Thursday, 30 May 2024

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৬

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৬

গ্যাংটক থেকে আমরা চললাম রাবাংলার দিকে। কর্তামশাই যদিও সিকিমে বেশ কয়েকবার এসেছেন কিন্তু তিনি সিকিমের একই জায়গা গুলোর মধ্যেই গোল গোল ঘুরেছেন নানান ক্ষেত্রের বন্ধুদের সাথে । তেনার সাথের এত বছরের অভিজ্ঞতার রেশ ধরে বলতে পারি বিস্তর গাইড সদৃশ ভাবমূর্তির উপস্থাপনা করেই আর নতুন কিছু তার দেখা হয়ে ওঠেনি সেই সব ভ্রমণে । রাবাংলা আমাদের দুজনার কাছেই অচেনা ও অদেখা। পথ চললাম দুপাশের পাহাড়ী জনপদ, পাহাড়ী সৌন্দর্য আর নির্বাচনের নিদর্শন দেখতে দেখতে । বেলা গড়িয়ে বিকেল হল । রাবাংলার পথে শুনেছিলাম পড়বে বিখ্যাত টেমি চা বাগান। কথা ছিল আমরা সেখান ঘুরে নিয়েই রাবাংলার হোটেলের দিকে রওনা দেব। সেই মতন পথের দুপাশের চা বাগানের শোভা দেখতে দেখতে মুগ্ধতার রেশ কাটাতে না কাটাতেই আমাদের বাহন চালক বিজয় ভাইয়া একখান মোড় ঘুরে প্রসস্ত রাস্তার এক পাশে গাড়ি পার্ক করলেন। নামতে নামতেই পথের বিপরীতে একই সাথে  দেখতে পেলাম বড় করে লেখা ও পাহাড়ী ধাপে ধাপে নেমে আসা দুটিপাতা, একটি কুড়ি সমৃদ্ধ রাশি রাশি চা গাছ। ইদানিং সব কিছুতেই ভালবাসা জাহির করার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে , তাই হয়তো আসল ভালবাসা কম পড়িয়াছে 🤫 । প্রকৃতি প্রেমীকে , অঞ্চল প্রেমীকে আলাদা করে  বলে দিতে হয়না যে প্রকৃতিকে, অঞ্চলকে সে ভালবাসে , তবে এখন এটাই দস্তুর। সেই মতন দেখলাম বড় বড় হরফে ভালবাসার প্রদর্শিত লিখন। I love Temi 😃.... সে সব হরফ জড়িয়ে হেলে দুলে খান কতক ছবি তুলে ফেললাম। এ সব ক্ষেত্রে নিজেদের ছবির থেকেও আমার কাছে প্রকৃতির ছবি অগ্রাধিকার পায় । ছবি তোলার পর দেখি সন্ধ্যার আঁধার নামব নামব করছিল !!! পাহাড়ী পথের আঁধার বেশ গা ছমছমে । চা বাগান থেকে বেরিয়ে একটু চা পান বিরতি নিয়ে ফেললাম সাথে ফেসবুকের কল্যাণে বাগানের দিকে চায়ের কাপ ধরা হাত শূন্যে তুলে এক কায়দাবাজী ছবিও তুলে ফেললাম কর্তামশাই এর নির্দেশে। তিনি ইদানিং ছবি তোলার নানান  ধরনের রকম বেরকমের সমঝদার হয়েছেন ফেসবুক পরিবারের হাত ধরে । টেমি চা ফ্যাক্টরির নির্ধারিত দোকান থেকে অল্প করে চা কেনা হল। আবার পথ চলা শুরু করলাম আঁধার নামা পাহাড়ি পথে । উদয় শঙ্কর সরণী বেয়ে আমরা রাবাংলার দিকে চললাম। আমার কন্যার আতঙ্কিত মুখ দেখে বুঝলাম ... বেচারী অন্ধকার পাহাড়ী পথে অশরীরি উপস্থিতির কথা ভেবে ভয়ানক ভীত সন্ত্রস্ত !!!  ভয়টাকে তার পিতাজী তা দিয়ে জোরালো করতে করতে পথ চলল আর কন্যা একদম আমার কোলের কাছে ঘেঁসে আতঙ্ক চেপে চলতে লাগল। এই ভাবেই আঁধার ঘেরা পথে এক সময় অনেক দূর থেকে আলোকিত বুদ্ধের শান্ত সৌম্য মূর্তি দেখা দিলেন পাহাড়ী পথের বাঁকে। মেয়েকে অভয় বাণী দিয়ে খানিক ধাতস্ত করলাম কারণ বুঝলাম আমরা আমাদের গন্তব্য রাবং অথবা রাবাংলাতে পৌঁছে গেছি । এবার শুরু হল হোটেলের খোঁজ .... আমাদের ভ্রমণ গাইড সুমিত দা র কথা মতন আমাদের হোটেল বুদ্ধা পার্ক রেসিডেন্সী রাবাংলার বিখ্যাত বুদ্ধা পার্কের ভিতরেই অবস্থিত। কিন্তু পরন্তু কথা হল ... হোটেল রিসেপশনের  নানান পথ নির্দেশ আমাদের পুরো ঘেঁটে ঘ করে দিল !!! পরে দেখা গেল আমাদের গুগুল বাবু একমাত্র ঠিকঠাক নিশানা বাতলেছিলেন .... হোটেলের রিসেপশন আলো করে তখন যিনি ছিলেন তিনি পাহাড়ী ঠাণ্ডার প্রকোপ কমাতে একটু রঙিন হয়ে ছিলেন ক পাত্তর গলধঃকরণ করে 🤔 সেই সব চাপানউতোরের পাট মিটিয়ে ঘরে ঢুকে মোটামুটি শীতের হাওয়ার লাগল নাচন বলা ভাল লাগল কাঁপন । রাবাংলার উচ্চতা গ্যাংটকের থেকে বেশি আর ছোট্ট পাহাড়ী জনপদ , তেমন জনবহুল নয় কাজেই ঠাণ্ডা বেশ বেশি ছিল। কিছু পরে আমার কাঁপাকাপি মাপামাপি করে আমার কর্তামশাই রিসেপশনের এক স্বাভাবিক কর্মী মারফত রুম হিটার আনা করালেন । সত্যিই তখন আরাম পেলাম !!! বিছানার পাশের দেওয়াল জোড়া কাচের শার্শি র পর্দা সরিয়ে বুদ্ধা পার্কের বুদ্ধদেবের দর্শন পেলাম । জানালার একটু ফাঁকের জন্যই ঘর যে ওমন ঠাণ্ডা তা বুঝলাম । 

