... কর্তার অভয় দানে । খাবার ও খাই , ওষুধ ও খাই... সমান উৎসাহে । একবার দীঘা তে হোটেল "মানসকন্যা" তে খেতে বসে ... সাবধানতা অবলম্বন জনিত কারণে আগাম ওষুধ খেতে দেখে আমার কর্তার বন্ধু পার্থ দা অবাক বিস্ময়ে বলেছিল ... "তুই medicine খেতে ও সমান ভালোবাসিস দেখছি"।  যা খানিকটা তা ই বটে । কোন একটা গল্পে যেন পড়েছিলাম ... রোগ হ‌ওয়ার আগেই সারাও ... সম্ভবতঃ শিবরাম চক্রবর্তীর হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন সিরিজ। সে যাই হোক ... সে যাত্রায় গরমের গুঁতোয়় হরিদ্বারে রাবড়ি খাওয়ার সাহস করতে পারিনি। আর দুঃখের কথা কাকে বলি .... ওখানে নিরামিষ খেয়ে মন ভার হয়ে গিয়েছিল। আমরা দুজন ভয়ানকভাবে আমিষের ভক্ত। মুসৌরি গিয়ে দুঃখ খানিকটা মিটবে ভেবেছিলাম... পুরো মেটেনি। ওখানে যে হোটেলে আমাদের বুকিং ছিল , সেই হোটেল বিষ্ণু প্যালেস ছিল নিরামিষ হোটেল। যা জানতে পেরে কি যে দুঃখ পেয়েছিলাম !!!! বলার নয়। অবশ্য আমরা ওখানে সব সময় খেতাম না .... আমিষ খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়তাম । দিনে যাই হোক.... রাতে আমিষ চাই চাই।
এ বছরের প্রথমে আমরা গিয়েছিলাম , হিমাচল প্রদেশ। সেখানে ও এক‌ই দুঃখ। বেশিরভাগ হোটেল ই নিরামিষ। কিন্তু হোটেল এ পৌঁছে সন্ধ্যা থেকেই আমিষ খেয়ে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করতাম। দুষ্টু লোক জন সে সব গল্প শুনে , অনেক কিছুই বলেছে .... হিমাচলের বাজার থেকে ওই কদিন নাকি আমিষ পদের আকাল দেখার সম্ভাবনা হয়েছিল.... ওসবে আমরা কান ও দিই নি। পাগলে কি না বলে !!!! তবে আমরা ছাগল ন‌ই কো।
তো একদিন সকালে জলখাবারে আলুর পরোটা খেয়ে একটু গোলমেলে ব্যাপার হয়ে গেল। সে এক কাণ্ড বটে .... খেয়ে দেয়ে আমরা র‌ওনা দিলাম ... চাম্বা হয়ে খাজিয়ার যাবো। অনেক টা পথ.... ৮০ কিলোমিটার। পথ চলা শুরু হ‌ওয়ার পর পৈটিক গোলযোগের হাল্কা আভাস পেলে ও , ওতো গুরুত্ব না দিয়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গের দিকে মন দিলাম। কিন্তু..... । একসময় পাহাড়ী পথের বাঁকে , একে একে দোকানপাট পিছনে রেখে আমাদের গাড়ি যখন দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে.... তখন শেষ আশ্রয়ের মতো একটা হোটেলের দেখা পেয়ে  .... গাড়ি থামিয়ে নামতে বাধ্য হলাম। উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে , মায়ের কাছে শুনেছি বাঘকে ও ভয় লাগে না !!! লজ্জা , ঘেন্না , ভয় সব একদিকে  , আর আমি অন্যদিকে। এখানে ও .... "আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা" .... এমন ভাবে ই এক‌ই সাথে হাত ধরাধরি করে অচেনা হোটেলে গেলাম বিপদমুক্ত হতে। সাদর অভ্যর্থনা ও পেলাম , সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ জন ... এগিয়ে এসে একটু আগে খালি হয়ে যাওয়া একটা রুম খুলে দিল। সব সময় আমার পাশে থাকার অঙ্গীকারবদ্ধ যে , সে বাইরে অপেক্ষায় র‌ইল। আমার কন্যা গাড়ি তে ওর মাসি ও মেসোর কাছেই ছিল। আবার যাত্রা শুরু হলো .... আমার জামাই বাবু স্মরনীয় এমন একখান ঘটনার কথা লেখার অনুরোধ জানালো , সেই সাথে এক‌ই অনুরোধ এলো তার ভাইরাভাই এর তরফে ..... অগত্যা। তোমাদের দুজনের কথা কি ফেলতে পারি  বলো ????
খা‌ওয়ার জন্য ই তো সব কিছু তোমরাই বলো । যা ই হোক না কেন ওকে বড়ো ই ভালোবাসি। কদিন আগে মাইথনে গিয়ে ও , সন্ধ্যা য় কিছু ই করার না থাকায় টুকটাক খেতে শুরু করলাম.... আমার কর্তা খেতে খেতে ই বলল যে .... আমরা তিনজন যা খাচ্ছি । হোটেলের রান্না ঘরে হৈচৈ পড়ে গেছে !!! যা order দেওয়া হচ্ছে আসা ইস্তক । আমি সম্মতি জানানোর আগে ই আমার একরত্তি কন্যা টিভি দেখা থামিয়ে বলে কি না ... তিনজন কৈ ? তোমরা তো দুজন !!! আমি খাচ্ছি  কোথায় ?
কি কাণ্ড দেখলে একবার !!! টিভি দেখলে ও কানটা এদিকে ই আছে । আর দুঃখের কথা কি জানো ? এমন খানে‌ওয়ালা বাবা-মা এর এমন নিখাকী কন্যা কেমনে হয় বলো দেখি ? আমি তো বুঝি না।আশায় আছি ... নিশ্চয়ই পুপে পরে বড়ো হয়ে নিরাশ করবে‌ না.... ।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র

Saturday, 12 October 2019

বেড়াতে গিয়ে মজারু (৭)

