Sunday, 17 August 2025

স্টোন ম্যান

 ECG করতে গিয়েই সিস্টার যখন বললেন ... " স্যার আপনি কি স্ট্রেস করছেন ?" ডাক্তার বাবু দন্তবিকশিত করে বললেন ... " কৈ না তো !!!! " এদিকে অর্ধাঙ্গিনী র তখন সঙ্গীন অবস্থা। ভীতিজনক অবস্থান যার সর্বাঙ্গ জুড়ে তার কাছে এ সব ভারি ভয়ানক ব্যাপার। এদিকে বিকশিত দন্তের মালিকের হস্তগত রিপোর্ট বলছে যে তিনি স্টোন ম্যান। 

চিন্তামণি হয়ে আকুল হলাম ... তিনি  হাসলেন !!! ঘরে জড়াজড়ি ও আকুলতাকে ফুৎকারে উড়িয়ে তিনি কলেজকে জড়ানোর নির্দেশ দিলেন। ভাবনা কমলো খানিক।  আমার পরিচিত সকলের অভিজ্ঞতার হাত ধরে জানলাম ... ভয়ের কিছু নাই । ছোট অপারেশন। ঘরে বলতেই খেলা গেল ঘুরে ... কে বলেছে ??? কন্যার কাছে এক সংবাদদাতার নাম শুনে পিতাশ্রী গম্ভীর হলেন। 

কটা দিন চলে গেল ভয় ভীতি ছাড়া ... একদিন কইলেন ... " সব বুঝে নাও কেমন ?" 

ভাবনা হাজির। দুয়ারে ভাবনা ... এ আবার কেমন কথা ?? হাঁকপাক করতে করতে কলেজ গেলাম। সকলে এক বাক্যে কইল ... নিজ্জস ভয় দেখাচ্ছে। শুধু কলেজ নয় আরো খান কতক বন্ধুগণ বললে ... একটু যদি চিন্তিত না হও, চলে ??? ডাক্তার বাবু চিন্তিত করে তোমাকে মাপছেন!!! 

এদিকে সব কিছু ই অজানা। যা জানতে চাই উওর ধরি মাছ না ছুঁই পানি। কি করি। আমার সহকর্মী মধুপর্ণা বলেই ফেলল ... এ কি অপারেশন নাকি সসপেন্স থ্রিলার ?? চিন্তা তখন চরমে ... পুপের পরীক্ষা নামক চিন্তা তখন নেহাতই পানসে !!! 

হেনকালে পরীক্ষার শেষ আর অপারেশন দিন আগত। এক ব্যাটেলীয়ান হাজির ভর্তির কিছু পরেই। আত্মীয় ও বন্ধুগণ ছত্রাকারে চারদিকে ... নার্সিংহোম কতৃপক্ষ ভিরমী প্রাপ্ত। তবে এ কিছুই না। আমি বিয়ের কিছু পরেই এমন দেখেছি , তবে সেখানে দল ছিল আরো হৃষ্টপুষ্ট। 

অপারেশন শেষে আমার আর দাদার অবস্থান পুরো অর্জুন আর কর্ণের মতন ... পুরো মহাভারত সদৃশ। কিন্তুক.... এ কি ... " মেয়েকে দেখো "  বলে কেঁদে আকুল , ফোলা গাল ফুলে টোপা কূল !!! এদিকে কাঁদুনি তকমাধারী আমি ডাক ছেড়ে সমবেত কান্না ধরে ফেলেছি তখন। আত্মীয় বন্ধু সামলে ধরল । 

এক বুদ্ধিমান  কইলেন ... মন খারাপ করো না , অভিমানও কোরো না , সামনে তুমি , তোমাকে দেখাই যাচ্ছে তাই মেয়েকে দেখো কয়েছে , কেউ কইল ...অপারেশনের ব্যথায় এ কাঁদন ।একজন খানিক অর্থপূর্ণ কথা কইল...অ্যানাসথেসিয়ার প্রভাব কমে আরো খানিক পরে !!! এ কাঁদন তেমন কাঁদন না।সব শুনে আমার এক ছোট্ট কালের বান্ধবী বললে ... "তুই এতজনকে বলিস কেন ?  "