একটু পরেই সদালাপী আমি পাশের ঘরের আরেক বাঙালি  পরিবারের সাথে আলাপ করে এলাম । আগেই কর্তামশাই এর আলাপ হয়েছিল যখন রিসেপশন বিভ্রাট চলছিল তখন !!! দুজনেই কলকাতার সরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা সাথে ছোট্ট ছেলে । বছর পাঁচেক র । অল্প গল্প করে ঘরে ফিরে দুজনে মুখোমুখি খানিক গপ্পো জুড়লাম , কন্যার মন তখন ফোনে । নিজের সংসারে মুখোমুখি গপ্প করার বড়ই সময়াভাব । মাঝে এসে ভিড় করে কাঁচা বাজার , জলখাবারের পাট , মাসের বাজার ইত্যাদি প্রভৃতি । সেই প্রচলিত প্রবচন ... খাওয়ার পরে রাঁধা আর রাঁধার পরে খাওয়ার এক পাঁচালি !!! 

গপ্পো শেষে মুড়িঝুড়ি দিয়ে কনকনে ডাইনিং রুমে খেতে গেলাম । বিশালাকার খাওয়ার ঘরের একদিকে রান্না ঘরে যাওয়ার দরজা খান খোলা আর সেজন্যই ঠাণ্ডার প্রকোপ খাওয়ার ঘরে ভয়ানক। চটপট খেয়ে আমরা ঘরে ফিরে বিছানার নরম গদি আর দুখান লেপের মাঝে হারিয়ে গেলাম । ঘুম এসে গেল চটপট। পায়ের কাছে রুমহিটার ঘরকে হট করতে থাকল । কিন্তুক মাঝরাতে আমি আর আমার কন্যার এতোই হট হলাম যে আমাদের ছটফটানি গেল বেড়ে আর ঘুমন্ত কর্তামশাই জাগন্ত হয়ে রাগে হট হয়ে হিটারের সুইস বন্ধ করলেন ফট করে । কিছু কিছু রাগের বক্তব্য বিতরণ করে জল খেয়ে তিনি তুরন্ত নিদ্রামগ্ন হলেন , আমার নিদ্রা তখন ভগ্ন দশায় !!! দফায় দফায় মুখে চোখে কনকনে জল দিয়ে ও খেয়ে খানিক ধাতস্ত হয়ে নিদ্রায় মগ্ন হওয়ার আরাধনা করতে করতে এক সময় সত্যিই মগ্ন হলাম । ঘুম ভাঙল তখন ৫.৩০ , জানালা খুলতেই এক ঝাপটা কনকনে হাওয়া পুরো কাঁপিয়ে দিলেও ভোরের আলোয় গৌতম বুদ্ধের সৌম্য মূর্তি র দর্শন করলাম। মনটা ভারি ভাল হয়ে গেল ।রাতে যখন ঘুমের সাধনা চলছিল তখন একবার জানালার কাঁচে চোখ রেখে গৌতম বুদ্ধের দর্শন মেলেনি। অবাক কাণ্ড কিছুই নয় কুয়াশা ঢেকে রেখেছিল তাঁকে । বেলা বাড়ার সাথে সাথে এমন লুকোচুরি চলতে থাকল । আকাশের মুখ ভার মুক্ত হল না তাই বুদ্ধা পার্কের একপাশে যে আকাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে দর্শন দেন কাঞ্চনজঙ্ঘা তার কোন প্রমাণ মিলল না । তবে জলখাবার গলধঃকরণ করে আমরা সুবিশাল বুদ্ধের মূর্তি সহ প্রেয়ার হল , সুবিশাল পার্ক সবটাই হেঁটে ঘুরপাক খেলাম অনেক সময় নিয়ে । যদিও ব্যাটারী চালিত গাড়ির ব্যবস্থাপনা ছিল ওপরের প্রেয়ার হলে যাওয়ার ও পার্ক ঘোরার জন্য। 