বেড়ানোর গল্পের কয়েকজন উৎসাহী পাঠক পাঠিকা পেয়ে , যাকে বলে আমি একেবারে আহ্লাদে আটখানা হয়ে আছি। আসলে তোমরা ভালো বললে , সব সময় ই দারুন লাগে।
বিয়ে ঠিক হ‌ওয়ার পর , সবার অনুমতি অনুযায়ী দেখা হয়েছিল বৃষ্টি মুখর রথের দিনে। যে গল্প আগেই করেছি। আমাদের সেই প্রথম সাক্ষাৎ এর হোতা ছিলেন আমার শ্বশুর মশাই। সেই দিনের আলাপচারিতায় জেনেছিলাম বেড়ানোর কথা। পরে যখন বেড়াতে যাওয়ার স্থান নির্বাচন হলো ... জানলাম দার্জিলিং এ যাব । কিন্তু জগন্নাথ দেবের ইচ্ছা ছিল অন্য। নিয়ে গেলেন পুরী। আসলে ... "আর যেখানে ই যাই , বিয়ের পর পুরীতে প্রথম যাবো না" .... আমার সাথি র এই বক্তব্য বোধহয় উনি ঠিক মানতে পারেননি।
তো বেড়ানোর অভিজ্ঞতা , তখন আমার বলতে গেলে negative । এমন সময় , প্রথম ঘুরতে যাওয়ার শুরুতে ই দেখলাম , আমাদের দুজনের নামের heading দিয়ে , চটজলদি লিস্টি লেখা হলো। সে অনুযায়ী সব গোছানো ও হলো ... আমি ঘরের একদিকে চুপ করে বসে মুগ্ধতা আর কাটাতে ই পারি না..... কিন্তু এ হল প্রথম প্রথম impressive session এর বাজার। এই বাজারে দুজন‌ই দুজনকে উঠে পড়ে impressed করতে চায়।
এখন ও লিস্ট লেখা হয় , জড়ো হয় সব ... কিন্তু গোছানোর দিন দেখা যায় , বিপরীত চিত্র একজন বড়ো বাজারের গদিওয়ালা মাড়োয়ারি র মতো সব জড়ো জিনিসের মাঝে সেই লিস্টি হাতে গদিওমান হন আর তারপরে যা যা জড়ো হয়নি , সে সব আনার ফর্মান জারি হয় ... চলতে থাকে ইয়ে লাও , উয়ো লাও... আর আমি এক মুহুর্ত বসার সুযোগ না পেয়ে সেই সব জিনিস জড়ো করতে থাকি .... ছুটোছুটি কি এ বয়সে পোষায় ? হাঁপিয়ে ও যাই.... কিন্তু..... কাজেই বুঝলে তো সেদিনের সঙ্গে মিল খুব একটা নেই। কিছু বললে , ওদিক থেকে উত্তর আসে ... " এতো দিনে কি কি শেখালাম, কি কি শিখলে তার পরীক্ষা দাও এবার " .... উফ্ সেই রামায়নের যুগ থেকেই একই রকম চলছে ... পরীক্ষা পরীক্ষা আর পরীক্ষা । কী অবস্থা ভাবো !! আমি যখন মুগ্ধ হচ্ছি, তখন উনি ভবিষ্যতের ভাবনা য় আমায় training দিচ্ছিলেন !!!!
যাক্ সে কথা। কোথাও বেড়াতে গেলে আমি almost ছোটখাটো একটা সংসার নিয়ে র‌ওনা দিই। যা নিয়ে ও সঙ্গী সাথীদের মজাদার কথার আদান-প্রদান চলে ... কিন্তু পরে ওই নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় জিনিস টা যখন প্রয়োজনের তালিকা ভুক্ত হয় , তখন .... । আমার এক প্রাক্তন ছাত্রী একবার বেড়াতে যাওয়ার জন্য একটা প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা করে দিতে বলেছিল ... দিলাম । কিন্তু সেই লম্বা লিস্টি দেখে তার কর্তা নাকি বেড়াতে যাবে ই না বলে স্থির করেছে। বড়ো দুঃখ পেয়েছিলাম !! কিন্তু কি আর করা !!!
একবার আমরা দার্জিলিং গিয়েছিলাম , সাথে জিনিয়া ও আছে সপরিবারে। ফেরার পথে ঠিক হয়েছে , সিমুলবাড়ি চাবাগানে একটা রাত কাটিয়ে ফিরব। ওই চা বাগানের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার রূপক , জিনিয়ার ভাই এর বন্ধু। সেবার আমরা মিরিক হয়ে নামছি , পাহাড় থেকে। কন্যার motion sickness পুরোদমে চালু রয়েছে। এক সময় পথ শেষ হলো। আমরা চা বাগানে রূপকদের কোয়ার্টারে পৌঁছলাম। চারিদিকে সবুজ চায়ের বাগান , মধ্যে কোয়ার্টার। দোতলায় ওরা থাকে। রূপক , ওর স্ত্রী আর কন্যা মিঠি। পুপের থেকে সামান্য বড়ো। ওখানে পাশেই চা processing factory । ওখানে শুনলাম মাঝে মাঝেই রাতে / ভোরে হাতি আসে। দূরে পাহাড়ের রেখা । আর চিতা বাঘ ও অতর্কিতে আসে , গ‌হপালিত পশু শিকার করে নিয়ে যায়।  আমাদের সেদিন রাতটা কাটিয়ে পরের দিন সকালে NJP থেকে ফেরার ট্রেন। সবাই এক বাক্যে স্বীকার করলাম যে , একরাতের বদলে আরো একটা দিন পেলে দারুন মজা হোতো। রাত ফুরিয়ে ভোর হলেই বেরিয়ে পরতে হবে। তা ও অনেক গল্পই হোলো। বিকেলের জলখাবার , রাতের ভুরিভোজ খেয়ে ঘুম দিলাম। পথশ্রমের ক্লান্তি তে এক ঘুমে ই রাত কেটে গেল। ভোরে উঠে সব গুছিয়ে নিয়ে NJP এর উদ্দেশ্যে আমরা বেরিয়ে পরলাম। রূপকের স্ত্রী ভোরে উঠে আমাদের জন্য খাবার বানিয়ে দিল।
স্টেশনে পৌঁছলাম যথাসময়ে । ট্রেন ও এলো । উঠে ই বিপত্তি। দেখি আমাদের সীট নাম্বারে অন্য যাত্রী বসে রয়েছে। আমাদের কাছে e - ticket রয়েছে। তারা ও তাদের টিকিট দেখাচ্ছে। এবার বচসা ... তারপর প্রায় হাতাহাতি হ‌ওয়ার জোগাড় !!! সেবার টিকিট কেটে ছিল আমার ভাসুর । ট্রেন তখনো স্টেশনে দাঁড়িয়ে .... আমি দুবার পরামর্শ দিতে গিয়ে , ধমক ধামক খেয়ে থেমেছি। এমন সময় আমার কথা একটু শোনার সুবুদ্ধি হলো .... At last ... ফোনাফোনি হলো .... তারপর !!!! হঠাৎ শুনলাম আমাদের অন্য compartment এর টিকিট ... বোঝো !!! এখনি নামতে হবে .... এতোক্ষণ যাদের সাথে বাকবিতণ্ডা হচ্ছিল , তারাই ক্ষমা ঘেন্না করে আমাদের বাক্সপেটরা সব নামিয়ে দিলেন ... একজন ওর মধ্যে ই বললেন -- " কি যে করেন ? দেখে উঠবেন তো ? এখনি ছাড়বে জলদি করুন " ।  কিন্তু .... তাদের মতো আমরা সবাই অবাক হয়ে দেখলাম আমার কর্তা মশাই এর হেলদোলহীন অবস্হান । আমি আকুল হয়ে বললাম ... " কি গো চলো তাড়াতাড়ি , ট্রেন যে ছেড়ে দিচ্ছে " । চাপা গলায় উত্তর এলো ... " চেপে যাও । আমাদের ট্রেন আজ নয় , কাল " । "এ্য‌া ? সেকি ?" সমস্বরে আমরা সবাই চেঁচিয়ে উঠলাম। জিনিয়া ট্রেনের দিকে তাকিয়ে বলল ..  চলো আমরা ওই tea stall এর পিছনে লুকিয়ে পড়ি। সবাই দেখছে যে " । ট্রেন তখন আস্তে আস্তে গতি বাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আর ওই কম্পার্টমেন্টের আপামর জনসাধারণ অবাক বিস্ময়ে আমাদের দিকে চেয়ে আছে। আমরা অগত্যা ওই stall এর পিছনে দাঁড়িয়ে বা লুকিয়ে যাই বলো ট্রেন যাওয়া ওবধি অপেক্ষা করলাম। আসলে আমাদের ট্রেন ছিল পরেরদিন। আমরা আগাম এসে গিয়েছিলাম। দেরি র কারণে ট্রেন miss হয় সবাই শুনেছি। কিন্তু আগাম আসার জন্য ফেরা বাতিল হয় ... এমন শুনেছ কেউ ? শুনতে ই পারো !!! তবে বেশি যে এমনটা শোনোনি নিশ্চিত।
 তারপর ?? আর কি সিমুলবাড়িতে আরো একদিনের আনন্দে র হাট বসল । আরো একটা গোটা দিন , গোটা রাত কাটিয়ে পরের দিন নির্ধারিত সময়ে ট্রেনে উঠলাম।
বলো দেখি এখন , লাগলো কেমন ???
@ শুচিস্মিতা ভদ্র

