এক এক জগতের এক এক ধরন ধারণ । হাসপাতাল বলো কায়দা করে নার্সিং হোম ( বেসরকারি হাসপাতাল) বলো সে জগতের সাথে পরিচয় আমার দু ভাবেই বেশ পাকাপোক্ত। বৈবাহিক সূত্রে এ সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগে ভাগেই মা কে নিয়ে চিকিৎসালয়ে যাতায়াতের হাতেখড়ি হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি এলেন .... তখন তিনি ছাত্র। শিশুমঙ্গলের আবাসিক। DNB পাঠরত। ছাত্রাবাস থেকে সপ্তাহান্তে আসতেন , বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহরে তা দিতাম । মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে বিখ্যাত গান বাজতে থাকত। একদম appropriate গান ... এসো এসো এসো প্রিয়, এসো আমার ঘরে ... 😃
এরপর গঙ্গা য় অনেক জল বয়ে গেল ... দূর থেকে নার্সিং হোম কে দেখতে দেখতে পুপের আগমনের মাস দুয়েক আগে এক সমস্যা র জন্য observation এ গেলাম। একদিন শুয়ে , বসে লেজ নাড়িয়ে চলে এলাম । পরের বার তো পুপে দেবীর আগমন উপলক্ষ্যে হাজিরা ... বিস্তারিত জ্ঞান বোঝাই হয়ে ছানা কোলে ঘরে ফিরলাম। নার্সিং হোম এর ধরন দেখার মতন শরীর ও মন তখন নেই। ঘুম পূরণ হতে না হতেই কখনো গোলাপী তো কখনো সবুজ তো কখনো নীল পোঁটলা করে পুপেকে আমার কাছে দিয়ে যেতো নার্সারি র সিস্টার। বিকেল থেকে সবাই আসতেন দেখতে ... বেশ দর্শনীয় ব্যাপার তখন !!!
নার্সিং হোম এর সাথে ভাল করে পরিচয় হল ... পুপের ডেঙ্গু, ভাইরাল ফিভার সহ আমার ও পুপের food poisoning এর সুবাদে।
আমার গল্প আগের , পুপের food poisoning এর গল্প একদম garden fresh টাটকা ...
জ্বর সাধারণ হোক কি অসাধারণ হোক ছোট্ট পুপে তাকে বেশ ঘোরালো করেই ছাড়ত ... চিকিৎসকের মেয়ে বলে কথা !!! বাবাকে একটু বাজিয়ে দেখবে না ?
খাবার সহ জল না খেয়ে জ্বর উপোসী হতো , ফলে হৈ চৈ পড়ে যেত ঘরে বাইরে । এদিক সেদিক থেকে মা কতটা বেকার ( খাওয়াতে পারে না ) শুনে নিয়ে আর নজর লাগার অযৌক্তিক থিয়োরি শুনতে শুনতে চুলে পাক ধরাতে লাগলাম।
পুপে খানিক বুঝদার হওয়ার পর আমাদের কর্তা গিন্নীর ভয় কাটল। এ বছর মাঝে পালা করে আমরা দুজন আলাদা আলাদা কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হলাম, ভর্তি হলাম।
পুপেই বা বাদ থাকে কেন ? আবার মা কাঠগড়ায় !!! টিফিন কেন টকে গেল ? এক মক্কেল দেখা করতে এসে কন্যার বাবাকে রান্না থুড়ি টিফিনের ব্যপারটা দেখতে বলে গেল। সত্যি দায়িত্ব টা hand over হলে তাকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাব sure। কিন্তু সে গুড়ে বালি !!
গরমে টকে যাওয়া টিফিন খেয়ে পুপে ধরাশায়ী। কেন খেলি ? উত্তরে বাবা কাঠগড়ায়। বাবার ভয়ে !!!!
কখন বলেছি এমন যে নষ্ট খাবার ফেলা যাবে না ??? এমন বাধ্যতা দেখে আপামর জনতা মুগ্ধ। কি বাধ্য মেয়ে গো তোমার !!! তাই বটে 🤣🤣🤣
বাধ্য পুপে এবারে শরীর খারাপ হতেই লিটার দুয়েক ORS খেয়ে ভর্তি হয়ে গেল , সাথে রইলাম আমি। চ্যানেল, ড্রিপ, injectable antibiotic সব চালু হল। উপযোগী খাবার ওবধি বাধ্য না করতেই খেয়ে বাধ্য মেয়ের তকমাটা বেশ খোলতাই করে ফেলল । পুরাতন সিস্টার দিদিরা অবাক। আমি নির্বাক।
রাতে , সকালে , দুপুরে সিস্টার দিদি দের তোয়াজে মেয়ে তখন আকাশে। দু কান জুড়িয়ে গেল গো ... ভদ্র স্যারের মেয়ে , বোন কি বাধ্য আর শান্ত। কোন সিস্টার দিদি হাতে ষাট ষাট করে injection push করেছে , সে কথা ষাটের বেশি বার শুনে ফেলেছি ঘরে ফিরে।
রাতে আর সকালে যেন স্টেশন চত্বরের ব্যস্ততা করিডোর জুড়ে। কর্তব্যরত চিকিৎসক গণ তখন তাদের জন্য নির্ধারিত ঘরে অবস্থান করে। করিডোরে কাজের ফাঁকে গল্প আড্ডা য় মনের আগল তখন তাদের ( সিস্টার)খোলা ... ঘুমের আগে ও ফাঁক গলে ওদের রাতের মজলিসের ( অবশ্যই কাজের মধ্যে র ) টুকরো হাসি টুকরো কথা শুনেছি প্রতিবার । কখনো খেয়ালে তো কখনো বেখেয়ালে।
ওখানে ভোর হয় অনেক আগে , রুগী ঘুমের দেশে তারা নিরলশ কাজের মাঝে ... সব নিয়মের ঘেরাটোপ বন্দী ।
ফেরার আগে এক সিস্টার বলে গেল পুপেকে , বিকেলের খাবার খেয়ে যাবি কিন্তু। চা খেলাম। টা খেলাম। ঘর তখন হাতছানি দিচ্ছে। ফিরলাম। পুপে সব সময় বাধ্যতা বজায় রাখুক। সত্যি সত্যিই বাধ্যতা ভরে উঠুক ....
No comments:
Post a Comment