Monday, 26 March 2018

প্রতিবাদ
                                                                      শুচিস্মিতা ভদ্র
"এখন ঘোর ভাঙেনি তোর যে, মেলেনি তোর আঁখি"- অনেক দিন পর গানটা FMএ শুনে তন্ময় হয়ে গেছিল  লালিমা। বাবার বড়ই প্রিয় গান ছিল এটা।সকালে ছোট্ট লালিমাকে ঘুম থেকে জাগানোর পর আধো ঘুমন্ত , আধো জাগন্ত লালিমাকে প্রায় ই কোলে নিয়ে মজা করে ভরাট ও দরাজ গলায় গানটা গেয়ে উঠতেন শীর্ষেন্দু।বাবা আজ নেই, প্রায় বছর ঘুরতে চলল।সময় নদী যে কখন বয়ে গেল ? লালিমা টেরই পেল না।এতগুলো দিন যে কি ভাবে কেটে গেল বাবাকে ছাড়াই , ভাবলে লালিমা, বাবার আদরের লালি  অবাক হয়ে যায় !  অথচ এটাই সত্য।দিন চলে যায়, হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন স্মৃতির মাঝে থেকে যায়।তাঁকে ছোঁয়া যায় না, আর কাছে পাওয়া-ও যায় না।কিন্তু প্রতি মুহূর্তে সে যেন সন্তানের মধ্যেই নিজের ছাপ রেখে যায়।মা, লালিমাকে চিরকাল বাপসোহাগী বলতেন ।তিনি এখনও লালির কথায়, কাজে নিজের বড় প্রিয় মানুষটার প্রতিরূপ দেখতে পান।
গানটা শেষ হবার প্রায় সাথে সাথেই কলিংবেলের যান্ত্রিক শব্দে লালিমার ঘোর সত্যিই ভেঙে যায়।দরজা খুলে দেখে রূপ কে নিয়ে তার বাবা প্রান্তর  ফিরেছে।রূপ এখন সবে পাঁচ বছরে পা দিয়েছে।
রাতে রূপকে ঘুম পাড়িয়ে যখন লালিমা স্মার্ট ফোন হাতে নিল, তখনও প্রান্তর শুতে আসেনি। রাতে একটু খবরের কাগজে চোখ বোলায় সে।এ তার বহু বছরের অভ্যাস। ড্রইংরুমের সোফায় বসে খবরের কাগজের সব  খুঁটিয়ে পড়াকে যোগ্য সঙ্গত করে, টেলিভিশনে চলতে থাকা কোন না কোন sports channel ।এ নিয়ে আগে লালিমার সাথে বচসা চলত।লালিমার বক্তব্য হলো, যে কোন একটা বিষয়ে মনোনিবেশ করো না কেন? কিন্তু এটাই যে তার ক্লান্তি মুক্তির একমাত্র উপায়, তা বোঝার পর লালিমা আর এ নিয়ে কিছু বলে না।
স্মার্ট ফোনের যুগে বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয়।লালিমা, আজ অনেকক্ষণ ধরে তার বাবার প্রিয় গান গুলো খুঁজে বের করে online এ শোনার চেষ্টা করছিল।বিকেলে FM এ গানটা শোনার পর থেকে বাবাকে যেন খুব বেশি করে মনে পড়ছে।গানগুলো শুনতে শুনতে, কখন নিজের অজান্তেই চোখের জলে মাথার বালিশ ভিজে যাচ্ছিল খেয়াল ই , করেনি।হঠাৎ কপালে হালকা হাতের আলতো ছোঁয়ায় তাকিয়ে সে প্রান্তর কে দেখতে পায়।
"কি হয়েছে লালি ? বাবার কথা মনে পড়ছে ?"-প্র্রান্তরে প্রশ্নে লালিমা তাকে আঁকড়ে ধরে, সম্মতি জানায় মাথা নাড়িয়ে।
 রবিবার ছাড়া প্রতি সকালেই লালিমার ব্যস্ততা চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে। চা, জলখাবার, রূপকে ঘুম থেকে তুলে স্কুলের জন্য তৈরি করা, প্রান্তর আর তার নিজের টিফিন তৈরি করা ইত্যাদি ইত্যাদি। বাবা আর ছেলে ঝড় তুলে বেরিয়ে গেলে আধাঘন্টা একটু কাজের ছুটি মেলে।এই সময় সে একটু খবরের কাগজে চোখ বোলায়। এরপর রান্নার দিদি এসে গেলে তাকে সব বুঝিয়ে , নিজেকে ও বেরনোর জন্য প্রস্তুত হতে হয়।সে আজ বছর সাতেক একটা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা।
আজ খবরের কাগজের দু দুটো খবরে মনটা সকাল সকাল খারাপ হয়ে গেল।কাগজটা ভাঁজ করে সরিয়ে রাখল লালিমা। কিন্তু খারাপ খবরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও , আদৌ কি তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় ?