Thursday, 10 October 2019

বেড়াতে গিয়ে মজারু (৬)

বেড়ানোর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে ... কত অচেনা মানুষ ক্ষণিকের জন্য চেনা হয়ে যায়... হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর একটা গান আছে না !!! "এই যে পথের এই দেখা , হয়তো পথেই শেষ হবে ..... তবু ও হৃদয় মোর ভাবে সঞ্চয় কিছু যেন রবে .... ক্ষণিকের এই জানা শোনা ... স্মরণে করে যে আনাগোনা ..... " 🎶🎶🎶🎶.... এমনটা জীবনের পথ চলতে গিয়ে ও হয় আর তারই সংক্ষিপ্তকরণ হয় বেড়াতে গিয়ে। এই স্বল্প পরিচিত মানুষের কাছ থেকে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যে আমরা সমৃদ্ধ হ‌ই। অপরিচিত কে পরিচিত করতে আমার কন্যার জুড়ি মেলা ভার। একবার জামসেদপুর বেড়িয়ে ফিরছি.... ট্রেনে বসে ই পুপের প্রথম প্রশ্ন ... আচ্ছা মা , ওরা কারা ( আমাদের সামনের যাত্রীদের নির্দেশ করে ) ? চিনতে পারছি না তো !!!! বোঝো কাণ্ড !!! দুনিয়া শুদ্ধু সবাইকে যে চেনা যায় না ... তা সে মানতে নারাজ। একে জীবন জুড়ে চেনা মানুষ ই হঠাৎ হঠাৎ করে অচেনা হয়ে যাচ্ছে !!!!
তো এভাবেই যাত্রা পথে আলাপচারিতায় মনোনিবেশ করে আমার কন্যা। দিনকালের হালহকিকত বেশ ঘোরালো ... তাই আমাকে-ও ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি করতে হয়।
একবার আমরা নর্থবেঙ্গল গিয়েছি। ঘোরাঘুরি
র মধ্যে চা বাগানে হাজির হয়ে , অনেক ছবি তোলার পর ফিরতি পথে গল্প জমে উঠেছে। ড্রাইভার না না রকম অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করছে... তখন ই জানলাম যে চা বাগানে অজগরের থাকার সম্ভাবনা প্রচুর। আর থাকে চিতা বাঘ। বাপ্ রে .... কি সাঙ্ঘাতিক !! এমন তথ্য পরিবেশনের পর আমার কর্তা বললেন যে .... এতো জানা কথা !! ভাবো কি কাণ্ড !!! এতোই যদি জ্ঞানের ভাণ্ডার , তো ছবি তোলার সময় সতর্ক করার কথা মনে ছিল না ? নাকি .....
লাটাগুড়ির জঙ্গল সাফারি তে কিছুই দেখলাম না ... কিন্তু গল্পের গরু থুড়ি চিতা গাছে উঠতে শুনলাম। তা হয়েছিল কি ... জিপ সাফারিতে পর পর জিপ ঢুকছে জঙ্গলের অন্দরে ...  ময়ূর দেখে উৎফুল্ল হবো কিনা ভাবছি , কারণ আমার সহকর্মী সঞ্চিতা দি বলে দিয়েছিলো যে , জঙ্গল ভ্রমনে প্রথম ময়ূর দর্শন অপয়া ... এমন সময় সামনের জিপের মানুষজনের চাঞ্চল্য নজরে এলো ... একটু অপেক্ষা করে শুনলাম একটু দূরে ঝোপে কিছু নড়তে দেখা যাচ্ছে .... কিন্তু তারপর আবার সব চুপচাপ। কিছু ই দেখা হলো না... যাত্রা প্রসাদ watch tower এ আমাদের guide নিয়ে গেল ই না। ওখানে গেলে কিছু না কিছু দেখতে পেতাম ই ... এমন guidance পেয়েছিলাম সঞ্চিতাদির কাছে। ফিরতি পথে গরু মারা অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে খান পাঁচেক গরু দেখতে দেখতে মন ভার করে গেস্ট হাউস এ ফিরলাম। সন্ধ্যায় বারান্দায় চা , পাকোড়া খেতে খেতে , ওখানকার রাঁধুনির কাছে শুনলাম চিতা বাঘের নাকি দেখা পাওয়া গিয়েছে সেদিন। বেশ আফসোস হোলো .... একটুর জন্য মোলাকাত না হ‌ওয়ার জন্য। কিন্তু .... সত্য দা আর আমার কর্তার জেরার মুখে গল্পের চিতা একেবারে চিতপাত হলো , ধরাশায়ী হলো আমাদের গেস্ট হাউসের দোতলার বারান্দায়.... ওই যে ঝোপ নড়েছিল .... সেই ঘটনা ই ডানা মেলে উড়ে কোথায় যে উড়েছে .... কোথায় থেমেছে !! ভেবে ই চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল।
ঝোপ নড়ে চিতা শুধু দর্শন ই দেন নি ... শিকার ধরে আবার তা টেনে নিয়ে ও গিয়েছে ..... উফ্ পু্রো বাংলা serial !!! আমাদের কপালে ময়ূর আর হরিণ ছাড়া দেখা মিলেছিল গরুর ... বুঝেছিলাম গরু মারা নাম খানিকটা হলেও সার্থক । না দেখেছি বাইসন , না গণ্ডার , না হাতি !!!
বেড়াতে গিয়ে পথ চলতি motion sickness এ এখন সিদ্ধহস্ত আমার কন্যা। ওকে সামলাতে গিয়ে আমার sickness ফিকে হতে হতে এখন সম্পূর্ণ সেরে গেছে। এখন এমন পরিস্থিতিতে আমি পুপে কে নিয়ে আর প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে গাড়িতে পিছনে বসি , সামনে ড্রাইভারের সাথে খোস গল্পে যোগ দেয় , আমার কর্তা।আর মেয়ে র ও রকমের sickness দেখা দিলেই মনে হয় আমি আর আমার কন্যা ছাড়া , অন্য সহযাত্রী ... বিশেষ করে আমার কর্তা যেন অপরিচিত । গাড়ি এগিয়ে চলে থামতে থামতে , নামতে উঠতে সময় গড়িয়ে যায় ... । সব রকম টোটকার application চলে । সাধারণ নিয়মে কখনো সে থামে ... টোটকার হাতযশ এই ভাবনা নিমেষে নস্যাৎ হয়ে যায় । আবার চলা শুরু হয়। কিন্তু আমাদের দমাতে পারেনা। চলতে থাকি।।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
বেড়াতে গিয়ে মজারু (৫)