আমি বাপু চেপেচূপে রাখতে পারিনা। সকলে থাকলে ভিতরের ভীতিজনক কান্না সামাতে সুবিধা হয় বাপু।

সব মিটিয়ে কাল ঘরে ফিরেছি তাকে নিয়ে। ঘরে ফিরে নিভৃতে জিগালাম..." সত্যি করে বলো !!! চিন্তা কিছু হচ্ছিল তোমার ?? " 

বললে ... " ছুরি কাঁচির নিচে সবার ভয় করে। অসংখ্য গলব্লাডার স্টোন অপারেশন করেছি তাই কি কি আপদ বিপদ হতে পারে অপারেশন শুরু হলে তা আমার জানা । তাতেই চিন্তিত ছিলাম। যতই অন্য সব রিপোর্ট স্বাভাবিক থাক । আমরা যে কোন অপারেশনে কত চিন্তিত থাকি আম আদমির বোঝা অসম্ভব। যে কোন অপারেশন যে কোন দিকে টার্ন নিতে পারে .... "   বেশি জানা যে ভাল না , ফের বুঝলাম। আর তাই বলি সবজান্তা না হলেই শান্তি মেলে। 

যদিও শান্ত হলাম সত্যিই কাল ঘরে ফিরে .... ভাগ্যিস কি কি হতে পারে আমাকে বলেনি 🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙏🏻

বাধ্যতামূলক বাধ্যতা ?

 এক এক জগতের এক এক ধরন ধারণ । হাসপাতাল বলো কায়দা করে নার্সিং হোম ( বেসরকারি হাসপাতাল) বলো সে জগতের সাথে পরিচয় আমার দু ভাবেই বেশ পাকাপোক্ত। বৈবাহিক সূত্রে এ সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগে ভাগেই মা কে নিয়ে চিকিৎসালয়ে যাতায়াতের হাতেখড়ি হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি এলেন ‌‌.... তখন তিনি ছাত্র। শিশুমঙ্গলের আবাসিক। DNB পাঠরত। ছাত্রাবাস থেকে সপ্তাহান্তে আসতেন , বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহরে তা দিতাম । মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে বিখ্যাত গান বাজতে থাকত। একদম appropriate গান ... এসো এসো এসো প্রিয়, এসো আমার ঘরে ‌... 😃

এরপর গঙ্গা য় অনেক জল বয়ে গেল ... দূর থেকে নার্সিং হোম কে দেখতে দেখতে পুপের আগমনের মাস দুয়েক আগে এক সমস্যা র জন্য observation এ গেলাম। একদিন শুয়ে , বসে লেজ নাড়িয়ে চলে এলাম । পরের বার তো পুপে দেবীর আগমন উপলক্ষ্যে হাজিরা ... বিস্তারিত জ্ঞান বোঝাই হয়ে ছানা কোলে ঘরে ফিরলাম। নার্সিং হোম এর ধরন দেখার মতন শরীর ও মন তখন নেই। ঘুম পূরণ হতে না হতেই কখনো গোলাপী তো কখনো সবুজ তো কখনো নীল পোঁটলা করে পুপেকে আমার কাছে দিয়ে যেতো নার্সারি র সিস্টার। বিকেল থেকে সবাই আসতেন দেখতে ... বেশ দর্শনীয় ব্যাপার তখন !!! 

নার্সিং হোম এর সাথে ভাল করে পরিচয় হল ‌‌... পুপের ডেঙ্গু, ভাইরাল ফিভার সহ আমার ও পুপের food poisoning এর সুবাদে।

আমার গল্প আগের , পুপের food poisoning এর গল্প একদম garden fresh টাটকা ... 

জ্বর সাধারণ হোক কি অসাধারণ হোক ছোট্ট পুপে তাকে বেশ ঘোরালো করেই ছাড়ত ... চিকিৎসকের মেয়ে বলে কথা !!! বাবাকে একটু বাজিয়ে দেখবে না ?