একটা ঘটনা, রাজস্থানের কোন এক বাজারে বোমা বিস্ফোরণে শতাধিক প্রাণহানি, জনা তিরিশ আহত, পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিস্ফোরণের কারন অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে। বিস্ফোরণের কারন কোন জঙ্গি সংগঠন এখনও স্বীকার করেনি। দ্বিতীয় ঘটনা র স্থান, আমাদের ই শহর, কলকাতা।শিশু কন্যার ওপর পাশবিক অত্যাচার। এই সাতবছরের শিশুটি মানসিক ভারসাম্যহীন।
এ কোন যুগে আমরা বসবাস করছি ? হিংসা, ধর্ষণ, খুন ..... অপরাধ প্রবণতা দিন দিন আরো বেড়ে যাচ্ছে। সকলেরই মনে নানা অসন্তোষ, তার  পরিনতি ই কি অবক্ষয়মূখী করে তুলেছে সকলকে ? লালিমার মতো করে এমন কথা প্রতি নিয়ত আমাদের মনে তোলপাড় হয়,  কিন্তু এর উত্তর কার কাছে ????
"লালিমা দি আজকের কাগজ পড়েছে ?"-রীমিকার  প্রশ্নে, খাতা দেখা না থামিয়ে,  লালিমা বলে-"হ্যাঁ রে, দুটো খবর ই দেখলাম সকালে, কাল হয়তো টেলিভিশনে দেখিয়েছে, আমার দেখা হয়নি।"
রীমিকা বলে-"এতো মানুষ মেরে কার কি লাভ হচ্ছে, প্রতিবাদ হচ্ছে বলো দেখি ? আর অন্য খবরটা তে যে victim তার কথা ভাবো, এরা সব মানুষ ????"
লালিমা মাথা নাড়ে, বলে-"কি সব যে হচ্ছে চারদিকে, ভালো লাগে না।তোর মেয়ে এবার IV এ উঠল না রে ?"রীমিকার সম্মতিতে লালিমা বলে -" সাবধানে রাখিস।"
"সে তো নজরে রাখি-ই , কিন্তু সর্ষের মধ্যেই তো ভূত লালিমা দি, তুমি নিশ্চিন্ত, তোমার তো ছেলে।"
"না রে ছোটছেলে রাও victim হয়, তবে বলতে পারিস বড়ো হয়ে গেলে অনেকটা নিশ্চিন্ত, আমাদের তো আজীবন সতর্কতার বর্ম পরে ঘুরতে হবে।এই আমরা কি ঘরে, বাইরে নানাবিধ অপ্রীতিকর ঘটনার থেকে রেহাই পেয়েছি বল ? আমাদের অনেকেরই তো বয়স নেহাত কম নয়।"
হঠাৎ ওদের আলোচনায় এসে যোগ দেন, অঙ্কের বয়োজ্যেষ্ঠ,  পুরূষতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন নিবারণ দা, বলেন -" তোমাদের চিনি, জানি, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা ও দোষী, সে যাই বলো। আজকাল মেয়েদের হাবভাব, পোশাক পরিচ্ছদ এসবের জন্য অনেকখানি দায়ী।" নিবারণদার কথা শেষ হতে না হতেই ভূগোল এর ঋতুপর্ণা চীৎকার করে ওঠে-" নিবারণদার দা, কে কিভাবে নিজেকে project করবে, সেটা তার personal ব্যাপার।তার মানেই কি সে commodity ?তার সাথে যা ইচ্ছা করার  অধিকার জন্মে যায় ? আর কালকের ঘটনাতে কাকে দায়ী করবেন ? অসহায় একটা শিশু তা ও আবার মানসিক ভারসাম্যহীন - সে কি ভাবে দায়ী ?