ঘোরাঘুরির পর আমাদের বাক্স প্যাটরাসহ বেরিয়ে যাওয়ার কথা আগে থেকেই ঠিক ছিল,  পরবর্তি গন্তব্যের দিকে। রাবাংলার নিঝুম , শান্ত প্রকৃতি ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না , কিন্তু যেতে তো হবেই।  সেদিন আমাদের নামচি আর চারধাম ঘুরে রাতে পেলিং পৌঁছনোর কথা !!! 

Friday, 24 May 2024

বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৫

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৫

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙল যথা সময়ে । দেখি আগের দিনের তুলনায় আকাশ একটু গাল ফুলিয়েছে  , কিন্তু আমাদের গ্যাংটকের দেখা  প্রথম প্রভাতের মতন সে অতোটাও বিষন্ন নয় । মন বলল .. এ হল মানিয়ে নেওয়ার মতন মুখ ভার । তাও মনে যে সংশয়ের দোলচাল একেবারেই ছিল না ; তা নয় । তবে আস্তে ধীরে সময় এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আকাশ আরো খানিক ভার মুক্ত হলো। আমাদের হোটেল ম্যানেজারের দেখানো পথে আমরা আমাদের মন পবনের নাও থুড়ি চার চাকার বাহনে আসীন হয়ে বেরিয়ে পড়লাম জলখাবার খেয়ে। কথা হয়েই ছিল যে আমরা প্রথমেই ছাঙ্গুর পারমিট নিয়ে সেদিকে রওনা দিয়ে , বরফ দেখে আবার ফিরে আসব গ্যাংটকের হোটেলে । সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজনের পরে মালপত্র সহ বেরিয়ে পড়ব রাবাংলার উদ্দেশ্যে। সকালে বেরনোর আগেই আমাদের চাবি বন্ধ সব লটবহর হোটেলের রিসেপশনে জিম্মা করে আমরা হোটেলের ঘর ছেড়ে দিয়েছিলাম । 

অনেক বছর আগে ছাত্র জীবনে আমার কর্তামশাই বার ২/৩ এ দিক পানে ঘুরে গেছেন তার নানান সেট অফ ফ্রেণ্ডস দের সাথে ( একবার স্কুল / একবার কলেজ / একবার পাড়াতুত বন্ধুরা ) । কাজেই স্বাভাবিক ভাবেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে আর বন্ধ ই হয় না !!! এমন কি ফেরার পরে বিদেশ ও স্বদেশ নিবাসী বন্ধুরা অনেকেই নস্টালজিক হয়ে দূরাভাসে , মুখপুস্তিকার দরবার আলো করে স্মৃতিচারণে হাজিরা দিল । তো সে যাই হোক , শুনলাম যে আগের বদলে ছাঙ্গুগামী নতুন পথ তৈরি হয়েছে , যা আগের পথের থেকে অনেক প্রসস্ত কিন্তু একটু সময় সাপেক্ষ। প্রথমে চোখ ছানাবড়া হল যখন পারমিট হাতে এল , দেখলাম কাতারে কাতারে গাড়ি পারমিট মেলার জন্য অপেক্ষারত । কিন্তু এর পরে যে আরো অনেক কিছুই বাকি তা বুঝলাম যখন এক অফিসার আমাদের গাড়ির কাছে এসে পারমিট নিয়ে তাতে নম্বারিং করে দিলেন । দেখলাম আমাদের গাড়ির ক্রমিক সংখ্যা , ট্যারা হয়ে গেলাম ...  serial no.536  !!!!