খাবার সহ জল না খেয়ে জ্বর উপোসী হতো , ফলে ‌হৈ চৈ পড়ে যেত ঘরে বাইরে । এদিক সেদিক থেকে মা কতটা বেকার ( খাওয়াতে পারে না ) শুনে নিয়ে আর নজর লাগার অযৌক্তিক থিয়োরি শুনতে শুনতে চুলে পাক ধরাতে লাগলাম।

পুপে খানিক বুঝদার হ‌ওয়ার পর আমাদের কর্তা গিন্নীর ভয় কাটল। এ বছর মাঝে পালা করে আমরা দুজন আলাদা আলাদা কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হলাম, ভর্তি হলাম।

পুপেই বা বাদ থাকে কেন ? আবার মা কাঠগড়ায় !!! টিফিন কেন টকে গেল ? এক মক্কেল দেখা করতে এসে কন্যার বাবাকে রান্না থুড়ি টিফিনের ব্যপারটা দেখতে বলে গেল। সত্যি দায়িত্ব টা hand over হলে তাকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাব sure। কিন্তু সে গুড়ে বালি !! 

গরমে টকে যাওয়া টিফিন খেয়ে পুপে ধরাশায়ী। কেন খেলি ? উত্তরে বাবা কাঠগড়ায়। বাবার ভয়ে !!!! 

কখন  বলেছি এমন যে নষ্ট খাবার ফেলা যাবে না ??? এমন বাধ্যতা দেখে আপামর জনতা মুগ্ধ। কি বাধ্য মেয়ে গো তোমার !!! তাই বটে ‌🤣🤣🤣

বাধ্য পুপে এবারে শরীর খারাপ হতেই লিটার দুয়েক ORS খেয়ে ভর্তি হয়ে গেল , সাথে র‌ইলাম আমি। চ্যানেল, ড্রিপ, injectable antibiotic সব চালু হল।  উপযোগী খাবার ওবধি বাধ্য না করতেই খেয়ে বাধ্য মেয়ের তকমাটা বেশ খোলতাই করে ফেলল । পুরাতন সিস্টার দিদিরা অবাক। আমি নির্বাক।

রাতে , সকালে , দুপুরে সিস্টার দিদি দের তোয়াজে মেয়ে তখন আকাশে। দু কান জুড়িয়ে গেল গো ... ভদ্র স্যারের মেয়ে , বোন কি বাধ্য আর শান্ত। কোন সিস্টার দিদি হাতে ষাট ষাট করে injection push করেছে , সে কথা ষাটের বেশি বার শুনে ফেলেছি ঘরে ফিরে। 

রাতে আর সকালে যেন স্টেশন চত্বরের ব্যস্ততা করিডোর জুড়ে। কর্তব্যরত চিকিৎসক গণ তখন তাদের জন্য নির্ধারিত ঘরে অবস্থান করে। করিডোরে কাজের ফাঁকে গল্প আড্ডা য় মনের আগল তখন তাদের ( সিস্টার)খোলা ... ঘুমের আগে ও ফাঁক গলে ওদের রাতের মজলিসের ( অবশ্যই কাজের মধ্যে র ) টুকরো হাসি টুকরো কথা শুনেছি প্রতিবার । কখনো খেয়ালে তো কখনো বেখেয়ালে। 

ওখানে ভোর হয় অনেক আগে , রুগী ঘুমের দেশে তারা নিরলশ কাজের মাঝে ... সব নিয়মের ঘেরাটোপ বন্দী । 

ফেরার আগে এক সিস্টার বলে গেল পুপেকে , বিকেলের খাবার খেয়ে যাবি কিন্তু। চা খেলাম। টা খেলাম। ঘর তখন হাতছানি দিচ্ছে। ফিরলাম। পুপে সব সময়  বাধ্যতা বজায় রাখুক। সত্যি সত্যিই বাধ্যতা ভরে উঠুক ....