                         হঠাৎ দেখা যায়, সাম্প্রতিক কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ও সেই ঘটনা গুলো কে কেন্দ্র করে যে সব হিংসাত্মক কার্যাবলি ঘটছে, এছাড়া ও সারা দেশের বর্তমান নানা হিংসাত্মক ঘটনা গুলো নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ দুটো দল তৈরি হয়ে teachers' room এ একটা জোরালো বাদানুবাদ শুরু হয়।আসলে সবে Annual Exam শেষ হয়েছে, তাই এখন ছাত্রছাত্রীদের ছুটি। টিচারদের ছুটি নেই, খাতা দেখা, result out করার নির্ধারিত দিনের আগের মধ্যে report card তৈরি এসব নিয়েই এখন হাল্কা ব্যস্ততা।
                     হঠাৎ হেডমিসট্রেস  অনুভাদি ,দরজা ঠেলে teachers' roomএ ঢোকেন।ওনার কাছে এই তর্কবিতর্কের খবর পৌঁছে গেছে অফিসের পিয়ন নন্দের এর মাধ্যমে। নন্দ সব দিকেই আছে।এদিকের খবর ওদিক, ওদিকের খবর এদিক করার জন্য বেশ প্রসিদ্ধ।শিক্ষক, শিক্ষিকা রা যে কোন বিষয় আলোচনার আগে খুব সাবধানে কথা বলে, কিন্তু আজকের আলোচনায়, বিবদমান দুই গোষ্ঠীর কেউই খেয়াল করেনি ! যথারীতি এই আলোচনার খবর পাওয়ার কিছু পরেই স্বয়ং অনুভাদি মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছেন।
        "আপনারা কি শুরু করেছেন বলুন তো ? খারাপ ঘটনা গুলো নিয়ে teacher's room এ ঝড় না তুলে,  কিছু তো করার কথা ভাবতে পারেন !! আমাদের সবার যৌথ ভাবনায় ভালো কিছু হতে ও তো পারে। আমরা তো সকলেই ভবিষ্যতের নাগরিক গড়ার কারিগর।সেই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েই তো এই কর্ম বেছে নিয়েছি।হ্যাঁ অবশ্যই এ আমাদের রুজি রূটির মাধ্যম।কিন্তু আমরা এসবের প্রতিবাদ তো করতেই পারি, এমন মেজাজ না হারিয়ে।আর প্রতিবাদের ভাষার হিংসাত্মক হওয়ার কোন দরকার আছে কি ? আপনারা কি বলেন? "

লালিমা আর ঋতুপর্ণা সমস্বরে বলে ওঠে "কি ভাবে প্রতিবাদ করব দিদি ? What's app এ ছবি সরিয়ে, না মোমবাতি মিছিল করে ? লাভ হবে এভাবে? " অনুভাদি স্মিত হাসি ছড়িয়ে বললেন -" তন্ময় , তুমি তো ইতিহাসের ছাত্র।তুমি ই এর উত্তর দাও।ঘৃণ্য কাজের প্রতি সরব হওয়ার মাধ্যমটা  বড় কথা নয়, বড় কথা হল সরব হওয়াটা।প্রতিবাদের ভাষা যুগে যুগে একই।প্রকাশ ভঙ্গি পৃথক।না হলে,  স্বাধীনতা সংগ্রামে বিদ্রোহী কবি নজরুলের কারাবাস হোতো না।সক্রিয় সংগ্রামে অংশ না নিয়ে ও অনেক কবি, লেখক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।এর নজির তো ফরাসি বিপ্লবের সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে।"