বেড়ানোর কথা লিখতে শুরু করে , নিজের খেয়ালে লিখছি ফলে বেখেয়ালে ঘটনা গুলোর ক্রম অনুযায়ী লেখা হয়নি। যেমন যেমন মনে পড়ছে , সে অনুযায়ী লেখা এগিয়ে চলেছে। আসলে তোমাদের আসরে আমার যেন একটা দাবি তৈরি হয়ে গেছে , যেখানে মন জোর দিয়ে বলছে ... হলো ই বা একটু আগে পরে !!! তাতে কি ?
ছোটবেলার বেড়ানোর স্মৃতি তেমন জোরালো ও নয় , আবার খুব বেশি ও নয়। যার মধ্যে কয়েকটা আবার মায়ের কাছে শোনা । যেমন আমার মুখেভাতের পরের দিন বাড়ির সকলের দীঘা গমন। ওখানে নাকি আমার প্রথম বসতে শেখা। এরপরের অল্প ব্যবধানে তিরুপতি ও রাজগীর গিয়েছিলাম যার , স্মৃতি এতো টাই আবছা লেখার রসদ তার থেকে মেলা ভার !!! বাবার দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে , চিকিৎসকের পরামর্শে আমরা একমাসের জন্য রাজগীর গিয়েছিলাম।শরীর সারানোর জন্য ওখানকার জল হাওয়া খুবই ভালো। সাথে ছিলেন আমার দিদিমা। ওখানকার একটা ঘটনা শিশু মনে প্রভাব ফেলেছিল। কেবলকার ভ্রমণ। এই ঘটনায় আড়াই বছরের আমি কি মজা পেয়েছিলাম, তা আর আজ ভেবে পাইনা। মনে আছে সামনের কেবলকারে বাবার কোলে চড়ে আমি , পিছনের কেবলকারে বসা মা আর দিদিমা কে দেখে খিলখিলিয়ে হাসছিলাম আর হাত নাড়ছিলাম। ভয়ের বোধ তখনো মনের কোথাও প্রবেশাধিকার পায়নি।
এরপর বেড়াতে যাওয়া হলো , অনেক অনেক দিন পরে আবার দীঘা। মাধ্যমিক পরীক্ষা র পর। তারপরের গন্তব্য , স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পর .... । আমার প্রিয় বান্ধবী শুভদ্রার এক দাদার ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্র রাজস্থানে। অনেক জনের দল। নতুন নতুন আলাপচারিতার মধ্যে ই একসময় ট্রেন পৌঁছালো বীকানের। যোধপুর এক্সপ্রেস করে হাওড়া থেকে র‌ওনা দিয়েছিলাম। আমাদের দলে অনেকে ছিলেন ... সবার নাম মনে নেই। আশীষ দা, বৌদি , দেবাশিস দা, বৌদি , রাজা দা, শ্যামল দা .... মুন্নি দি , এক মাসিমা , মেসোমশাই, ৩/৪ জন বিচ্ছু ... যারা অনেকটা সময় আমার কাছে থাকতো। বিশেষ করে দেবাশিস দার কন্যা সোনাই। কত‌ই বা হবে ? সোনাই তখন বড়োজোর ৫/৬ বছরের। আর ছিলেন রহমান দা।বেকবাগান এর বাসিন্দা। খুব মজার মানুষ। অথচ গম্ভীর , রাশভারী। চেহারায় বনেদিয়ানার ছাপ। অকৃতদার । ফেরার পর ও অনেক দিন যোগাযোগ ছিল। আমাদের বাড়িতে ও রহমান দা এসেছেন। যা হয় , পরে কখন কোন ফাঁকে যোগাযোগ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে ... শূন্যতে হারিয়ে গেছে মনে নেই। একটা ঘটনা মনে পড়ে ... আমরা সবাই পুস্করে গিয়েছি। রহমান দা ও সাথে রয়েছেন , একটু পিছনে । পুস্কর একমাত্র হিন্দু তীর্থ স্থান , যেখানে ব্রক্ষ্মা র মন্দির আছে। কোন এক অভিশাপের আখ্যান এর সাথে জড়িত, যা আমরা পুরাণে পাই। যাইহোক , সকলেই পূজো দিতে প্রস্তুত , স্নান করেই গিয়েছি। পুস্করে সরোবরের ধারেই মন্দির। পুরোহিত মশাই এতোজনের দল দেখে দক্ষিণা জনিত কারণে ই হয়তো খুবই আহ্লাদিত হয়ে এগিয়ে এসে যা যা করণীয় করতে শুরু করলেন। সব শেষে সবার নাম আর গোত্র শুনে নিয়ে পূজো র সংকল্প পাঠ করবেন.... সেই অনুযায়ী প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করছেন... রহমান দা একটু পিছনে স্মিত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরোহিত মশাই এর প্রশ্নে নাম না বলে , সরাসরি রহমান দা বললেন যে , ওনার গোত্র ওনার জানা নেই। পুরোহিত মশাই ও নাছোড়বান্দা। দৃঢ় কন্ঠে বললেন যে যেকোনো নাম শুনলেই উনি বলে দিতে পারেন কার কি গোত্র। তখনো রহমান দা র মুখে হাসি লেগে রয়েছে। ধীর কন্ঠে বললেন ... আমার নাম রহমান। পুরোহিত মশাই একটু ও বিচলিত না হয়ে রহমান দার নামে সংকল্প পাঠ করলেন... বললেন ... আপনার গাজী গোত্র। আমরা সবাই হেসে উঠলাম। আর রহমান দা ও হাত জোর করলেন। পূজো সম্পূর্ণ হলো।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
বেড়াতে গিয়ে মজারু (৪)