আস্তে ধীরে আমরা কুয়াশার চাদরে মোড়া পথের মধ্যে ঢুকে পড়লাম , ঘন কুয়াশার জন্য সামনের গাড়ি আর একপাশের অতলান্ত খাদ দুই ই প্রায় প্রায় অদৃশ্য। কখনও কুয়াশার আস্তরণ হাল্কা হলে কিছু কিছু দৃশ্যমান হচ্ছিল চারপাশ । সার বাঁধা মন্ত্র লেখা পতাকার সারিবদ্ধ রূপ দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছিলাম আমরা। পুরোটাই আর্মির অঞ্চল। তার চিহ্নও দেখছিলাম মধ্যে মধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা আর্মির বিশালাকার শক্তিমান ( বাহন ) গুলোর ধেয়ে চলার গতিতে । কোনটা বোঝাই আর্মির জিনিসপত্রে তো কোনটাতে আর্মির সেনা বাহিনীর জওয়ান। অদ্ভুত একটা অনুভূতির উদয় হয় এই নিরলস পরিশ্রমী বীর দের দেখলে , এদের জন্যই আমরা নিরাপদে , নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াই দেশের নানান প্রান্তে। এদিকের পাহাড়ের ওদিকেই নাকি রহস্যের খাসমহল চীন দেশ । কোন সুদূর অতীতে এই সব পাহাড়ের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বিদেশী বণিক , পর্যটক , ধর্ম প্রচারক গণ চলাচল করতেন । এখনকার সুযোগ সুবিধা তখন স্বপ্নাতীত।  কি ভাবে তারা আসতেন ভাবতেই অবাক লাগে !!!

ছাঙ্গু যাওয়ার পারমিট মিলেছিল মূল স্থানের থেকে সম্ভবত ৫কিমি আগে ১৫ মাইল নামক স্হানে। কোন জায়গার নাম যে এমন হতে পারে ধারনা পরিষ্কার হতে বিস্তর সময় লেগেছে । তাও কি হয়েছে !!!! কলকাতার হাজির হতে তবে বুঝেছি বলে মনে করছি । পাহাড়ী পথে বেশ ঝগড়া লেগে গিয়েছিল আমাদের দুজনার ... এ কেমনতর কথা এই শুনছি ৫ কিলোমিটার আবার এই বলছ ১৫ মাইল এলে নেমে পড়ো !! একে তো ঠাণ্ডা তে জমে কুলফি হয়ে যাচ্ছি ওই ১১নাকি সাড়ে এগারো হাজার ফিট ওপরে !! তারপর এমন বিতিকিচ্ছিরি অঙ্ক ধরিয়ে দিলে কার ভাল লাগে ? এমনিতেই অঙ্ক দেখলে আমার হাত পা কলকাতার চরম গরমেও ঠাণ্ডা হয়ে যায় তায় ওই ঠাণ্ডার মধ্যে এসব কারণে যারপরনাই গম্ভীর হয়ে বরফে হাঁটার উপযুক্ত বুট ভাড়া করতে ও পরে ফেলতে নেমে পড়লাম এক দোকানে। সেখানে বুট ভাড়া ছাড়াও রয়েছে চা জলখাবার, দুপুরের খাবারের ঢালাও ব্যবস্থা ( ধুমায়িত ভাত , সব্জি আর পাহাড়ী মুরগীর ঝোল )আবার খুচরো কিছু শীত পোশাকের বিক্রি বাটার ব্যবস্থাপনা।  মালকিন এক কথায় সত্যিই দশভূজা । একা হাতে ভাড়া জুতো পরাচ্ছেন হাসি মুখে অত্যন্ত যত্ন সহকারে , পরমূহুর্তেই চা / জলখাবার পরিবেশন করছেন সমান ক্ষিপ্রতার সাথে ... মুখে হাসি লেগেই আছে। 

আরো কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে দুদিকের পাহাড়ে বরফ সাথে বরফ দেখে পাগল হওয়া সমতলবাসী দৃশ্যমান হল । গাড়ির চালক বিজয় ভাইয়া ,  বললেন যে গাড়ি নিয়ে আর এগিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।  সত্যিই বরফের বদলে গাড়ির গলিগুজির মধ্যেই নেমে পড়লাম !!! বাপ রে !!! বরফ নিয়ে কাব্য তখন গাড়ির ভিড়ে হারিয়ে গেছে !!! কর্তামশাই চট করে ধাতস্ত হয়ে একপাশে সরিয়ে আনলেন মা - মেয়েকে ... বললে ... যা দেখার , ছবি তোলার এখানেই সারো আর সরে পড়ো। কারণ এই উচ্চতা সমতলবাসীদের অনভ্যস্ত শরীরের পক্ষে খুব সুবিধাজনক নয় । অসুস্থ হলেও হতে পারি । বলতে না বলতেই আমাদের সামনে একটি বাচ্চা মেয়েকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলাম। 