তন্ময়,  সম্মতি জানায় অনুভাদির কথায-"ঠিক বলেছেন দিদি,  সারা বিশ্বের বিপ্লবের ইতিহাস তো তাই বলে।" অনুভাদি বলেন -" একদমই তাই। আর লালিমা আর ঋতুপর্ণা আপনাদের দুজনকেই বলছি what's app এ ছবি সরানো ও একটা প্রতিবাদ।আমরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সামনের বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তো  বর্তমানের এই সব হিংসাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাটক বা নৃত্য/গীতি আলেখ্য করতে পারি। এবছর এখনও পর্যন্ত এনিয়ে কোনো আলোচনা , সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।প্রতিবারের মত এবারও rest out হওয়ার পর ই হবে আলোচনা।এবছর এ ধরনের কিছু করা যায় কিনা দেখুন না !!! কি বিপাশা তুমি কি বলো ? আমাদের ছাত্রছাত্রীরা  পারবে না ?
 বিপাশা স্কুলের cultural committee এর সদস্য,  সে এগিয়ে আসে,  " দিদি ঠিক বলেছেন, এটাই হোক এ বছর আমাদের স্কুলের তরফে ছোট্ট শুরু।এই মঞ্চ ই হয়ে উঠুক আমাদের প্রতিবাদের মঞ্চ। " খুব উৎসাহিত হয়ে পড়ে বিপাশা।যার প্রকাশ ঘটে তার কথায়।অনুভাদি বিপাশাকে আরো উৎসাহিত করেন -" এই তো চাই বিপাশা।   আমরা সবাই মিলে প্রতিবারের মত এবারও খুব সুন্দর একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব। আপনাদের আলোচনা আমাকে বিষয় নির্বাচন করতে সাহায্য করলো, কি বলেন ?"
                   লালিমা,  বাড়ি ফিরে,  রাতে খাবার টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়ার পর প্রান্তরকে স্কুলের আলোচনার আদ্যোপান্ত শোনায়।প্রান্তর খুবই উৎসাহ দেয়।লালিমার গতকালের ভারাক্রান্ত  মনটা যেন একটু উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, বলে-" জানো প্রান্তর, বাবাদের অফিসের 9/10 জনের একটা ছোট দল ছিল। বাবা বলতেন "অণু দল"।বাবা ই নাম দিয়েছিলেন  " ভাষা"।একটা সময় "ভাষা" নানাধরনের পারিবারিক, সামাজিক, বিশ্বজনীন সমস্যা নিয়ে পথটা করত ।"
এবার প্রান্তরের   অবাক হবার পালা-" তাই নাকি ? দারুন তো ! বলনি তো কখনো !!!" লালিমার দৃষ্টি অতীতের মাঝে হারিয়ে যায়, বলে-" আসলে সে সব আমার ছোট বেলার কথা, ওই সব নাটকের ছোটখাট মহিলা র চরিত্র যখন থাকত তখন "ভাষা"র কোন না কোন সদস্যের সহধর্মিণী বা বোন বা মেয়ে সমস্যার সমাধান করে দিত।মা ও এক দুবার অভিনয় করেছেন।"প্রান্তর কপট রাগ দেখায় -" আর কি কি লুকিয়ে রেখেছ বলো তো ঝুলিতে ??"