বেড়াতে গিয়ে ইচ্ছে আর অ্যাডভেঞ্চার কে গোলালেই গোলমাল। আমি একদমই অ্যাডভেঞ্চার প্রবণ ন‌ই। কারণ ওসবে বিপদের সম্ভাবনা কিছু না কিছু থাকেই। অনেকেই বলেন অ্যাক্সিডেন্ট যে কোনো সময় হতে পারে.... নিশ্চয়ই point ... কিন্তু আমি ওই ভাবে ভাবতে পারি না। মনে হয় ক্ষণিকের আনন্দতে বিষাদের ছোঁয়া নাই বা লাগালাম ।
বেড়াতে গিয়ে কিছু কিছু আপাত সরল ইচ্ছে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে আর তার নিচে আমার ভয় ব্যাকুলতা কিছু ক্ষণের জন্য চাপা পড়ে।
ভাইজাগ গিয়ে প্রথম ঘোড়া চড়েছিলাম। ওখানকার Vuda park এ গিয়ে দেখি , এক জায়গায় লেখা রয়েছে Horse ride.... । ইচ্ছে দানা বাঁধতে শুরু করেছে .... কিন্তু ভীতি ও মনে মনে বারণ করছে। যথারীতি আমার মন পড়ে ফেলায় যার জুড়ি নেই , সে অভয় দিয়ে বলল যে , শুধু মাত্র photo session এর জন্য একটু সাহস করো .... । ইচ্ছা র জয় হল... অনেক কসরত করে উঠলাম ঘোড়ার পিঠে। একটা চেয়ারে উঠে, তার সামনে রাখা আর একটু উঁচু টেবিলে উঠে , সেখান থেকে ঘোড়ার পিঠে আসীন হলাম.... অনেকটা যেন পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি ... মনে এমন একটা ভাব ঘোরাফেরা করছে। ঘোড়া টা কিন্তু ময়দানের ঘোড়ার মতো অতো বড় না হলেও খুব ছোট ও নয়। তবে একদম ই টাট্টু নয়। কিন্তু পিঠে চড়ার আনন্দ নিমেষে উধাও .... কেন ? আমায় নিয়ে ঘোড়া তখন ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেছে.... আরেক জনের চোখের ইশারায় যে কাজটি হয়েছে বলাই বাহুল্য। ওই পার্কে একটা round দিয়ে সে ফিরে এল। আমি ও নেমে পড়লাম অনেক কষ্টেসৃষ্টে।
এরপরের ঘটনা কুফরী তে। হিমাচলের সিমলা বেড়াতে গেলে... ওখান থেকে অনেকেই কুফরী ও চ্যাল যায়। আমরা ও গেলাম। একটা জায়গা ওবধি গাড়িতে গিয়ে তারপর ঘোড়া য় চড়ে যেতে হয়। আমি তো বদ্ধপরিকর ঘোড়ায় ? কভি নেহি ..... । কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার যে হাল দেখলাম !!! বাপ্ রে .... তখন মনে হচ্ছে আভি ঘোড়া লাও । দুটো টাট্টু তে দুজন উঠেছি। আমি সামনে , পিছনের ঘোড়ায় তিনি । কিন্তু তিনি ঘোড়ায় ওঠার সাথে সাথেই ঘোড়ার পেটে চাপ পড়ার দরুণ ....... আর কি বলতে হবে ? বুঝে নাও ‌please ।তারপর ঘোড়া বোধহয় খুব ভালো feel করল ... পেট তো হাল্কা হোলো !!! তো তারপর পাহাড়ী পথে , খাদের ধার ঘেষে ঘেষে চললাম। একসময় পৌঁছলাম.... সব দেখে আবার ও ঘোড়ায় করে ফিরলাম।
মানালি থেকে আমরা সোলাং ভ্যালি গিয়েছিলাম। সেদিন সকালে খুব বৃষ্টি , সেই সঙ্গে জব্বর ঠাণ্ডা। আকাশের মতো আমার ও মুখের অবস্থা। এমন সময় গাড়ির ড্রাইভার অন্নু ফোন করে বলল ... কব নিকলেঙ্গে ? আমরা বৃষ্টির কথা বলার সাথে সাথেই ওদিক থেকে উত্তর এলো .... চলিয়ে ভাবি... আজ উপর বহুত মজা আয়েগা।
এরা ভালো জানে , ওখানকার বাসিন্দা !! চটজলদি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরলাম। সত্যি ই উপর মজা আয়া.... বরফ পড়ছিলো তো !!!! অপূর্ব অভিজ্ঞতা। দাঁড়িয়ে, বসে , হেলে সব রকম ভাবে ছবি তোলার পর .... আবার ইচ্ছে ডানা মেলল.... কি রকম ? বরফ পরে ভ্যালি পুরোপুরি সাদা হয়ে গেছে... ওখানে বুদ্ধদেব এর অনন্তশয়ান style এ ছবি তুলবো.... তো সেই অনুযায়ী এগোচ্ছি, পিছোচ্ছি.... আমার photographer একবার বলে এদিকে একটু সরো , আবার বলে ওদিকে একটু ঘোরো .... এই করতে করতে একদম বিপদজনক zone এ চলে গেছিলাম আর কি !!!  হঠাৎ photographer এর খেয়াল হতে .... একটু র জন্য বাঁচ গিয়া .... ।কি বলো তো ? বোঝোনি তো !!! পোস্ দিতে গিয়ে আর একটু হলেই নোংরা র ওপর পড়তাম। নিঃসন্দেহে কুকুরের কাণ্ড । আমাদের কাণ্ডজ্ঞানের কথা নাই বা বললাম।
এরপরের ঘোড়া চড়ার ঘটনা হলো উত্তরাখণ্ডের ধনৌলটি। সেখানে গিয়ে ওখানকার ইকো পার্কে ঘুরে নিয়ে বাইরে এসে দেখি ঘোড়া চড়ার ধূম । আমার এবার ইচ্ছে না থাকলে ও সাধিলেই যাইব ... এমন ভাব। তো কন্যার বায়নায় এক ই ঘোড়ায় দুজন উঠেছি। বাকি রা কেউ উঠবে না। তারা র‌ইল অপেক্ষায়। আস্তে আস্তে চলেছি পরিষ্কার, ঝকঝকে রাস্তা.... আবহাওয়া ও অনুকূল.... এমন পরিবেশে আমার আবার গান পায়। মনে গুনগুন শুরু করেছি কি না করেছি ... এমন সময় ঘোড়া তার মালিকের নির্দেশে পাহাড়ী পথ ধরল। গান তখন gone....পুপে কে বলছি ... এই রে এখানে পড়লে তো আর দেখা যাবে না রে !!! হরিদ্বারে shopping করলাম সেগুলোর কি হবে রে ? পরা হবে না !!!  আমার কন্যার ও তখন  almost বোলতি বন্ধ।কার্যত ঘোড়ার পিঠে র বসার জায়গায় সামনে একটা লোহার হাতল আছে ধরার জন্য , সেটা পুপের পেটের কাছে চেপে বসে ওর তখন নাভিশ্বাস !!! নড়তে অপারক । ওর পিছনে আমি নামক ওজনদার মা বসে আছি যে !!! ও মাঝে মাঝে হিন্দি বাংলা মিশিয়ে বিচিত্র ভাষায় লগরি লগরি বলে চিল চিৎকার দিচ্ছে। পরে পাঠোদ্ধার তো নয় ভাষা উদ্ধার করলাম .... লগ রহি হ্যায় বলতে গিয়ে বেচারী গুলিয়ে বাদ দিয়ে যোগ করে একটা ভজঘট শব্দ বলে ফেলেছে । আমাদের কর্মজীবন আমাদের এমন ট্রেনিং দিয়েছে ভাষার নতুনত্ব আমাদের চমকিত করতে পারেই না।
।  ইকো পার্কের পিছন দিয়ে ঘুরিয়ে আবার main road এ আসতেই নিজের সকলকে দেখে ধড়ে প্রাণ এলো , মুখে হাসি ফুটলো। বাপ্ রে ঘোড়া নিয়ে ঘোরাঘুরি বেশ কেমন যেন। চড়ার পর মনে হয় কেন চড়লাম ? নামার পর মনে হয় আবার চড়বো। ওঠার আগে মনে হয় কেন চড়বো না? বেশ গোলমেলে না ব্যাপারটা ?  বেশ গোলমেলে !!!
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
বেড়াতে গিয়ে মজারু (৩)