ভিড়ে আমার বড় এ্যালার্জি চিরকাল !!! বরফ যতটা দেখার দেখে ছবি নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। কন্যা ওইটুকু পথের ধারের গাড়ির মেলার পাশ কাটিয়ে ভিন্ন প্রদেশের ( দক্ষিণ ভারত ) এক তরুণীর সাথে স্নোম্যান বানিয়ে ফেলেছিল  কিন্তুক মনের সুখে বরফের গোল্লা ছোড়াছুড়ি টা তেমন জমলো না !! ও সব ফাঁকা বরফ বেছানো প্রান্তরে সম্ভব, যা শুধু চলচিত্র কেন ? আমরা পেয়েছিলাম ও সম্ভব করেছিলাম খাজিয়ারে , কাশ্মীরে , ডালহৌসী আর সোলাং ( আমরা দুজন ) ভ্যালিতে । এখানে তার কোনরকম সম্ভবনা ছিল না ....  অগত্যা কি আর করা !!! ফেরার পথ ধরতে দেখলাম শরীরটা অল্প অল্প বিগরোচ্ছে ... মাথা ব্যথা আর গা গোলানো। যা আমার সমতলেও কমন সিলেভাস। যদিও কোনরকম দাওয়াই ছাড়াই তা সেরে গেল খানিক নামার পরে পরেই। এদিকের ঘরের চিকিৎসক মশাই কইলেন ওটা অলটিটিউড সিকনেস।  কে জানে ভাই !! এ সব জানি না , কারণ কলকাতার গরমে , পথে ঘাটে দূরে কোথাও চারচাকায় আসীন হলে এমন ধারা সিকনেস আমার হয়ে থাকে অনেক সময় !!! হয়তো মনটা বেরলেই পাহাড়মুখী হয়ে ওমন ঘটায় । মন রোগ বিশেষজ্ঞ কইতে পারেন । থাক ওসব খুব ঝামেলায় না ফেললে যেমন চলছে চলুক ।

এরপর আমরা ফিরে এলাম গ্যাংটকের হোটেলে । সেখানে ভরপেট্টা ঘরোয়া খাবারে ক্ষিদে মিটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম রাবাংলার দিকে । বরফ দেখার রেশ ধরেই এগিয়ে চললাম সামনের নতুন কিছু দেখার বাসনা নিয়ে।

Friday, 17 May 2024

 


বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৪

প্রথমদিনের গ্যাংটকে ঘোরাঘুরি একদম ভিজে ঝুপ্পুস হয়ে গেল। ঘরে থুড়ি হোটেলে ফিরে চা খেয়ে নিজেদের একটু গরম করে নিতে না নিতেই গ্যাংটকে গণ্ডোগোল .... গ্যাংটকের পার্ক স্ট্রিট সম এম.জি.মার্গে যাওয়া নিয়েই হোটেলের ঘরে গোলযোগের সূত্রপাত হতে না হতেই আবহাওয়ার মোড় ঘুরে গেল যথারীতি আমার কর্তামশাই এর দিকেই। আর ঝমঝমে বৃষ্টি আর কনকনে ঠাণ্ডার প্রকোপে আমরা তিনজনেই এম .জি .মার্গের বদলে লেপের ভিতরে গুটিশুটি মেরে ঢুকে পড়লাম আর ঘরের একমাত্র টেলিভিশনে এদিক ওদিক খিচুড়ি অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করলাম। আবহাওয়া নানান ধ্বণাত্মক শব্দ সহযোগে দুর্যোগের জানান দিতেই থাকল । এর মধ্যেই আমার কন্যা এখনকার জ্ঞানের আধার Google বাবুর( নেট তখনও সেট ছিল )শ্মরণাপন্ন হয়ে আগামী সব দিনের দুর্যোগের ঘোষণা করে মনটা কে আরো  খারাপে ভিজিয়ে দিল । অগত্যা ভেবে নিলাম কটা দিন নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রামেই কাটানো যাবে । কর্তামশাই আমার ভাবনা শুনে চোখ কপালে তুলে বলেই ফেললেন ... তোমার কি লেবেল !!!! এত খরচ করে গ্যাংটকে এলে বিশ্রাম নিতে ???? কি বলব বলো ?? নুনের ছিটে হজম করে নিলাম । তোমরাই বলো , ঘুরতে না পারার হতাশার কথা ছোটজনকে বলা যায় ??? আর ওমন দুর্যোগে কি ঘুরতে এসেছি বলে ঘুরতে হবেই  ???? তাই যেটা যুক্তি গ্রাহ্য সেটা করাই তো বাঞ্ছনীয় ।