লালিমা একটু হাসে, প্রান্তরের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলে-" কিন্তু শেষ পর্যন্ত "ভাষা"  বন্ধ হয়ে যায়। আসলে কয়েকজন বদলী হয়ে যান, আর প্রকাশ জেঠা হঠাৎ ই মারা যান। উনি রাস্তা য় নাটক করার অনুমতি পত্র জোগাড় করতেন, ওনার সাথে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির পরিচয় ছিল।নাটকের script কিছুটা বাবা , বাকিটা লিখতেন রমেশ কাকু। সে সব বাদ দাও, আসলে পরবর্তী কালে কাজের চাপ বাড়ে, সাংসারিক না না দায়িত্ব বাড়ে সকলের ই। প্রাথমিক উত্তেজনা , উৎসাহে ভাটা পড়ে,  সব মিলিয়ে "ভাষা" থেমে যায়।তবে সে সময় বাবা খুব upset হয়ে পড়েছিলেন।পরে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। মায়ের কাছে হয়তো এখনো "ভাষা"র পথনাটিকার ছবি, script কিছু থাকলেও থাকতে পারে। এবার যেদিন যাব, বলব মাকে।"
"আচ্ছা,  বাবা, ওই পথ নাটিকাতে গানের ব্যবহার করতেন ?"-প্রান্তরের প্রশ্নে লালিমা বলে -" হ্যাঁ,  বাবার গানের প্রতি আকর্ষণ তো তুমি জানো ই, আর কি সুন্দর যে গাইতেন। নাটকের বিষয় অনুযায়ী গান নির্বাচন করতেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুল গীতি ই বাবার পছন্দের শীর্ষে থাকত সবসময়। অন্য গান ও যে নেওয়া হোতো না , এমন নয়।আসলে ছোটবেলার কথা অত মনে নেই, তবে বাবা  বলতেন অনেক কিছু, আমি বড় হবার পর।" একটু থেমে লালিমা বলে-" আমার তো বাবার হাত ধরেই গান শেখা।গানকে ভালোবাসা।"-লালিমার চোখ ছলছলিয়ে ওঠে।
"লালি, এতো সুন্দর তোমার গানের গলা ! বাবা চলে যাওয়ার পর তুমি কেন গান করা বন্ধ করে দিলে ? এটা ঠিক নয় লালি।আমি বলছি, আবার শুরু করো।"
"ঠিকই বলেছ।আজ অনুভাদির কথায় খুব উৎসাহ পেলাম। বাবা চলে যাওয়ার পর গান করতে বড়ো কষ্ট হয় গো, অনেক কথা মনে পড়ে যায়।"--লালিমার গলা বুজে আসে।
প্রান্তর,  লালিমার হাত নিজের হাতের ভেতর নিয়ে অল্প চাপ দেয়, বলে-"বাবা যেটা তোমায়  দুহাত উজাড় করে দিয়ে গেছেন, তা অবহেলা কোরো না।তুমি এগিয়ে যাও লালি।আমরা সকলেই আছি তোমার সাথে।আর মনে রেখো প্রতিবাদ মানে ই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, রক্তপাত নয়। শিল্পী মনের প্রতিবাদের ভাষা ভিন্ন হবে।তাই তো শিল্পী মন সবার থেকে স্বতন্ত্র।কিন্তু এভাবে ই সব অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠতে  হবে।ফলের আশা করে ই প্রতিবাদ করে যেতে হবে।প্রত্যাশিত ফল না পেলে ও প্রতিবাদ থামালে চলবে না।"
"আর এভাবে এই প্রতিবাদের ভাষা সবার মাঝে ছড়িয়ে যাবে।রূপকে ও এই আদর্শে আমরা মানুষ করব। গুরুজনকে সন্মান করার সাথে সাথে মেয়েদের সন্মান করার শিক্ষা দেবো।সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করব অন্তত......" লালিমার  কথার বলিষ্ঠ প্রকাশ ভঙ্গি প্রান্তরের দৃষ্টি এড়ায় না। সে ও লালিমাকে সব রকমের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয় মনে মনে।




No comments:

Post a Comment