বেড়ানোর মজার অভিজ্ঞতা , স্মরনীয় অভিজ্ঞতা লিখতে গিয়ে দেখছি মনের মধ্যে কতো না ঘটনা লুকিয়ে আছে .... একটু ভাবনায় নাড়াচাড়া করতেই ঝুলি থেকে উঁকি মারছে। মা সব সময় বলতেন আনন্দ ও দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে হয় , তাতে একটা আরো বেড়ে যায় আর অপরটা কমে যায়। প্রথমটায় আমার ভাবনা মাকে অনুসরণ করেছে। কিন্তু দুঃখের কথা সমব্যথী ছাড়া ভাগ করলে হেয় হতে হয ... সেটা মা ও হয়তো বুঝতেন পরে ,  আমার অভিজ্ঞতাও তাই। যাক ... গম্ভীর কথা ... থাক।
একবার পুরী গিয়েছি , সাথে আরেকটি বন্ধু পরিবার ও আছে। প্রথম দিন  সমুদ্র বিলাস এর পর হোটেলে ফিরে , ঘরে ঢোকার পর পাশের ঘর থেকে আমাদের বান্ধবী জিনিয়া জানালো যে ... ঘর তছনছ। কারণ অনুসন্ধানে জানা গেল , রুমের খোলা জানালা গলে ঘরে ঢুকেছিল যে , এ তার ই বাঁদরামি। আজ্ঞে হ্যাঁ ... এখানে ও বাঁদর। ওদের কন্যা তখন বেশ ছোট। তার জন্য আনা মুড়ির কৌটো ও উধাও। কোথায় , কোন ডালে বসে এখন চোর মুড়ি খাচ্ছে ... জানার উপায় নেই। অগত্যা সাবধান হতে হবে... জানিয়ে দিলেন ম্যানেজার সহ এক কর্মচারী।
সেবার আমাদের পুরীতে বেশ যাযাবরের মতো কেটেছিল। তিনদিনের মধ্যে একদিন হোটেল বদল , বাকি দুদিন রুম বদল। তো এসব বদলাবদলি র মধ্যে ও আমাদের সমুদ্র স্নান ( যদি পা ডোবানোকে স্নান বলা যায় {আমার ক্ষেত্রে }তবেই)  , মন্দির দর্শন , সমুদ্রের ধারে বসে সঙ্গীত পরিবেশন , কেনাকাটা কোনটাই বাদ পড়েনি। সেবার একদিন গিয়েছিলাম উদয়গিরি আর খণ্ডগিরি। ফেরার ট্রেন ছিল ভুবনেশ্বর থেকে। তখন ওই স্টেশনে থেকেই ধৌলি এক্সপ্রেস ছাড়তো। ফেরার দিন ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির দর্শন করেছিলাম। পূজা দেওয়া নয়, শুধুমাত্র দর্শন।
ঘটনার প্রাণকেন্দ্র হলো উদয়গিরি ও খণ্ডগিরি। এবার ও বাঁদর !!!! বলা ভালো বাঁদরের দল। তো যা বলছিলাম .... উদয়গিরি ও খণ্ডগিরি তে গাড়ি থেকে নামতেই একদল বাদাম বিক্রেতা এগিয়ে এলো। বলল ... বৌদি , এক টাকা করে দশটাকার বাদাম কিনে নিন । ভিতরে বাদাম খাওয়াবেন বাঁদরদের। তা সে অনুযায়ী বাদাম নিয়েই , বকুনি খেলাম । কি আর করা !! ওরা খাক বাদাম ... এই ভেবে গুটি গুটি এগিয়ে গেলাম.... বাকি সবাই আসছে পিছনে। হঠাৎ খেয়াল করলাম একে একে গাছ থেকে তেনারা নামছেন , এগিয়ে আসছেন। ব্যাস .... এবার আমার অবস্থা ভাবো। নিমেষের মধ্যে ই বাদাম শেষ ... কিন্তু ওরা তখন দলে দলে যোগ দিন ... এমন ভাবনায় মত্ত। আর পিছন ফিরে দেখি .... আমার ঘর শত্রু "বেশ হয়েছে" ধরনের দৃষ্টি নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হতাম অন্য কেউ  !! ওমন পারতো করতে ... এসব ভাবছি !! প্রায় কাঁদো কাঁদো ভাব ... এমন সময়... ভগবান আছেন । ওই বাদাম বিক্রেতা ও আরো কয়েকজন এগিয়ে এসে বাঁদর গুলো কে তাড়িয়ে আমাকে উদ্ধার করলো ... বলতে পারো। তখন বাকি রা এসে অনেক মশকরা করতে লাগলো.... । তো একটা কথাই বলি .... এক মাঘে শীত যায় না। পরের হাসি হাসার সুযোগ ও পরে পরেই পেয়ে গেলাম.... ।
ওখানে ঘোরাফেরা, ছবি তোলা সব‌ই হলো। এবার ফেরার পালা। যারা গিয়েছ জানো উদয়গিরি ও খণ্ডগিরি দুটো ই ছোট্ট পাহাড় , সেখানে কিছু বৌদ্ধ গুহা আছে আর মন্দির ও আছে। তো কোনটা উদয়গিরি আর কোনটা খণ্ড গিরি সে খেয়াল করিনি। মোটের ওপর আমাদের নামার রাস্তাটা ঢালু মতন। সবাই যখন নামছি ... ওখান থেকেই দেখলাম নিচের দিকে কয়েকজন বসে আছে উপর পানে চেয়ে। বুঝলে তো কারা পাদদেশে অপেক্ষমান ? আমার অবস্থা আবার আশঙ্কা জনক। কি করি !!! শুধু আমরা পাঁচ জন নয়... আরো ভ্রমণার্থী ও রয়েছেন। আমার কর্তা বীর দর্পে এগিয়ে গেলেন .... আমরা সবাই ওর পিছুপিছু। হঠাৎ একটা বাঁদর এগিয়ে এসে সোজা আমার কর্তার পা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে গেল। এবার !!!! তখন কোথায় smart phone ? ক্যামেরা থাকলেও সাহস হয়নি .... । ক্যামেরা চেপে ধরে যদি মুড়ির কৌটো র মতো নিয়ে যায় !!! আমার বীরপুরুষ তখন তুলনামূলক ভাবে নম্র গলায় বলেই চলেছে ... এ্যাই যা । যা বলছি !!!! শান্তিনিকেতনী ঢঙে অবশ্য বলেনি। যাই হোক আমরা আপামর টুরিস্ট কূল ওকে শিখণ্ডী করে , হাসি পেলে ও হাসবো না না না না ... আমরা রামগড়ুড়ের ছানা ...  এমন ভাবে নেমে এলাম। ওই ভক্ত তখনো প্রভুর পা ধরে দাঁড়িয়ে !!! এখানে ও ত্রাণকর্তা ওই আমার সদ্য পরিচিত দেওরকুল ( বাদাম বিক্রেতা ) । যাওয়ার শুরুতে বৌদি উদ্ধার ... ফেরার সময় দাদা উদ্ধার। পুরো কোটা কমপিলিট !!!! যাত্রা পালা।
হোটেল ফেরার পথে মনের ব্যাথায় কাতর হয়ে একজন বলেছিল তোমরা সব আমার বন্ধু না শত্রু ? আমায় ফেলে .... কথা আটকে গেল বোধ হয়। বিরল ঘটনা। আরে বাবা, ফেললাম কোথায় ? অপেক্ষা করছিলাম তো নিচে দাঁড়িয়ে.... হোটেলে তো একসাথেই ফিরলাম .... তোমরাই বিচার করে বলো দেখি !!!! নিরপেক্ষতা বাধ্যতামূলক......
@ শুচিস্মিতা ভদ্র

Tuesday, 1 October 2019

বেড়াতে গিয়ে মজারু (২)