ডিনার করার পর আমাদের হোটেল বজ্র রেসিডেন্সি র ম্যানেজার অতিরিক্ত নিশ্চিত ভাবেই আশার কথা শোনালেন ... বললেন আজ যখন এতো বৃষ্টির ঝরে পড়া হয়ে যাচ্ছে , কাল পাবেন ঝকঝকে রোদে ভরা দিন .... যদিও তখনও বাইরে তোড়ে বৃষ্টি পড়ছিল। ওনার মুখেই শুনলাম হোটেলের এক রুমের বোর্ডার গণ একদিন আগে ইয়ুমথাং ঘুরতে গিয়েছিলেন , তারা এই দুর্যোগের মধ্যেই ফিরছে। পাহাড়ী পথের দুর্যোগ আর রাতের আঁধার সত্যিই খুব চিন্তার বাতাবরণ তৈরি করল। 

পরেরদিন সকালে সত্যিই সূজ্জি মামার আগমন ঘটল খুশীয়াল মুডে  আর আমরাও গত রাতের সেই  বোর্ডার দের দুর্যোগ পেরিয়ে হোটেলে ফেরার খবর নিয়ে জলখাবার গলধঃকরণ করে বেরিয়ে পরার জন্য প্রস্তুত হয়েই জানতে পারলাম আরেক দুঃখের খবর। আগের দিনের আবহাওয়ার দরুণ ঝরে পড়া বরফের পাহাড় আমাদের ছাঙ্গুর পারমিট বাতিল করে দিয়েছে। নাথুলাতে তো ঢ্যারা পড়েইছিল ছাঙ্গুও হাতছাড়া হল !!! একেই কি বলে গোদের ওপর বিষফোঁড়া ?? হবেও বা । শুধু শুধুই কি আর প্রবাদ প্রবচনের সৃষ্টি ??? আমাদের বাহন চালক বিজয় ভাইয়া ফোনের ওপারে আশাবাদী হলেন , বললেন ... তিনি আগের দিনের বাকি রয়ে যাওয়া দ্রষ্টব্য ঘুরিয়ে আনবেন । সেদিন বেরিয়ে পাহাড়ী পথের বাঁকে কচিত কদাচিৎ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দিলেন । চকিত দর্শন হলোই বা !! কে বলবে আগের দিন ওমন অঝোর ধারা আমাদের ভিজিয়ে , ভাসিয়ে একশা করেছিল !!! প্রথমেই আমরা চললাম চড়াই পথ বেয়ে হনুমান টকের দিকে। এখানে যা বুঝলাম  টক মানে হল মন্দির , যার সাথে ইংরেজি ও বাংলা কোন "টক"শব্দের অর্থের যে সমতা নেই তা টক করে বুঝে গেলাম।  ঝকঝকে রোদে টপাটপ মন্দিরের সামনে এসে পৌঁছলাম।  গাড়ি থেকে নেমে আরো একটু উপরের দিকে উঠে পৌঁছলাম মন্দিরে । পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শান্ত পরিবেশ বড় ভাল লাগল। মন্দির লাগোয়া রেলিং ঘেরা প্রসস্ত চত্বরের একপাশে আবার চকিতে দেখা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা মেঘের চাদরে মুখ লুকিয়ে ফেললেন আর আমরা এগিয়ে চললাম পরের গন্তব্যের দিকে। একে একে দেখে নিলাম গণেশ টক, তাসি ভিউ পয়েন্ট। আমাদের গ্যাংটকের হোটেলের ম্যানেজার সহ সর্বমোট ৪/৫ জন কর্মচারী , প্রত্যেকেই বাঙালি। তাদের একজন আগের দিনেই বলেছিলেন যে সারা গ্যাংটকের সেরা বৌদ্ধ মনাস্ট্রি নাকি রাঙ্কাতে অবস্থিত, আর সে খান দেখে নিলে বাকি সব অদেখা মনাস্ট্রির দর্শন হয়ে যায় ... সেই মতনই পথের নিশানা ধরিয়ে দিলাম আমাদের সারথি বিজয় ভাইয়াকে । সামনেই নির্বাচণ , তার চিহ্ন ছড়ানো পথ থামতে থামতে পেরিয়ে ( মিছিল ) আমরা চললাম রাঙ্কা মনাস্ট্রির দিকে । পথ আর শেষ দেখাচ্ছে না দেখে আমরা মা - মেয়ে মায় মেয়ের বাবাও পর্যন্ত খানিক ঘুমন্ত , ঝিমন্ত ও জাগন্ত মোড সচল অচল করতে করতে পৌঁছলাম রাঙ্কা মনাস্ট্রির সুবিশাল চৌহদ্দীর ভিতরে । বলতে নেই ... অসম্ভব ভাল লাগল মনাস্ট্রির সবটুকু !!! দেখা শেষ করে পাশের ছোট খাওয়ার জায়গাতে পেটকে শান্ত করে , পাশের পশরা সাজানো দোকান থেকে টুকটাক কিছু খরিদারি করে হোটেলের দিকে রওনা দিলাম । পথে নির্বাচণী নিদর্শন পেরিয়ে সন্ধ্যার মুখে হোটেলে ফিরে এলাম। সেদিন ঝকঝকে আবহাওয়ার দারুণ ঠিক হল এম . জি . মার্গ ভ্রমণ আর সেখানেই খ্যাটন পর্ব মিটিয়ে ঘরে থুড়ি হোটেলে ফিরব রাত করে। সেই মতনই ঘুরে ফিরে খেয়ে দেয়ে আমরা ফিরে এলাম হোটেলে। 