বেড়াতে গিয়ে মজার ও স্মরনীয় ঘটনা নিয়ে সেদিন লেখার কথা মনে হলো। অল্প দুটো ঘটনা দিয়ে লেখার শুরুটা করেই দিলাম ।সত্যি ই কতো যে এমন ঘটনা জমা হয়েছে এ যাবৎ !!! ভেবে ই বেশ ভালো লাগে। মনে হয় অভিজ্ঞতা যখন বাড়ছে ... তার মানে বয়স ও উর্ধ্বমুখী । সেই ভাবনা টা ভালো ও খারাপ দুরকম অনুভূতির জন্ম দেয়।
যাক্ সে কথা ... আগের কথায় ফিরি .... প্রথম ভাইজাগ গিয়েছিলাম বিয়ের মাস আটেক পর। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাওড়া থেকে যেদিন দুপুরে র‌ওনা দিল , পরের দিন ভোরে ভাইজাগ পৌঁছনোর কথা। তখনো আমার বেড়ানো বিশেষ করে ট্রেন ভ্রমণ নিয়ে ভীতি পুরোপুরি কাটেনি। একটা ভয়.... যদি জঙ্গি ট্রেন উড়িয়ে দেয় !!!! তো এ হেন ভয় মনে নিয়েই চলেছি। স্লীপারের টিকিট। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে middle bunk এ শুয়ে লম্বা ঘুম দিয়েছি ... আমার ট্রেনের দুলুনি তে ঘুমের কোনো সমস্যা নেই। জানলার দিকে পা করে শুয়েছি। মাঝে রাতে ঘুমের দফা রফা ... হঠাৎ পায়ের পাতা ধরে হাল্কা টান !!! ধড়মড়িয়ে উঠে ধাতস্থ হয়ে কি দেখলাম জানো ? পা ধরে যিনি টান দিয়েছেন, স্বয়ং তিনি দন্তবিকশিত করে জানলা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন !! ঠিক ই ধরেছ ... রাত তখন ২ টো , অজানা স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর সাথে সাথেই মুক্ত বায়ু সেবন করতে আমার সাথি প্ল্যাটফর্মে নেমেছিল ... তারপরের ঘটনা জলের মতো পরিষ্কার । এই ভাবে স্টেশনে নামার অভ্যাস আগের মতই আছে , এখন কন্যা-ও সঙ্গ দেয়। কি কাণ্ড বলো দেখি !!!
সেবার আরাকুভ্যালী তে  বোরাকেভ্স আমার দেখা হয়নি.... ।পাহাড়ি পথে ‌motion sickness খুব ই common ঘটনা। গুহার বাইরে জলের বোতল আর বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে আমার দিকে করুণ চোখে চেয়ে প্রমাদ গুনতে হয়েছে আমার সাথিকে। ফেরার পথে coffee plantation দেখিয়ে আমাদের বাস নিয়ে এলো টাইডা অরণ্য ভূমিতে। সেখানে বিকেলের চা ও জলখাবার খেয়ে আবার হোটেলে ফেরার কথা। তখন আমার শরীর একটু ভালোর দিকে , অল্প কিছু খাবার খাব বলে সবে খাবারের প্লেট নিয়ে বসার জায়গায় বসতে না বসতেই আমার হাতের প্লেটের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল... কিছু বোঝার আগেই একটা হৈচৈ শুনলাম ... হতবাক আমি অনুধাবন করলাম ... একটা গোদা বাঁদর গাছের ডাল বেয়ে ঝুলতে ঝুলতে এসে আমার প্লেট নিয়ে অন্য গাছের ডাল ধরে চম্পট দিয়েছে। বিপদ মুক্ত হয়ে তখন মজা ই লাগল। সে যাত্রায় হোটেলে ফিরে ই খাবার খেলাম।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র
বেড়াতে গিয়ে মজারু (১)

বেড়াতে গিয়ে কিছু না কিছু স্মরনীয় ও মজার ঘটনা সবার ই ঘটে , নতুন কিছু নয়। তবে সেই সব মজার রসদ পরবর্তী কালে গল্পের মজলিসে আলাদা মাত্রা এনে দেয়। বেড়াতে যাওয়ার একটা ভীতি আমার ছিলো , কিন্তু মায়ের মতই যে বেড়ানোর পোকা মনে ঘাপটি মেরে বসেছিল ... সেটা বুঝলাম অনেক পরে। আমার প্রথম পুরী ভ্রমণ বিয়ের পরে। ভুবনেশ্বরে স্টেশনে নেমে একটু ঘাবড়ে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া  নতুন সাথীকে  দীর্ঘ দিনের অভ্যাস বশে' মা ' সম্বোধনে  ডেকে ফেলে .... এই রে !!!! বলে সামলে নিয়ে ছিলাম। সে যাত্রায় সে শুনতে পায়নি.... ভাগ্যিস !!!!
প্রথম যেবার মুর্শিদাবাদ গিয়েছিলাম ... এক দারুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছিলাম । সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে ট্রেনে চেপে র‌ওনা দিয়ে , রাত সাড়ে দশটা নাগাদ স্টেশনে নেমে বেশ রোমাঞ্চিত হলাম ... কারণ হোটেল মঞ্জুসা থেকে আমাদের নিতে এসেছে প্রদীপ মালাকার সাথে তার সঙ্গী ফূর্তি। একটু অবাক হচ্ছো তো !!! ফূর্তি আসলে মহিলা ঘোড়া । হ্যাঁ অনেকটা যেন সেই পুরনো বাংলা ছায়াছবি ' কুহেলি ' এর রায়কুঠির ডেরাইভার রতন । স্টেশনে নামলাম যখন , তখন অন্ধকার ... Power cut চলছে। কলকাতায় তখন গরম , কিন্তু মুর্শিদাবাদ এ তখন মার্চের প্রথম সপ্তাহে হাল্কা ঠাণ্ডা। আমরা এগিয়ে গেলাম আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দেওয়া প্রদীপের সাথে , তার টাঙ্গার দিকে। একফোঁটা বাড়িয়ে বলছি না .... চাঁদের আলোয় বৈদ্যুতিক আলোর অনুপস্থিতিতে যেন নবাবী আমলে চলে গিয়েছিলাম। একটু ও ভয় নয়.... অদ্ভুত ভালোলাগায় মন ভরে গিয়েছিল আমাদের। একসময় হাজার দুয়ারী ও দৃশ্য পটে এলো... বিদ্যুৎ ও যেন আবার ফিরে এসে আমাদের ফিরিয়ে আনলো বর্তমানে। এই অভিজ্ঞতা চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
মুর্শিদাবাদ এ এরপর আবারও গিয়েছি। সেবার সাথে আমাদের নতুন ভ্রমণ সঙ্গী , আমার কন্যা। সে তখন হাঁটতে শিখেছে। আর আরো এক বন্ধু দম্পতি । সকালে ট্রেন কলকাতা স্টেশন থেকে র‌ওনা দিয়ে দুপুরে পৌঁছে... এবার ও টাঙ্গা করে হোটেল ' সাগ্নিক ' এর দিকে রওনা দিলাম। দিয়েই বিপত্তি। আমি কন্যা ও বান্ধবী সহ সামনে বসেছি আর আমাদের ব্যাগপত্র ও সামনে ও পিছনে রেখে দুই বন্ধু পিছনে গদিয়মান হয়ে সবে সত্য দা সিগারেট ধরিয়ে সুখটান দিতে গিয়ে ই অনুধাবন করল এবং আমরা ও দেখলাম ওজনের বহরে ঘোড়া বিদ্রোহী হয়ে হাত পা আকাশ পানে তুলে দিয়েছে.... ফলে পিছনের দুই আরোহী যাকে বলে পপাত ধরণী তলে.....সত্য দার অভিব্যক্তি দেখার মতো ছিল .... ধরণী পরে বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ... " এটা কি হলো ? " কি যে হলো !! তা কি ছাই না বুঝেছি ? কিন্তু তখন তো রাস্তায় লোক জড়ো, টাঙ্গা চালক লজ্জিত আর আমার বান্ধবী মঞ্জুশ্রী অনেক কষ্টে হাসি চেপে ....আহা রে , পড়ে গেলে !!!"...বলার চেষ্টা করছে।আমি ওসব চেষ্টা না করে ভয়ানক হাসছি আর একজন কটমট করে প্রায় ভষ্ম ই করে দিচ্ছে !!!
এমন আরো যে কতো কতো ঘটনায় ঝুলি ভরে ওঠে .... বলে শেষ করা যায় না.... আজ এ ওবধি ই নয় থাক। আবার কখনো ঝুলি থেকে ম্যাও কে বের করবো।
@ শুচিস্মিতা ভদ্র