পরের দিন আমাদের গ্যাংটক কে বিদায় জানানোর পালা। এদিকে আমাকে ছাঙ্গুর বরফ দেখাতেই হবে এমন পণ ম্যানেজার সহ বাকিদের । আমার দেওয়া যে প্রস্তাব এক কথায় কটমটে দৃষ্টিতে বাতিল করে দিয়েছিল এদিকের কর্তামশাই , সেই একই প্রস্তাব কার্যকর করতে লেগে পড়ল সদ্য পরিচিত সকলে। ঠিক হল পরের দিন আমাদের বাক্স প্যাটরা হোটেলের রিসেপশনে রেখে আমরা পারমিট বগলদাবা করে ছাঙ্গুর দিকে যাব ( যতটা পারমিশেবল) , দুপুরে ফিরে হোটেলে খেয়ে বিদায় জানাবো গ্যাংটক কে । তাই অনেক আশায় বুক বেঁধে আমি সে রাতে নিদ্রামগ্ন হলাম । 

Friday, 10 May 2024

 বেড়াতে গিয়ে মজারু ৪৩ 

রাতের শেষে ভোর হলেও আলো ফুটল না । চারিদিকের চরাচর কুয়াশার চাদরে আবৃত । বেড়াতে গিয়ে এমন ছন্দ পতনের সাথে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না আদেও তাই মনের আঙিনায়  মেলা মেঘ জমে গেল । বেলা বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতির  কিঞ্চিত অদল বদল হলেও সে একদমই নামমাত্র। জানলা খুলে যদি বা দেখি আকাশের মুখ একটুখানি ফর্সা ...পর মুহুর্তেই সে ভরসা নেতিবাচক দিকে রওনা দিচ্ছিল । এ সবের মধ্যেই আমরা জলখাবারের পর্ব মিটিয়ে মোটের ওপর বেরিয়ে পড়ার ধরাচূড়ো পরে ফেললাম আর কতকটা যেন সে জন্যই বেরিয়ে পড়লাম। বেরিয়েই দেখি হাল্কা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমরা এগিয়ে চললাম।  আমাদের বাহন চালকের সাথে প্রথমেই আমরা পরের দিনের ছাঙ্গু ও নাথুলা যাওয়ার অনুমতি মিলবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান আলোচনা শুরু করলাম । আকাশের ভাব গতিকে অনুমতিপত্রের চারদিকে বেশ সংশয়ের ঘন মেঘের দেখা পেলাম । সামনেই নির্বাচণ তার প্রচারে দু দলের ব্যস্ততার আঁচ পেলাম চলার পথে । আমরা এগিয়ে চললাম আমাদের প্রথম গন্তব্য রুমটেক মনাস্ট্রির দিকে । পাহাড়ী কিন্তু প্রসস্থ পথ ধরে একসময় পৌঁছলাম  , নেমে পড়লাম... সামনে এক জায়গায় পরিচয়পত্র দেখিয়ে অল্প চড়াই পথ ধরে হেঁপোরাম হয়ে এগিয়ে , এক সময় পৌঁছলাম মনাস্ট্রির সামনে । আকাশ তখন আঁধার করে সেজে উঠছে । মন খারাপের মেঘ নিয়ে মনাস্ট্রির ভিতরে সব ঘুরে ফিরে , উঠে , নেমে , অন্দরে বাহিরে দেখে বেরিয়ে এলাম। ছবি তোলা হল বিস্তর ও বিস্তারিত ভাবে । এবার মনাস্ট্রির প্রেয়ার হলে ছবি তোলায় মানা , তাই সে নিষেধের সম্মান করে বাইরে এসে দেখি মেঘ আর কুয়াশার চাদরের আদরে সামনের পথ অদৃশ্য। পুরো ম্যাজিক  ....  ভ্যানিস  !!! আর তার সাথে পুরো আয় বৃষ্টি ঝেঁপে কেস। ঝেঁপে আসতে না বললেও শুধু যে বৃষ্টি ঝেঁপে এল তা নয় আমরা আপামর টুরিস্ট কূল পুরো কেঁপে গেলাম  ভিজে ঠাণ্ডার দাপটে। উতরাই পথের শেষে এক চায়ের দোকানে গরম গরম চা , যেন প্রাণ জুড়িয়ে দিল । আমরা এরপর এগিয়ে চললাম বন ঝাকরি জলপ্রপাতের দিকে । পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পড়া ঝর্ণা কে ঘিরে গড়ে উঠেছে সাজানো গোছানো অ্যামুজমেন্ট পার্ক। কোন জল কে দেখব আর কাকে আলাদা করব তা ভাবতেই অনেকক্ষণ চলে গেল। একদিকে আকাশ থেকে ঝমাঝম বৃষ্টি অন্যদিকে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা মাটি গোলা চকোটেল রঙের জলপ্রপাত। প্রথম দর্শনেই মেয়ের সাথে দেখা ছোটদের মুভি চার্লি অ্যাণ্ড চকোটেল ফ্যাক্টরী র চিত্রায়ণ মনে ভেসে উঠলেও  , বেশিক্ষণ থিতু হতে পারল না , কারণ অসংখ্য ছত্রধারী ( আমরাও আছি ) র ছাতার জল আর খোঁচা খেয়ে প্রাণ তখন অতিষ্ঠ। ছবি তোলা , সব দেখার পর আমরা যতটা পথ ওপরে উঠেছিলাম, পত্রপাট নেমে এলাম । ওখানের এক চিনে রেস্টুরেন্টে দুপুরের পেট পূজোর জন্য বসে পড়লাম । খাওয়ার খেয়ে মন ভরে না , শুধুমাত্র পেট ভরল  .... কারণ খাবারের গুণ গাওয়ার মতন নুন তেনারা দেন নাই । টেবিলের ওপরেও ছিল নুন বাড়ন্ত।  অগত্যা  !!! আর নুন বারংবার চাওয়ার পরও যখন মিলল না আমরা আপস করলাম । খেয়ে বেরিয়েই একটু এগোতেই পড়ল এক মনাস্ট্রি , বৃষ্টির ধারাপাতে বিপর্যস্ত আমরা ধরা না দিয়ে একই ভাবে ছেড়ে এলাম তাসি ভিউ পয়েন্ট। কারণ ভেবে দেখলাম বৃষ্টির ধারাপাতে কোন ভিউ ই আর ভিউ নেই। এরপর বৃষ্টির মধ্যেই আমরা নেমে পড়লাম নানান ফুলে ভরা এক বাগানের সামনে । টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। চারিদিকে ফুলে ফলে তবে বৃষ্টির জলে তারা প্রায় প্রায় ঢলে ঢলে .... পড়ছে , কিছু ফুল  বলে ধন্য আমি মাটির পরে বলে ভূমি শয্যা নিয়েছে। ওখানেই ছাতা সামলে , ক্যামেরা তাক করে বেশ কিছু তাক লাগানো ছবি তুলে আমরা গেলাম ওই বাগানের মধ্যেই অবস্থিত নানান ফুল ও অর্কিডের কাচ ঘেরা ঘরে । সেখানে গিয়ে মন ভরিয়ে ফুল দেখলাম বৃষ্টির কনসার্ট সহ। তবে কাচের ঘেরাটোপে আমরা বৃষ্টির জলের থেকে সাময়িক রেহাই পেয়েছিলাম। ওখান থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে  পথেই পড়েছিল গণেশ টক/ গণেশ মন্দির। কিন্তুক বাড়াবাড়ি রকমের বৃষ্টির জন্য আমাদের তালিকার বেশ কিছু জলের তোড়ে ভেসে গেল আর আমরা ঘরে থুড়ি হোটেলে ফিরে এলাম । সেদিন ছিল দোল পূর্নিমা। ফেরার পথে গ্যাঙটকের পার্ক স্ট্রিট এম.জি.রোডে রঙের মাতন দেখলেও সবটাই ছিল  বৃষ্টির জন্য একটু ম্রিয়মান । 

সন্ধ্যার পর বেরনো হল না , আগের দিনের জার্নি আমাদের অনেকখানি ক্লান্ত করে দিয়েছিল। এরপর সন্ধ্যার বেরনোর চাপানউতোরের পালা চলার মধ্যেই আবার বরুণদেব নতুন উদ্যমে ঝমঝমিয়ে জাকিয়ে এসে পড়লেন ।