Thursday, 19 September 2019

                                   ডিম ডেভিল
                                         

* মুরগির ডিম সুসিদ্ধ করে নিতে হবে।
* এবার পরিমাণ মতো আলু সেদ্ধ করে , smashed করে ওর মধ্যে পরিমাণ মতো নুন , চিনি ,  আদা বাটা , হাল্কা করে ভাজা পেঁয়াজ কুচি , শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো , গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে হাত দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে।
* এবার কড়াইতে সাদা তেল দিয়ে তাতে মশলা মাখা আলু ভালো করে কষাতে হবে। মিশ্রণটা মাঝারি ধরনের শুকনো হবে। 
* একটা সেদ্ধ ডিম ২/৪ টুকরো করে কেটে নিয়ে , এক একটা টুকরো ওই আলুর মিশ্রণকে মাখিয়ে ডিমের ডেভিলের আকারে গড়ে নিতে হবে।
* এবারে ওই ডেভিল গুলো ডিমে চুবিয়ে নিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে ডুবো তেলে ফ্রাই করতে হবে । 
* ডিমের ডেভিল তৈরি ......... ।।

Sunday, 21 July 2019

এখনকার ছোটবেলা টা কেমন যেন একটু বড়বেলার ই মতন। তার দায় কে নেবে ? নিশ্চয়ই এ দায় আমাদের , পরিবেশের, পরিস্থিতির..... নয় কি ?
এখনকার ছোটোরা অনেক পরিণত । তাদের বুদ্ধি অনেক তুখোড়.... আর তাই বোঝা র বোঝা ওদের বেশ বেশি। নিজের কাজের সুবিধার্থে আমরা তাদের হাতে ধরাচ্ছি Tab , mobile ... এমন সাতসতেরো জিনিস। এবার সেই জিনিস গ্রাস করছে তার সারল্য , শৈশব ।আর আগেও বলেছি, ওরা থাকে আমাদের ঘিরে।আর আমরা তো সব সময় সতর্ক ভাবে আলাপ আলোচনা করি না। অনেক সময় মনে করি ওরা সব বোঝে না অথচ আসলে সে তখন না বোঝা বিষয় টা তার মতো করে বুঝে বসে আছে।সে যে শিশু , তার বোঝা সঠিক না ই হতে পারে ।আর আমরা এ ও জানি যে অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী ।তাই পরিণত আর অপরিণতর মাঝে ঘুরতে ঘুরতে সে না থাকছে শিশু, না হচ্ছে প্রকৃত বড়ো। এমন সব কথা বলছে ... বাড়ির লোক এর কপালে ভাঁজ পড়ছে , পরিচিত অনেকেই অলক্ষ্যে বলছে .... " ইশ্ কি পাকা দেখো !!!
ইদানিং আমার ৭ বছরের কন্যার ও তার বন্ধুদের স্কুলের নানা ধরনের মজার মজার ঘটনা শুনি। বিষয় গুলো বেশ পাকামো ভরা। আমরা মা , বাবা রা ও নিয়ে আলোচনা ও করি , চিন্তা ও করি। যেমন ইদানিং এরা সব কে কাকে অথবা কাকে কাকে বিয়ে করবে ... এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। যে শুনছে চোখ গোল করছে... Infact খানিকটা কানে আসার পর আমি ও চোখ কপালে তুলে ভাবতে বসেছিলাম... যে কাঁদব না রাগবো না হাসবো। Ultimately হাসি ই পেলো। কারণ আমার এক school teacher বান্ধবী সব শুনে একবাক্যে ই উড়িয়ে দিলো বিষয়টি। ওর বক্তব্য ওদের স্কুলে র ওই বয়সের বাচ্চারা ও সবাই কম বেশি ঘটকালি নিয়ে মেতে আছে। এটা বোধহয় যুগের ধর্ম।
একসময় আমার কন্যার স্কুলের student দের চিরকালের পাকামো র কথা ও কেউ কেউ বলেছেন। Infact ওমন অভিজ্ঞতা আমার ও আছে। আমি তখন class III /IV , আমাদের কুদঘাটের বাড়ির একতলায় ভাড়া থাকতো বাবাই রা। ও South point এ পড়তো, আমার থেকে নীচু ক্লাসে ।ওর সাথে মাঝে মাঝে খেলতে যেতাম.... একবার চুপি চুপি আমায় বলেছিল " শিল্পী আমার বউ " । খুব রেগে গিয়েছিলাম, তারপর আর বাবাই এর সাথে খেলতাম না। তো এ হলো গিয়ে সেই যুগের কথা। সেই একই ধারায় সব চলছে.... । এখন আরো বেশি করে। আমার কন্যার তো বিয়ে ঠিক (?) , বিয়ের হল ভাড়া ও নাকি কে করবে সেটা ঠিক। আবার পুপের এক বন্ধুর ভাই আবার তার দাদার ক্লাসের দুই দিদিকে বৌদি হতে বলছে.....বাপ্ রে বাপ্।
কিন্তু বিষয়টা নিয়ে একটু তলিয়ে ভাবলে , দেখা যাবে ওদের কাছে বিয়ের মানে খুব simple ।বিয়ে মানে সবার প্রথম হলো.... পড়াশুনা লাটে তুলে রাখা র অনুষ্ঠান। আর অনেকের সাথে অনেক অনেক খেলা, অনেক অনেক মজা.... ওরা সবাই যে basically বড়ো একা, খেলার সাথী নেই। আর খাওয়া দাওয়া (অনেকেই খেতে ভালোবাসে), সাজগোজ ( মেয়েদের তো অনেকেই সাজুনী)এ নিয়ে complete package। এ তো ছোটোদের ভালো না লেগে পারে ? কাজেই নিজেরাই সব planning করতে শুরু করছে। আমরা ও ছোটবেলাতে পুতুলের বিয়ে দিতাম। আমার তো ছেলে, মেয়ে, বৌমা, দুই নাতনি নিয়ে পুতুলের ভরা সংসার ও ছিল। এরা নিজেদের কে নিয়ে ই খেলছে। আসলে পাকামো করলে ও আসল পাকামো করতে এখনো কিছু বাকি আছে বৈকি। খুব বাকি নেই বুঝি।
আর সেসব ও আশা রাখি বুঝতে পারব .......